সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাবে প্রদর্শিত সিনেমা – সন অব ফ্লাবার (১৯৬২)
লেখক: অদ্রীশ বর্ধন
শিল্পী: মূল অলংকরণ
সিনেমাটি দেখানো হয়েছিল ম্যাজেস্টিক টকিজ (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) হলে ৬ নভেম্বর ১৯৬৬, রবিবার। সিনেমাটি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল আশ্চর্য! পত্রিকায়। মজার সেই সিনেমার গল্প এখানে পুনঃপ্রকাশিত হল।
ওয়াল্ট ডিজনির বিশ্ববিখ্যাত হত্যাকাণ্ড ছায়াছবি ‘দি এ্যাবসেন্টমাইন্ডেড প্রফেসর’-এর সেই আবিষ্কার-পাগল প্রোফেসরটির আরও নতুন নতুন কৌতুক বোঝাই কীর্তিকলাপ নিয়ে তোলা হয়েছে
সন অফ ফ্লাবার (১৯৬২)
প্রফেসর নেড গ্রীন ব্রেনার্ড এমন একটি কৌশল আবিষ্কার করেছেন যা দিয়ে নকল বৃষ্টি ঝরানো যাবে আরো নিখুঁতভাবে। প্রথম প্রথম এই আবিষ্কারটি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি, ফলে অনেক লোক হাসিয়েছেন।
হৈ হৈ করে মাঠজুড়ে রাগবি খেলা হচ্ছে- হঠাৎ দেখা গেল খেলোয়াড়দের প্রসাদ ফুলে-ফেঁপে উঠলো আর তারা মাঠ ছেড়ে শূন্যে ভেসে উঠলো- একবার মাটি ছুঁয়ে আবার ভেসে উঠছে শূন্যে, আবার নামছে আবার উঠছে! সে এক কাণ্ড!
প্রফেসরের আবিষ্কৃত ‘ফ্লাবার’ গ্যাসই এসব কাণ্ডের মূলে! বড়ো বড়ো ব্যবসাদাররা ওঁর বাড়িতে ধরনা দিলো, কত কি দিতে চাইল, লক্ষ লক্ষ ডলার দিতে চাইলো- ঐ ‘ফ্লাবার’ গ্যাস দিয়ে‘ফ্লাবার’ বাড়ি, ‘ফ্লাবার’ মোটর গাড়ী বানিয়ে সারা দুনিয়াকে চমকে দেবে!
প্রফেসর আর একটি মজার আবিষ্কার করে শহরশুদ্ধ লোকের কাছে মস্ত মানুষ হয়ে উঠলেন, সে আবিষ্কার হল ‘শুখনো বৃষ্টি’! এ বৃষ্টি নিয়ে জমিকে এমন প্রকাণ্ড আকারের সব ফসল হলো, যা দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল।
প্রায় ১০০ মিনিটের হাসি-ঠাট্টা এই ছবিতে পরিচালনা করেছেন রবার্ট স্টিভেনশন। “দি অ্যাবসেন্ট-মাইন্ডেড প্রফেসর” এরও পরিচালক ছিলেন ইনি।
শূন্যে উড়ন্ত ‘ফ্লাবার’ মোটর গাড়ী
লোকের বিশ্বাস দুধ বেড়ালের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এ বিশ্বাস শূন্যে মিলালো সন অফ ফ্লাবার স্টুডিওর মধ্যে। ৪৮টা বেড়াল-অভিনেতা চোঁচাঁ দৌড় দিলে ভোজের বহর দেখে!
পঞ্চাশ গ্যালন দুধ গড়াতে লাগল মেঝেতে- হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল স্টুডিওর কর্মীরা!
ঘটনা এইঃ ঠিক ছিল পঞ্চাশ গ্যালন দুধের পাত্র গাড়িতে চাপিয়ে ডেমারেস্ট নামে এক কৌতুকাভিনেতা যাবে। এমন সময়ে প্রফেসরের নবাবিস্কৃত হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ওয়েভ আর রে গান এর উৎপাতে ফাটবে দুধের পাত্র। ঝরনার মতো শতধারায় ছড়িয়ে পড়বে পঞ্চাশ গ্যালন দুধ! ব্যস্তসমস্ত হয়ে ডেমারেস্ট দুধের পাত্র নামিয়ে চেঁচেপুঁছে যেটুকু পারবে দুধ তুলতে যাবে- আর ঠিক সেই সময়ে গন্ধ পেয়ে পিল পিল করে দৌড়ে আসবে ৪৮টা বেড়াল। সে এক দারুন পেটফাটা দৃশ্য।
সব তৈরি স্পেশাল এফেক্ট ডিপার্টমেন্ট পঞ্চাশ গ্যালন ভর্তি দুধপাত্র বসিয়েছে ট্রাকে। যেমন-তেমন পাত্র নয়- উচ্চচাপের হাওয়ার কেরামতি তো বটেই, চারপাশ থেকে বৃষ্টির মত যাতে দুধ ঝরে পড়তে পারে সেজন্য বাতাস পাইপ লাগানো আছে ভেতরে। ডেমারেস্ট প্রস্তুত। সেটের চারিদিকে খাঁচা- খাঁচার মধ্যে ৪৮টা বেড়াল জুলজুল করে তাকিয়ে ট্রাকের দিকে। ডিরেক্টর স্টিভেনশনের হুকুম পেলে তেড়েফুঁড়ে ছুটে আসবে।
এল সেই বিরাট মুহূর্ত। ডেমারেস্ট নির্দেশমতো অভিনয় করে গেল। খাঁচা থেকে ৪৮টা বিড়াল বাইরে এসে দাঁড়াল। দুধ নিয়ে এরকম ভয়ঙ্কর ভোজনপর্বের দিকে এইবার মাত্র তাকিয়েই পিছু ফিরে চম্পট দিলে যে-যেদিকে পারল! বোধহয় দুধ ছড়ানোর এলাহি কান্ড দেখে গা ভিজে যাওয়ার ভয়ে ওরা পালিয়ে গেছিল। কাট্!
“দি অ্যাবসেন্ট-মাইন্ডেড প্রফেসর” যে ছিল বাস্কেট বল খেলার মজাদার দৃশ্য। এ ছবিতে আছে রাগবি প্রতিযোগিতা। সারাদেশ খুঁজে সেরা রাগবি খেলোয়াড়দের সংগ্রহ করা হল।
দুর্ধর্ষ এই টিমকে খেলতে হল এমন একটা টিমের সঙ্গে যাঁরা প্রফেসরের আবিষ্কার-অনুগ্রহে আকাশে উড়তে পারে। শূওরের মতো ইয়া মোটা মোটা পোশাক নিয়ে এক এক লাফে তারা উঠে পড়ে আকাশে- আবার নেমে আসে মাঠে। সে এত মজাদার দৃশ্য!
স্টেডিয়ামের খানিকটা আর মাঠ তৈরি হয়ে গেল স্টুডিওর মধ্যেই।এ ছবি তো বাইরের ময়দানে তোলা যায় না। কারণ স্পেশাল এফেক্ট আর ট্রিক শট এত বেশি আছে যে কিছুই আর তাহলে গোপন থাকে না।
ফ্লাবার গ্যাসের মহিমায় খেলার মাঠের আকাশে বলের পরিবর্তে খেলোয়াড়ই ভেসে উঠেছে!
খেলায় জেতবার জন্য প্রফেসর তাঁর দুই সুযোগ্য ছাত্র একটা স্যুট আবিষ্কার করলেন। ‘ফ্লাবার গ্যাস’ নামে একরকম গ্যাস দিয়ে বেলুনের মত ফোলানো হলো পোশাকটাকে। ‘ফ্লাবার গ্যাস’ আসলে আন্টি-গ্রাভিটি গ্যাস- মাধ্যাকর্ষণের জারিজুরি এ গ্যাসের কাছে খাটে না। কাজেই এ পোশাক পরে শুধু একটা ভালভ টেনে ধরলে খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড়দের মাথার ওপর দিয়ে বল নিয়ে পৌঁছয় গোলপোস্টের সামনে।
দারুন দৃশ্য! অকল্পনীয়! খেলার মাঠে এরকম অখেলোয়াড়ী খেলা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় নি।
***
‘সন অফ ফ্লাবার’ তুলতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গেছে আর্ট ডিরেক্টররা। হরেক রকম সেট-এর ডিজাইন করতে হয়েছে তাঁদের। প্রোফেসরের বাড়ি, গ্যারেজ, ল্যাবরেটরি, পেনট্যাগনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অফিস, কোর্টরুম ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়াও একটা গোটা শহরের পটভূমিকা, খেলার মাঠও বানাতে হয়েছে।
সেট ডিরেকশন দিয়েছেন কুরী আর গসম্যান। দুজনেই ‘দি অ্যাবসেন্ট- মাইণ্ডেড প্রফেসর’য়ে ছিলেন। কুরী শুধু এই বিদ্যের জন্যেই দু’দুবছর অ্যাকাডেমি আওয়ার্ড পেয়েছিলেন। প্রথমবার ‘দি এয়ারেস’ ছবিতে। দ্বিতীয়বার ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দি সী’।
পোশাক ডিজাইন করেছেন যিনি, সেই বিল টমাসও অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত।
স্পেশাল এফেক্ট ডিপার্টমেন্টের কৃতিত্ব সব চাইতে বেশি। তাদের বানাতে হয়েছে বৃষ্টি ঝড়ানোর মেশিন (এ বৃষ্টি মোটর গাড়ীর মধ্যেও ঝরেছে), উড়ন্ত খেলোয়াড়, কাঁচ ভাঙার আশ্চর্য কৌশল (জানালার সার্সি থেকে দুধের বোতল পর্যন্ত সব কিছুই চুরমার হয়ে যায়,) আর প্রোফেসরের পুরনো ‘মডেল-টি’র জন্যে বহুবিধ মৌলিক কেরামতি!
প্রথম প্রকাশ – আশ্চর্য! ১৯৬৬ অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যা
মূল প্রকাশের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
Tags: অদ্রীশ বর্ধন, অষ্টম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, আশ্চর্য পত্রিকা, বিশেষ আকর্ষণ
বাহ চমৎকার।