এভাবেও কি ফিরে আসা যায়?
লেখক: পথিক মিত্র
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
একটা বলিষ্ঠ হাত! একটা ড্রাগনের ট্যাটু! দুটো চোখ, যাতে ঝরে পড়ছে লড়াইয়ের প্রত্যয়! যেন রাতারাতি রুগ্ন জিমের জীবনটা পালটে দিয়েছিল লিডসে স্ট্রিটে ২১ জুন ২০০৪ সালে!
আমাদের স্মৃতি খুব অদ্ভুত। অনেক কিছুই আমরা সময়ের নিয়মে ভুলে যাই আবার কিছু অতি সাধারণ জিনিস আমাদের মনে থেকে যায়। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, আর থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নিজেরাই সেই কারণ বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু হাজার স্মৃতির ভিড়েও সেই বিশেষ স্মৃতিগুলো যেন কোনো জাদু পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থেকে যায়। ঠিক যেমন জিম বিগত বিশ বছর আগের সেই দিনে দেখা চোখ দুটোকে ভুলতে পারেনি। ভোলা কি উচিৎ ছিল? কখনোই না! তার জীবনে সেই অজ্ঞাত লোকটার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সেই অপরিচিত অদ্ভুত লোকটা না থাকলে আজকে তার জীবনটা কি এইরকম হত? আজ ৩৪ বছরের জিম যে তার ৫৪ বছরের মা অ্যালিস আর স্ত্রী জয়েসকে নিয়ে সুখে সংসার করছে, এসব কিছুই তো হত না যদি সেই অজ্ঞাত লোকটা না আসত সেদিন। লোকটার মুখ কেউ দেখেনি। মুখে যে একটা মুখোশ ছিল, কিন্তু লিভারপুলের লিডসে স্ট্রিটের সেই সন্ধ্যায় লোকটা একটা খুন করেছিল প্রকাশ্যে। এটা অন্য কথা যে লোকটা যাকে গুলি করে হত্যা করে সেই বিল নবস সেই সন্ধেবেলায় লিডসে স্ট্রিটের রাস্তায় এসেছিল একমাত্র একটি লক্ষ্য নিয়ে, জিমের মা অ্যালিসকে খুন করতে। যখন সে প্রথম বার ছুরিটা নিয়ে অ্যালিসকে অতর্কিতে আক্রমণ করে, ভাগ্যক্রমে অ্যালিসের হাতে লাগে ছুরিকাঘাত। নিজের সন্তানকে আড়াল করতে দ্রুত অপর দিকে ঘুরতে যাওয়ার আগেই দ্বিতীয় আঘাত আসে তার থাইতে। নরম মাংস ভেদ করে নির্মম নৃশংসতার সঙ্গে ঢুকে যায় সে ছুরি। রক্তে ভেসে যায় তার সাদা রঙের স্কার্ট। ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে অ্যালিস। স্পষ্ট বুঝতে পারে মৃত্যু দরজায় কড়া নাড়ছে, কিন্তু আততায়ী বিল যে তাকে একটা চরম বেদনাদায়ক মৃত্যু দিতে চেয়েছিল এটা তখন তার কাছে স্পষ্ট। কিন্তু যে কোনো মা সেই সময় যা করে, ঠিক সেটাই করেছিল অ্যালিস, এক ধাক্কায় ছিটকে ফেলে দিয়েছিল পুঁচকে জিমকে। ছিটকে পড়েছিল জিম মুখ থুবড়ে। তখন খুব দুর্বল এবং রুগ্ন ছিল জিম। কিন্তু সেই দিন সব কিছু পালটে গেছিল জিমের জন্য। এই ঘটনার পর থেকেই তার শরীরচর্চায় মন লাগে। ঠিক তখন মার্কেট টাওয়ারের ঘড়িতে সন্ধে আটটার প্রথম ঘণ্টাটা বেজেছিল। আততায়ী বিল তখন উন্মাদের মতো হাসছে। লোকটার এমনিতেই মাথা ঠিক ছিল না, অনেকটা সাইকো গোছের ছিল সে—উন্মাদ প্রেমিক, প্রত্যাখ্যাত হয়ে হিংসায় মেতেছে। অ্যালিসের স্বামী মার্কের মৃত্যুর পর থেকেই পিছনে লেগেছিল সে অ্যালিসের। বারবার প্রত্যাখানের সঙ্গে তার জেদ আরও বাড়ছিল। লিভারপুল পুলিশের কাছে যখন অ্যালিস নালিশ করে বিলের সম্বন্ধে, তখন তার পাগলামো আবার জেগে ওঠে। সে জানত অ্যালিস প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ড্যান্স ক্লাস করাতে আসে লিডসে স্ট্রিটের এই নির্জন এলাকায়। এই এলাকা ঠিক সেই অর্থে জনবহুল নয়, নির্জন, অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে! ধূসর বাড়িগুলো এক অপরের গায়ে গায়ে নিস্তব্ধে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ছাতে অবস্থিত চিমনিগুলো ক্রমাগত ধোঁয়া নির্গত করে চলেছে। সেই ধোঁয়াতে আরও রহস্যাবৃত হয়ে গেছিল চারপাশের পরিবেশ! এই আদর্শ পরিবেশে অপেক্ষায় ছিল বিল, তার প্রতিশোধের,ঠিক একটি হিংস্র সাপদের মতো। তাই ২১ জুন, ২০০৪ এর দিনটা সে যখন হঠাৎ আবির্ভূত হয় অ্যালিসের সামনে, তার মাথা কাজ করছিল না।
এদিকে অসহায় জিম কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। বয়েস কম হলেও এটা সেদিন সে বুঝতে পেরেছিল যে আজ মাথা ঘুরিয়ে হয়তো তার জীবিত মাকে আর দেখতে পাবে না জিম। সেই আতঙ্কে কাঁপছিল সে। ঠিক সেই সময় একটা বলিষ্ঠ হাত এগিয়ে এসেছিল তার দিকে। লোকটার হাতে একটা ড্রাগনের ট্যাটু। ট্যাটু খানা যেন সেই দিন থেকেই তার মনে গেঁথে গেছিল। জিম নিজেও দারুন ছবি আঁকতে পারে। অবিকল শুধু স্মৃতি থেকে সেই ট্যাটু সে এঁকেছিল। তার পরনে ছিল একটা কালো জিন্স আর কালো একটা লেদার জ্যাকেট। সেই দিন থেকে অজ্ঞাত সেই লোকটা জিমের জীবনের নায়ক হয়ে গেছিল। সেইদিন সেই লোকটাই রুগ্ন জিমকে প্রথম বার বুঝিয়েছিল এই দুনিয়াতে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা। সে না থাকলে আজ তার মা বেঁচে থাকত না। তারপরে প্রতিটা দিনে নিজেকে গড়ে তুলতে নিবেদিত প্রাণ ছিল জিম। বক্সিং, ক্যারাটে, জিমন্যাস্টিক, বন্দুক চালানো সব কিছু শিখেছিল জিম। তার একমাত্র অনুপ্রেরণা ছিল সেই ড্রাগন যোদ্ধা। কিন্তু লোকটা আর কোনোদিন দেখতে পায়নি সে। সে কেন গোটা লিভারপুল পুলিশ, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড কেউ তাকে খুঁজে পায়নি। সেই আততায়ী যেন অন্য কোনো দুনিয়া থেকে হঠাৎ করে এসে জিমের জীবনটা পালটে দিয়ে আবার হারিয়ে গেছিল।
লোকটা এক ঝটকায় জিমকে তুলে দাঁড় করিয়ে দিয়েই, তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে গুলি চালিয়েছিল বিলকে লক্ষ করে। নির্ভুল লক্ষ্য! অ্যালিসের বুক লক্ষ করে উদ্ধত ছুরি হাতে জিমের ছয় ফুট লম্বা শরীরটা একটা কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। ব্রিক লেনের কাছেই তখন সার্জন মার্ক দাঁড়িয়েছিলেন। তার কানে গুলির শব্দ আসতেই দুই সহকারীকে নিয়ে সে ছুট দেয় লিডসে স্ট্রিটের দিকে। নির্ভুল নিশানা ছিল সেই ড্রাগন যোদ্ধার। মৃত বিলের মাথায় তখন একটি বুলেট হোল আর সেখান থেকে নির্গত হচ্ছে টাটকা রক্ত আর ধোঁয়া। ঘটনাক্রমের আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে আহত অ্যালিস তখন মাটিতে বসে পড়েছে।
এদিকে এক মুহূর্তের জন্য সেই যোদ্ধার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে জিমের। অদ্ভুত দর্শন মুখোশের ফাঁকে শুধু চোখটা দেখা যাচ্ছে সেই লোকের। একবার চোখে পাতা পড়েছিল তার, ভয়ার্ত চোখে দেখছিল জিম। কোনোদিন সেই চাহনি সে ভুলতে পারবে না। কিছু একটা ছিল সেই চাহনিতে যা আজ এতদিন পরেও জিমের স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। কী সেটা সে আজও সে জানে না। তবে চেনা কিছু একটা। হাজার ভেবেও সেই রহস্যের সমাধান করতে পারেনি জিম। তবে ওই কয়েক সেকেন্ডের সাক্ষাৎ যে জীবন সম্বন্ধে তার সম্যক ধারণা এইভাবে বদলে দেবে চিরতরে, সেটা সেদিন বোঝেনি জিম।
এদিকে সার্জন মার্ক আর তার সঙ্গীরা তখন ছুটে আসছে সেই ড্রাগন ম্যানকে ধরতে। লোকটা এক মুহূর্তে লাফ দিয়ে ঢুকে গেল সামনের একটি বাড়িতে। বাড়িটার মালিক ছিল পাগলা ম্যাক। এই বুড়োকে এই চত্বরে সকলেই পাগল বলে ডাকত। সার্জন জানে যে ম্যাকের বাড়ি থেকে বেরোনোর একটাই রাস্তা, অর্থাৎ তার ধরা পড়া নিশ্চিৎ। মার্ক তার ব্যাক আপ নিয়ে ঘিরে ফেলে পুরো বাড়িটা। এর পর তার দরজা খুলে বাড়ির ভিতরেই ঢুকল। পাগলা ম্যাক কোনো বাধা দেয়নি, শুধু তার চোখ মুখে একটা অদ্ভুত দুষ্টুমি হাসি খেলছিল। সে বারবার অস্বীকার করেছিল যে তার ঘরে কেউ আসেনি। পুলিশ ঢুকে কাউকে খুঁজে পায়নি। ড্রাগন যেন রূপকথার পাতা থেকে উঠে রাতারাতি উবে গেছিল। কোথায় সে আজও কেউ জানে না।
বিলের মৃত্যুর পর সেই আগন্তুককে খোঁজার চেষ্টায় মেতে পড়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। কিন্তু সবার সব চেষ্টা ব্যার্থ হয়। সেই লোকের সমস্ত চিহ্ন যেন রাতারাতি মুছে দেওয়া হয় দেশের বুক থেকে। তাকে খোঁজার সমস্ত প্রচেষ্টা বিফল হয়ে। সেই রহস্য পুরুষকে কেউ আর কোনোদিন খুঁজে পায় না। ম্যাক পাগলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিয়ে গেছিল বটে, তার অসংলগ্ন কথা এবং শরীরের অবস্থা দেখে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় শেষমেশ। যদিও তার পূর্বে তার লিডসে স্ট্রিটের ভাঙা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো সুড়ঙ্গ বা চোরা দরজা কিছুই পাওয়া যায়নি। এমনকী যে অস্ত্র দিয়ে খুনটা হয়েছে সেটাও নিখোঁজ। প্রায় এক বছর অব্দি চলেছিল সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির খোঁজ। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে যেন এসেছিল এক নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আর সেই লক্ষ্যভেদ করে সেই যেন তৎক্ষণাৎ হারিয়ে গেছে। সব খোঁজ তল্লাশি বিফল হওয়ার পর, এক সময় বাধ্য হয়ে পুলিশ হাল ছেড়ে দেয়।
তবে ২১ জুনের তারিখটা যেন চিরতরে পালটে দেয় জিমকে। এই নৃশংস পৃথিবীতে প্রিয়জনদের সুরক্ষিত রাখতে যে তাকেই শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে সেটা বুঝতে পেরেছিল সেদিনের রুগ্ন জিম। আজ একজন আক্রমণ করেছে কালকে আরও কেউ আঘাত হানতে পারে, বিশ্বে হিংস্র জন্তুদের অভাব নেই। তাই প্রতিঘাতের যোগ্য নিজেকে প্রস্তুত করার কাজে সেদিন থেকে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল তরুণ জিম। তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল সেই ড্রাগন ট্যাটু আর সেই দুটো চোখ। বহু রাতে সে স্বপ্নে দেখেছে সে চোখ দুটো আর পেশিবহুল হাতের ট্যাটু। নিজেও একদিন নিজেকে এতটাই শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলার সংকল্প নিয়েছিল সেই দিন জিম।
এই ঘটনার ছয় বছরের মাথায় বৃদ্ধ ম্যাক মারা যায়। শেষের দিকে একদম বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছিল ম্যাক। সে রাস্তা ঘাটে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াত। সে যেন কিছু একটা খুঁজছে। কেউ জিজ্ঞেস করলেই এক মুখ সাদা দাড়ি নাড়িয়ে বলত, ‘আবসলিউট বলে কিছু নেই, সব কিছুই আপেক্ষিক, সব কিছু! আজ আছে, কাল নেই, আবার পরশু আছে, গতকাল নেই, অথচ গত পরশু আছে আবার!!’ তাই এই কথা শুনে হেসে উঠত তার ভবঘুরে সঙ্গীরা। তাকে নিয়ে মশকরা করত প্রভূত পরিমাণে। কিন্তু এসব কিছুই যেন তার কানে ঢুকত না। মারা যাওয়ার মাস তিনেক আগে একবার অকস্মাৎ দেখা হয়ে যায় ম্যাকের সঙ্গে আঠেরো বছরের তরুণ জিমের। আসলে ওই ঘটনার পরে অ্যালিস ওই এলাকা ছেড়ে ব্রাউন স্ট্রিটে একটি বাড়ি ভাড়া নেয়। লিডসে স্ট্রিটের বিভীষিকা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল অ্যালিস। কিন্তু জিমের যেন জায়গাটার প্রতি একটা অলীক টান জন্মেছিল। বহুবার সে ভেবেছিল আর একবার যাবে সেই স্থানে কিন্তু মনের সাহস জোগাতে পারেনি। সেইদিন কলেজের বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল জিম। অবশেষে নিজেকে বোঝাতে পেরেছিল আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এই চার-পাঁচ বছরে বেশ কিছুটা পালটে গেছে জায়গাটা। একটা বড়ো হোটেল নির্মাণ স্বার্থে এলাকার বেশ কিছু পুরোনো বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। তাই চেহারায় অনেকটা ভিন্ন লাগছে এলাকাটা। ম্যাক বুড়োর বাড়িটার অবস্থাও বেশ জরাজীর্ণ। কিন্তু এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় এটা এই মুহূর্তে ভাঙার সম্ভবনা ছিল না। ম্যাক বুড়োর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে চারদিক দেখছিল জিম। এইখানেই সে পড়ে গেছিল। এই দরজা দিয়ে তাকে সাহায্য করতে ছুটে এসেছিল তার ড্রাগন যোদ্ধা বন্ধু। নিখুঁত নিশানায় বিলের খুলি উড়িয়েছিল সে। সব যেন একটা ছবির মতো ভেসে উঠছিল অন্যমনস্ক জিমের চোখে। তবে সে খেয়াল করেনি যে ধীর পায়ে পাগলা ম্যাক ঠিক তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
এই বুড়ো কে নিয়ে সে অনেক গল্প শুনেছে ছোটো থেকে। লোকটা নাকি অগাধ জ্ঞানী, বিস্তর পড়াশুনো, ক্ষেপাটে বৈজ্ঞানিক ধরনের। বেশি লেখাপড়া করলে যে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়, জিমের মায়ের মতে এই লোকটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এলাকার বাচ্চারা কিছুটা ভয়েই পেত এই পাগলা বুড়োকে। তাই যখন ম্যাক নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছিল জিমের ঠিক পিছনে আর আলতো করে নিজের ডান হাতটা জিমের কাঁধে রেখেছিল তখন একরকম চমকেই উঠেছিল জিম।
‘পেয়েছি, পেয়েছি পেয়েছি, এতদিন খুঁজে পেয়েছি তোমাকে। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পেয়েছি কারণ আমি একজন ক্ষণজন্মা বৈজ্ঞানিক! আমি সেটা পেরেছি যেটা আইনস্টাইনও পারেনি। আমি পেরেছি।’ বলেই সে ঘুরে আবার হাঁটা দেয় তার বাড়ির দিকে।
‘ড্রাগন যোদ্ধা কোথায়? তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ তাকে? আমি জানি সে ছিল, আমার চোখের ভুল মোটেই নয়…’ কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করেছিল জিম।
তার প্রশ্ন শুনে সহসা থেমেছিল ম্যাক বুড়ো। তারপর তার দিকে আস্তে আস্তে ঘুরেছিল। তার চোখ দুটো যেন চকচক করছে তখন, ঠোঁটে খেলে বেড়াচ্ছে একটা রহস্যের হাসি। যেন সেই হাসি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মিটমিটে চোখে জিমের দিকে চেয়ে হঠাৎ জোরে হেসে উঠল বুড়ো। ‘রেখেছি তো! তাকে আমি লুকিয়ে রেখেছি। সযত্নে!! কিন্তু তোমাকে বলব না। কাউকে বলব না, একদিন তুমি নিজেই তাকে খুঁজে বের করবে আর সেইদিন আমার সঙ্গে তোমার দেখা হবে। সেইদিন আমি তোমাকে আমার পুরো নামটা বলব কেমন?’
‘কী তোমার পুরো নাম?’
‘বলব না, বলব না!! তোমাকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে। তবে আমি জানি তুমি খুঁজে নেবে, নিতেই হবে। তবে তার জন্যে আমার আরও কিছু কাজ বাকি। চলি চলি তাড়াতাড়ি চলি। বেশি সময় তো নেই। চলি চলি।’ বলে দ্রুত বাড়িতে ঢুকে গেছিল ম্যাক বুড়ো। এর মাত্র মাস তিনেকের মধ্যে ম্যাক বুড়ো মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে, জিমের শেষ আশাটাও মরে যায়। নাহ ড্রাগন যোদ্ধাকে আর সে দেখতে পাবে না কোনোদিন। যদিও শেষের দিকে পুলিশ বিশ্বাস করেছিল যে সেই লোকে বাস্তবে জিমের কল্পনার ফসল। কোনো গ্যাংস্টার হয়তো গুলি করেছিল সেইদিন বিলকে। এই ড্রাগন ট্যাটুর বিষয়টা নিছক, এক আক্রান্ত কিশোরের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা।
সময়টা ২০২৪ এর জুন মাস। গত বছর বিয়ে করেছে জিম। তার স্ত্রী জয়েস অত্যন্ত মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে। গত মাসেই দম্পতি জানতে পারে যে জয়েস সন্তানসম্ভবা। বর্তমান জিম একটি সিভিল কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার। কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে লিডসে স্ট্রিটের সেই সন্ধের পর আর সেই রকম কোনো বড়ো মাপের দুর্যোগ কখনও নেমে আসেনি জিমের জীবনে। সে একজন সফল মানুষ বলেই পরিচিত। কিন্তু এত কিছুর পরও ওই দিনটার স্মৃতি যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছিল জিমের। এই বিষয়ে সে কারুর সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। একবার একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গেও পরামর্শ করেছিল জিম। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধে হয়নি। ওই দিনটার বেয়াড়া স্মৃতিগুলো যেন চিরসঙ্গী হয়ে গেছিল জিমের। এর মাঝেই যে লিডসে স্ট্রিট আবার তার জীবনে ফিরে আসবে এটা স্বপ্নেও ভাবেনি জিম। সেই চোখ দুটো যেন খুব চেনা লাগে তার। এদিকে লিডসে স্ট্রিটে আমোল পরিবর্তন ঘটেছে। পুরোনো বসতিগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিশ বছর আগের সেই অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে এলাকার কোনো ছায়াই নেই বর্তমানের লিডসে স্ট্রিটে। আলো ঝলমলে একটা ঝাঁ চকচকে এলাকায় পরিণত হয়েছে এই জায়গাটা। বেশ কিছু জরাজীর্ণ বাড়ি এই এলাকায় মেরামতের উর্দ্ধে। শুধু তাই নয় বিপদজনকও বটে। তাই সেগুলোকে ভেঙে নবনির্মানের আদেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যেই একটা বাড়ি হল বুড়ো ম্যাকের সেই রহস্যময় বাড়ি। ম্যাকের মৃত্যুর পর থেকে বাড়িটা নিয়ে অনেক শরিকি ঝামেলা থাকলেও, বর্তমানে তার জরাজীর্ণ দশা দেখে স্থানীয় নগরায়ন দপ্তর থেকে এই বাড়িটা ভেঙে ফেলার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আর ভাগ্যের কি ফের সেই দায়িত্ব পড়েছে জিমের কোম্পানির উপর আর জিমকেই সেই প্রজেক্টের লিডার নির্বাচিত করেছে তার কোম্পানি ।
অনেক দিন বাদে জিম এসেছে এই এলাকায়। পরিবর্তন এতটাই ঘটেছে যে তার চোখে পুরো জায়গাটা অচেনা। সব কিছুর মধ্যে পুরোনো সময়ের মাইলফলক হয়ে একা দাড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ বুড়ো ম্যাকের বাড়ি। দেখে হানাবাড়ি বললে বেশি বলা হবে না। ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটার চূড়ান্ত দুর্দশা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নাগরিকের সভ্যতার বুকে যেন কালো একটা গহ্বর এই বাড়িটা। আজ নয় কাল ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও আছে। নিজের দলের সঙ্গে এসে পুরো জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করে দেখল জিম। যা অবস্থা তাতে অবিলম্বে এই নির্মাণকে ভেঙে ফেলাই আদর্শ। তাই তারা ঠিক করল ২২ জুন ২০২৪ তারিখে এই বাড়িটা ভেঙে ফেলবে। এমনিতেও বাড়িটা সিল করে দিল তারা।
২১ জুন ২০২৪ প্রতি বছর এই দিনটা এলেই যেন মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে জিমের। এবার কাকতালীয়ভাবে এই দিনের ঠিক পরের দিন সেই রহস্যময় বাড়িটা চিরতরে মিলিয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে। আর শুধু বাড়িটা নয়, তার সঙ্গে হারিয়ে যাবে সেই লোকটা খুঁজে পাওয়ার শেষ আশা টুকু। সেই লোকটা যে জিমকে শিখিয়েছিল এই পৃথিবীতে দুর্বলের জায়গা নেই। নিজের প্রিয়জনদের জন্য লড়াই করার প্রেরণা জুগিয়েছিল তার সেই ড্রাগন হিরো! সেদিন তার মাকেই বাঁচায়নি সে, যেন জিমকেও নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল। সেই তার স্বপ্নের ড্রাগন যোদ্ধা হয়তো এই বাড়িটার সঙ্গে চিরতরে হারিয়ে যাবে। বুড়ো ম্যাক তো কবেই মৃত। নাহ এইভাবে সে সেই লোকটাকে ভুলতে পারে না। হয়তো কোনোদিন তার সঙ্গে দেখা হবে না, তবু তাকে সে ভুলবে না। এই সব ভেবে সেদিন কী যে হল জিমের সে একটা সেইরকম দেখতে লেদার জ্যাকেট কিনে ফেলল। আর কিছু কেনাকাটা করে সন্ধের দিকে জিমের মনে হল শেষবারের মতো একবার ঘুরে আসি সেই বাড়িটা…
জোরালো একটা টর্চ নিয়ে ভিতরে ঢুকেছে জিম। বাড়িটার ভিতরের অধিকাংশ ঘরের জিনিসপত্র চুরি গেছে। যেগুলো অবশিষ্ট আছে, সেগুলোর দশাও বেহাল। শুধু একটা ঘর বাদে। সেই ঘরটায় একটা বড়ো তালা ছিল। যে কোনো কারণে হোক সেটা অক্ষত ছিল তখনও। জিমের কাছে একটা মাস্টার-কি ছিল যার সাহায্যে সে খুলে ফেলল সেই দরজাটা। ঠিক কেন করছে সে এসব সেটা কিন্তু নিজেই বুঝতে পারছে না জিম।
টর্চ ছাড়া একটা ব্যাটারিচালিত লাইট ছিল জিমের কাছে। অতি সন্তর্পনে সেটি নিয়ে জিম প্রবেশ করল সে ঘরে। ধুলো, মাকড়শার জালে ঘরটা ঢেকে আছে কার্যত। জমাট বাধা অন্ধকারের রাজ্যে যেন ওইটুকু আলো অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। ঘরে কিছু আসবাব ছিল বটে কিন্তু তার হাল অত্যন্ত জরাজীর্ণ। একটা লোহার লকার বাদে। এই ধরনের একটা জিনিস যে এখানে এতদিন অক্ষত ছিল কী করে সন্দেহ হল জিমের। যদিও সে নিজেই জানে না যে সে কী খুঁজতে চায়, কেন খুঁজতে চায়, তবু সে লকারের সামনের লকটা চেপে ধরল। কী অদ্ভুত! লকটা খুলে গেল।
লকারের ভিতরে প্রথমেই একটা ফাইল পেল জিম। ফাইলের লেখা আছে কিছু বৈজ্ঞানিক সূত্র। কালির কলমে লেখাগুলো অনেকতাই ক্ষয়ে গেছে আর যা কিছু অবশিষ্ট আছে তাতে জিমের আকর্ষণের কিছু নেই। অবজ্ঞায় পাতাগুলো উলটাতে থাকল জিম। হঠাৎ থমকে গেল সে। তার হাতটা সহসা কেঁপে উঠল। একটা ছবি। জরাজীর্ণ। রং চোটে গেছে। পুরোনো পোলারোয়েড ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি। ছবিটার অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, চিনতে সমস্যা হল না জিমের। এই চেহারা সে জীবনেও ভুলতে পারে না। এটাই তো সেই ড্রাগন যোদ্ধা। মুখে সেই মুখোশ। উত্তেজনায় কার্যত কাঁপতে শুরু করেছে জিমের হাত। তার মানে সেই লোকটাকে সত্যি চিনত ম্যাক বুড়ো। তাহলে কেন তাকে বলল না সে। কেন জিমের থেকে লুকিয়ে রাখল তার পরিচয়?
আর কী আছে এই লকারে? পাগলের মতো হাতড়াতে থাকল সে লকারটা। ধাক্কায় তার হাতের রেডিয়াম ঘড়িটা জ্বলে উঠল। সময়টা ৭-৫০। ঠিক সেই সময় কালো মতো কী একটা যেন তার হাতে লাগল। জিনিসটা বের করে হাতে নিয়েই টর্চের আলো আঁধারিতে সেটাকে চিনতে পারল জিম। সেই মুখোশটা। আর সন্দেহ রইল না। তার মানে সেই লোক এখানে এসেছিল আর ম্যাক বুড়ো তাকে দেখেছিল, ছবি তুলেছিল আর তার মুখোশটা সযত্নে এখানে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কেন সেই লোককে খুঁজে পায়নি? এই বাড়ি থেকে সে কোথায় হারিয়ে গেল আর কী করে? এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিজের অজান্তেই একটা খেয়াল চাপল জিমের মাথায়। এক মুহূর্ত স্থির চোখে মুখোশটাকে দেখে নিয়ে, কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা পরে নিল। পরে নেওয়া মাত্রই যেন চোখের সামনে নেমে এল মিশ কালো অন্ধকার।
কতটা সময় যে কাটল তার কোনো আন্দাজ ছিল না জিমের। বারবার তার মনে হয় ছিল যেন সে অনন্ত শূন্যে ভেসে আছে। চারদিকে রাজত্ব করছে গাঢ় অপার্থিব অন্ধকার। সেই অন্ধকারের যেন অকল্পনীয় গভীরতা আছে আর ক্রমে আরও অন্ধকারের গভীরে যেন ক্রমে তলিয়ে যাচ্ছিল জিম। হঠাৎ আচমকা যেন চোখ খুলে গেল। আর চোখ খুলতেই তার সামনে সে দেখতে পেল একটা অবয়বকে। না চিনতে কোনো ভুল নেই। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাক বুড়ো! ঠিক বুড়ো না আধ বুড়ো!
‘ইউরেকা ইউরেকা!! আমি আবিষ্কার করতে পেরেছি তার মানে! এই বাড়িতে অবস্থিত একটি টাইম হোল আমি পেরেছি আবিষ্কার করতে। আমার নাম ডক্টর রেগান ম্যাকডোনাল্ড। আমাকে সবাই ম্যাক বলে ডাকে। তোমার নাম কী? বাহ হাতের ট্যাটু তো দারুন? নতুন!’ প্রশ্ন করল ম্যাক বুড়ো, তবে আজকের ম্যাক বুড়ো নয়, সেই বিশ বছর আগের ম্যাক বুড়ো।
‘আমি জিম রডরিগ। হ্যাঁ, এই ট্যাটু দু-দিন আগেই করিয়েছি। একটা ঘটনার স্মৃতি স্মারক হিসেবে। কিন্তু তুমি এখনও বেঁচে?’ বোকার মতো জিম প্রশ্ন করল।
‘তুমি তার মানে ভবিষ্যত থেকে আসছ! কী দারুণ! কিন্তু তোমার কাছে ঠিক এগারো মিনিট আছে। ঠিক আটটা তিন মিনিটে তোমাকে এখানে আসতে হবে। এই লকারটাই ট্রান্সপোর্ট করবে তোমাকে, মুখোশটা আর লাগবে না। এমনিতেও ওটা আমার। আমাকে দিয়ে যাবে। যাও যে কাজে এসেছ করে এসো।’ চকচকে চোখে জানাল ম্যাক বুড়ো।
‘আজ কত তারিখ?’ অকস্মাৎ প্রশ্ন এল জিমের মাথায়।
‘২১ জুন ২০০৪, এখন বাজে ৭-৫৭ সন্ধ্যা!’ উত্তর দিল ম্যাক। মুখে স্মিত হাসি।
আর বুঝতে বাকি রইল না জিমের। ‘আমাকে একটা বন্দুক দাও এই মুহূর্তে।’ ম্যাক সময় নষ্ট না করে তাকে তার বন্দুকটা দিয়ে দিল। একটা পিস্তল। জিম বেরোতে তৈরি হল। ম্যাক বলল ‘এক মিনিট!’ যেই জিম ঘুরে তাকাল ম্যাকের দিকে, ‘ক্লিক’, একটা ছবি তুলে নিলে ম্যাক তার পোলারয়েড ক্যামেরা দিয়ে। আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত ছুটে বেরোলে জিম।
এই তো সেই চেনা লিডসে স্ট্রিট। স্যাঁতসেঁতে,স্বল্প আলোকিত গলি, গায়ে গায়ে লাগা বাড়ি। চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উঠছে। আর ওটা কী হচ্ছে রাস্তার মাঝখানে। দুই লাফে সেখানে পৌঁছায় জিম। একজন অসহায় মহিলাকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করছে একজন আততায়ী। লম্বা পেশিবহুল চেহারা, টাক মাথা, একে চিনতে কি ভুল হতে পারে কখনও। এই সেই কুখ্যাত বিল আর আক্রান্ত মহিলা আর কেউ নন, জিমের মা অ্যালিস! আর একটি রুগ্ন বাচ্চাকে এক ধাক্কায় ফেলে দিল তার আক্রান্ত মা। এর পরের সব কিছু তো জানা জিমের। সে গিয়ে সেই ছেলেটিকে এক হাতে তুলল। আতঙ্ক মিশ্রিত অসহায় চোখে ছেলেটি তাকে দেখে ইঙ্গিতে দেখল নিজের মাকে। তখন সেই আততায়ী ছুরি উঁচিয়ে তার মোক্ষম আঘাত হানতে প্রস্তুত। এক নিমেষে নিজের পিস্তলটা তুলে নিশানা করে ট্রিগার টিপে দিল জিম। অব্যর্থ নিশানা। ধরাশায়ী আততায়ী বিল নবস! ঠিক তখন ক্লক টাওয়ারের ঘড়িতে তখন আটটার ঘণ্টা বেজে উঠল। রুগ্ন ছেলেটি মন্ত্র মুগ্ধের মতো চেয়ে রইল তার চোখের দিকে। আর জিম সেই চোখ দুটো চিনতে পারল অনায়াসে। কারণ রোজ আয়নার সামনে তো সে এই চোখ দুটোকেই দেখতে পায় সে।
নিজের চোখের কোনায় বিল দেখতে পেল যে সার্জন মার্ক তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে ছুটে আসছেন ব্রিক লেনের দিক থেকে। এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে পিছনে ঘুরেই ম্যাকের দরজা লক্ষ করে দৌড় দিল জিম। ভিতরে ঢুকেই ঘড়ি দেখল সে। সর্বনাশ আর মাত্র এক মিনিট। এক ঝটকায় হেলমেটটা খুলে দিয়ে দিল সে ম্যাককে। ম্যাক প্রশ্ন করল, ‘আবার দেখা হবে কবে?’ জিম মুচকি হেসে বলল, ‘বছর পাঁচ পরে। তখন তুমি বলবে যে তোমার সঙ্গে আবার দেখা হলে তবে তুমি তোমার পুরো নাম বলবে। আর এই বন্দুকটা আমি রেখে দিলাম আমার স্মৃতি হিসেবে।’ বলেই লকার সংলগ্ন দেওয়াল লক্ষ করে এক লাফ দিল জিম।
যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন প্রায় রাত ন-টা। পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠেছিল। স্ত্রী জয়েসের ফোন। এত দেরি কেন? কোথায় সে? ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো জিম। না কোনো দেওয়ালে কোনো দরজা বা গুপ্ত পথ নেই। আর লকারের ভিতরে মুখোশটাও নেই। তবে হ্যাঁ, একটা জিনিস আছে। তার পিঠে ঘষা খাচ্ছে একটা ঠান্ডা ধাতুর ব্যারেটা পিস্তল।
এই পিস্তলটাই বাকি জীবন তার লড়াই করার প্রতীক হিসেবে থাকবে না হয়…
Tags: নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, পথিক মিত্র