ওয়্যারউল্ফ: মিথ থেকে সাহিত্যে
লেখক: প্রিয়াংকা মিত্র
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
আজকের দিনে প্রায় সবাই ‘ওয়্যারউল্ফ’ চরিত্রটির সঙ্গে পরিচিত, যার জন্য মূলত ধন্যবাদ জানাতে হয় পপুলার কালচার এবং মিডিয়াকে—বিশেষ করে হরর চলচ্চিত্র যেমন Ginger Snaps (২০০০), Underworld (২০০৩), ১৯৪১ সালের ক্লাসিক The Wolf Man-এর ২০০৯ সালের রিমেক, মিউজ়িক ভিডিয়ো (যেমন মাইকেল জ্যাকসনের বিখ্যাত Thriller [১৯৮৩]-এর ওয়্যারউল্ফ/ওয়্যারক্যাট চরিত্র), Teen Wolf (২০১১-১৭), Wolfblood: The First Pack (২০১২-১৭)-এর মতো টিভি সিরিজ়, কমিক বই, কম্পিউটার গেম, ১৯৯১ সালে প্রকাশিত এল জে স্মিথের বিখ্যাত উপন্যাস সিরিজ় The Vampire Diaries, ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত Harry Potter and the Prisoner of Azkaban ও তার পরবর্তী পর্বগুলি এবং স্টেফেনি মায়ারের লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস Twilight সিরিজ় (২০০৫–০৮) ইত্যাদি। তবে হলিউডের এই ভয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত স্টিরিয়োটাইপ ওয়্যারউল্ফ চরিত্রটি অতীতে বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীন যুগে উৎপত্তি-হওয়া এই চরিত্রটির বহু পূর্বসূরি রয়েছে এবং ইতিহাস জুড়ে ওয়্যারউল্ফকে কখনও হিংস্র শিকারি হিসেবে, আবার কখনও মহানায়ক বা সম্মানিত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে—এভাবে এর চিত্রায়ণ বারবার সৎ ও অসৎ, ভালো ও মন্দের সীমারেখায় দোদুল্যমান থেকেছে।
‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’য় বলা হয়েছে: ‘…werewolf, in popular legend, a human who can shape-shift into a wolf or a hybrid wolf-human form. In many werewolf stories this transformation occurs at night, often under the influence of a full moon.’১ The Vampire Diaries, Harry Potter—এই কাহিনিগুলিতে দেখা যায়, পূর্ণিমার রাতে চাঁদের প্রভাবে মানুষটি ওয়্যারউল্ফে পরিণত হচ্ছে। Vampire Diaries-এ একে Moon Curse-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু Twilight সিরিজ়ে দেখানো হয়, মানুষটি নিজের ইচ্ছামতো যে-কোনো সময়ে ওয়্যারউল্ফে পরিণত হতে পারে। তবে নেকড়ে-মানবকে কেন্দ্র করে গড়ে-ওঠা কিংবদন্তিগুলির বয়স সুপ্রাচীন, যার শিকড় পৌঁছে যায় মানবসভ্যতার প্রাচীনতম নথিপত্রে।
ওয়্যারউল্ফের মিথ
প্রাচীন যুগে বিশ্বাস করা হত, মানুষ ও নেকড়ে একই পূর্বপুরুষের উত্তরসূরি; সেখান থেকেই নেকড়ে-সম্পর্কিত মিথ ও পূজাপার্বণের সূত্রপাত। আধুনিককালে কেউ কেউ মনে করেন, নেকড়ে-মানব আসলে এক ধরনের সংকর প্রজাতি—মানুষের প্রাণীজগৎ থেকে উন্নত মানবরূপে উত্তরণের পথে সৃষ্ট এক উপজাত বা সেই পরিবর্তনের জীবন্ত স্মারক। নৃতত্ত্ববিদদের মতে এই ধরনের প্রাণীর প্রতি বিশ্বাস জন্মাতে পারে, আধুনিক মানুষের লোমশ পূর্বপুরুষদের কিছু ক্ষুদ্র দল দীর্ঘকাল ধরে নির্জন অরণ্য ও জনশূন্য অঞ্চলে টিকে থাকার ফলে। সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হল—নেকড়ে-মানব বিষয়ক কুসংস্কার মূলত পাথর যুগের অতিরঞ্জিত কাহিনি, যেখানে রাতের আঁধারে পশমে মোড়া যোদ্ধাদের দল নেকড়ের ছদ্মবেশে গ্রামে হানা দিত। কেন প্রাচীন মানুষ রূপান্তর বা আকার পরিবর্তনকে স্বাভাবিক মনে করত, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফ্র্যাংক হ্যামেল তাঁর Human Animals (১৯১৫) গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়টি শুরু করেছেন এই বলে: “The belief that men can change into animals and animals into men is as old as life itself. It originates in the theory that all things are created from one substance, mind or spirit, which according to accident or design takes a distinctive appearance, to mortal eyes, of shape, colour, and solidity. Transformation from one form to another then becomes a thinkable proposition, especially if it be admitted that plastic thought in the spirit world takes on changed forms and conditions more readily than in the world of matter. The belief of primitive races that all created beings have an immortal soul dwell-brute creating in a material body applies equally to brute creation and to the human race. ‘In the beginning of things,’ says Leland, ‘men were as animals and animals as men.’ [Leland, C.G., ‘Algonquin legends of New England’, 1884] The savage endows brutes with similar intelligence and emotions to his own. He does not distinguish between the essential nature of man, of various beasts, and even of inanimate objects, except where outward form is concerned; and he senses, even more clearly than his civilized brother, the psychic bonds which unite man and the animals.”২
স্থানভেদে পরিবর্তিত নাম
রূপান্তরের ঘটনাটি প্রাচীন যুগের বহু লেখকের লেখায় বিস্তারিতভাবে নথিবদ্ধ রয়েছে। প্রাচীন রোমে মানুষ, যারা নিজেদের নেকড়ে বা অন্যান্য হিংস্র প্রাণীতে রূপান্তরিত করত, তাদের জন্য প্রচলিত শব্দ ছিল ভারসিপেল্লিস (versipellis)—যার অর্থ ‘ত্বক পরিবর্তনকারী’। ‘ওয়্যারউল্ফ’ (werewolf) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘মানুষ-নেকড়ে’, তবে এটি অনেক পরে প্রচলিত হয় এবং এর উৎস অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষায়। এই শব্দটির প্রথম লিপিবদ্ধ ব্যবহার পাওয়া যায় রাজা ক্যানিউটের (Kir Canute, শাসনকাল ১০১৬–৩৫) Ecclesiastical Ordinances গ্রন্থে, যেখানে এটি শয়তানের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
ইউরোপের অন্যান্য দেশে এ ধরনের রূপান্তরের জন্য ব্যবহৃত কিছু শব্দ হল—ফ্রান্সে লু-গারু (loup-garou), ইটালিতে লুপো-মানারো (lupo-manaro), স্পেনে লোবোম্ব্রে (lobombre), গ্রিসে ভ্রাইকোলাকাস (vrykolakas), এবং সুইডেনে ভা-রুল্ফ (va-rulf)। উল্লেখযোগ্য যে, উত্তর গোলার্ধের বাইরে, যেখানে নেকড়ে প্রধান শিকারি নয়, সেখানে রূপান্তরের ধারণাটি স্থানীয় মানুষের পরিচিত অন্য প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন—ভারতের গ্রামীণ মানুষ অতীতে ‘ওয়্যার-টাইগার’ (মানুষ-বাঘ) নিয়ে আতঙ্কে বাস করত, আর আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে মানুষ সমানভাবে ভয় পেত ‘ওয়্যার-লেপার্ড’ (মানুষ-চিতাবাঘ) এবং ‘ওয়্যার-লায়ন’ (মানুষ-সিংহ) নিয়ে।
নেকড়ে-মানবের রূপ ও বৈশিষ্ট্য
সংজ্ঞা অনুযায়ী, নেকড়ে-মানব এমন একজন ব্যক্তি—পুরুষ বা নারী—যিনি স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাবে নেকড়ের রূপ ধারণ করেন এবং সেই প্রাণীর সব শারীরিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেন—যেমন ঘন ও ঝাঁকড়া লোমে ঢাকা দেহ, দপদপে চোখ, ধারালো ও দীর্ঘ দাঁত আর ক্ষুরধার নখ। তাদের স্বভাবে ফুটে ওঠে নেকড়ের মতো প্রাণীর বৈশিষ্ট্য—চাতুর্য ও ধূর্ততা, দ্রুতগতি, পশুর মতো হিংস্রতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন নিষ্ঠুরতা। এদের মধ্যে থাকে অতৃপ্ত ক্ষুধা, এবং সময়ে সময়ে তারা আক্রান্ত হয় জীবিত বা মৃত উভয়ের মাংস ও রক্ত ভক্ষণ করার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষায়।
নেকড়ে-মানবের চেহারা একরকম নয়। অনেক সময় রূপান্তরের পর কেউ পুরোপুরি নেকড়ে হয়ে যায়, আবার কখনও তারা মানুষ ও নেকড়ের ভয়ংকর সংমিশ্রণ—যেমন মানুষের দেহে নেকড়ের মাথা, কিংবা নেকড়ের দেহে মানুষের চোখ ও হাত। এই রূপান্তর স্থায়ীও হতে পারে, আবার অস্থায়ীও হতে পারে; লোকবিশ্বাস অনুযায়ী তা প্রায়শই পূর্ণিমার চাঁদের প্রভাবে ঘটে। দিনের আলোয় নেকড়ে-মানব মানবরূপে ফিরে এসে তার নৃশংসতা আড়াল করে রাখে, এমনকি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তার ভয়াল গোপনীয়তা গোপন থাকে। নেকড়ের রূপে থাকাকালে আঘাত পেলে সেই ক্ষত তার মানবদেহেও দেখা দেয়, আর নেকড়ে-মানব নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গেই সে আবার মানুষে পরিণত হয়।
নেকড়ে-মানব হয়ে ওঠার পূর্বনিয়তি নাকি কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে চিহ্নিত করা যায়। এসব লক্ষণের মধ্যে আছে—ঘন ভ্রূ, যা নাকের উপরে একসঙ্গে মিলিত; লম্বা ও বাঁকা নখ; মাথায় নীচু করে বসানো ছোটো কান; প্রতিটি হাতে অস্বাভাবিক দীর্ঘ তৃতীয় আঙুল; এবং অতিরিক্ত লোমশতা, বিশেষত হাত ও পায়ে।
নেকড়ে-মানবে পরিণত হওয়ার উপায়
অন্যকে এই অভিশাপ দেওয়ার সব চেয়ে প্রচলিত উপায় হল নেকড়ে-মানবের কামড়, তবে আরও কয়েকটি বিকল্প উপায়ও রয়েছে, যার মাধ্যমে কেউ এই ভয়ংকর দানবে পরিণত হতে পারে। স্বেচ্ছায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে সাধারণত শয়তানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়; আর অনিচ্ছাকৃত রূপান্তর ঘটে দানবীয় অধিকার বা কোনো জাদুমন্ত্রের ফলে। কিছু ক্ষেত্রে এই অভিশাপ বংশানুক্রমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে, এবং একটি নির্দিষ্ট পরিবারকে প্রভাবিত করে। যে-কোনো স্বেচ্ছারূপান্তরের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অশুভ কাজ করার ইচ্ছা এবং ভয় সৃষ্টি করে ক্ষমতা অর্জনের বাসনা। এক ডাইনি বা কালো জাদুর অপব্যবহারকারী ব্যক্তির মধ্যেই সাধারণত এই ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়, যদিও কখনো-কখনো নিঃসঙ্গতা ও জীবনের প্রতি অসন্তুষ্টি থেকেও কেউ নেকড়ে-মানব হতে চাইতে পারে। এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থী হল সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তি, যে গভীর হতাশা ও অবসাদে নিমজ্জিত হয়ে মানুষ-বিদ্বেষ ও ঘৃণায় আচ্ছন্ন হয়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে বা নির্দিষ্ট আচার পালনের মাধ্যমে কেউ নেকড়ে-মানব হতে পারত—যেমন উলঙ্গ হয়ে বেল্ট বেঁধে নেওয়া, বা শিশিরে গড়াগড়ি খাওয়া। ধীরতর একটি উপায় ছিল একই জায়গায় একশো বছর ধরে হাঁটু গেড়ে থাকা।
মধ্যযুগের শেষ পর্ব থেকে রেনেসাঁসকাল পর্যন্ত রূপান্তরের ধারণা মূলত জাদুবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল, এবং প্রচলিত বিশ্বাস ছিল—এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে শয়তানই প্রধান চালক। তবে এই শয়তানি রূপান্তর ঠিক কীভাবে ঘটত, সে বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। কিছু ধর্মতত্ত্ববিদের মতে এটি ছিল বাস্তব ও শারীরিক রূপান্তর, অন্যদিকে কেউ কেউ একে নিছক কল্পনাজনিত বলে অভিহিত করতেন।
এক জনপ্রিয় তত্ত্বে বলা হয়, শয়তান এমন এক ধরনের মানসিক ও দৃষ্টিগত মায়া সৃষ্টি করত, যা জাদুকরকে বিশ্বাস করাত যে, সে নেকড়ে বা অন্য কোনো প্রাণীতে রূপ নিয়েছে, এবং যারা তাকে দেখত, তারাও সেই ভ্রমে বিভ্রান্ত হত। আরেকটি মত অনুযায়ী, শয়তান প্রথমে জাদুকরকে গভীর তন্দ্রায় ফেলে দিত, তারপর নেকড়ের ছদ্মবেশে তার শিষ্যের হয়ে নৃশংসতা চালাত। জাদুকর পরে জেগে উঠে নিশ্চিত হত যে, সেই রূপান্তর ঘটেছিল তার নিজের শরীরেই। সব চেয়ে বিচিত্র তত্ত্বগুলির একটি ছিল এই ধারণা যে, আকাশে ভাসমান নেকড়ের এক অলৌকিক প্রতিচ্ছবি মানুষের দেহের উপর আরোপ করে তাকে রূপান্তরের বিভ্রমে আবিষ্ট করা হত।
প্রতিষেধক ও হত্যার উপায়
এই ভয়ংকর রোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রচলিত কিছু উপায় ছিল—ক্রুশচিহ্ন দেখিয়ে আশীর্বাদ করা, নিজের ব্যাপটিজ়্ম হওয়ার পরবর্তী নাম ধরে তিনবার ডাকা, বা কপালে ছুরি দিয়ে তিনবার আঘাত করা। এ ছাড়া উল্ফসবেন (wolfsbane) নামে একটি গাছ, যা নাকি কেবল পূর্ণিমার রাতে ফোটে বলে কথিত ছিল, সেটিকেও এই ভয়াবহ অভিশাপের কার্যকর প্রতিষেধক হিসেবে ধরা হত।
অতিপ্রাকৃত ও অতিমানবীয় ক্ষমতা সত্ত্বেও, নেকড়ে-মানবকে প্রচলিত উপায়ে হত্যা বা ধ্বংস করা সম্ভব। সাধারণ গুলি চালিয়েই তা করা যায়, তবে সাফল্য নিশ্চিত হয় কেবল তখনই, যখন বন্দুকে রুপোর গুলি ভরা থাকে।
সাহিত্যে ‘ওয়্যারউল্ফ’
অত্যাধুনিক গথিক দানব বিষয়ক সমালোচনামূলক লেখায় ওয়্যারউল্ফ চরিত্রটি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে গেছে। অন্য দানবদের তুলনায়, ওয়্যারউল্ফকে ‘first cousin to the vampire’৩ হিসেবে দেখা হয়েছে, যার পরিচিতি ও গুরুত্ব মূলত ভ্যাম্পায়ারের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে—একটি স্বতন্ত্র চরিত্র হিসেবে নয়। উনিশ শতকের শেষদিকে এমিলি জেরার্ড (১৮৪৯–১৯০৫) ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ব্রাম স্টোকারের Dracula (১৮৯৭)-কে প্রভাবিত করে। সেই মন্তব্য আজও অনেকটা প্রযোজ্য। পুরো উনিশ ও বিশ শতক জুড়ে, ভ্যাম্পায়ারের তুলনামূলক জনপ্রিয়তার কারণে ওয়্যারউল্ফের অবস্থান জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধ থেকেছে।
একবিংশ শতাব্দীর এক রচনায়, যেখানে ভ্যাম্পায়ার ও ওয়্যারউল্ফ উভয়কেই আলোচনায় আনা হয়েছে, রোজ়মেরি গুইলি ব্যাখ্যা করেন: ‘Shape-shifting to animal form seems completely alien to many. Fiction delivers us noble lineages of werewolf clans, but no matter how beautiful and crafty and intelligent, they remain in the shadow of the vampire.’৪ ওয়্যারউল্ফ নিয়ে গবেষণাগুলিও মূলত চলচ্চিত্র, চিকিৎসা, মনস্তত্ত্ব ও লোককাহিনির দৃষ্টিকোণেই সীমাবদ্ধ থেকেছে; সাহিত্যে তাদের উপস্থিতি কিংবা বৈচিত্র্যময় রূপগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা খুব কমই হয়েছে।
জেরার্ড ওয়্যারউল্ফকে ‘long-exploded’—অর্থাৎ বহু আগেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে—এইভাবে উল্লেখ করেছেন, এবং বলেছেন এর উৎপত্তি জার্মান সংস্কৃতিতে। এই শব্দচয়ন নির্দেশ করে যে তার সময়েই ওয়্যারউল্ফকে ব্যাখ্যা করা অপ্রয়োজনীয় ছিল, একে মনে করা হয়েছে বর্বর অতীতের একটি ছায়া।
গুইলির বিশ্লেষণে ওয়্যারউল্ফের পশুতে রূপান্তর, যা পাঠকের কাছে একেবারেই ভিন্ন বা ‘অন্য’—প্রধানত নেকড়ের দিকে ইঙ্গিত করে। এই রূপান্তর ওয়্যারউল্ফকে পশুবৎ ও সহিংস বলে চিহ্নিত করে। ওয়্যারউল্ফের এই পশুসংযুক্ত রূপটাই বহু সময়ে গবেষণায় যথাযথভাবে বিশ্লেষিত হয়নি, বরং সরলভাবে ধরে নেওয়া হয়েছে যে নেকড়েতে রূপ নেওয়াটাই এক ধরনের ভয়ের উৎস।
তুলনামূলকভাবে কম জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, ওয়্যারউল্ফ বিভিন্ন রূপে উপস্থিত হয়। সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ দানবদের একটি বিশ্বকোশে জেফ্রি উইনস্টক ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কে নিম্নলিখিত সংজ্ঞা প্রদান করেছেন: ‘Typically defined as a human being who transforms into a large and bloodthirsty wolf, the werewolf’s variable nature has inspired numerous films and literary works. As the result of a magic spell or potion, a curse, or an attack by another werewolf, the victim usually undergoes this metamorphosis unwillingly, sometimes only at the time of the full moon. Prior to transformation, the werewolf must often remove his clothing […]. While in the shape of the wolf, he (or, more rarely, she) becomes a dangerous predator who ravages animal and human prey with the monster’s hallmark savagery. A werewolf can be distinguished from a regular wolf by a number of traits, especially his glowing eyes and excessive size, or by his hybrid form that blends human and lupine features. Certain remedies protect against werewolf attacks, such as the Christian cross or the herb wolfsbane; in most cases, only a silver bullet or fire can destroy a werewolf. Upon death, the werewolf resumes his or her human shape, thus revealing the identity of the cursed individual.’৫
The Oxford English Dictionary-তে ওয়্যারউল্ফ-এর সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে, ‘a person who (according to mediaeval superstition) was translated or was capable of transformed or was capable of transforming himself at times into a wolf.’৬ ‘Werewolf’ শব্দটির প্রথম পরিচিত ব্যবহার, যা অ্যাংলো-স্যাক্সন উৎসের—ঘটে রাজা ক্যানুটের Ecclesiastical Ordinances-এ, আনুমানিক খ্রিস্টীয় ১০০০ সালের দিকে। সেখানে এটি শয়তানের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। Oxford English Dictionary যা-ই বলুক-না কেন, মধ্যযুগে ওয়্যারউল্ফে বিশ্বাস নতুন কোনো ধারণা ছিল না; এর অনেক আগেই ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায় Epic of Gilgamesh-এ, যা খ্রিস্টজন্মের প্রায় সতেরোশো বছর আগে লেখা হয়েছিল। খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম শতকে বহু উপকথা ও কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে মানুষ নেকড়েতে রূপান্তরিত হয়—যা প্রমাণ করে যে ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কে বিশ্বাস অনেক পুরোনো এবং দীর্ঘস্থায়ী। কিছু ব্যতিক্রম বাদে, এসব কাহিনিতে ওয়্যারউল্ফকে বরাবরই এক হিংস্র ও অন্ধকারে লুকিয়ে-থাকা শিকারি পশু হিসেবে দেখানো হয়েছে, যে অসহায়দের উপর আক্রমণ করে। পরবর্তী এক হাজার বছর ধরে ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কে উল্লেখ প্রধানত ধর্মতাত্ত্বিক লেখকদের রচনায় পাওয়া যায়, যাঁরা এসব কাহিনিকে আক্রমণ করেছেন এবং এগুলোকে পৌত্তলিক কুসংস্কারে বিশ্বাস করার প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন। তবে দ্বাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সাহিত্যে ওয়্যারউল্ফ আবার ফিরে আসে।
কিন্তু এই নতুন যুগের ওয়্যারউল্ফ আর প্রাচীন যুগের সেই ‘ভীতিকর’ নেকড়ে নয়—মধ্যযুগীয় সাহিত্যে হঠাৎ করেই ওয়্যারউল্ফকে সহানুভূতিশীলভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাকে রক্তপিপাসু হিংস্রতার অপরাধী নয়, বরং এক শিকার এবং বীর চরিত্র হিসেবে দেখা হয়। ওয়্যারউল্ফের এই পরিবর্তিত চিত্র প্রমাণ করে, মানুষ ও পশুর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে তখনকার দিনে এক নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছিল—যা ক্যারোলিন ওয়াকার বাইনাম ‘দ্বাদশ শতকের ওয়্যারউল্ফ পুনর্জাগরণ’ (werewolf renaissance) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ষোড়শ শতক একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পুনর্জাগরণের সাক্ষী হয়—এমন এক পুনর্জাগরণ, যা সাধারণভাবে যেভাবে সংস্কৃতির পুনর্জন্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তার বিপরীতে দাঁড়ায়। এখানে ‘পুনর্জাগরণ’ বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রাচীন যুগের সেই ঐতিহ্যবাহী ওয়্যারউল্ফের পুনরাবির্ভাব, যে আবারও এক হিংস্র, ভয়ানক রূপে ফিরে আসে। তবে এই ওয়্যারউল্ফ আর কোনো রাজদরবার বা সৌজন্য সাহিত্যিক রচনায় নয়, বরং সরাসরি আদালতে হাজির হয়—একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে একজন অশিক্ষিত, ময়লা-ঝাপসা চেহারার গ্রামীণ কৃষক, যে এগিয়ে এসে স্বীকার করে যে, সে একজন ওয়্যারউল্ফ, এবং নিকৃষ্টতম অপরাধ করেছে।
তাহলে কীভাবে আমরা ব্যাখ্যা করব এই দুই বিপরীতধর্মী ‘পুনর্জাগরণ’-কে? কীভাবে ব্যাখ্যা করব দ্বাদশ শতকের সাহিত্যে ওয়্যারউল্ফ চিত্রণের সেই মৌলিক পরিবর্তনকে, এবং আবার ষোড়শ শতকে তার প্রাচীন, ভয়াবহ রূপে ফিরে আসাকে?
এই রহস্যগুলোর সমাধান করতে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওয়্যারউল্ফ চরিত্রের বিভিন্ন রূপান্তর বুঝতে হলে, আমাদের আগে জানতে হবে সেই ঐতিহ্যকে, যার মধ্যে এই চরিত্রগুলো গড়ে উঠেছে। তাই আমাদের গবেষণার শুরু করতে হবে শুরু থেকেই—সেই প্রাচীন কাহিনিগুলো থেকে, যেগুলো প্রথমবারের মতো ওয়্যারউল্ফের কথা বলেছিল।
ষোড়শ শতাব্দী
মন্টেগ সামার্স (১৮৮০–১৯৪৮) স্পষ্ট করে বলেন যে, ১৮০০ সালের আগেই নেকড়ে নিয়ে বিপুল পরিমাণ লেখালেখি হয়ে গেছে: ‘It were barely possible to review all the particular tracts concerning lycanthropy which were written throughout the sixteenth and seventeenth centuries.’৭ সামার্স এরপর এই দুই শতকের মধ্যে সব চেয়ে প্রভাবশালী পাঠ্যগুলোর দিকে নজর দেন, যেগুলোর বেশির ভাগই খ্রিস্টীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত। Malleus Maleficarum (১৪৮৬)-এ জ্যাকব স্প্রেঞ্জার ও হাইনরিখ ক্র্যামার বলেন, শয়তান মানুষের কল্পনাকে এতটাই প্রতারিত করতে পারে যে, দেহগত রূপান্তর ছাড়াই একজন মানুষকে নেকড়ে বলে মনে হয়। ১৫০০ সালের শেষদিকে, জঁ বোদ্যাঁ তাঁর লাইকানথ্রপি-বিষয়ক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন, অসুরেরা একজন মানুষকে শারীরিকভাবে পশুতে রূপান্তর করতে পারে, যদিও তারা মানুষের মন পরিবর্তন করতে পারে না। এর বিপরীতে, হেনরি বুগে Discours des Sorciers (১৫৯০)-তে বলেন, ‘Satan sometimes leaves the witch asleep behind a bush, and himself goes and performs that which the witch has in mind to do, giving himself the appearance of a wolf.’৮ এই সময়কালের বিভিন্ন ব্যাখ্যা শুধুই তাত্ত্বিক ছিল না। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে ফ্রান্স ও জার্মানিতে নেকড়ে-মানব বিচার (Werewolf Trials) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ১৫৯০ সালে পিটার স্টাম্পকে নেকড়ের রূপে নরভোজনের অপরাধে বেডবুর্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৫৯০ সালের জুন মাসে পিটার স্টাম্পের অপরাধসমূহের একটি তালিকাসংবলিত একটি পুস্তিকা ডাচ ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে লন্ডনে প্রকাশিত হয়। এই বিবরণে বলা হয়, শয়তান তাকে একটি বিশেষ কোমরবন্ধনী দিয়েছিল, যার সাহায্যে সে নেকড়ে রূপে রূপান্তরিত হতে পারত।৯ ইংল্যান্ডে স্টাম্পের কাহিনির এই প্রকাশনা ইঙ্গিত করে যে, এই ধরনের গল্প সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। মানুষ-নেকড়ে রূপান্তরের বিবরণগুলো তাদের রক্তাক্ত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একপ্রকার বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠছিল। এই বিবরণগুলো নরনেকড়ের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে, যেমন—মানুষের মাংসের প্রতি তার অস্বাভাবিক ক্ষুধা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আংশিকভাবে নেকড়েদের সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাস থেকে নেওয়া এবং তা আবার ওয়্যারউল্ফ চরিত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে। নেকড়ে রূপান্তরের ধারণা—অর্থাৎ Lycanthropy—হাজার বছরের কল্পনাজগৎ ও সাহিত্যে নানাভাবে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ের, দেশের এবং ঘরানার লেখকদের রচনায় কীভাবে নেকড়ে-মানব বা নরনেকড়ে ধারণা আমাদের সাহিত্যে রোমাঞ্চ, আতঙ্ক ও কল্পনাবিলাস ছড়িয়ে দিয়েছে, তা আমরা দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব।
সপ্তদশ শতাব্দী
১৬১৪ সালে জন ওয়েবস্টারের Duchess of Malfi নাটকে ‘লাইকানথ্রপি’ মানসিক রোগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফার্দিনান্দ নামক এক চরিত্র অপরাধবোধের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজেকে নেকড়ে মনে করে। যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করছিলেন, তিনি ব্যাখ্যা দেন, ‘Said he was a wolf: only the difference/ Was, a wolf’s skin was hairy on the outside,/ His on the inside’১০
অষ্টাদশ শতাব্দী
১৭১০ সালে অ্যাব্বে বুরদেলঁর Monsieur Oufle-এ দেখা যায়, তিনি বিশ্বাস করেন যে ‘Loups-garoux’ (নরনেকড়ে) সত্যি, যদিও ইংরেজি অনুবাদে তা ‘hobgoblins’ হিসেবে ভুল অনূদিত হয়। একরাতে একটি ভল্লুকের ছদ্মবেশ পরে শহরের রাস্তায় হুংকার দিতে থাকেন, যার ফলে শহর আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। Monsieur Oufle নিছক এক হাস্যরসাত্মক রচনা, যা আনন্দদায়ক ও নিরীহ হলেও মাঝে মাঝে কিছুটা রূঢ়তা প্রকাশ করে। তবে এই বইটি কখনোই অতিপ্রাকৃতিক ও অদৃশ্য রহস্যের গাঢ়, গম্ভীর প্রশ্নগুলোর গভীরে প্রবেশ করতে বা সেগুলোকে ব্যঙ্গ করে উন্মোচন করতে পারে না—এটি সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর ‘লাইকানথ্রপি’ রোগাক্রান্ত চরিত্র
Monsieur Oufle-এর একই ট্রোপ পরিলক্ষিত হয়, ১৮২৪ সালে প্রকাশিত চার্লস রবার্ট ম্যাথুরিনের The Albigenses-তে। কারাগারে স্যার প্যালাডোর এক বিকৃত আকৃতির প্রাণীর মুখোমুখি হয়, যে চিৎকার করে বলে, “I am a mad wolf… The hairs grow inward—the wolfish coat is within—the wolfish heart is within—the wolfish fangs are within!”১১
এই উদাহরণগুলো দেখায় যে, ওয়্যারউল্ফ ট্রায়ালসমূহের শেষ পর্যায়ে এসে দৃষ্টিভঙ্গির একটি পরিবর্তন ঘটে, যেখানে কথিত ওয়্যারউল্ফদের বিচারপ্রক্রিয়ায় তাদেরকে আর অপরাধী হিসেবে নয়, বরং ‘লাইকানথ্রপি’ নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়। রবার্ট বারটন (১৫৭৭-১৬৪০) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তি ‘run howling about graves and fields in the night, and will not be persuaded but that they are wolves.’১২ এটি দেখায় যে সাহিত্যে এবং চিকিৎসাগ্রন্থ—উভয় ক্ষেত্রেই ওয়্যারউল্ফ ও লাইকানথ্রপির উপস্থাপনার মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে, এটি ‘সর্বজনীন ওয়্যারউল্ফ’ ধারণার প্রমাণ নয়; বরং এটি ইঙ্গিত করে যে ওয়্যারউল্ফ চরিত্রকে সাহিত্যিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে চিকিৎসাবিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রাণীতত্ত্ব বিষয়ে পরিবর্তিত ধারণার প্রেক্ষাপটে।
আঠারো শতকের গোড়ার দিকের ছোটোগল্পের মাধ্যমেই ব্রিটিশ পাঠকদের জন্য ওয়্যারউল্ফ চরিত্রটি নতুনভাবে কল্পিত ও উপস্থাপিত হয়।
ভাষা সংক্রান্ত সমস্যা
ভাষার বিষয়টি ইংরেজি সাহিত্যে ওয়্যারউল্ফ চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যযুগীয় গ্রন্থ Guillaume de Palerne–এর শিরোনাম ১৮৩২ সালে পুনর্মুদ্রিত সংস্করণে অনূদিত হয় William the Werewolf নামে। অথচ এর সঠিক অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল William of Palerne, এবং ‘ওয়্যারউল্ফ’ শব্দটির ব্যবহার এখানে কালসংগত নয় (anachronistic)। এই সংস্করণের ভূমিকায় এমনকি দাবি করা হয় যে, মার্স ‘accursed deity of war was himself a werewolf’১৩ এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ‘ওয়্যারউল্ফ’ শব্দটি ইংরেজি ব্যবহারকারীদের কাছে এমন একটি পরিভাষায় পরিণত হয়েছিল, যা তারা সংস্কৃতি ও সময়সীমার বাইরেও প্রযোজ্য মনে করত—যার একটি উদাহরণ হল Guillaume de Palerne–এর এই অপরিপক্ব অনুবাদ। ‘ওয়্যারউল্ফ’ শব্দটি ইংরেজি ভাষায় পূর্বেও বিদ্যমান ছিল, তবে এত ব্যাপকতা ও নিরঙ্কুশতার সঙ্গে আগে ব্যবহার করা হয়নি। ঠিক যেভাবে ‘ভ্যাম্পায়ার’ শব্দটি একসময় সব ধরনের বিদেশি রহস্যময় রক্তচোষা গল্পের জন্য ব্যবহার হত, তেমনি আঠারো শতকে এসে ‘ওয়্যারউল্ফ’ শব্দটিও বিদেশি নেকড়েজাতীয় ভিন্নতার একটা প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কারণ, সে সময়কার ইংল্যান্ডে আর নেকড়ে ছিল না, এবং তাই ওয়্যারউল্ফ সম্পর্কিত লোককাহিনিও ছিল না।
‘Explained Werewolf’
ইংরেজি সাহিত্যে ওয়্যারউল্ফের আবির্ভাব এবং ভিক্টোরীয় যুগের নন-ফিকশন রচনাগুলোর মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, তার একটি উদাহরণ দেখা যায় জেরার্ডের লেখায়। তিনি রোমানিয়ান ওয়্যারউল্ফকে ‘প্রিকোলিচ’ (prikolitsch) নামে উল্লেখ করে দুটি সামান্য হাস্যরসাত্মক গল্প বর্ণনা করেন: প্রথমটিতে এক স্ত্রী আবিষ্কার করে যে তার স্বামী আসলে এক ‘ওয়্যার-ডগ’ (মানবাকৃতি কুকুর), আর দ্বিতীয়টিতে এক উদ্ভিদবিদকে রোমানিয়ান গ্রামবাসীরা ভুল করে ওয়্যারউল্ফ মনে করে। এই গল্প দুটি আঠারো শতকের গোড়ার ইংরেজি সাহিত্যে ওয়্যারউল্ফ চিত্রণের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে, যা হল ‘ব্যাখ্যাযোগ্য ওয়্যারউল্ফ’ (explained werewolf)। প্রথম গল্পটি ওয়্যারউল্ফের অস্তিত্বকে বিদেশি লোককথার ফলাফল হিসেবে ব্যাখ্যা করে, আর এই দ্বিতীয় গল্পে একজন বিজ্ঞানমনস্ক উদ্ভিদবিদকে অশিক্ষিত গ্রামবাসীদের কুসংস্কার আক্রমণ করে বসে। জেরার্ডের বলা এই গল্পটি ‘explained werewolf’ ধারার একটি নিখুঁত উদাহরণ, যেখানে ওয়্যারউল্ফকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের দ্বারা সৃষ্ট ভয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং তা যুক্তি দিয়ে খণ্ডনযোগ্য। ফলে, ‘explained werewolf’ ইংরেজি সাহিত্যের প্রাথমিক রূপগুলোতে ওয়্যারউল্ফ চিত্রণের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে যায় যে, এটি এক পর্যায়ে প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
রিচার্ড থমসনের লেখা The Wehr-Wolf (১৮২৮)–এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা ইংরেজি ভাষায় ওয়্যারউল্ফ গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন উদাহরণ। যদিও গল্পটির পটভূমি ফ্রান্স, তবুও থমসন ফরাসি শব্দ loup-garou–এর পরিবর্তে ‘werewolf’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যা প্রমাণ করে যে, সে সময় ইংরেজি সাহিত্যে ‘werewolf’ ছিল পছন্দের শব্দ। গল্পটিতে একটি চরিত্র রয়েছে—এক দাম্ভিক ডাক্তার—যিনি সন্দেহভাজন এক ওয়্যারউল্ফের আঁচড়ে আহত হয়ে মনে করেন, তিনিও এখন ওয়্যারউল্ফে পরিণত হয়েছেন, কারণ তিনি লাইকানথ্রপি বিষয়ক অনেক বই পড়ে ফেলেছেন। এই অংশটি বোর্দেলনের M. Oufle নামক হাস্যকর গল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং এটি ওয়্যারউল্ফ বিষয়ক কুসংস্কারের প্রতি বিদ্রুপ ছুড়ে দেয়। তবে গল্পটিতে একটি ‘প্রকৃত’ ওয়্যারউল্ফও রয়েছে—এক নির্যাতিত সৈনিক, যে রাগের বশে রূপান্তরিত হয়।
রোমান্টিক যুগকে শুধুমাত্র এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্তির যুগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা একটি অতিসরলীকৃত দৃষ্টিভঙ্গি। গল্পটির ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট—ফ্রান্স এবং ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর সময়কাল—এর মাধ্যমে থমসন পূর্ববর্তী প্রজন্মের সরল বিশ্বাস এবং রোমান ক্যাথলিক দেশগুলোর কুসংস্কারে বিশ্বাসকে তুলে ধরে। এই ধারণাগুলোর ভিত্তি ছিল রোমান ক্যাথলিকদের ‘ট্রান্সসাবস্ট্যানসিয়েশন’ (transubstantiation) বা উপাসনাকালে রুটি-মদকে খ্রিস্টের রক্তমাংস বলে বিশ্বাস করার মতবাদ এবং গির্জার পূজার আনুষ্ঠানিকতায়।
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত অনেক ওয়্যারউল্ফ বিষয়ক রচনাই, যেমন বোদাঁ (Bodin) এবং বোগে (Boguet)-এর লেখা—রোমান ক্যাথলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা, যা এই ধর্মীয় কুসংস্কার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। তাই এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় যে বহু গথিক উপন্যাসে রোমান ক্যাথলিক দেশগুলিকে পটভূমি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং একটি গথিকীকৃত অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই একই রীতি আঠেরো শতকের শুরুতে লেখা অনেক ওয়্যারউল্ফ ছোটোগল্পেও দেখা যায়, যেমন: ব্রিটিশ লেখক লিচ রিচির The Man-Wolf (১৮৩১)-এ দেখা যায়, মাছ-ধরাদের ‘ডাকিং’ অনুষ্ঠানে নিজের চাকর হিউয়ের ভুলে এক নাইট হঠাৎই নদীতে পড়ে যায়। সুন্দরী বিয়াট্রিসের সামনে ঘটে-যাওয়া এই লজ্জাজনক ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে সেদিন রাতেই মদ্যপানে ডুবে যায় এবং তার ফলে বাড়ি ফেরার পথে বের হয় গভীর রাতে। রাতের অন্ধকারে অরণ্যের মধ্যে দিয়ে ফেরার সময় তার নানারকম দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা হয়, যার পরিণতিতে সে একসময় ওয়্যারউল্ফে রূপান্তরিত হয়। প্রভুকে স্বাভাবিক মানবরূপে ফেরাতে তার বিশ্বস্ত, তবে কিছুটা অলস চাকর হিউকে তখন নানারকম (প্রায় হাস্যকর) পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।
১৮৩৮ সালে The Court Magazine and Monthly Critic-এ সাদারল্যান্ড মেনজিসের Hugues, The Wer-Wolf প্রকাশিত হয়, এটি মধ্যযুগের কেন্ট অঞ্চলের একটি কিংবদন্তি। এক পুরোনো বাক্সে পাওয়া গেল নেকড়ের সম্পূর্ণ ছদ্মবেশ—ভেড়ার চামড়া, থাবার গ্লাভস, ল্যাজ, মুখোশসহ। এই দৃশ্যে লে ফানুর Ghost of a Hand গল্পের আধ্যাত্মিক থিমের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
A Story of a Weir-Wolf (১৮৪৬) ক্যাথরিন ক্রো-র অন্যতম পরিচিত ছোটোগল্প, কারণ এটি অনেক ওয়্যারউল্ফ-ভিত্তিক গল্পসংকলনে স্থান পেয়েছে। তবে গল্পটিতে প্রকৃত কোনো ওয়্যারউল্ফ নেই—আছে শুধু এমন এক চরিত্র, যাকে ভুলভাবে এই ধরনের জাদুবিদ্যার অভিযোগে ফাঁসানো হয়। গল্পের প্রেক্ষাপট ১৫৯৬ সাল, অনেক আগেকার সময়, যখন হলিউড ওয়্যারউল্ফদের ভ্যাম্পায়ার ধারার ছাঁচে ফেলা শুরু করেনি—অর্থাৎ একজন ওয়্যারউল্ফের কামড়ে আরেকজন ওয়্যারউল্ফ জন্মানোর ধারণা তখনও ছিল অজানা। তখনকার বিশ্বাস ছিল, কেউ ইচ্ছে করলেই ওয়্যারউল্ফ হতে পারত, মূলত দুষ্টুমি ও ভোগের আনন্দে—যদিও এর জন্য প্রয়োজন হত অশুভ আচার আর সম্ভবত শয়তানের সঙ্গে চুক্তি।
এই গল্পগুলোও ‘explained werewolf’ অর্থাৎ ব্যাখ্যাযোগ্য ওয়্যারউল্ফ ধারায় পড়ে। ‘Explained werewolf’ ব্যবহৃত হয়েছিল ভিক্টোরিয়ান যুগের তথাকথিত যুক্তিসংগত ছদ্মবিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার জন্য, যাতে কাল্পনিক পরিবেশেও বাস্তবতার সীমারেখা পুনরায় নিশ্চিত করা যায়।
The White Wolf of the Hartz Mountains প্রকাশের মাধ্যমে ওয়্যারউল্ফ বিষয়ক ছোটোগল্পগুলোর ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের সূচনা ঘটে। ১৮৩৯ সালে Marryat’s The Phantom Ship-এ হেরম্যান ক্রান্টজের কাহিনি প্রকাশিত হয়, যা পরে ভি এইচ কলিন্স Ghosts and Marvels (১৯২৪)-এ ‘The Werewolf’ নামে পুনর্মুদ্রণ করেন এবং মন্টেগ সামারস The Supernatural Omnibus (১৯৩১)-এ ‘The White Wolf of the Hartz Mountains’ নামে প্রকাশ করেন। এক রহস্যময় বৃদ্ধ নেকড়ে এবং তার ভয়ংকর গতিবিধি সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়। কিছুটা প্রাচীন ঢঙে লেখা হলেও এর শৈলী এখনও পাঠকদের আকৃষ্ট করে।
এরপর আসে ডাডলি কস্টেলোর প্রথম সত্যিকার অর্থে ইংরেজ ওয়্যারউল্ফ গল্প Lycanthropy in London। ১৮৫৫ সালে Bentley’s Miscellany-তে এটি প্রকাশিত হয়। এই গল্পে এক তরুণী বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তার বান্ধবীর স্বামী একজন ওয়্যারউল্ফ, কারণ সে বোদাঁ, কর্নেলিয়াস অ্যাগ্রিপ্পা, উইয়েরিয়াস, ভিনসেন্ট ও ফিনসেলের মতো লেখকদের পুরোনো ফরাসি সংস্করণের বই পড়ে এবং জে সি লাভাটার (১৭৪১–১৮০১)–এর physiognomy (চেহারা দেখে চরিত্র বিশ্লেষণ) বিষয়ক লেখা অধ্যয়ন করে, যা সেই সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এই গল্প আবারও বোর্দেলনের M. Oufle–এর হাস্যকর গল্পের স্মৃতি জাগায়। তবুও, কস্টেলোর গল্প ওয়্যারউল্ফের অস্তিত্বকে কেবল কুসংস্কারের ফল বলে মনে করে এবং চরিত্রটিকে আবারও explained werewolf ধাঁচে ফেলে দেয়—তবে এবার এটি আধুনিক কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত।
এইভাবে, যদিও আঠেরো শতকে ওয়্যারউল্ফ গল্পের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য বাড়তে থাকে, তবুও কল্পনার ক্ষেত্রে এগুলো সীমাবদ্ধ রয়ে যায় এবং সাধারণত ছোটোগল্পের কাঠামোর মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল। যেমন—১৮৪৬–৪৭ সালে Reynolds’s Miscellany-তে ধারাবাহিকভাবে ৭৭টি কিস্তিতে প্রকাশিত জর্জ ডব্লিউ এম রেইনল্ডসের অসামান্য রোমান্স Wagner: The Wehr-Wolf, পরে পেনি সংখ্যায় পুনর্মুদ্রণ লাভ করে। কাহিনির পরিসর ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে ফ্লোরেন্স, সেখান থেকে আফ্রিকার উপকূলে ‘সাপের দ্বীপ’ হয়ে সিরাকিউজ পর্যন্ত বিস্তৃত। ১১তম অধ্যায়ে ওয়্যারউল্ফের অভিযাত্রা অসাধারণ দক্ষতায় চিত্রিত হয়েছে—তাসকানির পাহাড় ও উপত্যকায় যেন ঝড়ের গতিতে দৌড়ে চলেছে গল্প।
নারী লেখকদের কলমে লাইকানথ্রপ
উনিশ শতক ছিল এমন এক সময়, যখন প্রথম নারী লেখিকারা নিজেদের সাহিত্যকর্মে নারী লাইকানথ্রপের চরিত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। ১৮৪৬ সালের ১৬ মে Hogg’s Weekly Instructor-এ প্রকাশিত হয় মিসেস ক্যাথারিন ক্রো-র A Story of a Weir-Wolf, যেটি সম্ভবত নারীর লেখা প্রথম ওয়্যারউল্ফ কাহিনি। এর পটভূমি ১৫৯৬ সালের ফ্রান্সের এক গ্রাম, যেখানে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ফ্রঁসোয়াজকে ওয়্যারউল্ফ হিসেবে সন্দেহ করা হয় এবং পিতা-কন্যাকে আগুনে পোড়ানোর সাজা দেওয়া হয়। প্রেমের প্রতিহিংসায় ফ্রঁসোয়াজ থিলুজ ও তাঁর চিকিৎসক পিতাকে জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। শেষ মুহূর্তে তাঁরা রক্ষা পান এবং ফ্রঁসোয়াজ Count Victor de Vardes-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।১৪
১৮৫০ সালে মিসেস ক্রো তাঁর Light and Darkness; or, Mysteries of Life গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে The Lycanthropist শিরোনামে ‘ওল্ফোম্যানিয়া’ ও ভ্যাম্পায়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে জঁ গ্রেনিয়ের ও সার্জেন্ট বের্ট্রান্ডের ঘটনাগুলো বর্ণিত। তিনি যুক্তিসংগতভাবে উপসংহার টানেন: “I have said enough to prove that, beyond a doubt, there has been some good foundation for the ancient belief in ghoulism and lycanthropy; and that the books of Dr. Weir and others, in which the existence of this malady is contemptuously denied, have been put forth without due investigation of the subject.”১৫
১৮৯০ সালে রোজামান্ড ম্যারিয়ট ওয়াটসনের A Ballad of the Were-wolf এবং ১৮৯৬ সালে ক্লেমেন্স হাউসম্যানের The Werewolf-এ উঠে এসেছিল নারী বিষয়ে সামাজিক উদ্বেগ ও উনিশ শতকের শেষ ভাগে নারীর ভূমিকা কীভাবে রূপান্তরিত হচ্ছিল। নারী লেখকদের অবস্থান ও সৃষ্টিশীলতার তাত্ত্বিক আলোচনার ভিত্তিতে বলা হত—নারী নেকড়ে চরিত্র এক ধরনের গথিক ‘অন্ধকার প্রতিবিম্ব’ (dark double), যেটি লেখিকার বিদ্রোহী মনোভাব ও সক্রিয় সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই নেকড়ে নারীরূপ আসলে তাঁদের ভেতরের সমাজবিরোধী প্রবণতার চিত্র, যেটি রূপান্তরের মাধ্যমে সাহিত্যে উদ্ভাসিত হয়। তবে একই সঙ্গে একটি বিচিত্র দ্বন্দ্বও দেখা যায়—এইসব লাইকানথ্রপিক গল্পে এক ধরনের অমীমাংসা বিদ্যমান। নারীসত্তার বিদ্রোহী দিকগুলিকে সামাজিক প্রত্যাশার সঙ্গে একীভূত করার কোনো উপায় যেন সেখানে পাওয়া যায় না। ফলে, উনিশ শতকের অন্তিম ভাগের এই সাহিত্যকর্মে নারীর অবস্থান এক সংকট ও সংঘর্ষের প্রতীক হয়ে ওঠে। রোজামান্ড ওয়াটসনের কবিতাটি Macmillan’s Magazine-এর সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল গ্রাহাম আর টমসন নামে।
নাটকে লাইকানথ্রপ
মিসেস ক্রো-র A Story of a Weir-Wolf অবলম্বনে উইলিয়াম ফরস্টার ১৮৭৬ সালে The Weirwolf: A Tragedy নামে একটি নাট্যকাব্য রচনা করেন।
১৫৯০ সালে গুয়ারিনির Pastor Fido নাটকের চতুর্থ অঙ্ক, দ্বিতীয় দৃশ্যে ডরিন্ডা প্রেমজনিত কারণে নিজেকে এক স্ত্রী-নেকড়ে হিসেবে ছদ্মবেশে উপস্থাপন করে। ১৬৩৪ সালে থমাস হেইউড ও ডিক ব্রোমের The Late Lancashire Witches নাটকে ভূতুড়ে মিলের দৃশ্যে নেকড়েরূপ ধারণকারী বিড়াল-আত্মারা সৈনিককে তাড়া করে। আবার ১৬৮১ সালে শাডওয়েলের The Lancashire Witches and Tegue O’Divelly নাটকেও জাদুকরিরা বিড়ালের ছদ্মবেশে সৈন্যদের আক্রমণ করে; টম শ্যাক্লহেড তরবারি দিয়ে নেকড়ে/বিড়ালদের তাড়া করতে দেখা যায়। ১৮৪২ সালে মার্টাফ মারফি তাঁর Lover’s Handy Andy উপন্যাসের অধ্যায় ২২-এ এক ভীতিকর কাহিনি বলেন। Ingoldsby Legends-এর ধারায় ‘Ye Marvellous Legend of Tom Connor’s Cat’, সেখানেও এক জাদুকরির বিড়ালরূপ ধারণের রহস্যময় বর্ণনা রয়েছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গল্প-উপন্যাসে লাইকানথ্রপ
১৮১৭ সালের ১৯ এপ্রিলে ম্যাথিউ গ্রেগরি লুইস তাঁর Journal of a West India Proprietor-এ obeahism-এর এক কাহিনি উল্লেখ করেন, যেখানে ‘টাইগার’ নামের এক কালো কুকুর অশুভ আত্মা হিসেবে উপস্থিত হয়। এই প্রসঙ্গেই উল্লেখ করেন আফ্রিকার রানি জিঙ্গাকে, যাঁর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা একটি হায়েনার দেহে প্রবেশ করেছে বলে বিশ্বাস করা হত।
১৮৯১ সালে রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর The Mark of the Beast গল্পে এক কুষ্ঠরোগী পুরোহিতের অভিশাপে এক মানুষের দেহে পশুর আত্মা প্রবেশ করে; তার সঙ্গীরা তার দেহ থেকে ভয়ংকর পশুর গন্ধ পায়—“such a horrid doggy smell…”
১৮৯১ সালের আর-একটি ছোটোগল্প, আমব্রোস বিয়ার্সের The Eyes of the Panther-এ এক মেয়ে জন্মসূত্রেই রাতে চিতা হয়ে ওঠে; রক্তের ছাপ ধরে তার দেহ খুঁজে পাওয়া যায়।
১৮৯৩ সালে The Spirit Lamp ম্যাগাজ়িনে কাউন্ট এরিক স্টেনবকের একটি গল্প প্রকাশিত হয়, The Other Side, এটি একটি ‘Breton Legend’ গল্প—গ্যাব্রিয়েল বৃষ্টিমুখ সীমারেখা পেরুতে এবং একটি নীল ফুল ছিঁড়ে ফেলে অন্ধকারের শাসনে পড়ে আর দেখতে পায় কালো নেকড়ে-আত্মাদের: “black wolves with red fiery eyes… men that had the heads of wolves and wolves that had the heads of men,… seated on an enormous black ram with hideous human faces the wolf-keeper…”১৬ পরদিন সকালে সে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনায় অংশ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায়।
১৮৯৯ সালে আর্থার অ্যাপলিয়ের ও এইচ সিডনি ওয়ারউইকের A Vendetta of the Jungle-এ এক বাঘ একটি নারীকে খেয়ে নেয় এবং তার আত্মাও অধিকার করে; পরে পুরুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া বাকি থাকায় সে নারীর আত্মা সেই বাঘের শরীরের সাহায্য নেয়।
১৮৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের স্যান্ডস অ্যান্ড কো. থেকে প্রকাশিত হয় ইডেন ফিলিপটসের Loup-Garou!—ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দশটি কাহিনির প্রথমটি, যার পটভূমি ডোমিনিকা দ্বীপ। এখানে বলা হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে ‘লু-গারু এবং জ়োম্বি’ হল নেকড়ে ও রক্তচোষা দানবদের সমগোত্রীয় বিভীষিকাময় দানব। এদের উপস্থিতি বিশেষত মৃত্যুর সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে। কোনো মৃতদেহ সঠিকভাবে গান বা প্রার্থনা ছাড়া কবর দেওয়া হলে এই দানবেরা তাকে টেনে নিয়ে যায় বা খণ্ডবিখণ্ড করে ফ্যালে। তবে গান তাদের দূরে রাখে—আর একমাত্র উপাসনালয়ে পবিত্র করে নেওয়া গুলি দিয়ে তাদের মেরে ফেলা সম্ভব।
১৮৯৯ সালের এপ্রিলে স্যামুয়েল রাদারফোর্ড ক্রকেটের রোমাঞ্চকর উপন্যাস The Black Douglas প্রকাশিত হয়, যেখানে অ্যাস্টার্টে নামে এক বিশাল স্ত্রী-নেকড়ের দেখা মেলে, সেই হল ‘লা মেফ্রায়’, যে বলি-যজ্ঞের জন্য শিশু অপহরণ করে, স্বামীকে হত্যা করে এবং মরার পর রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ওয়্যারউল্ফ ও ভ্যাম্পায়ার চরিত্রের সাহিত্যে অবস্থান
ওয়্যারউল্ফের বিপরীতে, ভ্যাম্পায়ার চরিত্রের উপস্থাপন ছিল অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় ও জনপ্রিয়, যেখানে ভ্যাম্পায়ার চরিত্র গেঁয়ো জনগণ থেকে উঠে এসে অভিজাত অভিশপ্ত নায়ক হয়ে ওঠে, সেখানে ওয়্যারউল্ফ বরং উলটো পথে হাঁটে। স্কনডুটো উল্লেখ করেন, ১১ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে ওয়্যারউল্ফ চরিত্র রাজদরবারের কাব্যে ব্যবহৃত সম্মানিত চরিত্র থেকে রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়ায় ‘Werewolf Trials’-এর সময়কার কৃষকশ্রেণির চরিত্রে।১৭ ফলে, আঠেরো শতকের ছোটোগল্পগুলিতে কৃষক ওয়্যারউল্ফ হয়ে ওঠে এক ধরনের নির্দিষ্ট ছাঁচে তৈরি চরিত্র। এই সামাজিক অবস্থানগত কারণে ওয়্যারউল্ফ চরিত্রকে বারবার ভ্যাম্পায়ারের তুলনায় নীচু স্থান দেওয়া হয়। তবুও, এই পরিবর্তনগুলো দেখায় যে উভয় চরিত্র—ভ্যাম্পায়ার ও ওয়্যারউল্ফ—তাদের নিজ নিজ সময় ও সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হতে সক্ষম। যেমন ক্রিস্টোফার ফ্রাইলিং ব্যাখ্যা করেন: ‘the inarticulate peasant vampires described by Tournefort and Calmet […] became the aristocratic hero-villains […] of the Romantics’.১৮
ভ্যাম্পায়ারের সমাজের শ্রেণিবিন্যাসে ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা চূড়ান্ত রূপ পায় ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত উপন্যাস Dracula-র (১৮৯৭) প্রকাশের মাধ্যমে। এই উপন্যাসে কাউন্ট ড্রাকুলাকে একটি দানবীয় চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, কারণ তিনি ভিক্টোরীয় সমাজের জাতিগত ভিন্নতাজনিত ভয়ের প্রতীক। উপন্যাসে রিভার্স কলোনাইজ়েশন বিষয়ক তাঁর প্রভাবশালী গবেষণায় স্টিফেন আরাটা বলেন: ‘…marking the intersection of racial strife, political upheaval, and the fall of the empire, Dracula’s move to London indicates that Great Britain, rather than the Carpathians, is now the scene of these connected struggles.’১৯ ভ্যাম্পায়ার একসময় একটি বিদেশি বিশ্বাস ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে ব্রিটিশ লেখকরা ভ্যাম্পায়ার চরিত্রকে নিজেদের আত্মসংকট ও সামাজিক উদ্বেগ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। ফলে, ভ্যাম্পায়ার চরিত্র অতিপ্রাকৃত সত্তা হিসেবে সাহিত্যে টিকে থাকতে পারে, তাকে যুক্তি দিয়ে বাতিল করে দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, ওয়্যারউল্ফ চরিত্রটি বরাবরই উপস্থাপিত হয় পুরোনো কুসংস্কারের প্রতীক হিসেবে। এমনকি কাল্পনিক জগতের মধ্যেও ওয়্যারউল্ফের অস্তিত্বকে যুক্তির মাধ্যমে অস্বীকার করা হয়। যেখানে ভ্যাম্পায়ার চরিত্রটি কখনও সমাজের বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটায়, আবার কখনও তা করতে ব্যর্থ হয়—সেখানে ওয়্যারউল্ফ চরিত্রটি বরং তার অস্তিত্বের অভাব ঘিরে আবর্তিত হয়।
বিংশ শতাব্দী
১৯০০ সালে জন ক্যামেরন গ্রান্টের The Ethiopian-এ ‘Human Leopards’ নামক এক সমাজের বর্ণনা… যদিও এতে সরাসরি নেকড়ে রূপান্তর নেই, তবু এর মধ্যে মধ্যে সেই প্রাচীন সতর্ককথা ও উপমা পাওয়া যায়।
১৯০৭ সালে প্রকাশিত Buffalo Bill-এর কিশোর গল্প The Wolf Demon; or, Buffalo Bill and the Barge Mystery, যেখানে Wolf River Canyon-এর দানবটি খুব সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে।
স্যাকি (হেক্টর হিউ মুনরো)-র লেখা Gabriel-Ernest, যা প্রথমে Westminster Gazette-এ এবং পরে ১৯১০ সালে Reginald in Russia-এ প্রকাশিত হয়। এই চমকপ্রদ কাহিনিতে নেকড়েরূপী চরিত্রটিকে এক ধরনের ‘লাইকানথ্রপিক পিটার প্যান’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। আবার ১৯১৪ সালে, স্যাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধরনের নেকড়ে রূপান্তরের গল্প নিয়ে ফিরে আসেন: The She-Wolf।
আলজারন ব্ল্যাকউডের John Silence (১৯০৮) সংকলনের Ancient Sorceries কাহিনিটি লাওঁ শহরের প্রেক্ষাপটে একটি বিড়াল-নেকড়ে কাহিনি। এই সংকলনের আর-একটি কাহিনি Case V: The Camp of the Dog, যেখানে সাংরি নামক এক চরিত্রের আত্মিক অবয়ব একটি বিশাল নেকড়ের মতো হাউন্ড রূপে দেহত্যাগ করে বেরিয়ে আসে। এই দুটি গল্পই অসামান্য। একই লেখকের Strange Adventures in the Empty House (১৯০৬)-এ দুই পশুপ্রবণ, অর্ধমানব চরিত্রের নেকড়ে-মানুষসুলভ ক্ষুধা চিত্রিত হয়েছে, এবং ব্ল্যাকউড ও উইলফ্রেড উইলসনের The Wolves of God and Other Fey Stories (১৯২১)-এর The Empty Sleeve গল্পে এক হিংস্র মানুষের ‘ইচ্ছাশরীর’ পশুর রূপ ধারণ করে। একটি বিশাল বিড়ালের পা যখন একটি খাপছাড়া তরবারির কোপে কেটে যায়, পরে দেখা যায় ভয়ংকর ইসিডোর হাইম্যানের একটি হাত নেই। একই সংকলনের Running Wolf গল্পে দেখা যায়, এক তরুণ ভারতীয় বীর, যে তার গোষ্ঠীর টোটেম নেকড়েকে হত্যা করেছিল, মৃত্যুর পর এক নেকড়ে রূপে উপস্থিত হয়, যতক্ষণ না সে নিজের পাপের সম্পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত করে।
Temple Bar-এ ১৯০২ সালের নভেম্বরে ফ্রেড উইশোর The Were-Wolf, একটি রাশিয়ান গল্প প্রকাশ পায়। গল্পের মূল বিষয় হল: কেউ যদি ‘লিয়েশুই’—বনের আত্মাদের—অপমান করে, তবে তাকে অভিশাপ দেওয়া হয় এবং তার দেহে নেকড়ের আত্মা প্রবেশ করে; সেই দেহ নেকড়ে হয়ে ওঠে, যা একটি ভয়ানক অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় আশপাশের সবার জন্য।
১৯১১ সালে ইউজিন ফিল্ডের The Werewolf-এ হারল্ড নামের এক কিশোর পূর্বপুরুষের অভিশাপে নেকড়েরূপে রূপান্তরিত হয়।
১৯১৪ সালে ফ্রাংক নরিসের Vandover and the Brute কাহিনিতে একজন যুবক এতটা নৈতিক অবক্ষয়ে পড়ে যে, নিজেকে নেকড়েরূপে ভাবতে থাকে এবং “Wolf, wolf!” বলে উন্মাদ হয়ে চার পায়ে ঘুরে বেড়ায়। ডাক্তাররা একে বলেন ‘lycanthropy-mathesis’।
আর্থার এল স্যালমনের The Were-Wolf (১৯২৭, The Ferry of Souls-এ প্রকাশিত) সংক্ষিপ্ত হলেও রোমাঞ্চকর গল্প, werewolf-এর মনস্তত্ত্ব ও রহস্যময়তা উপস্থাপন করে।
- Willoughby-Meade তাঁর Chinese Ghouls and Goblins (১৯২৮)-এ বহু চিনা নেকড়ে-মানব কাহিনি তুলে ধরেছেন।
অলিভার অনিয়ন্সের The Master of the House (The Painted Face, ১৯২৯)-এ একজন ভ্যরাইটি পারফর্মার ওরিয়েন্টাল জাদুবিদ্যা শিখে নিজেকে একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুরে রূপান্তর করতে পারে।
চার্লস সোয়েমের Were Wolf (১৯২৯)-এ একটি বৃদ্ধ লোক হঠাৎ পাগলামিতে, নেকড়ের মাথা ও চামড়া পরে উন্মত্ত হয়ে দৌড়োতে থাকে—গল্পটি একটি ভয়াবহ লাইক্যানথ্রপির ছাপ রাখে।
আলেক্স ম্যাটসন ও ব্রায়ান রাইস অনূদিত মাদাম আইনো কাল্লাসের The Wolf’s Bride (১৯৩০) এমন এক নারীর কাহিনি বলে, যিনি দিনে শান্ত ও স্নেহময় স্ত্রী, কিন্তু রাতে রক্তপিপাসু নেকড়ে হয়ে বন-প্রান্তর চষে বেড়ান।
হিউ ওয়ালপোলের All Souls’ Night (১৯৩৩) গ্রন্থে Tarnhelm; or, The Death of my Uncle Robert গল্পে দেখা যায়, এক বৃদ্ধ মানুষ নিজেকে পরিণত করেন একটি হলুদ, বিকৃত কুকুরে। পরে যখন সেই কুকুরটিকে গুলি করা হয়, তার পাশেই পড়ে থাকে এক ধূসর টুপি এবং মৃত জাদুকর।
James Strachey Barnes-এর Half a Life (১৯৩৩)-এ The Wolf-Man of Opcina নামক একটি অতিপ্রাকৃত গল্প আছে, যেখানে পূর্ণিমার রাতে গ্রামের কুকুরেরা ভয়ংকর চিৎকারে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে রাতের নির্জনতায় “Woo-hoo-hoo-hoo-hoo”—এর আওয়াজ ধীরে ধীরে কাছে আসে। জানালা দিয়ে দেখা যায় একজন পুরুষ, চন্দ্রালোকের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে, চোখে এক বিভ্রান্ত জ্যোতি।
Edgar L Cooper-এর The Werewolf’s Helmet (১৯৩১)-এ নেকড়ের কোনো বাস্তব রূপান্তর নেই; এটি একটি গুপ্তধনের অনুসন্ধানের গল্পমাত্র, যেখানে ‘ফ্যান্টম ওয়্যারউল্ফ’ নামে পরিচিত একজনের টিনের হেলমেটে সূত্র লুকোনো আছে।
ডেমেট্রিওস বিকেলাস (১৮৩৫–১৯০৮), আধুনিক গ্রিক সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক, একটি কাহিনিতে বর্ণনা করেছেন কীভাবে এক কৃষক, এক উন্মাদ স্ত্রী-নেকড়ের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে লাইক্যানথ্রপি লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। ভীত গ্রামবাসীরা তাকে অশুভ ও দানবীয় মনে করে। “Fear fills the heart of the ignorant with the passions of wild beasts.”২০ এই গল্পটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে The Priest’s Tale নামে।
এই সমগ্র আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম—ওয়্যারউল্ফের লোককথা থেকে সাহিত্যে চরমস্থানে উত্তরণ এবং ভয় ও রূপান্তর—একটি সামাজিক আতঙ্ক, কখনও পাপ, কখনও প্রেম, আবার কখনও নিছক প্রতিশোধে। একসময় এই গল্পগুলো ছিল অলৌকিক জনশ্রুতি, পরে তা হয়ে উঠল ভয়ের ভাষা—যা বলে দেয়, আমরা মানুষরা নিজেরাই কতটা ভয়ংকর হতে পারি।
পরিশেষে বলা যায়, লর্ড বায়রন তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্য Don Juan, Canto IX, stanza 20-এ লিখেছিলেন:
“Oh! ye immortal Gods! what is Theogony?
Oh! thou, too, mortal man! what is Philosophy?
Oh! World, which was and is, what is Cosmogony?
Some people have accused me of Misanthropy;
And yet I know no more than the mahogany
That forms this desk, of what they mean; —Lykanthropy
I comprehend, for without transformation
Men become wolves on any slight occasion.”২১
এই স্তবকে বায়রন বলতে চেয়েছেন, মানুষের এই খোলসটার নীচেই একটা জন্তু লুকিয়ে আছে, মানুষ কোনো দৈহিক রূপান্তর ছাড়াই পশুতে পরিণত হয়—অর্থাৎ, আমাদের সমাজে এমন অন্ধ হিংস্রতা, প্রতিশোধস্পৃহা ও বর্বরতা আছে, যা মানুষকে নেকড়ে বানায়—এই রূপান্তর ঘটে মনোজগতে, সমাজে ও আচরণে। মানুষ তাকে পড়াশোনা, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি দ্বারা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, কিন্তু অসতর্কতার সামান্য সুযোগেই সে বেরিয়ে আসতে চায়। বর্তমান সময়ে আমাদের চারপাশে লক্ষ করলেই তার ভূরিভূরি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।
তথ্যসূত্র:
১) [https://www.britannica.com/art/werewolf]
২) Hamel, Frank, Human Animals, (New York: Frederick A. Stokes, 1915), p. 1.
৩) Emily Gerard, The Land Beyond the Forest: Facts, Figures, and Fancies (New York: Harper & Brothers, 1888), p. 186.
৪) Rosemary Ellen Guiley, The Encyclopaedia of Vampires & Werewolves, 2nd ed (New York: Facts on File, 2011), p. xiv.
৫) Jeffrey Andrew Weinstock, The Ashgate Encyclopaedia of Literary and Cinematic Monsters (Aldershot, Hampshire: Ashgate, 2014), p. 577.
৬) [https://www.oed.com/dictionary/werewolf]
৭) Montague Summers, The Werewolf (Secaucus, New Jersey: Citadel Press, 1966), p. 94.
৮) Henri Boguet, Discours des Sorciers (1590), quoted in Summers, The Werewolf, p. 120.
৯) Summers, The Werewolf, pp. 253-59.
১০) John Webster, The Duchess of Malfi, ed. by Elizabeth M. Brennan (London: Bloomsbury Publishing, 1964), p. 82
১১) [ Charles Robert Maturin, The Albigenses, A Romance (London: Hurst, Robinson, and Co., 1824), p. 263.]
১২) Robert Burton, The Anatomy of Melancholy (London: Hen. Crips & Lodo Lloyd, 1652), p. 210
১৩) Herbert, ‘On Werewolves’, in The Ancient English Romance of William and the Werewolf, ed. by Frederick Madden, p. 5.
১৪) CROWE, CATHERINE. A Story of a Weir-Wolf. In Hogg’s Weekly Instructor. Edinburgh, Saturday, 16th May, 1846. Vol. in, No. 64, pp. 184-9.
১৫) Light and Darkness; or, Mysteries of Life. London, 1850. 3 vols. Vol.ii, chap, v, “The Lycanthropist.” Reprinted in Reynolds’s Miscellany, 30th November, 1850.
১৬) Stenbok, Count Eric. The Other Side. A Breton Legend. In: The Spirit Lamp, iv, 2nd June, 1893. Oxford, p.52-53.
১৭) Sconduto, Leslie A., Metamorphoses of the Werewolf: A Literary Study from Antiquity through the Renaissance (London: McFarland & Company, 2008), p. 180-200.
১৮) Frayling, Christopher, Vampyres: Lord Byron to Count Dracula (London: Faber and Faber, 1991), p. 5-6.
১৯) Stephen D. Arata, ‘The Occidental Tourist: “Dracula” and the Anxiety of Reverse Colonization’, in Victorian Studies, 33.4 (1990), 621-45 (p. 629).
২০) Clark, H. Barrett & Maxim Lieber ed., Demetrios Bikelas, The Priest’s Tale, Great Short Stories of the World, D.C Heath and Company, 1925, p. 865.
২১) Lord Byron’s Don Juan, ed. By A Cunningham, Jas. B. Smith & Co. Philadelphia, 1859, p. 253
Tags: দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, প্রিয়াংকা মিত্র
