শ্রমিক ধাবা
লেখক: সৌরভ ঘোষ
শিল্পী: সৌরভ ঘোষ
গ্রাম: চারিদা, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ
এপ্রিল, ২০২০
পৃথিবী ধুঁকছে এক ভয়ানক মৃত্যুব্যাধিতে। পুরুলিয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামে করোনা অতিমারী এখনও মানুষের শরীরে থাবা বসায়নি। সে আসলে থাবা বসিয়েছে দরিদ্র মানুষের মনের গভীরে। কিছু কিছু ঘরে বিদ্যুৎ নেই বহুদিন। কালো ছায়া আর ঘেমো গন্ধ সেখানে জড়াজড়ি করে বেঁচে আছে। গ্রামের পোড়ো শিবমন্দিরটাও অন্ধকারে ভূতের মতো জেগে আছে দীর্ঘ অজানা অপেক্ষায়। যেন এই গভীর অমানিশায় অতি প্রাচীন কোনও জীবাশ্ম ধুঁকছে। আর তার ভেতরের ঈশ্বর? তিনিও বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রেখে অনন্তশয্যায়। গ্রাম নিস্তব্ধ। মৃত্যু উপত্যকা সাজতে তার মাত্র কিছু সময় বাকি। কারও চোখে ঘুম নেই, পেটে ভাত নেই। বিপদকালীন ভারত বনধে ভয়টা আসলে করোনা সংক্রমণ নিয়ে নয়। ভয়টা হল দুবেলা দু-মুঠো অন্ন সংস্থানের। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের রং, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রং, ধবধবে সাদা। যারা দিনে-রাতে মুখ আঁচিয়ে ঢেঁকুর তোলে, তারা সেই রঙের মর্মার্থ অনুভব করতে পারে না। কিন্তু যারা প্রতিদিনের পুঁজি দিয়ে সংসারে উনুন ধরানোর চেষ্টা করে তারা জানে, ওই সাদা রংটুকু মানেই ‘জন্মদিন’।
গ্রামের প্রান্তে নিতুদের আধপাকা ঘরে একটা ছোট্ট টিমটিমে আলো জ্বলছিল তখনও। কতই বা বয়স হবে নিতুর। বারো কি তেরো। মিত্তিরদের জংলা দিঘি পেরোলে বাগদি পাড়া। তারপর থেকেই সূত্রধরদের বস্তি। নিতুদের মতোই গ্রামের আরও চব্বিশটা সূত্রধর পরিবারের আবাসন সেটা। পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ নাচের মুখোশ তৈরি করেই তাদের হাঁড়ি চড়ে। নিতু একলা বসে মন দিয়ে যত্ন সহকারে কাগজের ডেলাগুলো গঁদের আঠার গামলায় একটার পর একটা ভিজিয়ে চলেছে। অনলাইন ক্লাস মানে কী সে জানে না। জানার অবশ্য প্রয়োজনও নেই। অনলাইন ক্লাসে তো আর পেটের জ্বালা মেটে না। অভাব তাকে শিখিয়েছে খিদে চেপে শুধু মুখোশ বানাতে। সে জানে মুখোশ বানিয়ে শহরে না বেচলে কোনও মহামারী নয়, অনাহারই তাকে ছিনিয়ে নেবে পৃথিবী থেকে।
পুরুলিয়ার ছৌ নাচ পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ। সেটা রাজ্য অর্থনীতির মেরুদণ্ডে একরকম কশেরুকার কাজ করে থাকে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর সংকট মুহূর্তে সেই শিল্পে যেমন ভাটা পড়েছে, তেমনই টান পড়েছে মুখোশ শিল্পীদের সংসারেও। ব্যবসার অচলায়তন অবস্থায় তারা মুখোশের পরিবর্তে মুখোশের মতো করেই বানিয়ে চলেছে ফেস মাস্ক। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি যা একপ্রকার দৈনন্দিন প্রসাধন। সেইগুলো নিয়ে তারা প্রতিদিন সাইকেলে করে শহরের কাছাকাছি হাটে পাইকারি দরে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে মুখোশশিল্পীদের পরিবারের আর্থিক মন্দায় খানিকটা হলেও পলি পড়ছে ঠিকই। তবে প্রশ্নটা হল এইভাবে আর কতদিন ?
নিতুর মনে পড়ে যায় ঠাকুমা বুড়ো শিবতলার সামনে বসে ঘাড় নাড়তে নাড়তে গাল পারত। আর ভবিষ্যতের এই অন্ধকার সময়ের কথাই হয়তো বিড়বিড় করে আওড়াত, “শাপ লাইগসে গো… মহাকালের শাপ বটে। ঘোর কলি এলা… চল চ্যাঁরে চ বটে…।’‘
সাঁওতালি ভাষায় ‘চ্যাঁরে’ মানে ‘তাড়াতাড়ি’। ঠিকই তো বলত ঠাকুমা। কত তাড়াতাড়ি সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে। শাপ সত্যিই লেগেছে এই দেশে, এই ছোট্ট, মায়াবী সবুজ-নীল গ্রহটায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে অতিমারী এসেছে মহাকালের অভিশাপের মৃত্যুদূত হয়ে। গ্রামের নিরীহ, অশিক্ষিত মানুষগুলো নতুন রোগের নাম জানে না। সভ্য সমাজের ‘পোভার্টি’ শব্দটাই তাদের ‘অর্থহীন’ জীবনের অকাল সংক্রমণ।
নিতুদের পরিবার বলতে সে আর তার বাবা মলয়। ওদের অবশ্য একটা সাইড ইনকাম আছে। কিন্তু এই অবস্থায় সেটাও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। প্রত্যেক বছর মুখোশ বানানোর চাহিদা কাটিয়ে ওঠার পর মলয় শহরে যায় মজদুরি করতে। শহরে গড়ে ওঠা নতুন কন্সট্রাকশান সাইটগুলোয় দিন মজুরদের চাহিদা এখন বেশি। এই তো গত ফেব্রুয়ারি মাসেই শহর থেকে ডাক এসেছিল কাজের। হাতে কাজ না থাকায় সে ডাক ফেলতে পারেনি মলয়। হাজারো আশায় বুক বেঁধে তাই শহর যাত্রা তার। একটু ভালো করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর তার উজ্জ্বল দু’চোখ। সেটাই তো সাধারণ জীবনের বহুমূল্য চাহিদা। সে জানে শহরে থাকার এই সময়টুকু মেয়েটাকে একা থাকতে হবে। কিন্তু তারপর? মা-মরা মেয়ের সব আহ্লাদ পূরণ করবে সে। একমাত্র সন্তানের মুখের হাসির থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার আর কী হতে পারে? কত অজস্র স্বপ্নে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছিল মলয়ের। বাবা-মেয়ের দূরত্বের এই সময়টুকুর জন্যেই তো সে পাঁচ মাসের টাকা জমিয়ে দুটো মোবাইল ফোন কিনেছে। স্মার্টফোন না হলেও এই দুটো দিয়ে কাজ চলে যায়। শুধু অসহায়, একলা মেয়েটার গলার শব্দটুকু শোনার জন্যই তো এতকিছু। গত হপ্তাতেও রাতের বেলা বাপ-বেটিতে কত কথা হল, কত আবদার মেয়ের। কিন্তু এই বিপদকালীন ভারত বনধ সেটুকু যোগাযোগও ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ হল নিতু কোনও খবর পায়নি বাবার। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মলয়ের কাছে থাকা সেই মোবাইল ফোনও সুইচড অফ।
— “অ নিতু… নিতু মা? মলয় আছে লো?”, লক্ষ্মী বুড়ির গলা। লক্ষ্মী বুড়ি পাশের ঝুপড়িতেই থাকে। চোখ দুটো ঝাপসা, একটা বড় বটপাতায় ঢাকা তার মুখটা। দু’দিকে সুতো দিয়ে কানের পাশে বাঁধা। করোনা মোকাবিলায় এটুকুই তার সামর্থ।
— ‘‘না গো দিদা…”, নিতুর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়ো রিসার্চ অ্যান্ড ডিজিজ
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
এপ্রিল, ২০২০
—কী যেন বললে জায়গাটার নাম? ‘সমীর ধাবা’। তাই না?
—”না স্যার, ‘শ্রমিক ধাবা’। ‘শ্রমিক’ মানে ওই লেবার ক্লাস আর কি…’‘তাড়াহুড়োর মধ্যেও স্কুলের বাধ্য ফার্স্ট বেঞ্চারদের মতো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে আকাশ। তার হাতের ভাঁজ থেকে ক্লাসিফায়েড টেস্ট রিপোর্টের ফাইলটা তখনও উঁকি দিচ্ছে। এই রিপোর্ট ঘিরে আকাশের মনের ভেতর যে দামামা বেজে চলেছে তার নাগাল ডক্টর কুমারান তখনও পাননি। সময়ের স্রোতে নিজের আত্মপরিচয় ফিকে হয়ে গেলেও ‘শ্রমিক ধাবা’-র জিও লোকেশান ট্যাগটা আকাশের জীবনস্মৃতিতে চিরন্তন রয়ে যাবে।
জীবাণুবিজ্ঞানী ডক্টর দীনেশ কুমারানের বত্রিশ বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতায় এই রকম ঘটনা বিরল। বর্তমানে ডক্টর কুমারান পশ্চিমবাংলায় কোভিড-১৯ টেস্টিং ডিপার্টমেন্টের সুপারভাইজার। প্রোফেসর আকাশ মিত্র সিনিয়র হিসেবে ডক্টর কুমারানকেই রিপোর্ট করে থাকে। পুরুলিয়ায় পাঠানো টিমটাকে সে একাই লিড করছে। আকাশের বয়স পঁয়ত্রিশের অস্তরাগে। সাধারণ চেহারায় অসাধারণ হল তার চোখ দুটো। ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং উজ্জ্বল।
সাম্প্রতিককালে পুরুলিয়া টাউনের কাছেই হাইওয়েতে ঘটে যাওয়া কোভিড টেস্ট ক্যাম্পেনের রিপোর্ট টেস্ট ডিপার্টমেন্টে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ব্যাপারটা যদিও পুরোটাই ক্লাসিফায়েড হওয়ায় বিশেষ পাঁচ কান হয়নি। হাইওয়ের পাশে বেশকিছু ধাবাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ের জন্য রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে সেই সমস্ত শ্রমিকদের কোভিড টেস্টের জন্য সেখানে একটা মেডিকেল টিমও পাঠানো হয়। বিগত কিছুদিন ধরে তাদেরই টেস্ট ক্যাম্পেন চলছে সেখানে। সাধারণের চেয়ে এখানে টেস্ট রিপোর্ট অদ্ভুত রকমের ব্যতিক্রমী হওয়ায় বায়ো রিসার্চ ইন্সটিটিউট আরও বেশি সংখ্যক প্লাজমা স্যাম্পেল নেওয়ার চেষ্টা করছে।
—”ধাবার থেকে এখনও অবধি কোনও পজিটিভ কেস ধরা পড়েছে?’‘কুমারানের কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
—”না স্যার।”
—”বেশ। তুমি কি এখনও টেস্ট রিপোর্টটাকে ক্লাসিফায়েড রাখতে চাও? একটা কথা কিন্তু মনে রেখো আকাশ, এই টেস্ট রিপোর্টটা এই মুহূর্তে বিশ্ব গবেষণায় একটা অ্যাটম বোমা, একটা নিউজ। এই ব্রেকথ্রু হাতছাড়া করা আমাদের ঠিক হবে না।’‘কুমারান কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। তারপর নাকের নীচে নেমে আসা ফেস মাস্কটা উঠিয়ে নেন আলতো করে।
—”প্রেস কনফারেন্সে আমি এখনও কিছুই বলিনি…”
আকাশ মাথা দোলায়, “আসলে স্যার আমার মনে হয় পুরো ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেট করার জন্য আমাদের আরেকটু সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া গবেষণার জন্য আমাদের আরও বেশি টেস্ট স্যাম্পেল দরকার। মাত্র বারোটা টেস্ট স্যাম্পেল দিয়ে স্ট্যাটিস্টিকাল কনফরমেশান দেওয়া অসম্ভব বলেই আমার ধারণা।”
— “বুঝেছি। আচ্ছা তোমার কি মনে হয় এটাকে পরিকল্পিত, বেআইনি কোনও মানব-অভীক্ষা বলা যেতে পারে?” ডক্টর কুমারান মৃদু হাসেন। তারপর হাতের তেলোয় পেপার ওয়েট গ্লোবটা ঘোরাতে ঘোরাতে বলেন, “রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে প্রাণ কাদের যায় জানো আকাশ? আম আদমিদের। তারা কিন্তু এই তোমার আমার মতো মানুষ নয়। আম আদমি হল এই সমাজের সব থেকে নীচে পরজীবী স্তরে বেঁচে থাকা মানুষ। মাটির খুব কাছে, যারা মাটিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশান, সামাজিক নিরীক্ষণ হোক বা বাণিজ্যিক সংঘাত। দিনের শেষে ওই আম আদমি… ওরাই… ওরাই হল এই ছোট্ট গ্রহটার সবথেকে সহজলভ্য গিনিপিগ…”
আকাশ নিষ্পলকদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে কুমারানের দিকে। কুমারান বলে চলেন, “তুমিও এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝেছ আকাশ এটা একটা ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা। এই করোনা প্যানডেমিকে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ে কয়েকজন প্রাণ হারালে সমাজের কি কিছু যায় আসে? এমনিও কত মজুর এই দাবদাহে হাঁটতে হাঁটতে অনাহারে, সান-স্ট্রোকে প্রাণ হারাচ্ছে। তার কি হিসেব আছে? এই ধাবার ঘটনায় ব্যাপারটা মিডিয়ার মাধ্যমে করোনা বলে দাগিয়ে দেওয়া খুব সহজ। তাই না? একটা গোপন হিউম্যান ট্রায়াল বা মানব-অভীক্ষার ফেলিওর প্রব্যাবিলিটির থেকেও নস্যি দিনমজুরদের জীবন। ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের ‘খুড়োর কল’ পড়েছ নিশ্চয়ই? একটা টোপ আর একটা ইঁদুরকলে আটকে গেছে আমাদের সারাটা জীবন। যাদের জীবনে চাহিদা কম তাদের টোপের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাদের স্বপ্ন শুধুমাত্র সুস্থ জীবন-যাপন তাদের ক্ষেত্রে টোপ অব্যর্থ। একটু সস্তার খাবার আর সামান্য অর্থের লোভে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের জীবনের চাকা। মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ছে জীবনের ইঁদুর দৌড়ে। আমাদের এই বিস্তীর্ণ সমাজব্যবস্থার থেকে সুবৃহৎ এবং সুলভ ল্যাবরেটরি আর কি কিছু হতে পারে?”
চিন্তার গভীরে ঢুকতে ঢুকতে আকাশের ভুরু দুটো কুঁচকে আসে।
—”আপনার কথা অনুযায়ী যদি ধরেও নিই এটা কোনও গুপ্ত অভীক্ষা বা হিউম্যান ট্রায়াল, তাহলেও আমার মাথার ভেতরে অসংখ্য প্রশ্নের ক্রমাগত বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে। যখন এই টেস্ট রিপোর্ট আমার চোখের সামনে প্রথম দেখি তখন থেকে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে আমার মাথায়। যারা এই অভীক্ষা শুরু করেছে তারা আসলে কারা? তাদের উদ্দেশ্যই বা কী? আর তারা গোপনে যা পরিকল্পনা করে চলেছে সেও নিশ্চয়ই এক বিস্ময়!”
প্রফেসর মিত্র এবং ডক্টর কুমারান দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চিন্তার পরিধি, বিস্ময় এবং রহস্যের ঘনঘটা ক্রমশ তাদের গ্রাস করতে থাকে।
নীরবতা ভঙ্গ করে প্রথমে কুমারানের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “যাই হোক আমাদের কিন্তু এখনও অনেকটা কাজ বাকি। শোনো আকাশ, তোমার টিমের ফুল সাপোর্ট চাই।”
—”অবশ্যই স্যার।”
—”যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুরো টিমটাকে ইউটিলাইজ করে কাজটা শেষ করো। আর যত বেশি করে পারো প্লাজমা স্যাম্পেল জোগাড় করো। তাতে গবেষণার কাজে আমাদেরই বেশি লাভ।”
—তারপর?
—তারপর? তার পরে ওরা এই ‘কোয়ারেন্টাইন’ নামক কারাগার থেকে মুক্ত। আমি যা বললাম বুঝতে পেরেছ তো ?
—”না স্যার।’‘আকাশ নিজের ভেতর চলতে থাকা উত্তেজনার ঝড় কিছুতেই চেপে রাখতে পারে না। মাথার মধ্যে তার হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে তখনও।
—”ওদের কিছু টাকাপয়সা আর খাবার দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। ব্যাস এইটুকুই। নাও এবার তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করো। আমাদের হাতে সময় অনেক কম, কাজ অনেক বেশি…”
—”কিন্তু স্যার… তাহলে… মানে এই ঘটনার গোড়ার রহস্যটার কী হবে…?”
—”আই রিয়্যালি ডোন্ট কেয়ার সান!”
