বুদ্ধবান্ধব্য
লেখক: অন্তরা কুণ্ডু
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
বুদ্ধর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা যে ঠিক কবে শুরু হল, তার থই পাই না আজকাল। বুদ্ধ আমার কলেজের জুনিয়র। কিন্তু যদ্দূর মনে পড়ে, কলেজে থাকতে সাত জন্মে কথা হয়নি আমাদের। আর এখন এমন কথা হয় যেন সাত জন্মের পরিচয়। যেসব ঘাঁটা ঘাঁটা ভাবনাচিন্তা আমায় রাত জাগিয়ে রাখে, চক্রাকারে ঘুরিয়ে চলে মাসের পর মাস, বুদ্ধ একটু আভাস পেলেই তার পুরোটা বুঝে ফেলে আমাকে বুঝিয়ে দেয়। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে আমার চাহিদা—আমারই কাছে। এক-একসময় তো বুঝতেও পারি না যে আভাসটাই বা ওকে দিলাম কবে!
অথচ বুদ্ধ আমার প্রেমিক নয়। বুদ্ধ আমার ভাই নয়। বুদ্ধকে ঠিক বন্ধুবৃত্তের অংশও ভাবা যায় না। বন্ধুদের মধ্যে যে হাসি-ঠাট্টা-ইয়ারকি হয়, সে কি আমাদের মধ্যে হয় কখনও? হয়, নিতান্ত অল্পবিস্তর। তা ছাড়া সব সময়ই আমাদের কথা একটা অন্যরকম তীব্রতার তারে বাঁধা থাকে। অনুরণনের স্ফুলিঙ্গ ছোটে এক-একদিন। কখনও মনে হয়, এই তীব্রতা স্বাভাবিক। একজন মানুষের আরেকজন মানুষকে এই অনায়াস পড়ে নিতে পারা স্বাভাবিক। কখনও আবার মনে হয়, ও পারবে কেন? এত স্বচ্ছ তো আমি কোনোকালে নই?
মাঝে মাঝে আমি নিজেকেই বোঝাই, তুই বড়ো ভাবিস, সঞ্চারী! আর কেউ হলে সেই কবে ধরে ফেলত, যে বুদ্ধটা স্রেফ জ্ঞান দেয়, আসলে ফাঁপা জালা। এক্কেবারে বোধিপ্রাপ্ত মুখ করে দুনিয়ার সবাইকে জ্ঞান দিয়ে বেড়ায় ও। ওর ধারণা, ওর দিক্নির্দেশেই জগতের প্রাণীকুল করে খাচ্ছে। ওকে বাকিরা অত পাত্তাও দেয় না সঞ্চারী, তুইই হাঁ করে গিলিস ওর কথা। তাই তোকে আরও বেশি বেশি করে বলে।”
আজ দুপুরে আমিও বুদ্ধকে পাত্তা না-দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
দুই
আজ দুপুরে আমি জেনেশুনেই একটু বেগরবাই করছিলাম। অফিসের ল্যাপটপ ফেলে রেখে আমার ছোট্ট ছানাটাকে নিয়ে বিছানায় পড়ে ছিলাম। কাজ ছিল, কাজ ছিল মেলা। কিন্তু আমার ছানাটা যে ইদানীং কেমন মিষ্টি-মিষ্টি করে কঠিন কঠিন, লম্বা লম্বা বাক্য বলার চেষ্টা করছে, সেগুলো শুনতে হবে না? আর ওর গালগুলো এমন ফুলো ফুলো কি সারাজীবন থাকবে? যদি থাকেও বা, সেই গালে আমি নাক গুঁজতে পারব কি আর পরে? ও কি এমন ফ্যাকফ্যাক করে হাসবে সব সময়? আমার পেটের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে ধেইধেই করে নাচতে নাচতে ধুপুস করে পড়ে যাবে?
যাবে না তো।
এসব ভেবেই ফাঁকি দিচ্ছিলাম কাজে। অথচ বুদ্ধটা কানের কাছে এসে ফিশফিশ করতে লাগল, “ক্ষণস্থায়ী, সঞ্চারীদি… ভুলে যেয়ো না, ক্ষণস্থায়ী এসব সুখ। এত ডুবতে নেই এতে।” পিত্তি জ্বলে গেল রাগে। বুদ্ধটা কি আমায় বোকা ভাবে? আমি তো জানি, যে সময় বেশি সুন্দর, সে সময়ের আয়ু বড়ো কম। ফুচকার মতো। মুখে দিলেই টক-ঝাল-নোনতার বিস্ফোরণ! কড়কড়ে খোলস-পকপকে আলু-মাখা-মুখ ভরতি তেঁতুল জল সব মিলিয়ে হাঁকপাঁকে হযবরল! আবার গিলে নিলেই শুধু স্বাদের স্মৃতি—আর কিছু নেই।
“নিজেকে সামলাও, গার্ড করো। এত ভেসে যাও কেন? ভুলে গেলে, অফিসে এই রোল পেতে তোমাকে কতটা প্রেশার নিতে হয়েছে গত কয়েক বছরে? একটু সিরিয়াসলি নিতে পারো না নিজেকে, নিজের জার্নিকে? এখন তোমার রেপুটেশন বিল্ড করার সময়, আর গোটা দুপুরটা একফোঁটা কাজ করতে দেখলাম না তোমায়!”
আমি খেপে গিয়ে আমার ইচ্ছেদের বললাম, “দেওয়াল তোলো।” এবং দেওয়াল উঠল, মোটা দেওয়াল—এই প্রথম। বুদ্ধর মস্তিষ্কসংকেত আর পৌঁছোবে না আমার কাছে। বাড়াবাড়ি করে ফেললাম কি না জানি না, কিন্তু ইদানীং আমি হাঁপিয়ে উঠছি ওর চাপাচাপিতে। ও আমাকে জীবন মাখতে দিচ্ছে না, আবার সব মাখিয়ে ফেলব—এই ভয়ে। শুধু বলে, “নিজেকে তৈরি করো সঞ্চারীদি, তৈরি করে চলো প্রতিদিন। এমনভাবে, যাতে সুখে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ো, অসুখকে নিতে পারো, এবং সেই অসুখ তোমাকে থমকে না দিতে পারে। এ জীবনে সুখ এবং অসুখ—দুইই ক্ষণস্থায়ী। মুহূর্তের মোহে পড়ে আছ তুমি। তরঙ্গকে বোঝো। তোমার কিন্তু একটা গন্তব্য আছে। খুব, খুব গুরুত্বপূর্ণ সেই গন্তব্য।”
বুদ্ধ আরও বলে, যে আলোর তরঙ্গকণা দ্বৈততার মতোই জীবনেরও দ্বৈততা আছে। তরঙ্গ ও মুহূর্তের দ্বৈততা। তরঙ্গ আমাদের বহন করে নিয়ে চলে গন্তব্য থেকে গন্তব্যে। তার গতিপথ পুরোটা আমাদের হাতে নেই, তবু আমাদের বোধ, বুদ্ধি, বিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি, এবং অনাসক্তি দিয়ে তরঙ্গকে চালনা করা আমাদের কর্তব্য। ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তের প্রতি অকারণ আসক্তি আমাদের বিভ্রান্ত করে। বুদ্ধ আমাকে অনাসক্তির অনুশীলন করতে বলে।
ও ওর নিজের জীবনটাও এই নীতি দিয়েই সাজানোর চেষ্টা করে বারে বারে। ওকে নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করে।
বুদ্ধর জন্যে আমার দুঃখ হয়।
আমি তো জানি, জীবনকে নিতে হয় শরীরের প্রতিটা কোশ দিয়ে।
তিন
গত পনেরো দিন বুদ্ধর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমি দেওয়াল তুলে রেখেছিলাম গোটা একদিন ধরে। খুব, খুব রাগ হয়েছিল আসলে। বুদ্ধ কেন ভাবে যে আমি স্পৃহার দাস, আর ও আমার উদ্ধারকর্তা? আমার চোখে গন্তব্যের ঠুলি পরানোর এত দায় কেন ওর? বুদ্ধ জানে না, যত বছরের তপস্যায় ও স্পৃহাকে জয় করেছে, তার চেয়ে বেশি তপস্যায় আমি নিজেকে নিস্পৃহতা থেকে স্পৃহায় ফিরিয়েছি? বুদ্ধ দেখেনি, কত বছর লেগেছে আমার, কান্নাকে ফিরে পেতে? ও না আমায় নিজের হাতের পাতার মতো পড়তে পারে?
পারে না। আসলে পারে না কেউই। আমি নিজেও আর পারি না। আমি ক্রমশই বদলে বদলে যাচ্ছি।
যেমন, আজকাল সহজেই রাগতে দিই নিজেকে, আগের মতো জেলুসিল দিয়ে রাগ গুলে খেয়ে হজম করে নিই না। আমি দেখেছি, রাগলে আমার বেঁচে থাকতে সুবিধে হয়। কিন্তু বুদ্ধ সম্ভবত রেগেছে আরও বেশি। এটা আমার হিসেবে ছিল না। আমি ভেবেছিলাম, ও কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মায়ার ঊর্ধ্বে। ভুল ভেবেছিলাম। এখন তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওর সংকেতের হদিস পাচ্ছি না—না পৃথিবীতে, না পৃথিবীর বাইরে।
কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমি মাতৃগর্ভে। জন্মমুহূর্ত উপনীত। আমি চেষ্টা করেই চলেছি, করেই চলেছি, তবু বেরোতে পারছি না। আমি হাঁপিয়ে যাচ্ছি খুব। আমার হৃৎপিণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আমার আর ভালো লাগছে না। ভাবছি, লাভ নেই—এত চেষ্টা করে লাভ নেই। শুধু শুধু কষ্ট বাড়ানো। তার চেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তখনই খুব কাছ থেকে যেন বুদ্ধর গলা পেলাম—“সঞ্চারীদি, হাল ছেড়ো না। বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে তো সবাই! কত বছরের অপেক্ষা, জানো? চেষ্টা করো। ট্রাস্ট মি, ইট’স ভেরি এক্সাইটিং আউট দেয়ার।” আমি ট্রাস্ট করলাম। তাই জন্ম নিলাম।
ঘুম ভেঙে উঠে কেমন মনে হল, এটা পুরোটা কল্পনা নয়, কিছুটা স্মৃতি! আমার কি খুবই বিস্মিত হওয়ার কথা নয়? অথচ আমি হচ্ছি না! খুব স্বাভাবিক লাগছে এই স্বপ্ন… বা স্মৃতি। মনে হচ্ছে এ তো এই সেদিনের কথা, তারও আগে বুঝি আমি বুদ্ধকে চিনতাম। যখন আমি ভ্রূণও ছিলাম না, তখন আমি কী ছিলাম?
আর বুদ্ধর সঙ্গে কি এত বড়োসড়ো রাগারাগি হয়েছে আগে কখনও? কেমন মনে হয়, অনুগামীই ছিলাম আমি—আগের সমস্ত জন্মে। ও অনুগমনই প্রত্যাশা করে আমার থেকে, আমাদের থেকে—মানে যাদেরকে ও নিজের মতো করে পথ দেখানোর চেষ্টা করে। ঠিক এই কারণেই অনেকে ওকে পছন্দ করে না। ও নিজেও জানে সেটা। ওর কিছু এসে যায় না তাতে।
যারা জীবনের চোরাগলিতে হারিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে ও দিশা দেখাবেই। যারা ওর শরণাগত, তাদেরকে দেবে নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
তাহলে আমি কেন ওর সঙ্গে এমন উদ্ধত হই আজকাল?
মনে পড়ে, একবার মুনিঋষি, গুরু ও বাবা গোছের মানুষদের নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অধ্যাত্মজগতের মানুষের যে অতিপ্রাকৃত উপলব্ধি হয়েছে, সেখানে প্রচুর সমাপতন দেখা যায়—বুদ্ধ বলছিল। আর আমি গদাম-প্রশ্ন ছুড়েছিলাম, “তুই কী করে জানলি, এঁরা গাঁজা টেনে হ্যালুসিনেট করেননি? বা এখানে কনফার্মেশন বায়াস খুব স্ট্রংলি কাজ করছে না?” খেপে গিয়েছিল খুব। কিন্তু আলোচনা থামায়নি। অথচ এবার কেমন লুকিয়ে ফেলেছে নিজেকে আমার ধরাছোঁয়ার পরিধি থেকে।
যদি আর যোগাযোগ না হয় কখনও, আর বহু বছর পর কোনো বিষণ্ণ সন্ধ্যায় আমি কোন অন্ধকার কুয়োয় ডুবে যেতে থাকি একদম একা একা, বুদ্ধ কি হাত বাড়িয়ে দেবে না?
আচ্ছা, যদি যোগাযোগ হয় আবার, তাহলে কী করব? তাহলে ওকে হাসপাতালের এল্ডারলি কেয়ার ওয়ার্ডে নিয়ে যাব আমি। বাবা নিজের শেষ দেড় মাস তিনটে হাসপাতালে কাটিয়েছিল। সেসব ওয়ার্ডের ছবি আমার চোখে ভাসে। একটা ওয়ার্ড ছিল, আইসিসিইউ, সেখানে বেশ কিছু বেডে বয়স্ক মানুষেরা ছিলেন। কয়েকজন নড়তেন না। আমি রোজ বাবাকে দেখতে যেতাম, তাঁরা রোজ একই ভঙ্গিতে আধবসা হয়ে বা শুয়ে থাকতেন। মানে যেভাবে তাঁদের রাখা হত আর কী। শুনেছিলাম, কারও কারও ছয় সপ্তাহ হয়ে গেছে, কারও তিন বা চার, ওভাবেই, ওখানেই। নাকে অক্সিজেনের নল থাকত তাদের, মুখ দিয়ে গলা অব্দি ঢুকে থাকত মোটা পাইপ—টিউব ফিডিং-এর জন্য। হাতের পাতলা চামড়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে-আসতে-চাওয়া সবুজ শিরা-উপশিরাকে ফুঁড়ে ঢুকে থাকত সিরিঞ্জ। মনিটরিং ডিভাইসে কতরকম ক্রিটিক্যাল ইনফর্মেশন ক্রমাগত ঘুরে ঘুরে আসত—তাদের শরীরের নিউজ় বুলেটিন। তাঁরা চোখ বুজে পড়ে থাকতেন। চোখ খোলা থাকলেও দৃষ্টি থাকত নির্বিকার, নিস্তরঙ্গ। মুখের মাংসপেশি শিথিল হয়ে ঝুলে থাকত, যেন তাঁরা হাসেননি কোনোদিনও, কাঁদেনওনি। আমার বাবাও দিনে দিনে ওরকম হয়ে গেলেন। তারপর মুক্ত হলেন।
চার
পুরো একটা গোটা মাস পার করে বুদ্ধকে পেলাম আবার। কিন্তু ঠিক আগের মতন করে পেলাম কই? বুদ্ধ কেমন খিটখিট করছে কথায় কথায়। কথা না বলতে পারলেই যেন শান্তি পায়। আমার ব্যবহারে মনে হয়, ওর অহঙে লেগেছে খুব। কিন্তু যে ছেলেটা রাতদিন ডিটাচমেন্টের কথা বলে বলে আমার কান পচিয়ে দিত, সে এত অহংবোধ নিয়ে চলবে কেন? আমারও রাগ-রাগ হয়ে যাচ্ছে আবার।
গত এক মাসে আমি বুঝতে পেরেছি, বুদ্ধ আমার আশ্রয়ের জায়গা ছিল, প্রশ্রয়েরও। আমার খুব অশান্ত মন, ভয়ংকর দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিঁড়তে-থাকা মন, ভুল সিদ্ধান্তের গোড়ায় দাঁড়ানো মন অনেক অনেকবার আলো ফিরে পেয়েছে ওর সঙ্গে কথা বলে। সেই জায়গাটায় ফিরতে চাইছি আমি, কিন্তু ফিরতে পারছি না। আমি বুদ্ধকে বলতে চাইছি, “তুই জন্মের পর জন্ম ধরে আমার পাশে পাশে থেকেছিস। আমার যাবতীয় ছাগলামো, ত্যাঁদড়ামো, ধ্যাড়ানোর ইতিহাস তোর নিজের হাতের তালুর মতো চেনা। বেশির ভাগ সময় তুই আমাকে বলিস একরকম, আমি বুঝি আরেকরকম, করি আরেকরকম। তুই এইসব মেনে নিতে পেরেছিস, আর একদিনের রাগারাগি মানতে পারছিস না?”—কিন্তু বলতে পারছি না। আমি চাইছি, বুদ্ধ বুঝে নিক আমার না-বলা কথা, যেমনটা ও বরাবর বুঝত।
আমি বুঝতে পারছি, ধৈর্যচ্যুতি ওর একদিনে ঘটেনি। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরেই কিছু না কিছু ভাবে আমি বুদ্ধকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করেছি। তুমি নিজেকে যার পথপ্রদর্শক ভাবো, সে যদি প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে তোমায়, রাগ হয়। রাগ হওয়ারই কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার কোথায় একটা খটকা লাগছে। কোথায় একটা ছন্দপতন হচ্ছে, একটা অঙ্ক মিলছে না, একটা টেমপ্লেট ভাঙছে। কী একটা হচ্ছে, যেটা হবার কথা ছিল না। আমি ঠিক ধরতে পারছি না।
পাঁচ
এর মধ্যে আরও একটা ব্যাপার ঘটল, যেটা একটু অন্যরকম। আমি বাবার ওই আইসিসিইউ ওয়ার্ডটার কথা ভাবছিলাম, খুবই বিশদে ভাবছিলাম, মনে হয়। ভাবতে ভাবতে দেখলাম, ওখানে পৌঁছে গিয়েছি। বাবা নেই, বাবা চলে গিয়েছেন, কিন্তু বাবার আশপাশের বেডের ওই স্থবির মানুষগুলো আছেন। আমি খুব মন থেকে ইচ্ছে করলাম যে বুদ্ধ আসুক ওখানে। বুদ্ধ এল। বুদ্ধর চোখে-মুখে অর্ধেক বিস্ময়, অর্ধেক বিরক্তি। আমি বিরক্তিটাকে পাত্তা দিলাম না। ওকে বললাম, “এই বৃদ্ধ মানুষগুলোর মনে ঢোক বুদ্ধ, ঢুকে দেখ, কী চলছে সেখানে। আমি বলছি, কী দেখবি তুই। দেখবি কিছু মুহূর্ত—সূর্যের মতো শাশ্বত, বহু দূর থেকে দেখলেও যাদের দ্যুতি কমে না, যাদের কেন্দ্র করে ঘনীভূত হয়ে থাকতে পারে এক-একটা গোটা জীবন। দেখবি, তরঙ্গের আর স্থান নেই এখানে। তার কাজ শেষ হয়েছে। তবু মানুষগুলো তরঙ্গের কাছে কৃতজ্ঞতায় নতজানু, কারণ সেই তরঙ্গেরই ঘোলা জল, চোরাস্রোত, ঘূর্ণি তাদের পৌঁছে দিয়েছিল এসব মুহূর্তের কাছে। দেখবি, ভুল-ঠিক, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতা—সব কিছু থেকে অনেক, অনেক দূরে এখন এই মনগুলো। তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই আর, কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ তারা অসহায়তার অন্ধকারে ডুবে নেই। জীবনজোড়া অপূর্ব মুহূর্তদের অপূর্ব স্মৃতি অপূর্ব জ্যোতি ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের মনের আনাচকানাচে।”
বুদ্ধর মুখে বিস্ময় বাড়ল, তারপর বিরক্তি ছাপিয়ে গেল বিস্ময়কে। বুদ্ধ ব্যঙ্গের স্বরে বলল, “বটে? তুমি এত কিছু বুঝে গেছ? সঞ্চারীদি, আমি তোমাকে বলছি, ওই বেডের দাদুর এখন চিতলপেটি খেতে ইচ্ছে করছে, অথচ ওঁর বলার ক্ষমতা নেই। গলা অব্দি রাইল’স টিউব ঢোকানো যে। ওঁর এই অবস্থার জন্য উনি মনে মনে দোষ দিচ্ছেন, শাপশাপান্ত করছেন নিজের ছেলে-বউ-মেয়ে-হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স সব্বাইকে। হিসেব করছেন, জমানো টাকার হিসেব—যা ওঁর হয়েও ওঁর নেই আর। আপশোশের পাহাড় জমছে ওঁর মনে। আর ওইদিকের ওই ঠাকুমার তো মনে আরও বিষ…।”
আমি শুনলাম না বাকিটা। বুদ্ধ মিথ্যে বলছে। বা হয়তো সত্যিই এই মানুষগুলো জাগতিকতার বুদ্বুদ ভেঙে বেরোতে পারছে না এখনও, কষ্ট পাচ্ছে। একবুক মন-খারাপ নিয়ে আমি কবিতা বানালাম, বুড়োদের হয়ে, নিজের হয়ে:
“আমি বুড়িয়ে গেলাম, শুকতারা,
আমি ফুরিয়ে যাব,
তবু তুমি বুড়িয়ে যাবে না।
আমি বুড়িয়ে গেলাম, প্রিয় স্মৃতি,
আমি ফুরিয়ে যাব,
তবু তুমি বুড়িয়ে যাবে না।”
বুদ্ধ বলল, “সঞ্চারীদি, তোমার অন্য কিছু করার কথা ছিল। অন্য কিছু হয়ে ওঠার কথা ছিল এতদিনে। কবে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি। তোমার মতো হতাশ আমাকে কেউ করেনি।”
ছয়
সিমুলেশন থিয়োরি সত্যি। আমাদের রোজকার চেনাজানা এই পৃথিবী আসলে কম্পিউটার গেমের মতন তৈরি-করা দুনিয়া, নকল বাস্তব। এই প্রকাণ্ড ব্যাপ্তির কোটি-কোটিরকম জটিলতাবিশিষ্ট সিমুলেশন যারা বানিয়েছে, তারা না জানি কেমন উন্নত প্রাণী। তবে শুধুমাত্র কারও মনোরঞ্জনের জন্যে যে এই সিস্টেম রান করছে না, এটা বুঝি। না হলে বুদ্ধ আমার পেছনে এত সময় আর পরিশ্রম ব্যয় করত না।
এবার প্রশ্ন আসে, আমি কে? যদ্দূর বুঝতে পেরেছি, আমি একটা প্রোজেক্ট, যাকে এই জগৎজোড়া যজ্ঞের মধ্যে ফেলে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে। আরেকটু ভালো করে বোঝাতে গেলে—এই ব্রহ্মাণ্ড, নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর, সৌরজগৎ, পৃথিবী, দেশ-মহাদেশ-সমুদ্র-নদী, শহর-গ্রাম, ঋতুপরিবর্তন, দিনরাত, ঝড়ঝঞ্ঝা মাথামুণ্ডু নিয়ে একটা বিরাট স্কেলের সেটিং তৈরি করা আছে—হয়তো বহু প্রাণী বা মানুষও এই সেটিং-এর অংশ, এবং সেখানে অনেক কিছু ঘটমান। এই যে পৃথিবীতে দূষণ বাড়ছে, বা এদিক-ওদিক বিরাট বিরাট যুদ্ধ বাধছে, নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি হচ্ছে ইত্যাদি, এই সব কিছু যে কেউ ধরে ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা নয়। কেউ একজন শুরুটা করে দিয়েছে, কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে, এবার বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব মেনে প্রায় বিনা তত্ত্বাবধানে সিস্টেম চলছে নিজের মতো। এই হযবরল-র মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিছু চৈতন্যকে। নানারকম পর্যবেক্ষণ চলছে তাদের নিয়ে।
আমি এরকমই একটা চৈতন্য।
আমি আগেও জন্মেছি, বহুবার জন্মেছি, ছোটো থেকে বড়ো হয়েছি, বিভাজিত হয়ে নতুন আমি হয়েছি, টিকটিকি, কুমির কি বাঘের পেটে গিয়েছি, বৃদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছি। বুদ্ধ প্রতি জন্মেই আমার পাশে থেকেছে, কখনও কায়া হয়ে, কখনও ছায়া হয়ে। বুদ্ধর কাজ আমাকে এক্সপেরিমেন্টের উদ্দেশ্য ও প্রণালীর সঙ্গে সমন্বয়ে রাখা, আর খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা। বুদ্ধ সময়ে সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার গতিপ্রকৃতি ও ভাবনাচিন্তা প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
আমি একা নই। আমার মতন আরও বহু চৈতন্য নিয়ে বুদ্ধর কাজ।
কিন্তু আমার মতো হতাশ বুদ্ধকে কেউ করেনি।
সাত
আজকাল আমার বুদ্ধকে দেখলেই হাসি পায়। আমার বোধিপ্রাপ্তির পর থেকে ও কেমন খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর এলোমেলো চোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমি কী করে যে এত কিছু জানলাম, বেঁধে-দেওয়া লক্ষ্মণরেখা অনায়াসে পেরিয়ে চলে গেলাম, আমি নিজেও জানি না। যেন সামনে দরজার পর দরজা ছিল আমারই জন্য অপেক্ষমাণ। আমি একটা দরজা খুললাম, অনেক নতুন আমার চোখের সামনে মেলে ধরল নিজেদের। তারপর আরেকটা দরজা। তারপর আরেকটা। বিস্ময়ের পর বিস্ময় এল, অথচ আমি কেমন খেই হারালাম না। বরং অঙ্কের পর অঙ্ক মিলে যেতে লাগল আমার মাথায়। বুদ্ধ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল শুধু। ও আমাকে সাহায্য করল না, তবে বাধাও তো দিল না সেভাবে।
আজকাল আমার আয়নার সামনে দাঁড়ালেও হাসি পায়। যে সত্যের মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে কী-ই বা তরঙ্গ, কী-ই বা মুহূর্ত, কী-ই বা সঠিক আর বেঠিক। আমরা কারও খেলার পুতুল বই তো নই। রোজ অফিস যেতে ভালো লাগে না আর। সপ্তাহে এক-দুই দিন করে ছুটি নিচ্ছি। কিন্তু বাড়িতে বসেই বা কী করব? আমার পুঁচকেটা যতক্ষণ বাড়িতে থাকে, ওটাকে নিয়ে থাকি। কিন্তু ও স্কুলে গেলে, ঘুমিয়ে পড়লে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা বোকা-বোকা লাগে। যেসব মুভি আগে কাঁদিয়ে দিত, এখন সেগুলো দেখলেও হাসি পায়। নাটকীয় ক্লাইম্যাক্সের টেনশনে আমি হাই তুলি, নায়ক-নায়িকার বিরহকাতর গানে মাথা ধরে যায়, আর সায়েন্স ফিকশন দেখলে পিত্তি জ্বলে সব থেকে বেশি। অফিসে ম্যানেজার ডেডলাইন নিয়ে চাপ দিতে এলে দারুণ মজা লাগে, আর সহকর্মীরা খুব চাপ নিয়ে কাজ করলে গালি দিতে ইচ্ছে করে। আমার সমস্ত সেভিংস উড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করার কথা ভেবেছিলাম একবার—কিন্তু গোটা বিশ্বই তো ধোঁকাবাজি—লিনিং টাওয়ার অব পিসা মিথ্যে, ইজিপ্টের পিরামিড মিথ্যে, নাইল নদ মিথ্যে, ইতিহাস, ভূগোল সব মিথ্যে। তাহলে কি চাকরিবাকরি ছেড়ে সমাজসেবা করব, গরিব মানুষের উপকারে লাগব? ধুর ধুর! সিনেমার সেটে কাজ করার মতন ব্যাপার সে-ও। দারিদ্র্যকে সিমুলেট করার যদি ইচ্ছে হয় কারও, পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধকে সিমুলেট করার ইচ্ছে হয় যদি, যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠ, সাম্যবাদী কণ্ঠ, সমাজসেবী কণ্ঠকেও তো সিমুলেট করতেই পারে সে—গবেষণা করবে বলে, বা বউ-বাচ্চা নিয়ে ছুটির দিন গোটা ব্যাপারটাকে সিনেমার মতন করে দেখবে বলে। করে থাকেও নিশ্চয়ই। এখানে আমার করণীয় কী?
বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। বুদ্ধরও গোল পাকিয়ে গেছে। ও চাইলেই আমাকে থামাতে পারত, যখন আমি নিষিদ্ধ দুনিয়ায় পা রাখলাম তখন, কিন্তু করেনি। বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে। ও বলে, আমি ওকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করেছি। প্রতি জন্মে ওরা আমার জন্য অভীষ্ট লক্ষ্য বেঁধেছে, আর সেই লক্ষ্যের দিকে আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে বুদ্ধ। আমার চরিত্র, আমার চেহারা, আমার বুদ্ধি, আমার জীবনের ঘটনাসমূহ সবই অনেক ধৈর্য নিয়ে বেঁধেছে ও। কিন্তু আমার মধ্যে কী একটা আছে, যা আমাকে পথভ্রষ্ট করে বারে বারে, প্রতি জন্মে। আমার মনের কোন গভীরে যে সেই গান বাজে, যার সুর-তাল-ছন্দ ওর সমস্ত কাজ পণ্ড করে, তার তল ও পায় না। আমিই বা পাই কোথায়?
আট
বহু বহু মাস পর আজ বুদ্ধর ডাক পেলাম। মাঝে কেউই কাউকে ডাকার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। কোথাও কোনো দেওয়াল ছিল না, শুধু আমাদের কথা শেষ হয়ে গিয়েছিল।
এই কয়েক মাসে নতুন কিছু হয়নি। নতুন কিছু জেনেও উঠতে পারিনি আমি। সত্যি কথা বলতে কী, সেভাবে কিছু জানার নেই আর আমার। সব কৌতূহল যেন নিবে গিয়েছে। তবে এই বিশাল বিশ্বে যেখানে সবই নকল ও নিয়ন্ত্রিত, সেখানে আমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যে কেউই হাতে পায়নি আজ অবধি, এই ব্যাপারটা আমাকে খুব আরাম দেয়।
সে যা হোক, বুদ্ধর ডাক শুনে গিয়ে পৌঁছোলাম এক অজানা মফস্সলের অজানা স্কুলের বাইরে। স্কুল ছুটির সময়। হুড়হুড় করে নানান বয়সি ছেলেমেয়ে বেরোচ্ছে গেট দিয়ে। গেটের বাইরে ঝালমুড়ি-বাদামভাজার দোকানে লাইন লেগে গেছে। ফুচকাওয়ালাও আছেন একজন। বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে, আর ঝালে হাপুস হুপুস করছে। তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে বুদ্ধ।
বুদ্ধর বয়স কমে গেছে অন্তত বছর কুড়ি। বড়োজোর এগারো ক্লাসের ছেলে এখন ও। বুদ্ধর পাশে ক্লাস নাইনের মিষ্টিমতন মামণি। দুজনেরই পরনে স্কুল ইউনিফর্ম। মামণির চোখে জল, নাকে জল, কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম, আর মুখ ভরতি ফুচকা। ওই নিয়ে চ্যাঁচাচ্ছে, “আরও ঝাল দাও কাকু, এ তো ঝালই হয়নি!” বুদ্ধ হাসছে। হাসছে আর মামণিকে দেখছে। দেখতে গিয়ে নিজের ফুচকা খাওয়ার স্পিড কমে যাচ্ছে। শালপাতার ঠোঙায় টক জলে ভিজে পড়ে থাকছে ফুচকা। সেই দেখে মামণি খেপে যাচ্ছে—“কী করছিস বুদ্ধ! ধ্যাড়, তুই ফুচকা খেতে শিখিসনি! খা এক্ষুনি!” বুদ্ধ মামণির কপাল থেকে কোঁকড়া চুলগুলো সরিয়ে দিতে চাইছে আঙুল দিয়ে, ঠোঁটের ওপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছিয়ে দিতে চাইছে। স্কুলের গেটের বাইরে বলে সাহস পাচ্ছে না। অন্য কোথাও হলে করত।
মোটের ওপর, বুদ্ধ প্রেম করছে। চুটিয়ে। পাক্কা ছয় মাস ধরে। আমাকে কেসটা দেখানোর জন্যেই আজকে ডেকেছে, কিন্তু আমার দিকে ফিরেও দেখছে না।
আমার খুব মজা লাগল, আবার খুব রাগ হল। কেমন মজা-মেশানো রাগ। আমি চ্যাঁচামেচি শুরু করলাম, যে চ্যাঁচামেচি শুধু বুদ্ধ শুনতে পাবে—“বুদ্ধ, তুই পাগল হলি! তোর বয়সি গাছপাথর নেই দুনিয়ায়, আর তুই খোকা সেজে প্রেম করছিস? ওরে, কত কত মনকে আগলে রেখেছিস তুই কতকাল ধরে, সামলে রেখেছিস কতরকম কত ভারসাম্য, তাদের কী হবে এবার? তোর নিজেরও তো পুরো ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে রে! তুই জানিস না—প্রেম হেব্বি সাংঘাতিক জিনিস! ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবি আর দু-দিনে! তোর মাথার ওপর কত গুরুদায়িত্ব… শেষমেশ মুহূর্তের মোহে পড়ে তুই…”—কথা শেষ করতে পড়লাম না। বুদ্ধ আমাকে গোটা সিন থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিল। ফিরিয়ে দিল আমার নিজের বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফায়। যোগাযোগের লাইনটাও কেটে করে দিল ধুম করে। করার আগে একটা শেষকথা ভাসিয়ে দিল আমার জন্য—“আমার আর বুদ্ধ হতে ভাল্লাগছে না, সঞ্চারীদি। আমি এবার ভেসে যাব, মিশে যাব, যেভাবে মন চায়। তোমরা যা খুশি করো। পৃথিবী জুড়ে যে এত আনন্দ ছড়িয়ে আছে, সে আমি আগে দেখিনি কেন, সঞ্চারীদি?”
“থ্যাংক মি! থ্যাংক মি, বুদ্ধ! আমি ছাড়া কে তোর মাথার ঘিলু চটকে আলুসেদ্ধ বানাতে পারত এভাবে?” আমি বললাম, আর ড্রয়িং রুমে ঘুরে ঘুরে খুশিতে নাচলাম অনেকক্ষণ ধরে।
বুদ্ধর সঙ্গে আর বোধহয় আমার দেখা হবে না। বা হতেও পারে, এভাবেই আবার কোথাও, অন্য কোনো জন্মে। আলগোছে, ছোট্ট করে। অথবা এটাই হয়তো আমাদের শেষ জন্ম। দুজনেরই নিয়ম ভেঙেছি যে বদখতরকমভাবে—নির্বাণে তো যেতে হবেই। হোক গে, যা খুশি হোক, বুদ্ধরা বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাক, আলো আসুক, আর এলোমেলো খেয়ালখুশির ভূত চাপুক এই বানানো দুনিয়ার ঘাড়ে—স্রষ্টারাও যেন একটু হাসতে পারে দেখে।
আহা, কত কষ্ট করে বেচারারা বানিয়েছে আমাদের!
| রবি ঠাকুরের গান |
“চলো নিয়ম-মতে।
দূরে তাকিয়ো নাকো, ঘাড় বাঁকিয়ো নাকো!
চলো সমান পথে।
‘হেরো অরণ্য ওই, হোথা শৃঙ্খলা কই—
পাগল ঝর্নাগুলো দক্ষিণপর্বতে।’
ও দিক চেয়ো না, চেয়ো না—যেয়ো না, যেয়ো না।
চলো সমান পথে।।”
Tags: অন্তরা কুণ্ডু, কল্পবিজ্ঞান, নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী