পাঠ প্রতিক্রিয়া: অর্থতৃষ্ণা
লেখক: অনির্বাণ ঘোষ (দীপ)
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে আলোচনায় কোনো স্পয়লার থেকে থাকতে পারে। তাই স্পয়লার এলার্ট দিয়ে রাখলাম। যদি স্পয়লার ছাড়া বই পাঠের সুখ নিতে চান, তাহলে এই প্রতিক্রিয়া পড়বেন না।
.
📕 বই: অর্থতৃষ্ণা
✍🏻 লেখক: শ্রী সুমিত বর্ধন
🖌️ প্রচ্ছদ: সুদীপ দেব; অলংকরণ: অদ্রীজা বর্ধন
🖨️ প্রকাশক: কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস
📄 পৃষ্ঠা: ১২২
💰 মুদ্রিত মূল্য: ₹১৬০/- (পেপারব্যাক)
.
🍂 বিষয়বস্তু:
কল্পবিজ্ঞানের একটি বিশেষ ধারার নাম স্টিমপাঙ্ক। এই ধারার বিশেষত্ব হল, এখানে ঘটনাবলী গড়ে ওঠে সাধারণত অতীতে বা কাল্পনিক উনবিংশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবের সময়ে আটকে থাকা পৃথিবীতে। যেখানে নেই কল্পবিজ্ঞানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বা মহাকাশযানের সমাহার। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এবং এগিয়ে চলেছে বাষ্পচালিত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। তবে স্পেকুলেটিভ ফিকশানে কি আর পাঁচিল তুলে রাখা যায়? তাই কল্পিত পৃথিবীর স্টিমপাঙ্কের সঙ্গে মিশে যায় ফ্যান্টাসি। কল্পবিজ্ঞানে চলে ফর্মের ভাঙা-গড়া। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে মিশে যায় জ্যাজ। এই শর্তগুলো পূরণ করে কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিধর্মী লেখার উদাহরণ বাংলা সাহিত্যে নেই। সুমিত বর্ধন স্টিমপাঙ্কের উপর ভর করে গড়ে তুলেছেন এক অন্য কলকাতা।
.
🍁 প্রতিক্রিয়া:
বাংলায় স্টিমপাঙ্ক! এ তো ভাবাই যায় না!!! বাঙালি পাঠক এত সাবলীল হল কবে?! আর লেখকও এমন সাহস দেখালেন??!! এসব নিয়ে কিছু মানুষ ক্যারিকেচার করবেই। তাই বলে কি বাংলা কল্পবিজ্ঞান তথা স্পেকুলেটিভ ফিকশন থেমে থাকবে? উত্তরটা এককথায় “না”… শুরুটা করেছিলেন শ্রদ্ধেয় অদ্রীশ বর্ধন মহাশয়, ধারাটা অটুট রেখে অনেকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, আর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সেই দলে যোগ দিয়েছেন সুমিত বর্ধন।
স্টিমপাঙ্ক একটি বিশেষ ধারা। এখানে কল্পবিজ্ঞানের চেয়ে ফ্যান্টাসি জ্বালানির কাজ করে বেশি। বাঙালি পাঠক যেখানে হার্ডকোর সাই-ফাই হজম করতেই হেঁচকি তোলে, সেখানে স্টিমপাঙ্ক— একটা সাহসী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। শ্রী সুমিত বর্ধন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই উপন্যাস ‘অর্থতৃষ্ণা’-র মাধ্যমে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে স্টিমপাঙ্ক সাব-জঁরার আগমন ঘটিয়েছেন। খুবই গর্বের বিষয় উনি বাংলার প্রথম স্টিমপাঙ্ক থ্রিলার রচয়িতা।
‘অর্থতৃষ্ণা’ আদতে একটি ডিটেকটিভ উপন্যাস। কিন্তু এই উপন্যাস আমাদের চেনা কলকাতা তথা পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে রচিত হয়নি। সুমিতবাবু আমাদের নিয়ে গেছেন এক অল্টারনেটিভ দুনিয়ায়, যেখানে আমাদের চেনা শহরে অনেক অচেনার আগমণ পরিলক্ষিত হয়। আকাশে ওড়ে এয়ারশিপ, মানুষের কাজে সহায়তা করে কলগোলাম, ‘গরুড়’ এক বিশেষ পাখি-মানুষ, হাজারো নাম-না-জানা বস্তুর ছড়াছড়ি! অথচ ভারতবর্ষ কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের অধীনে, অর্থাৎ সময়টা প্রাক-স্বাধীনতা!
সুমিতবাবুর লেখা নিয়ে আলাদা করে আমার কিছু বলার নেই, সাবলীল ভাষাচয়ন, ছন্দময় গতি, বলিষ্ঠ গল্পকথন, পরিপাটি লেখার ধরণ— একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের লেখা থেকে যা কিছু প্রত্যাশিত তার সবকিছু এই উপন্যাসে বর্তমান। বলাই বাহুল্য অর্থতৃষ্ণা একটি অসাধারণ উপন্যাস।
তবে এই উপন্যাস ভালো লাগার আরও একটি কারণ রয়েছে। উপন্যাসের সঙ্গে থাকা অলংকরণ। আমার মতে এই অলংকরণগুলি না থাকলে হয়তো এই উপন্যাস পড়ে যতটা ভালো লেগেছে, ততটা লাগত না! তাই অলংকরণ শিল্পী অদ্রীজা বর্ধনকে আলাদা করে কুর্নিশ জানাই।
.
🌿 Final Verdict :
চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়… হ্যাঁ, এটুকুই বলব ‘অর্থতৃষ্ণা’ সম্পর্কে। একজন একনিষ্ঠ কল্পবিজ্ঞান পাঠক হিসেবে খুব গর্বের সঙ্গে এই উপন্যাস আমি হাইলি রেকমেন্ড করছি।
সব শেষে সুমিতবাবুর কাছে একটা আবদার, ধূর্জটি-যতীন-হেম আবার ফিরে আসুক অন্য কোনো উপন্যাসে, সম্ভব হলে একটা সিরিজ করুন না প্লিজ! এটা কিন্তু পাঠকের দাবী, আশা করি পূরণ করবেন…
.
‘অর্থতৃষ্ণা’ বই প্রকাশ করেছে কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস। বইয়ের গুণগত মান, পৃষ্ঠার মান, ছাপা, বাঁধাই— স্প্লেনডিড। কোনো মুদ্রণ-প্রমাদ পাইনি।
Tags: অনির্বাণ ঘোষ (দীপ), অষ্টম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, সমালোচনা