—”কিন্তু স্যার এখনও আশি জনের স্যাম্পেল নেওয়া আমাদের বাকি। আমাদের হাতে এমনিতেই সময় কম। মাত্র ছ’দিন… আর মাত্র ছ’দিনই আমরা ওখানে ক্যাম্প টিকিয়ে রাখতে পারব। এত কম সময়ে…’‘আকাশের কন্ঠস্বরে অনুরোধের সুর স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ডক্টর কুমারান পুরোনো অভ্যাসের মতোই আকাশের কাঁধটা হালকা করে ঝাঁকিয়ে দিতে গিয়েও পিছিয়ে যান।
—”দেখো আকাশ, প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর ভরসা রাখার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল নিজেকে প্রথমে প্রয়োজনীয় হিসেবে প্রুভ করা। এই রিপোর্ট কিন্তু দেশের গৌরব বিশ্বের দরবারে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে। যার জন্য তোমার সাহায্য প্রয়োজন। নাউ অল দ্য বেস্ট…’‘ডক্টর কুমারানের দৃঢ় কণ্ঠস্বর মিলিয়ে যায় বুটের আওয়াজে।
শ্রমিক ধাবা, পুরুলিয়া টাউনের কাছের হাইওয়ে, পশ্চিমবঙ্গ
এপ্রিল, ২০২০:
আচমকা ভারত বনধের ফলে রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই বললেই চলে। আগে যাও বা পুরুলিয়া টাউন থেকে গ্রামের সীমারেখা অবধি কয়েকটা নড়বড়ে সরকারি বাস চলত এখন সেসবও বন্ধ। অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের মতো মলয়রাও তাই হাইওয়ে ধরেই গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছে। মলয়রা মোট পাঁচজন। মলয় আর জুনেদের পরিবার। মলয় আর জুনেদ দু’জনেই চারিদা গ্রামের। কর্মসূত্রে কন্সট্রাকশন সাইটে আলাপ। সেই থেকেই বন্ধুত্ব। জুনেদের ছ’বছরের একটা ফুটফুটে ছেলে আর ন’বছরের একটা মিষ্টি মেয়ে রয়েছে। শ্রমিক না হলেও পরিবারের মায়ায় হঠাৎ করে নেমে আসা এই করোনা যুদ্ধের মৃত্যুডঙ্কায় তারাও পা মিলিয়েছে। এই দীর্ঘ পথশ্রমে তারা দু’জনেই ক্লান্ত। তাই ঘুমচোখে রোদে তেতে যাওয়া বাক্স-প্যাঁটরার ওপরে তারা নিজেদের ছোট্ট শরীর দুটো এলিয়ে দিয়েছে। অদৃষ্ট ওদের নিষ্পাপ ক্লান্তি ক্ষমা করেনি। কখনও জুনেদ, কখনও ওর স্ত্রী পালা করে কোনওরকমে দু’দিক দিয়ে বাক্স দু’টো হিঁচড়ে টেনে নিয়ে চলেছে। বাচ্চা মেয়েটার মুখ থেকে হালকা গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে। বোধহয় খিদে, তেষ্টায় সে কাতর। তার নরম পায়ের চেটো দুটো লাল হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। পায়ের থেকেও পায়ে গলানো হাওয়াই চটি জোড়ার অবস্থা আরও করুণ। মনে হচ্ছে একটু চাপেই ছিঁড়ে ফালাফালা হয়ে যাবে জরাজীর্ণ চটি জোড়া।
মলয় লক্ষ করল গোঙানির আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড খিদেতে মেয়েটার মুখ থেকে বোধহয় লালা বেরিয়ে আসছে। আর সেটাই একটু একটু করে ভিজিয়ে দিচ্ছে মেয়েটার মুখে লাগানো সস্তার কাপড়ের লাল ফেস-মাস্কটা। সময়ের সঙ্গে লাল রংটা আরও গাঢ় রক্তের থেকেও বেশি তীব্র হয়ে উঠছে। যেন কত যুগ অত্যাচারের কালশিটে দাগ মানুষ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে। দুঃখে, অবসাদে মলয়ের ঘরে ফেলে আসা নিজের একলা মেয়েটার কথা খুব মনে পড়তে লাগল। কত বয়স হবে নিতুর… জুনেদের মেয়েটার থেকে হয়তো দু-তিন বছরের বড়। কী করছে এখন সে একা বাড়িতে? বাঁচার চেষ্টা? প্রকৃতির কাছে মানুষ অতটাও অসহায় নয় যতটা সে সময়ের কাছে, অদৃষ্টের কাছে অসহায়। তবে সবচেয়ে বেশি অসহায়তা বোধহয় দারিদ্রের কাছে। মলয় অসহায়। নিতুর খবর পাওয়ার বা গলার আওয়াজটুকু শোনার উপায় তার নেই। জুনেদের মতো তারও মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ নিঃশেষ হয়ে গেছে।
আরও খানিকদূর হেঁটে যাওয়ার পর লাল টালি দেওয়া একটা ছাউনি দেখতে পেয়ে আশায় ওদের চোখ দুটো জ্বলে উঠল। একটা ধাবা। সামনের উঁচু চাল থেকে ঝুলছে লাল আর হলদে রঙের একটা বিশাল বড় বোর্ড ‘শ্রমিক ধাবা’ (থালি প্রতি মাত্র ১ টাকা)। মলয়দের মতো আরও বেশ কিছু শ্রমিকদের ভিড় হয়েছে ধাবার মধ্যে। গাঁ যদিও এখনও অনেক দূর। তবুও এখানে দু’দণ্ড বসে পা আর কোমর ছাড়িয়ে নেওয়া যায়। সবাই সেটাই করছে। খাবারও দিব্যি সস্তা।
ধাবার এককোণে একটা ছোট্ট প্ল্যাকার্ড দাঁড় করানো রয়েছে। তাতে পরিষ্কার বাংলায় গোটা গোটা করে লেখা ‘মন্দিরের প্রসাদ’। দূরেই একটা মন্দিরের চূড়া বোধহয় দেখা যাচ্ছে। প্ল্যাকার্ডের ঠিক নীচেই তিনটে বড় বড় ট্রেতে প্রসাদ হিসেবে বোঁদে রাখা রয়েছে। খিদের কোনও ঈশ্বর হয় না, ক্ষুধার্ত মানুষের কোনও ধর্ম হয় না। তাই খিদের মুখে যে যতটা পারছে সেই প্রসাদই প্রথমে এক-দু মুঠো করে তুলে নিচ্ছে। কেউ আঁচলে বা রুমালের কোঁচড়ে আরেকটু বেশি করে বেঁধে নিচ্ছে তাদের পরিশ্রান্ত সন্তানদের জন্য। জুনেদ আর মলয়ও সেই সুযোগে এক মুঠো করে তুলে নিয়েছে প্রসাদ। জুনেদ আবার পরে দু’মুঠো নিয়েছে তার ছোট্ট দুটো কুঁড়ি ইউসুফ আর সুলতানার জন্য। এই মুঠোভর্তি শুকনো বোঁদে সবার মুখে অল্প হলেও কিছুটা লালিত্য এনে দিয়েছে।
সময় স্রোতের মতো বয়ে চলে। তার সঙ্গে ধাবার ভেতর ক্রমশ বেড়ে চলে মানবসমুদ্র। বাড়ে ভিড় বাড়ার আতঙ্ক। ভুখা পেট আর শুকনো মুখগুলোর মধ্যে কেউ কেউ খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ একটা আওয়াজে সবার চটক ভাঙে। ধাবার বাইরেই গাড়ির শব্দ। সঙ্গে কিছু মানুষের গুঞ্জন। যারা খাচ্ছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ খাওয়া থামিয়ে বিস্ফারিত চোখে বাইরে ছুটে যায়। তিলে তিলে ধাবার মানুষের মধ্যে চেতনে-অবচেতনে ভয় দানা বাঁধে।
বিভিন্ন চ্যানেলের মিডিয়া রিপোর্টার তাদের স্টোরি কভার করতে ব্যস্ত তখনও। ‘শ্রমিক ধাবা’-র মধ্যে ক্লান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের এই জমায়েতকে লাইভ ব্রডকাস্ট করতে ব্যস্ত কিছু উন্নাসিক ক্যামেরার লেন্স। বেশ কিছু উদ্ধত জার্নালিস্ট তখনও মাইক্রোফনে শ্রমিক ধাবার এই জমায়েতকে দিল্লির তবিলিগি-জামাতের যোগসূত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। যথাসময়ে ঘটনাচক্রে পুলিশেরও আগমন ঘটল। তৎক্ষণাৎ তারা ধাবার আশপাশের ভিড় সরিয়ে চার্জ নিল জায়গাটার। সরকারের অনুমতিতে সিল করা হল গোটা ধাবাটাই। আর ধাবার ভেতরের নিরীহ শ্রমিকদের দলটাকে ওর মধ্যেই কোয়ারেন্টাইন করার ব্যবস্থা করা হল। নিয়মানুযায়ী ধাবা ও তার আশপাশের জায়গা জীবাণুমুক্ত করার জন্য আনা হল ‘ইউভি ব্লাস্টার’। অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে চালিত এই যন্ত্র মানবদেহের কোনও ক্ষতি না করেই খুব কম সময়ে অনেকটা জায়গা জীবাণুমুক্ত করতে সক্ষম। প্রত্যেকটা ব্লাস্টার যন্ত্রে রয়েছে ৪৩ ওয়াটের মোট ৬টা করে অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণকারী বাল্ব। যার মোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪৫৩ ন্যানোমিটার, কোনওভাবেই যা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।
কিন্তু যে নিরপরাধ মানুষগুলো ধাবার মধ্যে বন্দি রইল তাদের অবস্থা? সেই নিরীহ মানুষগুলোকে প্রযুক্তি অল্পবিস্তর ছুঁলেও শিক্ষার আলো একেবারেই ছুঁতে পারেনি। তাদের মন, হৃদয় অন্ধ কুসংস্কার গ্রাস করেছে। মেডিক্যাল টিমের যাতায়াতে গুজব আর ভয়ের কালো মেঘের ব্যাপ্তি তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো। সেই ভিড়েই কিছু মানুষ কানাঘুষো আলোচনা করছে যে মেডিক্যাল টিম এসেছে তাদের চিকিৎসার জন্য। তার মানে তারা আগেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছে এই মারণ রোগে। না হলে চিকিৎসার কী প্রয়োজন? যার ফলে ধাবার ভেতর বাঁচার আশা কারোর নেই বললেই চলে। কিছু না জানুক, তারা এইটুকু জানে যে এই রোগের ‘ইলাজ’ নেই। মৃত্যুচিন্তার বিষফলা ক্রমশ গেঁথে যাচ্ছে অশিক্ষিত নিরীহ মানুষগুলোর মনের গভীরে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়ো রিসার্চ অ্যান্ড ডিজিজ
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
এপ্রিল, ২০২০:
—‘‘টেস্টিং থেকে কিছু নতুন আশার আলো পাওয়া গেল? কী অবস্থা এখন?’‘কুমারানের কন্ঠস্বর শোনা যায়। তিনি উত্তেজিত।
আকাশ মৃদু হাসে, ‘‘যা বলেছিলাম স্যার। আপনার কথা রাখার চেষ্টা আমরা আপ্রাণ করছি। হাতে আমাদের সময় কম থাকলেও, আমরা আমাদের গবেষণা এই চারদিনে প্রায় অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। এখনও অবধি পঞ্চান্নটা প্লাজমা স্যাম্পেলের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি আমরা সার্চ করেছি। ফলে আমরা এখন অনেকটা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলতে পারি ধাবার ভেতর যা ঘটেছে সেটা একটা হিউম্যান ট্রায়াল ছাড়া আর কিছুই না। বরং হয়তো বলা যেতে পারে ধাবাটাই হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য তৈরি করা হয়েছে। একশো শতাংশ টেস্ট সম্পূর্ণ করতে এখনও দশটা স্যাম্পেল টেস্ট করা বাকি। সেইগুলো টেস্ট হলেই আমরা এই অনুমান গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।’’
—’‘আই সি… ভেরি ইন্টারেস্টিং… আর স্যাম্পেলগুলো পরীক্ষা করার সময় তোমরা কোন পদ্ধতি ধরে এগোচ্ছ? আগের মতোই ‘জিন এডিটিং- টেস্ট প্রিন্সিপাল?” কুমারান খুবই উত্তেজিত। উনি চোখ থেকে চশমাটা খুলে পাশের টেবিলে রাখেন।
—”হ্যাঁ স্যার।” আকাশের বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো আরও একবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে মৃদু হাসে।
“আমরা আগেও যে জিনিসটা আশঙ্কা করছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সেটাই ঠিক স্যার। ধাবার ভেতরে থাকা সাবজেক্টদের শরীরে কোনও ভাবে ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়েছে অথবা কোনওরকম খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। না হলে প্লাজমা পরীক্ষার রিপোর্ট যা বলছে তা অসম্ভব।”
—‘‘বেশ… তারপর?”
আকাশ বলে চলে, “আমাদের শরীরে ‘বি ৩৮’ এবং ‘এইচ ৪’ এই দুটো অ্যান্টিবডি ভীষণ বেসিক। যা প্রায় সবার শরীরেই বিদ্যমান। তবে সাধারণভাবে পৃথিবীর সর্বত্র কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের দেহে দেখা যাচ্ছে এই দুই অ্যান্টিবডির প্রভাব বেশি। অর্থাৎ শরীরস্থ এই দুই অ্যান্টিবডির তীব্র কার্যকারিতা কোভিড দূরীকরণে সক্ষম। নাম না জানা এই ভ্যাকসিন সেই দুটো অ্যান্টিবডির কাজ করার পদ্ধতিকে অনুসরণ করেই তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘কম্বাইন্ড এফেক্ট’ যা একটা ‘নিউট্রালাইজিং এজেন্ট’-এর কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্নটা আসলে অন্য জায়গায়। যেখানে এই মুহূর্তে অক্সফোর্ডকে নিয়ে পৃথিবীর তাবড় তাবড় মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করে চলেছে, সেখানে এই ভ্যাকসিন যারা বানিয়ে ফেলেছে আমার মতে তারা এই নিয়ে অতিমানবিক জ্ঞানের অধিকারী।”
—”ওকে… গো অন…”
—‘‘প্রথম দিকে ধাবায় সাবজেক্টদের শরীর থেকে প্লাজমা স্যাম্পেল নেওয়ার সময় পুরো ব্যাপারটা ঠিকই এগোচ্ছিল। কিন্তু জটিলতা বাড়ল যখন প্রথমদিকের কয়েকটা স্যাম্পেলের ভেতর ফার্স্ট ইটারেশনে একটা কোভিড পজিটিভ কেস ধরা পড়ে এবং ঠিক ছ’ঘণ্টার মাথায় সেই একই সাবজেক্ট থেকে স্যাম্পেল কালেক্ট করা হয়। যার রিপোর্ট আসে কোভিড নেগেটিভ। এরকম অদ্ভুত রেজাল্টের জন্য আমরা ভাবি এটা বোধহয় আমাদের টেস্টিং কিটেরই ফল্ট। এরকম এক-দু’বার হয়েই থাকে। কিন্তু চোখের পলকে প্রায় সমস্ত স্যাম্পেলেই এইরকম চেঞ্জ আসতে শুরু করে। আমরা তখন আপনার অনুমতিতে স্যাম্পেলগুলোকে ল্যাবে এনে আরও ডিটেইল পরীক্ষা করার চেষ্টা করি। যেহেতু এই লেবারদের বেশিরভাগই রেড জোন অঞ্চল থেকে এসেছে তাই তাদের মধ্যে যে সিম্পটোমেটিক (সংক্রমণের বহিঃপ্রকাশ) এবং অ্যাসিম্পটোমেটিক (বহিঃপ্রকাশ ছাড়া) দু’ধরনেরই সংক্রমণ থাকবে সেটুকু নিশ্চিত। কিন্তু সেকেন্ড ইটারেশনে প্রায় সমস্ত টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসায় আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এই ব্যাপারটা আপনার জানা…”
ডক্টর কুমারান উত্তেজনা এবং গাম্ভীর্য মেশানো স্বরে বলেন, “হ্যাঁ। সেটা তো তুমি বলেই ছিলে। তারপর?”
—”ল্যাবে স্যাম্পেলগুলো এনে আমরা পরীক্ষা শুরু করি এটা বুঝতে যে যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তারা সত্যিই আগে কখনও কোভিড আক্রান্ত হয়েছে কি না। সেই সত্যানুসন্ধান করতে গিয়েই আমরা এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হই। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার টেস্টের মাঝখানে যে ছ’ঘণ্টা বিরতি থাকছে তারই মাঝখানে কোনওভাবে সাবজেক্টের শরীরে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যার উৎস আমরা প্রথম দিকে বুঝতে পারিনি।”
—‘‘শ্রমিক-মজুরদের মধ্যে তো কেউ আর ইনজেকশন নিয়ে ঘুরবে না। সে ধারণা অমূলক। তাহলে খাবারের মধ্যেই… কিন্তু সেরকম কিছু হলে সরকার থেকে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে সে খাবার শ্রমিক ধাবা ছাড়াও অন্য আরও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে অন্য জায়গাতেও…”
—”এগজ্যাক্টলি স্যার! সেটাই তো পয়েন্ট। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে এরকম রিপোর্ট আসেনি। আর ঠিক সেই কারণেই সমস্ত সন্দেহ ‘শ্রমিক ধাবা’-র ওপর বর্তায়। আমরা সেই খাবার বন্ধ করেও একই রেজাল্ট পেয়েছি। তার মানে ধাবার ভেতরেই এমন কিছু রয়েছে যেখান থেকে এই ভ্যাকসিন আসছে…”
—‘‘আই সি… স্ট্রেঞ্জ! তাহলে?”
—‘‘আমরা যখন পুরোদমে অনুসন্ধান চালাই তখন ধাবাতে খাবার বলতে তিনটে ট্রে-তে মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে বোঁদে ছাড়া আর কিছুই পাইনি। যা ভীত, অন্ধবিশ্বাসী মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ঈশ্বরকে স্মরণ করে নমস্কারের ভঙ্গিতে মুখে পুরে দিচ্ছে। “
—”ওহ মাই গড! তার মানে ওই প্রসাদই…’‘ উত্তেজনায় কথা ফুরিয়ে যায় ডক্টর কুমারানের।
আকাশের মুখে মৃদু হাসি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রহস্যের ঘোলা জল পরিষ্কার করে সে অনেকটাই আশার আলো দেখতে পেয়েছে। সে বলে, ‘‘আমরা সেই প্রসাদের কিছু স্যাম্পেল ল্যাবে এনে পরীক্ষাও করি। বলাই বাহুল্য আমাদের সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। সেই প্রসাদই হল ভ্যাকসিনের মূল উৎস।”
কুমারান এবং আকাশ দু’জনেই কিছুসময়ের জন্য স্তব্ধবাক হয়ে পড়ে।
—‘‘যাই হোক, শেষ পর্যন্ত পেলে তাহলে?”
—‘‘হ্যাঁ স্যার। কিন্তু গল্প এখনও বাকি আছে একটু। এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আরও একটু অদ্ভুত। আমরা যেটা কখনওই আশা করিনি। এর ফলে আমাদের আরও টেস্টের প্রয়োজন আছে।’’
—‘‘বেশ সে না হয় হল। কিন্তু ব্যাপারটা আরেকটু খুলে বলো।”
—‘‘আসলে স্যার এই দুটো অ্যান্টিবডির বৈজ্ঞানিক কার্যকারিতা অনুযায়ী আমরা যেটা আশা করেছিলাম সেটা একটু অন্যরকম। এই দুটো অ্যান্টিবডি একসঙ্গে প্রথমেই যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে থাকে সেটা হল, SARS-CoV-2 ভাইরাসের প্রোটিন নির্মিত খোঁচগুলোকে নষ্ট করে দেয়। ফলে এই ভাইরাস মানবশরীরের কোষে থাকা ACE-2 রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। তাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমে যায় এবং রোগী ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এখানে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। এই ভাইরাস নিজের মধ্যে জেনেটিক মিউটেশান ঘটিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এবং একটা গণ্ডির পর ইমিউন হয়ে গেলে সেটা সব ভাইরাসই করে থাকে। আর ঠিক এখানেই এই ভ্যাকসিন খাপ খোলা তলোয়ারের মতো কাজ করছে। সে ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন বন্ধ করে দিয়ে সেটার জীবনচক্রকে ক্রমশ স্লো-পয়জন করে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’’
—”এ তো সত্যিই অসামান্য কাজ! ঠান্ডা মাথার একটা পারফেক্ট হিউম্যান ট্রায়াল। এর পেছনে কারা আছে সেটা সত্যিই আমার এখন জানতে ইচ্ছে করছে।”
কুমারান নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকেন প্রফেসর আকাশ মিত্রের দিকে। তারপর দুজনেরই মুখে খেলে যায় নীরব হাসির রেখা।
—”তাহলে প্রেস কনফারেন্স?” কুমারান প্রশ্ন করেন।
—”আমরা কিন্তু এখনও প্রস্তুত নয় স্যার…” আকাশের চোখের চাহনি স্পষ্ট।
—‘‘ঠিক আছে…অসুবিধে নেই। বাট স্পিড আপ…”
কুমারান দায়িত্ব রক্ষায় চির অটল।
শ্রমিক ধাবা, পুরুলিয়া টাউনের কাছের হাইওয়ে, পশ্চিমবঙ্গ
এপ্রিল, ২০২০:
মধ্যরাত্রি।
—”জুনেদ… জুনেদ ভাইজান?’’ মলয় ফিসফিস করে ওঠে, “জেগে আছেন ভাইজান…?”
জুনেদ এতক্ষণ ঘুমের ভান করে গুটিয়ে শুয়েছিল। সে মলয়ের গলা পেয়ে চোখ দুটো পিটপিট করে। গত দু’দিন ধরে তারা এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল আর পালানোর পরিকল্পনা করে চলেছিল। যে কোনও প্রকারেই মলয়কে নিতুর কাছে পৌঁছতে হবে আর জুনেদকে গ্রামে আম্মির কাছে। গুজব যেভাবে রটেছে তাতে তারা জানে বাঁচার আশা ক্ষীণ।
—‘‘ভাইজান, আমরা হাইওয়ের এই রাস্তাটায় আর যাবক লাই বটে। বুইঝতে পাইরছেন টো? আমরা রেইললাইন দিয়ে সিধে পৌঁছে যাব বটে।’’
জুনেদ ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে একবার পালিয়ে গেলে যে পুলিশি ঝক্কি আছে সে ব্যাপারে ওরা সতর্ক। তাই হাইওয়েতে পিছু নেওয়া যে খুব স্বাভাবিক সেটা ওদের জানা। রাতের নিস্তদ্ধ অন্ধকারে ওরা পাঁচজন বেড়িয়ে পড়ে। আকাশের কোণে কোথাও মেঘ করে আছে। ঝলসানো একফালি চাঁদ মাঝে মাঝে সেই শিকল কেটে বাইরে আসতে চাইছে। অন্ধকারে পৃথিবীটা হঠাৎ যেন ঝাপসা হয়ে এসেছে। জুনেদের কোলে সুলতানা আর ফারিদার কোলে ইউসুফ। মোবাইলের দুর্বল ফ্লাশলাইটটা দিয়ে মলয় ওদের পথ দেখিয়ে চলেছে। রেললাইনের এবড়োখেবড়ো, পাথুরে রাস্তা। শুধু সাদা সিমেন্টের স্তরগুলো জেগে আছে। এই নিশাচরদের নাট্যশালায় তারাই একমাত্র দর্শক।
মলয় পাঁচ মিনিটের জন্য মোবাইলটা চার্জ করতে পেরেছিল। তাতে এখন দু’শতাংশ চার্জ অবশিষ্ট। নিতুকে তার আর ফোন করা হয়নি। শুধু মলয়ের পিঠব্যাগে নিতুর জন্য নেওয়া খেলনা-বাটি, ছোট্ট লাল ফ্রক, চকোলেটের র্যাপারগুলোর অনুরণন এই অন্ধ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। ক্রোশের পর ক্রোশ হেঁটে পা-এর পেশীগুলো যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে ওদের। কীসের নেশায় হাঁটছে ওরা? বাঁচার নেশা? নাকি মৃত্যুর?
দূর থেকে ভেসে আসে হুইসেলের শব্দ। এই অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে তাদের উল্টো দিক থেকে যেন একটা আগুনের গোলা তেড়ে আসছে। তাদের ক্লান্ত শরীর বুঝতে পারেনা, বোধশক্তি লুপ্ত হয়েছে অনেকক্ষণ। ওটা কি কোনও টাইম টানেল? এক লহমায় তাদেরকে নিতুর কাছে, আম্মির কাছে পৌঁছে দেবে? তারা হতবাক। তাদের চলার শক্তি নেই। হুইসেলের আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে।
***
আচমকা নিতুর ঘুম ভেঙে যায়। কী বিশ্রী স্বপ্ন! এরকম স্বপ্ন আগে কখনও দেখেনি সে। বাবার জন্য তার মনটা হু হু করে ওঠে। দীর্ঘ অপেক্ষার কাছে সর্বশক্তিমানও হয়তো একদিন হার মেনে যাবে। নিতুও হয়তো একদিন লাল ফ্রক পরে মলয়ের ভেজা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হেসে উঠবে। মানুষ, ভ্যাকসিন, ভাইরাস সব যেদিন মুছে যাবে এই পৃথিবী থেকে। শুধু ওই অপেক্ষাটুকুই হয়তো আঁকড়ে বাঁচবে এই ক্ষুদ্র নীল-হলুদ গ্রহটা। যুগের পর যুগ পেরিয়ে যখন জীবাশ্ম খোঁজা হবে, দেখা যাবে এই সভ্যতা সব অসুখের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারলেও দারিদ্রসীমার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি।
(এই চরম দুঃসময়ে গল্পটি উৎসর্গ করা হল সেই সমস্ত মানুষদের, যাঁদের কাছে আমরা কখনোই পৌঁছতে পারি না। কিন্তু নিঃশব্দে তাঁরা আমাদের ছুঁয়ে আছেন সকাল থেকে সন্ধে।)
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, পঞ্চম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সৌরভ ঘোষ
খুব সুন্দর লেখা। চাওয়া-পাওয়া, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ক্রূর বাস্তব আর কল্পনা— সব মিশে গেছে এতে।
ধন্যবাদ ঋজু বাবু। আপনার ভালোলাগা প্রাপ্তি। প্রণাম ও ভালোবাসা নেবেন ।
সাম্প্রতিককালে পড়া গল্পের মধ্যে অন্যতম সেরা গল্প আমার মতে এটাই। কলম অক্ষয় হোক।
গতিময়, ঝরঝরে। দারুন হয়েছে সৌরভ বাবু। এমন গল্প আরও আসুক।
অনেক ধন্যবাদ গৌতম বাবু। আপনাদের ক্রমাগত উৎসাহের ফল এই দুঃসাহসিকতা। আমাকে “আপনি” বলে লজ্জা দেবেন না। 🙏🙂 আশীর্বাদ করুন।
আম আর আম আদমির পার্থক্যটা ঠিক কতটা ? তুলনাটা হয়ত অনেকের আম আর আমড়া তুলনা বলে মনে হতে পারে, তবে গল্পটির পরিপ্রেক্ষিতে এর প্রাসঙ্গিকতা আছে । ‘আম’ নিয়ে আমাদের ধ্যান ধারণা যতটা স্পষ্ট ‘আম আদমির ‘ বেলায় কিন্তু সেটা একেবারেই বলা যায় না । ব্যাপারটা অনেকটা যেন “মধ্যবিত্তের” ধারণার মত । এই ভূভারতে কে মধ্যবিত্ত সেই নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য রয়েছে । এই নিয়ে একটি পরিবেদনের শিরনামই ছিল “everyone in India thinks they are middle class and almost no one actually is “. ফলে বুঝতেই পারছেন বিষয়টি বেশ পেঁচালো ও স্পর্শকাতর । গল্পকার আম আদমির নিজস্ব সংগা দিয়েছেন – “আম আদমি হল সমাজের সবচেয়ে নীচে পরজীবী স্তরে বেঁচে থাকা মানুষ” । পাঠকদের যদি আম আদমি সংজ্ঞায়িত করতে বলা হলে তাদের থেকেও ভিন্ন মত পাওয়া যাবে । ফলে আমার মনে হয় এই স্পর্শকাতর বিষয় গুলি এভাবে হয়ত না বলাই ভাল । গল্পের প্রয়োজনে বলতে যদি হয়ই তবে পরোক্ষে । স্টেটমেন্ট এর মাধ্যমে নয় ।
দ্বিতীয়ত গল্পকার আবার এই এম আদমি দের পরিজীবী বলছেন । পরজীবী বলতে যদি তাদেরকে ধরি যারা ওপরের করা উপার্জনের উপর নিরভর্শীল তাহলে বলতে হয় রাষ্ট্র সব চেয়ে বড় পরজীবী । গল্পের মুখোশ বিক্রেতাদের পরজীবী একেবারেই বলা যায় না । তারা কার উপার্জিত অর্থের উপর নির্ভরশীল ? সাম্প্রতিক কালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসা বাঁচাতে কোরোনা লোন দিয়ে ছিলেন তারপর সেই দিয়ে কিনলেন ল্যাম্বরগিনী । এধরণের মানুষজন ভারতেও যে আছে সন্দেহ নেই । জানিনা লেখক এদেরকে পরজীবী বলবেন কি না । আমি নিশ্চিত এরাও পরজীবী ।
এই গল্প কোরোনা কালে এক দল পরিযায়ী শ্রমিকদের যারা নিজেদের অজান্তে একটি রাষ্ট্রের চালানো একটি ভ্যাক্সিন পরীক্ষায় সামিল হয়ে পড়বে । তারপর কালক্রমে সেখান থেকে পালাবে । গল্পটির তার কথনের গুনে পাঠকের ভাল লাগবে সন্দেহ নেই । তবে গল্পের মূল ঘটনা প্রবাহটি আরো টান টান হতে পারত । গল্পে সেই সুযোগটা ছিল ।
প্রদীপ্ত বাবু অনেক ধন্যবাদ আপনার গভীর পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য। এমন পাঠ প্রতিক্রিয়া এবং আলোচনার বড় প্রয়োজন। এবারে ব্যাখ্যাগুলো লেখার চেষ্টা করি।
প্রথমত, হ্যাঁ আপনি সঠিক। “আম আদমি” আমি নিজেও গল্পে সংজ্ঞায়িত করিনি। এটা শুধুই কুমারানের দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গি আকাশের নাও হতে পারে। তাই আকাশ এখানে নিশ্চুপ। এই সংজ্ঞা মলয়ের ক্ষেত্রে নাও লাগতে পারে। তাই বলা হয়েছে তার ঘর আধপাকা, আর্থিক দিক থেকে গ্রামের অন্যদের থেকে সামান্য সচ্ছল। আমারই হয়তো কলমের ত্রুটি আপনার ঐটুকু অংশ গল্পে বেশি প্রাধান্য পেলে।
দ্বিতীয়ত, পরজীবী কিন্তু এই বিশ্বে প্রতিটি মানুষ। যাদের জীবিকা আছে, যারাই নির্ভরশীল। সে আর্থিক দিক থেকে উঁচু হোক বা নিচু। যদি না খুব উঁচু শ্রেণীর কারুর বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে থাকে। কারণ অর্থ মানুষকে চিরকালের জন্য স্বনির্ভর করতে পারে না। সেও ফুরিয়ে যায় যদি না তাকে অন্য কোথাও খাটানো হয়। এবার আসি আমার লেখায়। সেখানে পরজীবীকে একটা শ্রেণী বিন্যাস ধরা হয়েছে (like pyramid) এবং মুখোশ শিল্পীদের শেষস্তরে ধরা হয়েছে। লেখাও আছে সেটাই। তার মানে ওপরের স্তরে যারা আছেন তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ কিন্তু অবশ্যই তারা উপস্থিত। আর শেষ স্তরে এই মানুষরা আছে মানে তারা খুব নিম্নমানের পরজীবী কিন্তু সংখ্যায় বেশি। আপনি অভিজ্ঞ পাঠক, পিরামিডের শেষস্তর বুঝতেই পারছেন। সুতরাং এখানে শুধু আম আদমিও না, পরজীবীরও অর্থের সংশ্লেষ রয়েছে।
তৃতীয়ত, গল্পে বলা নেই হিউম্যান ট্রায়াল কে করছে রাষ্ট্র নাকি অন্যকেউ। ঐটুকু অবকাশ পাঠককে দিলাম। যে যার মত ফিল ইন দ্য ব্ল্যাঙ্কস করে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ আবারও 🙏 এত গভীর পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য।
তোমার লেখা খুব এ সুন্দর ও সাবলীল সেটা বলতেই হবে । আর গল্পের সবাই সংজ্ঞাটি নিয়ে একমত নয় । তবে “বিশ্বের প্রতিটি মানুষ পরজীবী” এই কথাটাতে একটু ভেবে দেখো ।
পড়তে একটু দেরি হয়ে গেল। ফাটাফাটি লেখা। এত ছোট পরিসরে এরকম লেখা খুবই কঠিন। আরো ভাল লেখা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকব।