দেবতাত্মার সন্ধানে
লেখক: ডা. দেবাশীষ কুণ্ডু
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
তাঁর প্রপিতামহের ভবিষ্যদ্বাণী যে এত তাড়াতাড়ি সত্যি হয়ে যাবে তা গণকশ্রেষ্ঠ পালম্য বুঝতে পারেননি। এই ব্রহ্মাণ্ডের নৈমিত্রিক কোণে অবস্থিত দিমিত্রি গ্রহের পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে তেজস্ক্রিয় বিষ আর জীবনধারণের সমস্ত উপকরণকে দূষিত করে দিয়েছে। এমনটা হবার ভবিষ্যদ্বাণী তাঁর প্রপিতামহ করেছিলেন, কিন্তু গণনা অনুযায়ী সেই সময়কাল আসতে এখনও দুই শতাব্দী লাগার কথা। তবে কি কোনো অন্তর্ঘাত? দিমিত্রির মহানাগরিক অত্রিবর্ণর বৈমাত্রেয় ভগিনী অনিমিত্রা, যিনি দিমিত্রির প্রতিরূপ গ্রহ নিমিশার মহানাগরিক এবং অত্রিবর্ণর বৈরিতা যাঁর স্বভাবে, অত্রিবর্ণর চরম ক্ষতিসাধন করার জন্য কিরিচ গ্রহ থেকে ত্রিপাদ নামের এক সার্বিক ধ্বংসাত্মক তেজস্ক্রিয় অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন বলে প্রণিধি মাধ্যমে জানা গেছে। এই অস্ত্র কি তাহলে ইতিমধ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে?
এরকম আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য সুরক্ষিত খাদ্য ও পানীয়ের যে সঞ্চয় রয়েছে তাও শেষ হওয়ার পথে। দিমিত্রির বিজ্ঞানীর দল গ্রহের প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের উপর পরীক্ষামূলকভাবে তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধকারী ভেষজ ঔষধ প্রয়োগ করেছেন বলে আপাতত তেজস্ক্রিয়তার মারণ প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু অনাহারে ও পিপাসায় মৃত্যু শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
দিমিত্রি গ্রহের শাসনব্যবস্থা কয়েক শতক আগে অবধি এক রাজপরিবারের হাতে তাঁর ন্যস্ত ছিল।
তারপর বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এখন জনপ্রতিনিধিরাই শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
জনপ্রতিনিধিদের জরুরি সভাতে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ও ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা এবং বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে স্থির হয় যে এই ধরনের আপৎকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে এই ব্রহ্মাণ্ডের বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলের সংনমিত সংস্করণ, বিশেষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও অত্যন্ত বিকশিত ধীশক্তির অধিকারী দিমিত্রির এক যুবক সমেত কায়া নামক মহাকাশযানকে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এ ওয়ান ব্রহ্মাণ্ডের হিন্দোল গ্রহ, যার আবহমণ্ডল ক্রমশ বিবর্তিত হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠেছে এবং কিছু স্বল্প মেধার প্রাণীকুল সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করেছে, সেখানে পাঠানো। আলোকের চেয়ে ৩০৩০০ লাখ গুণ বেশি দ্রুতগামী কায়া মহাকাশযানটি সম্পূর্ণভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে উৎক্ষেপণের পর নির্ভুলভাবে হিন্দোল গ্রহে অবতরণ করবে আনুমানিক ৪৫২ দিন পর। যানের অনুভাবক যন্ত্র আবহাওয়ামণ্ডল অনুকূল থাকলে দিমিত্রির যুবককে নতুন গ্রহে অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আর আবহাওয়ামণ্ডল অনুকূল না পেলে অনুকূল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
এক প্রবীণ প্রশাসক প্রশ্ন করলেন, কিন্তু এই দীর্ঘ যাত্রাপথে পড়বে গ্রহাণু, গ্রহাণুপুঞ্জ ইত্যাকার নানান বাধা, এগুলো এড়িয়ে অতদূরের গন্তব্যে আমাদের যান কি শেষ অবধি পৌঁছোবে? বৈজ্ঞানিক দলের প্রবক্তা উত্তর দিলেন, শব্দাতিরেক ‘অগ্নিষা’ তরঙ্গ ক্রমাগত উৎক্ষেপণ করতে করতে যান অগ্রসর হবে, ফলে কোনো বাধা এর কাছে অনতিক্রম্য নয়। যানকে ঘিরে থাকে ‘প্রতিপ্রভা’ আলোকতরঙ্গের বলয়, যা একে অত্যন্ত দ্রুতগতির মধ্যেও সামঞ্জস্য প্রদান করে এবং যে-কোনো সংঘর্ষ এড়াতে সাহায্য করে।
তা ছাড়াও আমাদের যানের ইতিপূর্বে বহু সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে।
বেশ তাহলে তা-ই হোক, দিমিত্রির বাকি অধিবাসীদের নিয়ে নয়টি বৃহদাকার স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পূর্বনির্দিষ্ট সি ওয়ান, সি থ্রি, এস ওয়ান, এস টেন, পি টু, এফ ওয়ান, এফ টু, এল ওয়ান ও ভি ওয়ান ব্রহ্মাণ্ডগুলির উদ্দেশে রওনা দেবে পর্যায়ক্রমে। কারও মনে কোনো সংশয়? প্রশ্ন করলেন প্রশাসক অত্রিবর্ণ। সকলে নীরবে সম্মতি প্রদান করলেন। অত্রিবর্ণ প্রধান বৈজ্ঞানিক এলাইরাকে এ ওয়ান ব্রহ্মাণ্ডের হিন্দোল গ্রহকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে বললেন।
‘আমাদের দীর্ঘ গবেষণা অনুযায়ী, ব্রহ্মাণ্ডগুলির এক বা একাধিক গ্রহে প্রাণধারণের পরিবেশ থাকার কথা, কিন্তু এখনও অবধি সঠিক পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়নি, যেমনটা হিন্দোল গ্রহের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে। একটা সংশয় অবশ্য থেকে যায়, ওই গ্রহের আমাদের সদৃশ প্রাণীরা শুভমনস্ক বা শান্তিকামী না-ও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের গ্রহের উন্নততর প্রজাতির প্রাণীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে যা কিছু অশুভ তা শুভের কাছে পরাজিত ও পর্যুদস্ত হয়—এটাই আমরা চিরকাল দেখে এসেছি, এবারও তার অন্যথা হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’
সুদীর্ঘ নির্দিষ্ট যাত্রা পথ অতিক্রম করে কায়া মহাকাশযান যথাসময়ে হিন্দোল গ্রহে অবতরণ করল। গ্রহে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, ইতিউতি উঁচিয়ে আছে পর্বতমালা, গ্রহের বেশির ভাগটাই জলাভূমি।
উন্নততর প্রজাতির প্রাণীটি দীর্ঘ নিদ্রার পর জেগে উঠে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে মহাকাশযানের নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে অনুসন্ধান করলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে খাদ্য ও পানীয়ের সন্ধানে মহাকাশযানের বাইরে বেরিয়ে একটি নতুন ধরনের উদ্ভিদ দেখতে পেলেন, যায় সম্পর্কে তথ্য তাঁর জ্ঞান ভাণ্ডারে নেই। উদ্ভিদের শাখায় শাখায় শোভিত অজস্র গোলাপি পত্ররাজি, সুদৃশ্য সোনালি হলুদ রসালো ফল তার প্রতিটি শাখায়। তিনি একটি ফল ছিঁড়ে তার স্বাদ গ্রহণ করলেন। অপূর্ব স্বাদ, যেমনি সুমিষ্ট, তেমনি রসালো। বেশ কয়েকটি ফল দিয়ে তিনি ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। ফলের ঝাঁজালো মিষ্ট স্বাদে কিঞ্চিৎ তন্দ্রা আসতে তিনি ওই বৃক্ষের তলাতেই শয্যা গ্রহণ করলেন।
কিছুক্ষণ পর তীব্র জ্বালায় তাঁর তন্দ্রা কেটে গেল। তীব্র যন্ত্রণায় তিনি আর্তনাদ করতে লাগলেন। আশপাশের সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল তাঁর এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট দুর্দশার আশ্লেষে বিচলিত বোধ করল। এক নারী যন্ত্রণার উৎপত্তিস্থলের সন্নিকটে এক পার্বত্য ঝরনায় পানীয় জল সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, তিনি এই নতুন প্রাণীটির দুর্দশার কারণ যে বিষাক্ত ফল তা বুঝতে পেরে তাঁর ঠোঁট ফাঁক করে পানীয় জল আর কিছু ভেষজ লতার রস ঢেলে দিলেন।
স্বল্পকালের মধ্যে ভেষজের গুণে এই বিষ সমস্ত শরীর থেকে উঠে এসে তাঁর কণ্ঠদেশে জমা হল আর কণ্ঠ নীলবর্ণ ধারণ করল, তাঁর চেতনা ফিরল আর কণ্ঠ থেকে মন্দ্রিত হল প্রথম ছন্দবদ্ধ স্তোত্র পরমাপ্রকৃতিকে উদ্দেশ করে:
‘ওম অমরানি জীবাত্মায়ে স্বাহা’
পশ্চিম হিমালয়ের হরমুখ পর্বতের পাদদেশ বহু দুর্লভ ওষধি বৃক্ষ, লতাগুল্মের প্রাকৃতিক জন্মস্থল। এখানকার একটি পবিত্র ও গুপ্ত হ্রদের জলের দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের ক্ষমতা আছে বলে ঋষিমুনিরা বিশ্বাস করেন। এখানকার দুর্গম বনাঞ্চলের গভীরে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে রয়েছে পবিত্র গুপ্ত হ্রদটি, যার সঠিক দিক্নির্দেশ যে জনগোষ্ঠীর প্রমুখ চন্দ্রনাথের জানা তাকে কে বা কারা গুপ্তহত্যা করেছে আর তার কুটিরটিকে ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত আততায়ীরা ওঁর কাছে হ্রদের দিশানির্দেশ জানতে চেয়েছিল। না জানতে পারায় ওঁকে হত্যা করা হয়। ঘটনাচক্রে সেই রাত্রে ওঁর পুত্র সপরিবার শ্বশুরালয়ে ছিলেন, পরদিন প্রত্যুষে ফিরে এসে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে সকলে শোকাচ্ছন্ন। ওঁর পুত্র পাগলের মতো আচরণ করছে। জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাকে সঙ্গে করে রাজার কাছে এনেছেন সুবিচারের আশায়।
মহারাজ বিষ্ণু বর্ধন সমস্ত ঘটনা শুনে মন্ত্রীসভা ও সভাসদদের সঙ্গে জরুরি আলোচনাক্রমে রাজ্যের সেনাপতি অম্বরিশকে চারদিকে ছদ্মবেশে সৈন্য প্রেরণ করতে নির্দেশ দিলেন গুপ্তঘাতকদের অনুসন্ধানের জন্য। তথাকথিত দৈবশক্তিসম্পন্ন হ্রদটির সন্ধান ও যথাযথ প্রহরা মোতায়েন করার জন্য তিনি যুবরাজ ঈশান বর্ধনকে নির্দেশ দিলেন।
সেনাপতি অম্বরিশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলি ছাড়াও দুর্গম বনাঞ্চল এবং দূরবর্তী রাজ্যগুলিতে গোপনে অনুসন্ধানের জন্য গুপ্তচরবাহিনী নিয়োগ করলেন। যদিও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তি বা কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা গেল না।
আততায়ীর দল হানা দেবার পর যেন কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
এদিকে যুবরাজ বাছাই-করা সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের পার্বত্য প্রদেশের বিভিন্ন জনপদে বৈদ্য ও জনপদ প্রমুখের সঙ্গে কথা বলে তথাকথিত দৈবশক্তিসম্পন্ন হ্রদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে সফলতা পেলেন না। অস্তিত্ব সম্পর্কে নিঃসংশয় হলেও অবস্থান সম্পর্কে সঠিকভাবে কেউ কিছু বলতে পারল না।
একটা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল যে আততায়ীর হাতে নিহত বৈদ্য চন্দ্রনাথের পরিবার বংশানুক্রমে ওই পবিত্র হ্রদের পূজা-অর্চনা করতেন এবং পবিত্র জল সংগ্রহ করে আনতেন, যা দুরারোগ্য রোগনিরাময়ে ব্যবহৃত হত। চন্দ্রনাথের পুত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে হ্রদটি কোনো দুর্গম পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থিত। কিন্তু সঠিক দিশানির্দেশ তাকে তাঁর পিতা বলে যাননি। নির্দিষ্ট তিথিতে বিশেষ সংকেত পৌঁছোত তাঁর পিতার কাছে এবং সংকেত পেলে তিনি গভীর রাতে একা ওখানে যেতেন পবিত্র জল আনার জন্য।
হ্রদের পবিত্র জল মহাকাল মন্দিরে গোপনে রক্ষিত ছিল, সেগুলি আততায়ীরা সঙ্গে নিয়ে গেছে। মহাকালের মূর্তিটিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পবিত্র গর্ভগৃহকে অপবিত্র করেছে এবং স্বর্ণনির্মিত ত্রিশূলটি লুণ্ঠন করেছে।
এদিকে অনেক অনুসন্ধানের পর গুপ্তচর প্রধান দেবদত্ত জানতে পারলেন, সুদূর দাক্ষিণাত্যে মাদুরা সিংহে নামক এক অনার্য বৈদ্য সুগথ অন্তরিপের এক অনার্য মন্দিরে আশ্চর্য ক্ষমতাশালী ঔষধ বিতরণ করেন। গভীর বনাঞ্চলের মধ্যে অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে অবস্থিত এই অনার্য মন্দির এবং দেহগত বর্ণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য ওই মন্দিরে কোনো আর্যর পক্ষে প্রবেশ করা কার্যত অসম্ভব। অভিজ্ঞ গুপ্তচর দেবদত্ত এই কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কিঞ্চিৎ বেশি সময় নিলেন। উৎকলের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে যেখানে অনার্য ধীবরদের বসতি, সেখানকার একটি অনার্য দেবতার মন্দিরের সামনে মূক ও বধির ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে কিছুদিন অতিবাহিত করলেন। সমুদ্রের লবণাক্ত জলে প্রত্যহ স্নান ও সমুদ্র সংলগ্ন স্থানে থাকার কারণে তাঁর স্বাভাবিক গাত্রবর্ণ পরিবর্তিত হয়ে কালচে হয়ে গেছে। তাঁর তীব্র অনুসন্ধিৎসু মন ও নিরীক্ষণশক্তি দাক্ষিণাত্যের ওই বিশেষ জনজাতির ভাষা আয়ত্ত করতে সাহায্য করল। ইতিমধ্যে বহু সময় অতিবাহিত হয়েছে তাই একদিন প্রত্যুষে দেবদত্ত দাক্ষিণাত্যের ওই বিশেষ জনপদের উদ্দেশে রওনা হলেন এক তীর্থযাত্রীদলের সঙ্গে আর দীর্ঘ যাত্রার শেষে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছোলেন।
অনার্য পল্লির দেব মন্দিরটির অবস্থান জানা থাকায় খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হল না। অনার্য পূজারিকে অনুসরণ করে তার বাসস্থান দেখে এলেন দেবদত্ত। মন্দিরটি আকারে ক্ষুদ্র সম্ভবত কোনো এক লৌকিক দেবতার। জনপদটিতে লোকসংখ্যা খুবই কম। অহেতুক বিপদ এড়াতে এখানেও মূক ও বধির সেজে রইল এবং আকারে-ইঙ্গিতে পূজারির দৃষ্টি আকর্ষণ করল সে। পূজারি তাকে অসহায়, মূক ও বধির ভেবে মন্দিরে সেবক নিযুক্ত করল। কিন্তু বিশেষ অগ্রগতি কিছু হল না বৈদ্য চন্দ্রনাথের হত্যা রহস্যের, কারণ এই অনার্য পূজারি ঔষধ প্রস্তুত করেন অ্যালকেমি নামের এক গোপন পদ্ধতিতে, যা কোনো দৈব ওষধি নয়।
ইতিমধ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। বিফলমনোরথ দেবদত্ত ফিরে গেলেন নিজের রাজ্যে।
অন্যদিকে যুবরাজ ঈশান বর্ধন তাঁর বাছাই-করা ১১ জনের বাহিনী নিয়ে পশ্চিম হিমালয়ের হরমুখ পর্বত সংলগ্ন বনাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে অবশেষে এসে পৌঁছোলেন একটি সম্পূর্ণ নূতন প্রজাতির বৃক্ষ, লতা, গুল্মের অরণ্যে। দুর্গম অরণ্যের বিভিন্ন দিকে তিনি তাঁর দলের সদস্যদের পাঠিয়ে দিলেন। এই বনাঞ্চলের একটি কস্তুরী হরিণকে কোনো হিংস্র পশু মারাত্মক জখম করেছিল। যুবরাজ হরিণটিকে শুশ্রূষা করে ক্ষতস্থানে ওষধি লতার প্রলেপ দিয়ে নিজের বস্ত্র দিয়ে ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এই ঘটনার একদিন পর তিনি এই হরিণটিকে তাঁর দলের সঙ্গে দৌড়োতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলেন। হরিণটির ঘাড়ের কাছে বেঁধে-দেওয়া বস্ত্রখণ্ডটি স্পষ্টত দৃশ্যমান। অথচ এই হরিণটির বাঁচার আশাই ক্ষীণ ছিল। কীভাবে এই প্রাণীটি এত দ্রুত সেরে উঠল? যুবরাজ অত্যন্ত সন্তর্পণে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হরিণের দলটির পিছু নিলেন।
অপরাহ্ণে অরণ্যের দলটিকে একটি হ্রদের দিকে যেতে দেখলেন, কিন্তু তারপর তিনি আর অগ্রসর হতে পারলেন না। অকস্মাৎ সম্মুখের অরণ্যে দাবানল ছড়িয়ে পড়তে দেখে নিরুপায় হয়ে দ্রুত ফিরে গেলেন।
অরণ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে সঙ্গীরা সকলে একত্রে মিলিত হল। যুবরাজ সঙ্গীদের কুশল নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, কিন্তু কী আশ্চর্য! দাবানলের কথা অন্য কেউ বলল না। জঙ্গলে দাবানল শুরু হলে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না। যুবরাজ উত্তরদিক লক্ষ করে দেখলেন কোথাও কোনো দাবানলের চিহ্ন নেই। যুবরাজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিল, উত্তরদিকের জঙ্গলের কোথাও আছে সেই দৈব হ্রদ।
মাঝরাতে স্বপ্ন দেখলেন, সেই দৈব হ্রদের মাঝখানে কস্তুরী হরিণটি ডুবে যাচ্ছে। তিনিও হরিণটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে গিয়ে ডুবে যাচ্ছেন।
ভোর হতেই দুজন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে যুবরাজ উত্তরের জঙ্গলের পথে যাত্রা শুরু করলেন। অজানা, অচেনা জঙ্গলের পথে সৈনিক এবং অভিযাত্রীদল বিশেষ চিহ্ন রেখে এগোয়। গতকালের চিহ্নগুলি দেখে সঠিক পথে কিছুটা এগোতেই পরিবেশ যেন বদলে গেল, চারদিকে অজানা বৃক্ষ, লতা, তৃণ, গুল্মের সারি। তারা সকলে যেন পথ অবরোধ করে রেখেছে। লতাগুল্মগুলি সরিয়ে এগোতে গেলে তারা প্রতিরোধ সৃষ্টি করছে।
সকলে কীভাবে সামনে এগোনো যায়, সেই নিয়ে আলোচনারত, এমন সময় সামনের জঙ্গল থেকে রক্ত-জল-করা গর্জন শোনা যেতে যুবরাজ সঙ্গীদের নিয়ে দ্রুত পাশের গাছের উঁচু ডালে উঠে পড়লেন আত্মরক্ষার জন্য। অল্পক্ষণের মধ্যেই সামনের ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল বিশাল আকারের একটি বাঘ।
কুটিল দৃষ্টি দিয়ে খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে যুবরাজ ও সঙ্গী সৈনিকরা যে গাছে উঠে বসেছেন, সেই গাছের তলায় এসে শুয়ে পড়ল। এদিকে যুবরাজের এক সঙ্গী আহত, তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু নীচে সাক্ষাৎ শমন। যুবরাজ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলেন না। অত্যন্ত সন্তর্পণে কোমর থেকে জ্যা খুলে ধনুকে লাগিয়ে বাঘটির ঘাড় ও মাথার সংযোগস্থল লক্ষ করে চালনা করলেন তির, যেটি সজোরে মাটিতে গেঁথে গেল আর অন্তর্হিত হল ভয়ালদর্শন বাঘটি।
যুবরাজ অনুমান করলেন, দৈব হ্রদটিকে যে বা যারা পাহারা দেয়, তারা গণসম্মোহন বা দৃষ্টিবিভ্রমে পারদর্শী। বৃহদাকার বৃক্ষ, কণ্টকাকীর্ণ লতাগুল্মের সারি, হিংস্র পশু—এসবই আগের দিনের দাবানলের মতো দৃষ্টিবিভ্রম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় যুবরাজ ও সৈনিকেরা অরণ্যের অস্থায়ী আস্তানায় ফিরে চললেন। পরদিন জরুরি আলোচনাসভায় সিদ্ধান্ত হল, সৈনিকেরা সকলে ছোটো ছোটো ঝোপের ছদ্মবেশে শেষরাত্রে উত্তরের অরণ্যে প্রবেশ করবে। লতা, গুল্ম ও তৃণ সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করল সকলে।
রাতের আকাশে প্রতিপদের চাঁদ, স্বল্প আলোয় চোখ সইয়ে নিয়ে তারা উত্তরের অরণ্যে প্রবেশ করল। পথে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে তারা এগিয়ে চলল। কিছুটা পথ চলার পর অরণ্য শেষ হয়ে পার্বত্য মালভূমি শুরু হল। সামনে দেখা গেল এক বিশাল হ্রদ, যার তিনদিক বেষ্টিত সুউচ্চ পর্বতমালা দিয়ে।
দূরের একটি গুহা থেকে ক্ষীণ আলোকরেখা দেখা যেতে যুবরাজ সেদিকে ইঙ্গিত করে সকলকে অগ্রসর হতে নির্দেশ দিলেন। গুহার সামনে পৌঁছে যুবরাজ ঈশান বর্ধন একজন সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে সন্তর্পণে প্রবেশ করলেন। গুহার সামান্য ভিতরে একটি শ্বেতশুভ্র গোলক থেকে স্নিগ্ধ আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, আলোর উৎস থেকে কোনো তাপ বিকিরণ হচ্ছে না। আলোর উৎসের পাশে একটি শূন্যে ভাসমান শয্যায় শ্বেত বস্ত্র-পরিহিত এক দীর্ঘ শ্বেত শ্মশ্রুগুম্ফধারী ব্যক্তি ধ্যানরত রয়েছেন।
তিনি মৃদু অথচ স্পষ্টস্বরে বললেন, যুবরাজ, আমি জানতাম, আপনি আসবেন, আমার সৃষ্ট মায়াজাল আপনার মতো স্থিতধী বীরকে পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হবে না। আমি নীলকণ্ঠ, বহু দূরের এক গ্রহ থেকে আমাকে এই গ্রহে পাঠানো হয়েছিল বেশ কয়েক শতাব্দী আগে। আমাকে যে মহাকাশযানে করে পাঠানো হয়, তা এখানকার হ্রদটিতে সফলভাবে অবতরণ করলেও, হ্রদের তলার সুচালো পাথরের সঙ্গে ঘর্ষণে যানটির ক্ষতি হয়। যে পানীয়ের ভাণ্ডার আমার যানে ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে হ্রদের জলে মিশে যায়।
এই পানীয় অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং মহাবিশ্বের যে-কোনো রোগ বা জীবাণুকে বিনাশ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু, এখনকার হ্রদের জলে চুনাপাথর মিশে আছে, যার জন্য এই জল আমি পানীয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না। জঙ্গলের ফল ও পার্বত্য ঝরনার জল দিয়ে আমি ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণ করে আসছি।
তোমাদের গ্রহের এক নারীকে আমি সঙ্গিনীরূপে গ্রহণ করি। আমার উত্তরপুরুষেরা তোমাদের গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে মানবকল্যাণে কার্যরত রয়েছে। আমার সঙ্গে বংশানুক্রমে মানসিক সংযোগ রেখে তারা এই গ্রহের বিভিন্ন স্থানে মহাকাশযান উড়ান ও অবতরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। এ ছাড়াও আমার গ্রহের অনুরূপ বিভিন্ন পরিকাঠামো, উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্র ও দেবালয় নির্মাণ করেছে।
কিন্তু আমার শারীরিক বৈশিষ্ট্যে পরিবেশগত এবং খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমার গ্রহের অধিবাসীরা গড়ে ৬ হাজার বছর বাঁচে, কিন্তু আমার শরীরে অচিরেই অকালবার্ধক্য দেখা দেয়।
বৈদ্য চন্দ্রনাথ আমারই উত্তরপুরুষ, বিশেষ মানসিক তরঙ্গের মাধ্যমে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতাম। এই হ্রদের জল আর্ত মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আমারই নির্দেশে।
চন্দ্রনাথের আততায়ীরা সুদূর মঙ্গোল প্রদেশ থেকে গিরিপথ দিয়ে এখানে এসেছিল। আমার জন্ম যে দিমিত্রি গ্রহে, তার শত্রু গ্রহ নিমিষার ঘাতকবাহিনী আমার গ্রহবাসীদের সন্ধানে মহাকাশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচরণ করে চলেছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর যখন আমি ক্ষতিগ্রস্ত মহাকাশযানটিকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলি, তখন তার থেকে নির্গত তরঙ্গ সম্ভবত তাদের কোনো মহাকাশযানে ধরা পড়ে। আর আমার সৃষ্ট মানসিক দৃষ্টিবিভ্রম এর বাধা কাটিয়ে এই উপত্যকায় অবতরণ করতে সক্ষম না হয়ে হিমালয়ের অপর প্রান্তে মঙ্গোল প্রদেশে অবতরণ করে। বিপৎসংকুল সুদীর্ঘ গিরিপথ তারা অতিক্রম করে আসে সহজেই। এবং দিমিত্রির দেবালয়ের অনুরূপ দেবালয় তারা খুঁজে পায় এবং সেখানে ধ্বংসলীলা চালায়। তবে তারা কেউই ফিরে যেতে পারেনি। দেবালয়ের সুরক্ষায় নিয়োজিত যান্ত্রিক প্রহরী তাদের ভস্মীভূত করেছে। স্বর্ণাভ ত্রিশূলটির মধ্যে নিহিত ছিল তীব্র ধ্বংসাত্মক শক্তি, যা সুরক্ষার প্রয়োজনে আমি ওই দেবালয়ে প্রোথিত করেছিলাম।
আমার গ্রহের বেশ কিছু গবেষণার ফলাফল এই গুহায় সযত্নে রক্ষিত আছে, কীভাবে তা জনকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব, সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা সঙ্গে রয়েছে। জ্ঞান ও বুদ্ধির যথাযথ প্রয়োগ করে এগুলির সদ্ব্যবহার করবে।
আমাকে এবার এই গ্রহ ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য কোনো অনুকূল পরিবেশের গ্রহে, যা এই মহাকাশযানের যন্ত্রগণক ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করেছে। আমার গ্রহের অধিবাসীরা এখন ওখানেই রয়েছে। তবে প্রয়োজনে বা চরম বিপদের মুহূর্তে আমাকে স্মরণ করলে আমি আসব। কথা বলতে বলতে মহাকাশচারী নীলকণ্ঠ গুহার বাইরে চলে এসেছেন। উনি হাতের একটি ক্ষুদ্র যন্ত্রে চাপ দিতে হ্রদের তলদেশ থেকে উপরে উঠে এসে শূন্যে ভাসমান ও দৃশ্যমান হল একটি বর্তুলাকার মধ্যমাকৃতি মহাকাশযান, যার বিভিন্ন অংশ থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে শীতল, মৃদু অথচ উজ্জ্বল সাদা আলো। শোনা যাচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আওয়াজের মতো শোঁ শোঁ শব্দ।
নীলকণ্ঠ দৃঢ়, স্থির পদখেপে এগিয়ে গেলেন। যানটি থেকে একটি আলোকরেখা এসে মহাকাশচারীকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল যানের ভিতরে।
যানটি উপস্থিত সকলের মাথার উপর দিয়ে একবার গোল করে ঘুরে ঊর্ধ্ব গগনে বিলীন হয়ে গেল।
অন্যদিকে হিন্দোল গ্রহ থেকে ৯০০০০ আলোকবর্ষ দূরের এক গ্রহে অতল জলের গভীরে বৃহদাকার পদ্ম ফুলের উপরে শয়নরত অবস্থায় রয়েছেন নীলকণ্ঠসদৃশ এক উন্নত প্রাণী, যাঁকে পরিবেষ্টিত করে রয়েছেন সেবক এবং সৈনিকের দল, যাঁদের নেতৃস্থানীয় এক তিন মাথাবিশিষ্ট প্রাজ্ঞ প্রাণী। নিমিষা গ্রহের ঘাতকবাহিনী এই গ্রহের দিকে ধেয়ে আসছে—এই সূচনা দিলেন তিনি তাঁর প্রভুকে। অতল জলের অধীশ্বরের নিদ্রাভঙ্গ হতে তিনি কিঞ্চিৎ রুষ্ট হলেন। তাঁর ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে এই দুর্বিনীত প্রাণীদের সংহার করতে একটি চক্রাকার অস্ত্র তিনি আহ্বান ও প্রয়োগ করলেন। মুহূর্তে ঘাতকদের মহাকাশযানগুলি প্রবল বিস্ফোরণে নিশ্চিহ্ন হল মহাশূন্যের বুকে। অতল জলের অধীশ্বর তাঁর তিন মাথাওয়ালা প্রাজ্ঞ সেবককে নীলকণ্ঠের আগমনবার্তা জানিয়ে মহাকাশচারী আগন্তুককে স্বাগত জানাবার প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে পুনরায় নিদ্রামগ্ন হলেন।
কয়েক শতাব্দী পার হয়ে গেছে, নীলকণ্ঠ, অতল জলের অধীশ্বর ও তিন মাথাওয়ালা প্রাজ্ঞ প্রাণীটি এক সায়াহ্নে জরুরি আলোচনাসভায় একত্রিত হয়েছেন। নীলকণ্ঠের এক উত্তরপুরুষ হিন্দোল গ্রহের এক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের উচ্চপদে কর্মরত, তিনি একটি গোপন রিপোর্ট নীলকণ্ঠকে পাঠিয়েছেন, তাদের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের এক মহাকাশ প্রতিরক্ষা যান নিমিশা গ্রহের একটি মহাকাশযানকে ভূপতিত করেছে। নিমিশা গ্রহের আহত মহাকাশচারীদের বন্দি করে গোপন সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু এক স্বতন্ত্র গবেষক যানটি যেখানে বিপন্ন অবস্থায় অনিয়মিত অবতরণ করেছিল, সেখানে আহত মহাকাশচারীদের জমাট-বাঁধা রক্তবিন্দু খুঁজে পেয়েছে।
উত্তরপুরুষ সঙ্গে পাঠিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি:
একটি অবিশ্বাস্য কৃতিত্বে, হার্ভার্ডের অধ্যাপক আভি লোয়েব বলেছিলেন যে তিনি একটি অজ্ঞাত মহাকাশ বস্তুর মাইক্রোস্কোপিক অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন, যা প্রশান্ত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল, এটি একটি উন্নত এলিয়েনের সভ্যতার প্রমাণ। লোয়েব, তাঁর দলের সঙ্গে, একটি ‘ঐতিহাসিক অভিযানে’ গিয়েছিলেন এবং পাপুয়া-নিউ গিনির উপকূল থেকে ৫০টি মাইক্রোস্কোপিক কণা গোলক সংগ্রহ করতে সক্ষম হন, যা ধূলিকণার মতো দেখায় এবং সমষ্টিগতভাবে ৩৫ মিলিগ্রাম ওজনের।
ফক্স নিউজ়-এর সঙ্গে কথা বলার সময় অধ্যাপক লোয়েব বলেন, ‘পারফেক্টলি গোলাকার’ রহস্যময় কণা বস্তু, যাকে ‘IM1’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ‘আসলে আরও শক্ত এবং এর বস্তুগত শক্তি রয়েছে, যা নাসা দ্বারা এযাবৎ বিশ্লেষণ করা সমস্ত মহাজাগতিক বস্তুর চেয়ে বেশি।’
IM1-এর অস্বাভাবিক বস্তুগত শক্তির প্রেক্ষিতে, এর উৎসটি অবশ্যই সৌরজগতের থেকে আলাদা একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ, বা একটি বহির্জাগতিক প্রযুক্তিগত উন্নত সভ্যতা হতে পারে। তিনি বলেছেন যে তাঁরা যে কণাগুলি খুঁজে পেয়েছেন, তা ‘পুরোপুরি গোলাকার’। ‘মানুষ এই প্রথম আন্তর্নাক্ষত্রিক বস্তুর উপর হাত রাখল। এটা আগে কখনও সম্ভব হয়নি।’ তিনি বলেছিলেন যে ‘বস্তুগুলি গলিত বৃষ্টির ফোঁটার মতো দেখায়,’ যা তিনি রক্তের ফোঁটার সঙ্গে তুলনা করেন।
লোয়েব বলেন, ‘আমার মেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে একটি নেকলেস এই লাল কণাগুলি দিয়ে বানাতে পারা সম্ভব কি না, কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম, এটি থ্রেড করা খুব শক্ত।’
অধ্যাপক লোয়েব বস্তুটির উৎপত্তি সম্পর্কে আরও আবিষ্কারের আশা করছেন।
সূত্র: Wio News ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, Jul 01, 2023, 08:26 PM IS
Tags: কল্পবিজ্ঞান, ডা. দেবাশীষ কুণ্ডু, নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী