মাংসাশী ভেড়ার রহস্য
লেখক: বৃন্দাবনচন্দ্র বাগচি
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
বাংলার বাইরের একখানা ইংরাজি খবরের কাগজে এক চাঞ্চল্যকর খবর বেরিয়েছে।—“এই অঞ্চলের সেনোরিয়া জঙ্গলের এক গবেষণাগারের বিজ্ঞানী তাপস সেনকে তার পোষা ভেড়ার দল মেরে খেয়ে ফেলেছে। তাপস সেনের মাইনে করা চারজন লোক রক্তাক্ত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট থানায় এসে ওই সংবাদ দিয়েছে। তারা আর ওই বাড়িতে ফিরে যেতে চাইছে না।”
কাগজখানা আমি রাখি। খবর দেখে চমকে উঠলাম। আমার চারপাশে যারা ছিল তাদের দেখালাম। তারা অবশ্যই বলল—সব গাঁজাখুরী কথা। পোষা ভেড়ার দল একটা আস্ত মানুষকে খেয়ে ফেলল—এটা কি বিশ্বাস করা যায়? আসলে ওই চারজন মানুষ টাকাপয়সার লোভে তাপস সেনকে মেরে গুম করেছে। আর নিজেরা যে দোষী নয় একথা বোঝানোর জন্য থানায় খবর দিয়েছে।
কথাটা এরা উড়িয়ে দিলেও আমার মনে হল—এটা সম্ভব হলেও হতে পারে। অন্তত তাপস সম্বন্ধে এবং তার গবেষণা সম্বন্ধে যে ধারণা আমার আছে তাতে ব্যাপারটা অসম্ভব নাও হতে পারে। যদিও ওর সেই গবেষণার জায়গা সেনোরিয়া জঙ্গলের বাড়িতে আর যাইনি কিন্তু শেষ বারের যাওয়ার কথা ভুলি কেমন করে।
তাপস আর আমি দুজনে মেডিক্যাল কলেজে পড়তাম সেই স্বাধীনতার আগে। সেখান থেকে পাশ করে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পড়বার সময় বীজাণুতত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে ও একদিন বলল—দেখ মণি—এই যে ‘এলটর’ বীজাণু-এটা ঠিক কলেরা বীজাণুর মতো দেখতে কিন্তু এতে কোনো রোগ হয় না। কিন্তু কোনো অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে এই বীজাণুই রোগ সৃষ্টি করে। এই ব্যাপারটার ভিতরে কি আছে এই নিয়ে আমার মাথায় চিন্তা এসেছে। আমি বললাম, তা এই নিয়ে গবেষণা কর না কেন? তোকে তো আর ডাক্তারি বিদ্যা বিক্রি করে পেট ভরাতে হবে না। তুই এই নিয়েই লেগে পড়।
তাপস ছিল খুব ধনী মানুষের ছেলে। গাড়ি নিয়ে কলেজে আসত। এর জন্যও বটে আবার ওর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর অসাধারণ মেধার জন্যও বটে—সহপাঠীরা সবাই ঈর্ষা করত আবার সমীহও করত। তারপর পাশ করলাম দুজনেই। আমি আমাদের শহরে ফিরে ডাক্তারি করতে লেগে গেলাম। ও বাড়িতে ল্যাবরেটরি বানিয়ে গবেষণা করতে লেগে গেল।
মাঝে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল। মাঝে মধ্যে চিঠি লেখালেখি চলত। একবার কলকাতা গিয়ে ওর বাড়িতে গেলাম। আমাকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। দেখলাম ও অনেক কিছু করেছে। দেশবিদেশের বিজ্ঞান পত্রিকায় ওর অনেক লেখা বেরিয়েছে। সে সব দেখাল। বলল—দেখ এই ক্ষুদ্রতম বীজাণু থেকে মানুষ, এমনকী বৃহত্তম জন্তু হাতী—সবাই তাদের স্বভাবের জন্য জীনের কাছে দায়ী। তুই তো জানিস-প্রতিটা কোশে ক্রোমোজম থাকে। এই ক্রোমোজমই জীনের ধারক এবং বাহক। আমি প্রথমে ‘এলটর’ বীজাণু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি— কোনো কারণে ভয়ঙ্কর স্ট্রেপটোকক্কাসের জিন ওদের মধ্যে সঞ্চারিত হলে—ওরা তখন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে—রোগ সৃষ্টি করে। আমি তখন ভয়ানক বীজাণুর মধ্যে নিরীহ বীজাণুর জিন সঞ্চার করে দেখলাম—তারা সব নিরীহ হয়ে গেল। আবার নিরীহ বীজাণু দই তৈরির বীজাণু ল্যাক্টো ব্যাসিলাসকে ভয়ানক টাইফয়েড বীজাণুতে পরিণত করা গেল। এখন আমার মনে হচ্ছে বড়ো প্রাণী নিয়ে এই গবেষণা শুরু করব। এর জন্য কলকাতায় থাকা চলবে না। বাংলার বাইরে একটা নির্জন জঙ্গল পেয়ে গেছি—সেটা কিনেছি।
আমি বললাম—যে কাজে যাচ্ছিস তাতে তো অনেক টাকা দরকার হবে। তাপস তার স্বভাব সিদ্ধ হাসি হেসে বলল—আরে যে খায় চিনি তাকে জোগান চিন্তামনি। আমার এক মহাধনী নিঃসন্তান মামা এই ভাগ্নে রত্নটির জন্যে বিপুল ধনভাণ্ডার রেখে মারা গেছেন। বেঁচে থাকতেও তিনি আমার গবেষণার খুব তারিফ করতেন।
আমি বললাম—তুই যা করতে যাচ্ছিস সবটা না বুঝলেও কিছু কিছু আভাস আসছে। দেখ পুরাণে আছে বিশ্বামিত্র অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নূতন পৃথিবী সৃষ্টি করতে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিছু কিম্ভুত বিকৃত সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে দিকটার নজর রাখিস।
তাপস হেসে বলল—বিজ্ঞানীদের সৃষ্টিতেই আনন্দ। নূতন নূতন তত্ত্ব আর তথ্য এই নিয়েই তাদের পুলক। সাইক্লোটন যন্ত্রে যখন প্রথম অ্যাটম বিভাজন হয় তখন কি তারা ভেবেছিলেন—নাগাসাকি আর হিরোসিমার ধ্বংসের কথা? আমি বললাম—কিন্তু হিরোসিমা আর নাগাসাকিতে যা ঘটেছিল সেটাও তো সত্যি। তারপরে সেই সূত্র ধরে হাইড্রোজেন বোমা-নিউট্রন বোমা মানব সভ্যতা ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করছে—উন্নতির জন্য নয় একথাও বিজ্ঞানীদের মনে রাখা উচিত। যাক সে কথা তোর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
এই সাক্ষাতের আরও বছর দশেক পরে হঠাৎ তাপসের চিঠি পেলাম। এর মধ্যে আর ওর কোনো চিঠি পাইনি—সংবাদ আর পাব কী করে? এবার ও লিখেছে—মনি তোকে বলেছিলাম যে বাংলার বাইরে এক জঙ্গল কিনেছি। সেই জঙ্গলের নাম দিয়েছি সেনোরিয়া জঙ্গল। এর মধ্যে আমার ল্যাবরেটরি। এই দশ বছরে যা বিরাট কাজ হয়ে গেছে তা তোকে না দেখালে আমার তৃপ্তি হচ্ছে না। আয় একবার দেখে যা তোর পুরাণের নয়া বিশ্বামিত্ৰ কী সৃষ্টি করেছে। তোর ডাক্তারি পনেরো দিনের জন্যে বাদ দিয়ে আসবি।
এর পরে কোন কোন পথে যেতে হবে তার বর্ণনা দিয়ে লিখেছে। জঙ্গলের বাইরে এই ডাকঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এখানে চিঠি দিলেই পাব। তুই যদি আসিস সঠিক দিন দিয়ে লিখবি—আর একখানা ফোটো যাতে আমার লোক তোকে চিনতে পারে।
ঠিক করলাম যাবই একবার তাপসের কীর্তি দেখতে। সব ঠিক করে চিঠি লিখে দিলাম। ট্রেন, তারপর তিনবার বাস বদল করে তাপসের নির্দিষ্ট জায়গায় এসে নামলাম। আমি নেমে এদিক ওদিক চাইছি—একজন লোক এগিয়ে এসে বলল—আপনি কি সেন সাহেবের বন্ধু মনিবাবু… বললাম—হ্যাঁ। আমার সঙ্গে আসুন—বলে এক টাঙ্গাতে ওঠাল। টাঙ্গা কিছুদূর গিয়ে এক জঙ্গলের কাছে থামল। লোকটা বলল—এবার হাঁটতে হবে—আপনার ব্যাগটা আমাকে দিন।
হেঁটে চলেছি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। চারদিকে বড়ো বড়ো গাছ—আবার ছোটোগাছ ঝোপঝাড় সবই আছে। অনেক গাছে ফুল ফুটেছে—তার মেশানো গন্ধ আবার গাছের পাতারও গন্ধ বেশ ভালো লাগছিল। হঠাৎ মাথার উপরে একটা গাছের ডাল থেকে জিজ্ঞাসা ভেসে এল—সিধু কাকে নিয়ে যাচ্ছ—এ কে? চমকে উঠলাম—উপর দিকে চাইলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু সিধু মুখ উপরের দিকে তুলে বলল—সেন সাহেবের বন্ধু। উত্তর ভেসে এল—আচ্ছা তবে যাও।
আমি ত অবাক—কি ব্যাপার, গাছটাই কথা বলছে নাকি? সিধুকে জিজ্ঞাসা করলাম—এই গাছটাই কি কথা বলছে? সিধু একটু হেসে বলল—না গাছ না। আবার মুখ উপরের দিকে তুলে বলল তা আপনি একটু নেমে আসুন—নীচের ডালে। ডাক্তারবাবু জানতে চাইছেন কে কথা বলছে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম একটা ময়না পাখি উপর ডাল থেকে নীচের ডালে এসে বসল—বলল, আমিই জিজ্ঞাসা করছি। চিনি না তো! আচ্ছা এবার যান। সিধু বলল—এদের কথা আপনি সেন সাহেবের কাছ থেকে শুনবেন। আমার সব কথা জানাবার মতো বুদ্ধিও নেই আর আজগুবি ধরনের কথা বলাও মানা করেছেন সেন সাহেব। আর একটু এগোতেই শুনি গাছের উপরে কথা কাটাকাটি হচ্ছে—একজন বলছে আমি এ ফলগুলো আগে দেখেছি, ওগুলো আমার। আর একজন বলছে এসব বাজে কথা—এ বনের সব ফল সবার। এ জঙ্গলও সবার। সিধু হেসে বলল—টিয়াপাখিরা ঝগড়া করছে। সাহেব কে পুছলে সাহেবই সব বলবেন।
কিছুদূর এগিয়ে একটা বাড়ি দেখা গেল। তার কাছের রাস্তা দেখা গেল। ফনি মনসার গাছের মধ্য দিয়ে গোলকধাঁধার মতো। সিধু বলল—ঠিক আমি যে রাস্তা ধরে যাব ঠিক ঠিক সেই রাস্তা ধরে এগোবেন না হলে বিপদ হবে।
কী বিপদ?—জিজ্ঞাসা করলাম।
ও বলল—এই যে ফনি মনসার গাছগুলো দেখছেন—এগুলো জ্যান্ত। ওদের কাছে গেলে বা ছোঁয়া লাগলে ওরা আপনাকে চেপে ধরবে। এমন জোরে ধরবে যে কাঁটায় একেবারে রক্তারক্তি হয়ে যাবে।
শুনে গা শিউরে উঠল। ওরে বাবা, এ যে ঠাকুরমার ঝুলির সেই অরুণ বরুণ কিরণ মালার পাহাড়ের জ্যান্ত পাথরের গল্প। সেই পাহাড়ের পাথরগুলোই কিরণমালাকে ভয় দেখায়। যাইহোক সিধুর কথামতো সন্তর্পণে গাছগুলোর ছোঁয়া বাঁচিয়ে পৌঁছালাম দরজার কাছে। সিধুর কাছে সাংকেতিক চাবি ছিল—সেই চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলল। ঘরের ভিতরে ঢুকলাম। সিধু আমাকে বসিয়ে ভিতরে চলে গেল।
একটু পরে তাপস এল। চেয়ে দেখলাম। আমাদের দুজনেরই প্রায় একই বয়স—কিন্তু ওর বয়স যেন কমিয়ে রেখেছে। কাছে এসেই জড়িয়ে ধরল, মণি এসেছিস তাহলে। তোকে আমার সব কাছ না জানালে না দেখালে মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। বলতে বলতেই দেখি একটা বেশ বড়ো সাইজের বাঘ এসে তাপসের পায়ে মাথা ঘষতে লাগল। আমি তো চমকে উঠে তাপসের হাত ছাড়িয়ে পিছিয়ে এলাম।… রীতিমতো বাঘ, গায়ে হলুদের উপরে কালো কালো ছোপ—আমাদের গ্রামের জঙ্গলে শীতকালে আসত—সবাই বলত চিতাবাঘ। কিন্তু বড়ো হয়ে জেনেছি গুলবাঘ। তাহলেও বাঘ তো আর মানুষকে জখম করবার ক্ষমতা খুবই রাখে। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল—তাপস—এ যে বাঘ!
তাপস হো হো করে হেসে উঠল বলল—হ্যাঁ বাঘই তো, খাঁটি বাঘ। কিন্তু স্বভাবে বাঘ নারে একেবারে বিড়াল। ভয় পাসনে—বলে ওকে ইংরাজিতে হুকুম করল সোফার উপর বসতে। বাঘটা সোফার উপরে উঠে বসে ম্যাও ম্যাও করে ডাকতে লাগল। আমার মুখ থেকে নিজে নিজেই বেরিয়ে এল—তাজ্জব!
তাপস আবার হেসে উঠল। বলল, আমার প্রথম কাজের নমুনা দেখেই বলছিস তাজ্জব—এখনও কত দেখার বাকি।
আমি বললাম—নারে এটাই প্রথম নমুনা নারে—প্রথমেই নারে—প্রথমেই সেই জিজ্ঞাসা করা ময়না দেখলাম—সিধু কাকে নিয়ে যাচ্ছ, এ কে?
তাপস বলল—ও ময়না দেখেছিস তাহলে?
শুধু ময়না—গাছের উপরে টিয়াপাখিরা মানুষের মতো জঙ্গলের ফল নিয়ে ঝগড়া করছে তাও দেখলাম। আমি উত্তর করলাম। তাপস বলল—যাক এইসব দেখাব আর শোনাব বলেই তোকে ডেকেছি। সব পরে হবে। রাস্তায় তো ধকল গেছে খুব। স্নান কর, খাওয়া-দাওয়া কর। ফ্রেশ হয়ে নে। তারপরে সব বুঝিয়ে দেব। ওই বাঘ কিন্তু ঘরের ভিতরে ঘোরাফেরা করে, ওকে দেখে একদম ভয় করবি না। জিন বদলের ফলে ওর বাঘের স্বভাব বদলে বিড়ালের প্রকৃতি পেয়ে গেছে। বললাম, তা তো দেখছিই—ডাকছে পর্যন্ত ম্যাও ম্যাও করে।
খাওয়া দাওয়ার পর সুস্থির হয়ে বসলাম। তাপস জিজ্ঞাসা করল, অ্যানাটমি ফিজিওলজির কিছু মনে আছে নাকি রোগী দেখতে দেখতে ওগুলো ভুলে মেরেছিস।
আমি বললাম, কী জিজ্ঞাসা করবি তা না জেনে কী করে বলি। যা জিজ্ঞাসা করবি কর, দেখি উত্তর দিতে পারি কিনা।
আচ্ছা মানুষের কথা বলাবার কেন্দ্রটা কোথায় মনে আছে?
একটু একটু আছে। সেরিব্রাল করটেক্স এ ব্রোকাস কনভলিউশনে।
তাপস বলল—রাইট। এবার ময়না আর টিয়ার রহস্য শোন। ময়না আর টিয়ার মগজে কথা বলার একটা প্রচ্ছন্ন কেন্দ্র আছে। চেষ্টা করে শেখালে কিছু কিছু কথা শেখে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এইবার মানুষের মগজের ব্রোকাস কনভলিউশন থেকে কোশ নিয়ে ময়নার ডিমের ভিতরে যখন ভ্রূণ তৈরি হচ্ছে তার মগজে দুটো জিন সঞ্চার করে দিলাম। সে জটিল প্রক্রিয়া অসীম ধৈর্যের ব্যাপার। তা ইচ্ছা যদি করে আমার খুঁটিনাটি সব লেখা আছে তা থেকে পড়ে নিস। সে বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। তারপর ওই ডিম ফুটে যে ছানা হল তাকে চেষ্টা করে কথা শিখালাম। এই প্রক্রিয়ার প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলল। ময়নার বাচ্ছাদের পরীক্ষা করে দেখলাম জিনবাহী ক্রোমোজম ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। তারপর ওই যে ময়নাটা জিজ্ঞাসা করেছে ও হল জিন সঞ্চারের পঞ্চম প্রজন্ম। এখন এরকম ময়না গোটাকতক ছেড়ে দিয়েছি জঙ্গলে। এখন আর কথা মানুষের কাছে শিখতে হয় না। ওরা নিজেরাই শেখে। ময়নার কথা বলার কেন্দ্রটা বেশ পুষ্ট হয়েছে। কথা শুনেই শিখছে। বুদ্ধিটাও ভালো। কিন্তু টিয়ার মগজে ঠিক অতটা গ্রহণ করছে না। ওরা তাই হিংসুটে মানুষের মতো ঝগড়া করে।
সব শুনে বললাম—একেবারে অবাক কাণ্ড। ধন্য তোর গবেষণা। কিন্তু ময়না টিয়া না হয় জীবন্ত প্রাণী। কথা বলা শিখেছে—বুদ্ধিও খুলেছে। কিন্তু ওই যে ফনি মনসার ঝোপ ওরা নাকি জাপটে ধরে একটু ছোঁয়া পেলেই? তাপস বলল—শুধু ছোঁয়া নারে—ঘেঁসে দাঁড়ালেই ধরে ফেলে। ওটা করেছিলাম অন্য কথা ভেবে। কিন্তু এখন কাজে লাগাচ্ছি পাহারাদার হিসাবে। আমি এই জঙ্গলে পাকাবাড়ি তৈরি করে কী করছি এ বিষয়ে অনেক চোর ডাকাতের কৌতূহল আছে। নিশ্চয়ই আমার অনেক টাকা আছে এইসব ভেবে চোর ডাকাত হানা দিতে পারে। সেজন্য অমন গোলকধাঁধা বানিয়ে গাছগুলোকে পাহারায় রেখেছি। ওদের মধ্যে এলে আর ছাড়া পাবে না।
—গাছগুলোর মধ্যেও কি জিন সঞ্চার করেছিস? জিজ্ঞাসা করি।
—হ্যাঁরে। তা নাহলে অমন জীবন্ত প্রাণীর মতো কাজ করবে কী করে? ভেবে দেখলাম—গাছেরও প্রাণ আছে কিন্তু মগজ নেই। আর কেঁচো জোঁক এদের প্রাণ আছে পেশি আছে, মগজ নেই। গাছের জিনের সঙ্গে মিশ্রণ করতে হলে এই দুই প্রাণীর জিন সঞ্চার করতে হয়। তবে আমার যা উদ্দেশ্য তা করতে হলে জোঁকের স্বভাবটাই আনতে হয়। তারপর চলল চেষ্টা। অনেক চেষ্টায় পঞ্চাশ প্রজন্মে গাছগুলো তাদের গাছের দেহ নিয়ে জোঁকের স্বভাব পেয়েছে। কাছে গেলেই এমন জাপটে ধরে ওই কাঁটা বিঁধিয়ে দেবে যে ছাড়ান যাবে না। আবার মজা এই যে লবণ গোলান জল ঢেলে দিলে নিজেই ছেড়ে দেবে।
আমি বললাম—ঠিক জোঁকের স্বভাব আর কি। জোঁকের মুখে নুন পড়লে জোঁক জব্দ হয়ে যায়। … তা ওরা কোনো দিন চোর ডাকাত ধরেছে নাকি। তাপস সেই আগের মতোই আমুদে আছে। টেবিল চাপড়ে বলল—হ্যাঁ তাতেই তো ভালোভাবে পরীক্ষা হয়ে গেছে। একবার তিনজন এদিককার নামজাদা বদমায়েস এসেছে—নিশ্চয়ই বদ মতলবে। সঙ্গে ছোরা ছুরিও ছিল। রাত্রে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ শুনে বেরিয়ে দেখি—তিনজনকে জাপটে ধরেছে গাছগুলো। কাঁটায় শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি লবণ জল দিয়ে ছাড়িয়ে আনলাম। কাটা ছেঁড়া জায়গার চিকিৎসা করে দিয়ে বললাম—আর কোনোদিন এই জঙ্গলে আসবে না। দেখেছ তো গাছগুলো পর্যন্ত চোর ডাকাত চেনে। আর তোমাদের বন্ধুবান্ধবকেও এই জঙ্গলে ঢুকতে মানা করে দেবে। সেই থেকে চোর ডাকাত সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকা যাচ্ছে।
বিস্ময় আনন্দ প্রশংসা আমাকে অভিভূত করে ফেলেছিল। আমার মুখ থেকে কথা সরছিল না। এই অহিংস বাঘটা নাকি জিন সঞ্চারের দশম প্রজন্ম। এখন দুধ খায় ভাত খায়, অবশ্য মাছ মাংসও খায় তবে কদাচিৎ, তাও রান্না করে দিলে।
একটু পরে বললাম—তাহলে এই জিন ট্রান্সপ্ল্যান্টেশান তোর হাতে খেলনার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে? এবার দেশবিদেশের বিজ্ঞানীদের নিমন্ত্রণ করে এনে তোর যন্ত্রপাতি ময়না, টিয়া, ফনি মনসার ঝোপ, বাঘ সব দেখা। সমস্ত কাগজপত্রে প্রকাশ কর। জিনতত্ত্ব নিয়ে এখন তো খুব হইচই হচ্ছে—কিন্তু এত সফলতার সঙ্গে এ কাজ কেউ করতে পারেনি। তাপস একটু ভাবল। বলল—কী হবে দেখিয়ে। আচ্ছা তোকে আরও কিছু দেখাই। তারপর তোর কথা ভাবা যাবে। চল।
বাড়িটার পিছন দিকে প্রায় চিড়িয়াখানার মতো লোহার রেলিং ঘেরা অনেক কুঠুরি আছে। তাতে বাঘ বাঘিনী আছে অনেক ছাগল খরগোস আছে। তাপস বলল—এই বাঘ বাঘিনী যতদিন না অহিংস হচ্ছে ততদিন ওদের খাদ্য জোগাবার ব্যবস্থা করতেই হয় তাই ওইগুলো পুষতে হয়। এবার তোকে একটা মজার জিনিস দেখাই আর আমার এক্সপেরিমেন্টের শেষ এদের দিয়েই হবে।
নিয়ে গেল একটা বড়ো ঘরের কাছে। চারটে রেলিং ঘেরা কুঠুরি। প্রত্যেক ভাগে কয়েকটা করে ভেড়া আছে। সব কুঠুরিতে টিনের ফলকে সংখ্যা তারিখ লেখা আছে। বলল, এই ভেড়াদের ভিতর বাঘের জিন সঞ্চার করা হয়েছে। প্রথম কুঠুরিতে জিন সঞ্চারের পর তৃতীয় প্রজন্ম। আর এই চার নং কুঠুরিতে অষ্টম প্রজন্ম।
আমি খুব ভালো করে দেখলাম। বললাম, তফাৎ তো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ তাপস আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা বলত ভেড়ারা কী খায়?
বললাম, কেন ঘাস পাতা ছোলা এইসব খায়।
তাপস বলল—এই প্রথম খাঁচায় যে ভেড়াগুলো আছে তাদের এই বোঝা থেকে ঘাস নিয়ে দিয়ে দেখ। দিলাম, ওরা খেয়ে নিল। এমনই করে তৃতীয় খাঁচায় যখন ঘাস দিলাম ওরা খেল না, দেখল শুঁকল কিন্তু খেল না। তাপস তখন ওর একজন লোককে ডাকল—মদন, এই খাঁচার খাবার আন। মদন তখন খানিকটা মাংস এনে খাঁচায় ফেলে দিল। চারটে ভেড়াই একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কাড়াকাড়ি করে খেতে লাগল। আশ্চর্যের কথা কাঁচা মাংস হাড় থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগল।
আবার আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসল, তাজ্জব। তাপস হেসে উঠল। বলল, দেখলি বাঘের খাদ্য অভ্যাসটা এদের ভিতর এসে গেছে। আরও চার-পাঁচ প্রজন্ম পরে এরা বাঘের মতো হিংস্র হয়ে উঠবে।
এবার আমি বললাম—তাপস তোর এই কাজ এবং উদ্দেশ্যের তারিফ করতে পারছি না। সুন্দরবনের বাঘের কবলে কত মানুষের প্রাণ যায়। তোর এই বাঘ-ভেড়াকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলে খাদ্যের সন্ধানে এরা মানুষের বস্তির দিকে ধাওয়া করতে বাধ্য হবে। এদের বংশবৃদ্ধি হবে। এক নূতন ধরনের হিংস্র প্রাণীর অত্যাচারে তখন মানুষ অস্থির হয়ে উঠবে। আয়ত্ত করা কঠিন হবে। না তাপস, তুই এই পরীক্ষাটা বন্ধ করে দে। এগুলো হাতের মুঠোতে থাকতে থাকতে এগুলোকে মেরে ফেল। আর বাড়তে দিস না। তাপস বলল, না এখনও কিছু বিবর্তন লক্ষ করবার কাজ আছে। এই তৃণভোজী জন্তুগুলোর শব্দন্ত (Canine teeth) থাকে না। মাংস খেতে খেতে এই শ্বদন্ত গজায় কিনা দেখতে হবে।
আমি বললাম—দেখ, পরমাণু বিভাজন থেকে হাইড্রোজেন বোমা নিউট্রন বোমাতে এসে ঠেকেছে। তোর এই জিন ট্রান্সপ্ল্যান্টেশানের খেলা যে কোন বিপর্যয়ের চড়ায় এসে ঠেকবে তা আমার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। এরপর আসবে মানুষের উপরে এর প্রয়োগ। শেষে অতিমানব গড়তে অমানব তৈরি হবে।
তাপস বলল, বুঝলাম সবই কিন্তু শেষ না দেখে ও ছাড়তে পারি না। পনেরো দিন থেকে তাপসের কাগজপত্র যন্ত্রপাতি জন্তু জানোয়ারের পরীক্ষা সব দেখে ফিরে এলাম।
মাঝে মাঝে চিঠি দিতাম। উত্তর বিশেষ পেতাম না। কদাচিতই চিঠি দিত। শেষ চিঠি পেয়েছিলাম বছর দুই আগে, যে ভেড়াগুলোর জন্ম হয়েছে শ্বদন্ত নিয়ে। আর স্বভাবে প্রায় বাঘের মতো হয়েছে—কিন্তু চেহারা ভেড়ার মতোই আছে।
এরপর দীর্ঘ নীরবতা। হঠাৎ খবরের কাগজে এই আজগুবি সংবাদ পড়ে আমার সেই কাহিনি মনে পড়ে গেল। দু-দিন চিন্তা করে প্রিয় বন্ধুর শেষ পরিণতি জানবার এবং ওর কাগজপত্র বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছে দেবার কর্তব্য আমারই বলে মনে হল।
রাস্তা জানাই ছিল। সেনোরিয়া জঙ্গল যে থানার অধীন সেখানে গিয়ে অফিসারের সঙ্গে দেখা করলাম। বললাম, বিজ্ঞানী তাপস সেন আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। খবরের কাগজে তার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পড়ে আমি ব্যাপারটা জানতে এসেছি।
থানা অফিসার বলল—ওই উদ্ভট সংবাদ নিয়ে যে চারজন এসেছিল তাদের সবাইকে আটক করে রাখা হয়েছে। এখন ও তদন্ত আরম্ভ করা হয়নি।
বললাম—তাদের সঙ্গে দেখা হয় না?
নিশ্চয়ই হবে। একজনকে বলল—ওই চারজনকে ডেকে আন। সিধু আর মদন আমাকে দেখেই কেঁদে উঠল। বলল, ডাক্তারবাবু সেন সাহেবেকে ছয়টা বাঘ-ভেড়া মেরে খেয়ে ফেলেছে। আমাদের কথা এঁরা বিশ্বাস করছেন না।… ওদের কাছে বিস্তারিত বিবরণ শুনলাম। সেন সাহেবের পরীক্ষার নাগাল তো আমরা পেতাম না। আমাদের কাজ ছিল যা হুকুম হত তাই মেনে চলা। কিছুদিন হল তিনি ওই ভেড়াগুলো ছাড়া আর কোনো নূতন কিছু করেন নাই। এই ঘটনার চারদিন আগে ওই বাঘ-ভেড়াদের খাবার দিতে নিষেধ করলেন। চারদিন না খেয়ে ভেড়াগুলো অস্থির হয়ে উঠল। রেলিংয়ের গায়ে ধাক্কা দেয়, পা দিয়ে বেয়ে উঠতে চায়। চারদিন পরে বললেন, সিধু একটা ভেড়ার কানের কাছে একটা ইনজেকসন দেব। আমি দরজাটা একটু ফাঁক করে ধরব তুমি হাতে প্যাডের দস্তানা পরে ওর মুখটা চেপে ধরবি। খাঁচার কাছে যেতেই জানোয়ারগুলো অস্থির হয়ে হাঁ করে তেড়ে আসতে লাগল। এমনিতে আমরা খাবার দিতে গেলে ওরকম করে না। কিন্তু বোধহয় চারদিন না খেয়ে ওদের ভয়ানক খিদে পেয়েছিল।
আমি বললাম, সাহেব, জানোয়ারগুলো খুব খেপে আছে সাবধান। সাহের কথা না বলে ডান হাতে সিরিঞ্জ ধরে বাঁ হাত দিয়ে দরজা একটু ফাঁক করলেন। আমি প্রস্তুত ছিলাম জানোয়ারটা মুণ্ডু বার করলে ধরব বলে। কিন্তু সামান্য অসাবধানতায় সাহেবের বাঁ হাতে অত জোর দেননি—দরজাটা একটু বেশি ফাঁক হয়ে গেল। আর ছ-টা বাঘ-ভেড়া হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ল। আমরা অতটা ভাবিনি… কিন্তু বের হয়েই, চারটে ভেড়া সাহেবকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েই একেবারে টুঁটি কামড়ে ধরল। সাহেব হাত দিয়ে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করলেন। একটা তখন হাত কামড়ে এক খাবলা মাংস ছিঁড়ে নিল। আমি আর মদন হাতের কাছে যা পেলাম তাই দিয়ে মারতে লাগলাম। তাজ্জব ব্যাপার ডাক্তারবাবু, ঠিক বাঘের মতো লাফ দিয়ে আমাদের হাত কামড়ে ধরল। এই দেখুন একেবারে মাংস ছিঁড়ে নিয়েছে। মদনের উরুতে কামড় দিয়েছে। আমরা ভয়ে ঘরের বাইরে চলে এলাম, পরে অস্ত্র খুঁজে নিয়ে গিয়ে দেখি ওঃ কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সাহেরে টুটি ছেঁড়া, হাতের অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছে। সে রক্তমাখা মুখ দেখে শিউরে উঠতে হয়। বুঝলাম সাহেবের শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পালা এবার ভয়ে দৌড়লাম।
থানায় এসে বলাতে ওঁরা বিশ্বাস করলেন না। আমাদের আটকে রেখেছেন।
আমি তখন অফিসারকে তাপসের গবেষণার বিষয় যতটুকু সম্ভব সহজ করে বললাম। এবার অনুরোধ করলাম—বন্দুক আর লোকজন নিয়ে ওই জঙ্গলে যেতে। অন্তত ওর কাগজপত্র যাতে উপযুক্ত জায়গায় দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা আর ওই বাঘ-ভেড়া থাকলে গুলি করে মেরে ফেলার বন্দোবস্ত করা। অফিসার খুব কৌতূহলী হয়ে উঠল। ডিএসপি-ও এলেন। দলবল নিয়ে সিধু আর মদনেরা চারজন আর আমি সেনোরিয়া জঙ্গলের দিকে চললাম। জঙ্গলে ঢুকতেই মাথার উপরে ময়না বলে উঠল—সিধু, এরা কারা এত লোক কেন?
সবাই অবাক! আমি বললাম—সেন সাহেবের সৃষ্টি। ডিএসপি বললেন—অ্যাঁ! এ ছিল দ্বিতীয় ঈশ্বর! তারপর ফনি মনসার ঝোপ দেখিয়ে সাবধান করলাম। একটু এগোতেই দেখা গেল একটা ভেড়া ওই ফনিমনসার বাঁধনে আটকা পড়ে আছে। মুখে তখনও শুকনো রক্ত লেগে আছে। জ্যান্তই আছে। বললাম, এই সেই বাঘ-ভেড়ার একটা, আপাতত থাক এখানে। পরে বিজ্ঞানীদের কাজে লাগবে। দরজা খোলাই ছিল। সকলে ভিতরে ঢুকলাম। তারপরে পিছনের খাঁচাগুলোর কাছে গেলাম। তাপসের পায়জামা, গায়ের জামা শুকনো রক্তমাখা অবস্থায় পড়ে আছে। হাড়ের টুকরা, শুকনো রক্ত, মাংসের টুকরা করোটির খানিকটা পড়ে আছে। সিধু মদন ওরা ওইসব দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল। আহারে! সাহেবের আজ এই হল! এমন মানুষ হয় না বাবু। সব খাঁচাই খোলা। ওরা বলল—দু-রকম মিলে পনেরোটা বাঘ-ভেড়া ছিল। ছাগল-গিনিপিগ খরগোস একটাও নেই।
পাশের ঘরে তাপস থাকত। সেখানে ঢুকতেই খাটের তলা থেকে সেই বাঘ ম্যাও ম্যাও করতে করতে বেরিয়ে এসে সিধুর পাশে দাঁড়াল। সিপাহী বন্দুক তুলতেই মানা করলাম। মারবেন না। এও তাপসের সৃষ্টি। বাঘের বেশে বিড়াল। একে নিয়ে যাবেন—মাছ-ভাত-দুধ রুটি এইসব খায়।
পুলিশ অফিসারেরা সব যন্ত্রপাতি দেখলেন। ওদের দুজন পাহারার জন্য থাকল। পরামর্শ করলাম, সব কথা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দেবেন। বিজ্ঞানীরা এলেই এই সরে ভার নেবেন। ততদিন এরা পাহারা দেবে। পুলিশ অফিসারেরা বাঘ-বিড়ালকে নিয়ে চলে গেলেন। আমি বললাম সিধু, এবার আমাকে জঙ্গলের বাইরে রেখে এস।
সিধু-মদন আরও দুজন কাঁদতে লাগল—ডাক্তারবাবু, সেবার এসে আপনি ওইগুলোকে মেরে ফেলতে বলেছিলেন। তখন যদি সাহেব সেই পরামর্শ মেনে নিতেন, তাহলে এমন হত না। ওদের কান্না দেখে আমারও কান্না পেল। তাপসের একখানা বড় ফোটো ছিল দেয়ালে সেখানে গিয়ে বললাম—তাপস, তোর এত মেধা-বুদ্ধি—এত কৃতিত্ব সব এইভাবে শেষ হয়ে গেল।
হঠাৎ যেন তাপসের গলা শুনতে পেলাম—নারে, শেষ না দেখে ছাড়ব না।
প্রথম প্রকাশ: ফ্যানট্যাসটিক ১৯৯৭
Tags: অষ্টম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, কল্পবিজ্ঞান, বৃন্দাবনচন্দ্র বাগচি