ফাঁদ
লেখক: রুশদী সামস
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
এমন এক বিপদ থেকে তাদেরকে কে উদ্ধার করতে পারবে? বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান দ্রিষিন মনে মনে ভাবলেন। ছেলেবেলায় প্রচুর গল্প পড়েছেন। গল্পগুলোতে সবসময় একজন নায়ক থাকত। সেই নায়কদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ অস্বাভাবিক সব শারীরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিল। দেখা যেত তারা তাদের এই ক্ষমতা দিয়ে, শরীরের অসামান্য শক্তি দিয়ে অনিষ্টকারী দস্যু কিংবা দানবদেরকে মেরেকেটে শেষ করে দিত। আবার তাদের অনেকের কোনো শারীরিক শক্তি ছিল না। ছিল অসাধারণ মেধা আর বুদ্ধি শক্তি। এই শ্রেণির নায়কদের শক্তির অভাব হলে কী হবে, নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে শত্রুকে বধ করে ফেলত। তবে দ্রিষিণের মনে আছে, এই ধরনের চরিত্র খুব কম সংখ্যক গল্পেই থাকত। বাস্তবে অবশ্য তার উলটো। তাদেরকে বিপদটি থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রথম শ্রেণির কোনো নায়ক চরিত্র না থাকলেও একজন অন্তত বুদ্ধিমান নায়ক চরিত্র আছেন। তিনি হলেন ক্লিওনি, বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান জীববিজ্ঞানী।
বিপদটা আসলে মোটেই আর দশটা অন্যান্য গুরুত্বহীন কোনো ব্যাপার নয়। বিপদটা এমনই যে তার সমাধান না করতে পারলে এই গ্রহে দ্রিষিনদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। বিপদটা ঘটে গেলে ফলাফল নিশ্চিত। তাদের এই গ্রহটা মোটামুটি অন্য প্রাণীদের একটা কলোনিতে পরিণত হয়ে যাবে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে একের পর এক রকেট দ্রিষিনদের এখানে আসছে। যারা রকেটটাকে চালিয়ে এতদূর এনেছে, এখন পর্যন্ত তারা কেউ রকেট থেকে নামেনি। কেন নামেনি, সেটা অবশ্য কেউ জানে না। তবে একাডেমির বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু কারণ অনুমান করতে পেরেছেন। যেমন, তারা রকেট থেকে বের হওয়া বিভিন্ন প্রকার ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতি সংবেদনশীল আলোকরশ্মির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ব্যাপারটা বেশ চিন্তার। তার কারণ, রশ্মিগুলোর মধ্যে কয়েকটা নির্দিষ্ট রশ্মির উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের ভুরুগুলোকে বাঁকিয়ে দিয়েছে। রশ্মিগুলো সাধারণত মাটির নীচে অতি প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব খোঁজার জন্য ব্যবহার করা হয়। তার মানে রকেটের ভেতরে বসেই তারা হয়তো মাটির ওপরে এবং নীচে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছে। তাতে অবশ্য ভয়ের কিছু ছিল না। কারণ এইসব রশ্মি দিয়ে মাটির নীচে দ্রিষিনদের অস্তিত্ব প্রকাশ পাবার কথা নয়। দ্রিষিনরাও অনেক আগে থেকে মাটির নীচে, তাদের মাথার ওপরের দিকে বেশ শক্তিশালী মাত্রার তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ স্তর তৈরি করে রেখেছে। রকেট থেকে ছোড়া অদৃশ্যমান আলোক রশ্মিগুলো এই স্তরের নীচে নামতে পারবে না। রকেটের ভেতরে যারা থাকবে, তারা মনে করবে ছোটো গ্রহটা অতটুকুই গভীর।
তবে তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারেননি দ্রিষিন। কারণ শেষ কয়েক মাস ধরে যে রকেটগুলো এসেছে, সেগুলো একটু অন্যরকম গঠনের। ওদের শরীর থেকে মোটা মোটা ড্রিল মেশিন বের হয়ে গেল। মাটি খুঁড়ে রকেটের ভেতর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চকচকে আর মসৃণ দেখতে ধাতব কিছু যন্ত্র বসিয়ে দিল। একাডেমির বিজ্ঞানীদের ধারণা যন্ত্রগুলো আসলে টেলিমেট্রি। তার মানে এখন আর অদৃশ্যমান আলো ছুড়ে নয়, রকেটের ভেতরের প্রাণীগুলো আরও হাজারটা চলক সংগ্রহ করে তাদের সমীকরণে বসিয়ে দেবে। সমীকরণ তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে বিকিরণ স্তরের ঠিক নীচেই একটা বড়োসড়ো কলোনি। তখন সর্বনাশ হয়ে যাবে! তাদের অস্তিত্ব একেবারে নগ্ন হয়ে রকেটে চেপে আসা প্রাণীগুলোর কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে।
লিফটের একটা প্ল্যাটফর্ম মাটির ওপর থেকে প্রায় বিশ মাইল গভীরে অবস্থিত। দ্রিষিন সেই লিফটে উঠলেন। শব্দ করে লিফটের লোহার তৈরি জং ধরা গেটটা টেনে দিলেন। লিফটটা তাকে নিয়ে মাটির নীচে আরও গভীরে চলা শুরু করল। ধীর একটা গতি নিয়ে এক মাইল, দুই মাইল করে করে লিফটটা নীচে নামতে থাকে। একেক মাইল করে নীচে নামার পরে বাইরে ঝুলানো লন্ঠনগুলোতে একটা টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছে। তারপরেই আবার অন্ধকার। একঘেয়ে এই দৃশ্যটা দেখতে দেখতে নিজেকে প্রবোধ দেবার মতো করে ভাবছেন দ্রিষিন। তাদের গ্রহে ভিনগ্রহের রকেট অবশ্য এবারই প্রথম আসেনি। এর আগেও একাধিক জাতি তাদের গ্রহে কলোনি বানাতে এসেছিল। প্রতিবারই ক্লিওনি এই গ্রহবাসীদেরকে উদ্ধার করেছেন। প্রাণীগুলোর বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী ফাঁদ পেতেছেন। ফাঁদগুলোতে ওরা সবাই ধরা পড়েছে, মারা পড়েছে। অন্য সব সময়ের মতো ক্লিওনি এবারো নিশ্চয় কোনো পরিকল্পনা করবেন। যদিও এবারের আগন্তুকদের তেমন একটা সুবিধার লাগছে না। তাদের রকেটগুলো দেখে তাদেরকে অন্যদের তুলনায় বেশ উঁচু বুদ্ধিসম্পন্ন লাগছে। কিন্তু তাতে কী? দ্রিষিন জানেন যে ক্লিওনি একটা না একটা উপায় বের করবেনই।
দ্রিষিনের মনে হল তিনি যেন অনন্তকাল ধরে লিফটে উঠে আছেন। এভাবে মিনিটে পাঁচেক ধরে প্রায় মাইল বিশেক মাটির আরও গভীরে গিয়ে ধুলোর একটা বিশাল ঝড় উড়িয়ে ধড়াম করে থেমে গেল লিফটটা। লিফটের গেটটা জোর গায়ে একপাশে সরিয়ে দিয়ে বের হলেন দ্রিষিন। তিনি এখন বিজ্ঞান একাডেমির জীববিজ্ঞান গবেষণাগারে এসেছেন। একাডেমির প্রধান হলেও আগে তিনি কখনোই এখানে আসেননি, ক্লিওনিকে কখনও তিনি দেখেনওনি। আসলে বলতে গেলে একাডেমির প্রধান হিসাবে তার সময়টুকুতে ক্লিওনির কাছে আসার কখনও প্রয়োজন হয়নি, কখনও আসতে হোক সেটাও তিনি চাননি। ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয়ে গেছে যে দ্রিষিনদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ে গেলেই যেন একাডেমির প্রধানের ক্লিওনির কাছে ছুটে আসা। ক্লিওনিই যেন তাদের এই জাতীয় সমস্যার একমাত্র সমাধান, তাদের গল্পের নায়ক।
এখনও ধুলো উড়ছে। রীতিমতো যেন ঝড় বইছে। ধুলোর প্রকোপ থেকে নিজের চোখ দুটোকে বাঁচাতে হবে। হাত দিয়ে তাই দ্রিষিন তার মুখটাকে ঢেকে ফেললেন। একটা সময় ধুলোর ঝড়টা আস্তে আস্তে কমে এল। শান্ত পায়ে তখন তিনি লিফটটার পাশ দিয়ে ঘুরে পেছনের অন্ধকার জায়গাটার দিকে হেঁটে গেলেন। সেখানে একটা লোহার সিঁড়ি। সিঁড়িটা দিয়ে তিনি ফুট বিশেক ওপরে উঠলেন। সিঁড়ি বেয়ে উঠে শেষ মাথায় একটা প্ল্যাটফর্ম পেলেন তিনি। সেটার ওপরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালেন।
প্ল্যাটফর্মটার ওপাশেই কাচের তৈরি একটা ঘর। ক্লিওনির গবেষণাগার। সেখানে এলোমেলো করে রাখা গবেষণা কাজের জন্য বিচিত্র সব যন্ত্রপাতি। আছে অণুবীক্ষণ যন্ত্র, স্লাইড, বিকার, টেস্টটিউব, কিংবা বুনসেন বার্নার। সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ফোরসেপ্স অথবা স্কালপেলস। আছে বড়োসড়ো একটা ক্রায়োপাম্প, আর কোণার দিকে বানিয়ে রাখা একটা গ্রিনহাউজ। গবেষণাগারে ফরমালিনের দ্রবণে ডুবানো আছে অদ্ভুত দর্শন সব প্রাণীদের শরীরের অংশবিশেষ। মাঝেমাঝে জারগুলোর ভেতরে চোখে পড়ছে নিজের দেহের সঙ্গে কুঁকড়ে থাকা মৃত শিশু প্রাণীদের শরীর। কিছু কিছু জারের ভেতরে আছে গাছগাছড়া। শয়তানের শিরা-উপশিরার মতো ফরমালিনের জারের ভেতরে নড়াচড়া করছে ওদের শেকড়গুলো। দেখে দ্রিষিনের গা-টা কেমন ছমছম করে ওঠে।
গবেষণাগারটির দরজাটা আকারে ছোটো। সেটা খুলে মাথাটা সামান্য নীচু করে বের হয়ে আসলেন ক্লিওনি। বিজ্ঞানী বলতে যে চেহারাটা ভেসে ওঠার কথা, তার বিন্দুমাত্র কিছু তার চেহারাতে নেই। আকার-অবয়বে তিনি দ্রিষিনের তুলনায় অনেক বেশি ছোটোখাটো। এক কথায় বেঁটেই বলা চলে। পুরো মুখটাতে একটা শীতল ভাব। বাম চোখটা ঘোলা হয়ে আছে। চোখের মণিটা কেউ যেন বর্শা দিয়ে গেলে দিয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া আঙুরের মতো সেঁটে আছে কোটরে। গোটা মুখে অজস্র পোড়া আর কাটা দাগ। মাথায় চুলের পরিমাণ খুবই সামান্য। বৃদ্ধ বিজ্ঞানীকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠবে যে কেউ।
‘আসতে বেশ দেরি করেছেন,’ বললেন ক্লিওনি। সাপের মতো কেমন যেন হিসহিস করে একটা শব্দ বের হল তার মুখ দিয়ে। মুখে একটা কঠোর ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছেন দ্রিষিনের দিকে। ‘সময় খুবই কম আমাদের হাতে। আমার কাছে আপনারা বিজ্ঞান একাডেমির প্রধানেরা না আসলে বুড়ো বয়সে কে যাবে নিজে থেকে সমাধান বের করতে? ভেতরে আসুন।’
এই লোকটিই তাহলে ক্লিওনি! ক্লিওনিকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ক্লিওনি দেখতে যেমনটা হবেন বলে দ্রিষিন ভেবেছিলেন, তিনি দেখতে তার ঠিক উলটো। বিজ্ঞানীটির চেহারায় একধরনের নৃশংস ভাব আছে। এমন চেহারার আর কণ্ঠস্বরের একজনের সঙ্গে কথা বলতে যতটা পারা যায় ততটা দেরি করাই ভালো। গায়ের ধুলো ঝাড়তে ইচ্ছা করেই যেন বেশ অনেকটা সময় নিলেন দ্রিষিন। তারপরে খেয়াল হল যে তিনি দেরি করছেন দেখে ক্লিওনি না জানি আরও বিরক্ত হয়ে ওঠেন। দ্রিষিন তাড়াতাড়ি করে তাই গবেষণাগারটির ভেতরে গিয়ে ঢুকলেন।
‘আপনার কাজের জন্য ভালো একটা জায়গা দেখতে হবে,’ বললেন দ্রিষিন। কিছু একটা বলে ক্লিওনিকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। ‘এত কষ্টের মধ্যে আর যাই হোক গবেষণা হতে পারে না।’
ক্লিওনি দ্রিষিনের দিকে তীক্ষ্ণ একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। কিন্তু দ্রিষিনের কথার কোনো উত্তর দিলেন না।
‘মাটির এতটা নীচে কাজ করতে হয়,’ শ্লেষ্মা জড়ানো স্বরে বললেন দ্রিষিন। ‘অজাত-কুজাত প্রাণীগুলোর উৎপাত হয় না?’ দ্রিষিনদের গ্রহের মাটির নীচে বিভিন্ন ধরনের করাল জাতীয় প্রাণী বাস করে। ভয়ংকর তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত দিয়ে জিনিসপত্র সব কুচিকুচি করে কেটে ফেলে। মাটির নীচে জন্মানো ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করে করাল প্রাণীগুলো। তাদের দিকেই ইঙ্গিত বিজ্ঞান একাডেমির প্রধানের।
ক্লিওনি দ্রিষিনের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে গবেষণাগারের মেঝের দিকে ইঙ্গিত করলেন। দ্রিষিন আঁতকে উঠলেন। মেঝেতে অসংখ্য ছোটো ছোটো ছিদ্র হয়ে আছে। আবেগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘সর্বনাশ! করাল প্রাণীগুলোর কাজ?’
‘একেকবার একেক জাত তৈরি হচ্ছে,’ বললেন ক্লিওনি। একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন দ্রিষিনের দিকে। বসার ইঙ্গিত করলেন একাডেমির প্রধানকে। ‘আগের জাতগুলো সব ক’টাকে শেষ করেছি। এরা নতুন প্রজাতি। একটা একটা করে জাত শেষ করে কোনোই লাভ নেই। যেসব ফাঁদ দিয়ে ওদেরকে ধরছি, শেষের দিকের কয়েকটা ঠিকই বেঁচে যাচ্ছে। সেগুলো দ্রুত বিবর্তিত হয়ে অন্য ধরনের প্রজাতি জন্ম দিচ্ছে।’
চেয়ারে বসে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে চোখের কোণাগুলোতে জমে থাকা ধুলো মুছতে লাগলেন দ্রিষিন।
‘সর্বনাশ! পরিমাণে তো অনেক মনে হচ্ছে,’ মেঝের ছিদ্রগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন দ্রিষিন। ‘হয় ধরে ধরে গবেষণায় লাগিয়ে দিন, নইলে শিগগিরি বংশ নিপাত করুন শয়তানগুলোর।’
ক্লিওনি মেঝেতে শব্দ করে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে দ্রিষিনের মুখোমুখি হয়ে বসলেন। ‘আপনি ওদেরকে গালাগাল করছেন কেন? আমাদের পুরো জাতির তো ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’
‘মানে?’ হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান।
ক্লিওনি এমন একটা বিরক্তি নিয়ে দ্রিষিনের দিকে তাকালেন যেন দ্রিষিন বাচ্চা একটা ছেলের মতো প্রশ্ন করে ফেলেছে।
‘আপনাদের সবার চোখে আমি নায়ক। সবাই বলে আমি এই গ্রহকে বারবার বাঁচিয়েছি,’ ক্লিওনি বললেন। ‘কিন্তু আমি বলব যে আমি নই, আসলে এই করালগুলোই আমাদেরকে বারবার বাঁচিয়েছে।’
ক্লিওনির কথা দ্রিষিন ঠিক বুঝতে পারছেন না। কিন্তু সেটা তিনি চেপে যান। ক্লিওনির মতো সোজা কথা বলা একজন ব্যক্তিত্বের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে যাবার কোনো মানে হয় না। সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতে পারে।
‘একেক মৌসুমে আমি ওদেরকে একেকভাবে হত্যা করেছি,’ ফ্যাসফ্যাসে শান্ত গলায় বলতে থাকেন ক্লিওনি। ‘একেকটা প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা একেক রকম। যে হত্যাকৌশলে এদের একটা জাতকে শেষ করেছি, সেটা অন্য জাতটার ক্ষেত্রে বদলাতে হয়েছে। ঠিক আমাদের গ্রহে কলোনি করতে আসা প্রাণীগুলোকে যেভাবে শেষ করেছি। সেজন্য গালি নয় করালগুলোর ধন্যবাদই প্রাপ্য।’
‘তার মানে,’ মুখ হা হয়ে গেছে দ্রিষিনের। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললেন তিনি। ‘আমাদের গ্রহে আসা ভিনগ্রহীদেরকে আপনি কীভাবে মারবেন সেই বুদ্ধিগুলো আপনি এই করালগুলোকে হত্যা করে করে বের করেছেন?’
ক্লিওনি মাথা ঝাঁকালেন। ‘প্রথম দিকের একটা প্রজাতির কথা বলি,’ চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন। ‘ওদেরকে হত্যা করার জন্য একটা বিশেষ বাক্স বানালাম।’
ক্লিওনি উঠে গিয়ে জঞ্জালে ভরা একটা টেবিলের ওপর থেকে বাক্সটা নিয়ে দ্রিষিনের হাতে দিলেন। দেখতে বাক্সের মতো দেখালেও জিনিসটা আসলে ছোটোখাটো একটা যন্ত্র। ভেতরে একটা মাইক্রোচিপ বসানো আছে। মাইক্রোচিপটি ফেরোমনের মতো কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্দিষ্ট মাত্রায় বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে। রাসায়নিক পদার্থটি যেই না কোনো করালের নাক দিয়ে সেটার মস্তিষ্কের অলফ্যাক্টরি লোবে প্রবেশ করবে, সে একধরনের মানসিক বিভ্রমে ভুগতে শুরু করবে।
‘ওই প্রজাতির করালগুলো ছিল নির্বোধ প্রকৃতির। নির্বোধ বলেই এই অতি সাধারণ বুদ্ধিটা কাজে লেগেছিল। যন্ত্রটা থেকে বের হওয়া রাসায়নিক পদার্থ ওদের স্নায়ুতন্ত্রকে সাময়িক উত্তেজিত করত। মানসিক বিভ্রমের কারণে ওরা মনে করত বাক্সের ভেতরে বিপরীত লিঙ্গের একটা করাল তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। মিলিত হবার আশায় যেই না করালগুলো বাক্সটার ভেতরে ঢুকত… ’
দ্রিষিন কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা পরিষ্কার মনে করতে পারেন। গোটা বিশেক প্রাণী একটা আন্তর্মহাজাগতিক পোর্টালের ভেতর দিয়ে তাদের গ্রহে এসেছিল। আসার কিছুদিনের ভেতরে পূর্বাঞ্চলের মাটির ওপরটা টেরাফর্ম করার কাজ শুরু করতে যাচ্ছিল। ওদেরকে থামাতে ক্লিওনির তৈরি এই যন্ত্রগুলোর বড়ো সংস্করণগুলোকে রাতের অন্ধকারে ওপরে রেখে আসা হয়েছিল। ঘটনার বাকি অংশটুকুকে বলা চলে রীতিমতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। মানসিক বিভ্রমের ফাঁদে পড়ে যেই না প্রাণীগুলো যন্ত্রটার ভেতরে ঢুকত, অমনি যন্ত্রটার মধ্যে গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখা ধারালো লোহার পাতগুলো নেমে এসে ওদের দেহটাকে এক সেকেন্ডের ভেতরে কেটে দু-ভাগ করে ফেলত। সমস্যা বেঁধেছিল অন্যখানে। প্রাণীগুলোর প্রাপ্তবয়স্কদের মেরে ফেলা হলেও শিশুদের মস্তিষ্কে জৈবিক মিলনের চাহিদার বিভ্রমটা তৈরি করা যায়নি। অবশ্য এতে তেমন বেশি অসুবিধাও হয়েছে সেটা বলা যাবে না। প্রাপ্তবয়স্করা সবাই মারা যাবার পরে মাটির নীচ থেকে একদল সৈন্য পাঠিয়ে শিশু-প্রাণীগুলোকেও মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আচ্ছা, মনে মনে ভাবলেন দ্রিষিন। সাধারণ কোনো উপায়েও তো প্রাণীগুলোকে মারা যেত! যেটা করা হয়েছে সেটা রীতিমতো নির্মমতা। হত্যাযজ্ঞ। ক্লিওনি পাশবিকভাবে মারতে গেলেন কেন ওদেরকে?
‘করালের সেই প্রজাতিটা ফসলের কোনো ক্ষতি করত না,’ ক্লিওনি খনখনে গলায় বললেন। ‘কিন্তু এরও অনেক বছর পরে এক ধরনের করাল জন্মানো শুরু করলো যারা ফসলের ক্ষতি করতে থাকল।’
দ্রিষিন মনে করতে পারেন, তার ছোটোবেলার কথা। একদল করাল রিত্রিয়ান গাছের মিষ্টি বীজ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছিল। শস্যভাণ্ডারগুলোতে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। অনেকে গ্রহটাতে গৃহযুদ্ধের গন্ধ পাচ্ছিলেন। ক্লিওনি সেই সময়ের কথা বলছেন। ক্লিওনি হাত তুলে গবেষণাগারের এক প্রান্তে বানানো গ্রিনহাউজটার দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। দ্রিষিন সেখানে তাকিয়ে দেখলেন ভেতরে একটা ছোটোখাটো বাগান করা হয়েছে। বাগানে ছোটো ছোটো রিত্রিয়ান গাছ। তাতে অসংখ্য লাল রঙের ফল ধরেছে।
‘আগের বুদ্ধি আর কাজে লাগল না,’ ক্লিওনি বলতে থাকেন। ‘ফেরোমনের মতো রাসায়নিক পদার্থটা এদের ওপরে কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না। পারবেও না জানতাম। নতুন প্রজাতির এই করালগুলোর কোনো অলফ্যাকটরি লোবের অস্তিত্ব ছিল না। ঘ্রাণ দিয়ে কী করবে? তাই স্বাদের ধারণাটা দিয়েই ওদেরকে খতম করে দিতে হল।
‘প্রজাতিতে করালগুলো নতুন হতে পারে, কিন্তু আমি যেভাবে ওদের শেষ করলাম, সেটা বেশ প্রাচীন পদ্ধতি,’ বলতে থাকেন ক্লিওনি। উঠে গিয়ে গবেষণাগারের কোনায় রাখা একটা বস্তার মুখ খুললেন। সেখান থেকে হাতে করে কিছু রিত্রিয়ান গাছের বীজ নিয়ে এলেন। ‘করালগুলোর প্রিয় শস্য ছিল রিত্রিয়ান গাছ। তাই রিত্রিয়ান বীজের মাঝে বিষ মাখিয়ে রাখলাম। ছড়িয়ে দিলাম যেখানে যেখানে সম্ভব।’
‘অনেক পুরোনো বুদ্ধি। কাজ হল তাতে?’ বললেন দ্রিষিন।
‘ইতিহাস পড়েননি বুঝি?’ জিজ্ঞেস করলেন ক্লিওনি। দ্রিষিন খানিকটা বিব্রতবোধ করলেন। ভেবেচিন্তে প্রশ্নটা করার দরকার ছিল তার। ক্লিওনির বুদ্ধিটা যদি সত্যি সত্যি কাজ না করত, তাহলে তারা খেয়ে পরে বেঁচে আছেন কী করে?
‘বিষগুলোকে একেবারে অন্যরকমভাবে বানিয়েছিলাম,’ বলতে থাকেন ক্লিওনি। ‘একটা বিশাল অংশ বীজের গায়ে বিষগুলোকে মাখানো হয়েছিল। আর বাকি বেশির ভাগ বীজের গায়ে কোনোকিছু মাখানো হয়নি। কিছু করাল প্রথম শ্রেণির বিষ মাখানো বীজগুলো খেল। ওগুলো কিছুদিনের ভেতরে বিষক্রিয়ায় উন্মত্ত আর হিংস্র হয়ে গেল। যেসব করাল নির্বিষ বীজগুলোকে খাচ্ছিল, উন্মাদ করালগুলো তাদের ওপরে হামলা চালাতে লাগল। উন্মাদগুলো ওদের কাউকে যেখানেই পেত পেটটাকে দু-ভাগ করে চিরে ফেলত। সেই পেটের ভেতর থেকে হজম না হওয়া রিত্রিয়ান বীজগুলো বের করে খেয়ে ফেলত ওরা। আমি একদিন একটা উন্মাদ করালকে আরেকটা করালকে মেরে তার নাড়িভুঁড়ি চাটতে দেখেছি। আমি নিশ্চিত যে মৃত করালটার নাড়িভুঁড়ির ওই অংশটাতে রিত্রিয়ানের স্বাদ লেগেছিল।’
ক্লিওনির বর্ণনা শুনে দ্রিষিনের গা কেমন যেন ঘিনঘিন করতে লাগল। তিনি কোনোমতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘উন্মাদগুলোর কী হল?’
ক্রুর একটা হাসি দিয়ে ক্লিওনি বললেন, ‘ভালোগুলোকে খতম করে দিয়ে মাসখানেকের ভেতরেই উন্মাদ করালগুলো মাংস পচা রোগে পড়ে গিয়ে মারা পড়ল।’ মুখের হাসিটিকে চওড়া করে দিয়ে তিনি বললেন, ‘একেই বলে বিষ দিয়ে নির্বিষ করা। আর আরেকটা প্রবাদ আছে না? সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না।’ ক্লিওনি এবার তার ছোটোখাটো শরীরটিকে দুলিয়ে দুলিয়ে হাসতে লাগলেন।
চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে নিজের জন্য আর দ্রিষিনের জন্য এক পেয়ালা পানীয় তৈরি করলেন ক্লিওনি। ফিরে এসে পেয়ালাটা দ্রিষিনের দিকে বাড়াতে বাড়াতে বললেন, ‘এই প্রক্রিয়াতে ভিনগ্রহীর একটা দলটার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মোটামুটি বেশ বুদ্ধিমান। এখনকারগুলোর মতোই রকেটে করে এসেছিল। দক্ষিণে বসত গেড়েছিল। কিন্তু থাকতে পারেনি বেশিদিন। করালগুলোর মতোই উন্মত্ত একদল আরেক দলকে শেষ করে দিল। তবে উন্মাদগুলো নিজেদেরকে শেষ করে দেবার সময়টাতে যা করেছে সে বর্ণনা শুনলে… ’
চেয়ার ছেড়ে এবারে উঠে দাঁড়ালেন দ্রিষিন। নৃশংসতার কথা শুনতে তার আর ভালো লাগছে না। গম্ভীর হয়ে আছে তার মুখ। তিনি চিন্তিত তাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। এখন যে প্রাণীগুলো আসছে, তারা একেবারেই অন্যরকম। মাটির নীচ থেকে বিজ্ঞান একাডেমির বিজ্ঞানীরা ওদের ওপরে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। আগে যারা এসেছিল, তাদের সবার রকেটের তুলনায় এদের রকেট অনেক উন্নত। ইঞ্জিনগুলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে বহু আলোকবর্ষ দূর থেকে এরা এসেছে। সেই সঙ্গে এরা অনেক সাবধানী। জীবনধারণের সব উপাদান বাইরে থাকা স্বত্বেও একবারের জন্যও কেউ রকেট থেকে বের হয়নি। দ্রিষিনকে যে জিনিসটা বেশি ভাবাচ্ছে তা হল নিয়মিত বিরতি দিয়ে রকেটগুলো সেই কবে থেকে আসছে তো আসছেই। চলে যাচ্ছে। আবার আসছে।
‘আমার মাথায় একটা জিনিস কিছুতেই ঢুকছে না,’ অনেকটা স্বগতোক্তির মতো বললেন দ্রিষিন। ‘এখন যারা আসছে, তারা চায়টা কী? তারা বার বার কেন আমাদের এখানে আসে?’
‘একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন,’ বললেন ক্লিওনি। দ্রিষিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জীববিজ্ঞানীটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। ‘এখানে ওরা কলোনি বানাতে আসেনি। ওরা প্রতিবারই ছোটো ছোটো রকেট পাঠিয়েছে। সঙ্গে অল্প কিছু নভোচারী। আমি ওদের কার্যকলাপ থেকেই একটা ব্যাপার আন্দাজ করতে পেরেছি।’
‘কী আন্দাজ করতে পেরেছেন?’
‘ওরা আমাদের এখানে কিছু একটা খুঁজতে আসে।’
বুড়ো বিজ্ঞানী কি পাগল হয়ে গেল নাকি? দ্রিষিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী খুঁজতে আসে? আপনার এমন মনে হবার কারণ কী?’
ক্লিওনি মাথা নেড়ে বললেন, ‘কী খুঁজতে আসে তাও বলতে পারব না। কেন আমার এমন মনে হচ্ছে তাও আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমি যেটুকু বুঝি তা হল ওরা যা খুঁজছে সেটা না পাওয়া পর্যন্ত এখানে বারবার আসতে থাকবে।’
‘তাহলে তো বিপদের কথা!’ দ্রিষিন বললন। ‘ওরা তো রীতিমতো মাটির গভীরে ড্রিল করা শুরু করবে। যন্ত্রপাতি নামিয়ে ফেলেছে। বেশ হিসাব করে করে টেলিমেট্রি বসাচ্ছে। মাটির নীচে আমাদের সবার অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনে যাওয়া এখন মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
ক্লিওনি দ্রিষিনের কথার কোনো উত্তর দিলেন না। বরং তিনি খানিকটা বিরক্ত। এই ব্যাপারটা আগে থেকেই তিনি আঁচ করেছিলেন। একাডেমির প্রধান কিংবা অন্যান্য বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা সেটা বুঝতে কেন এত দেরি করল, সেটা ভেবেই তার বিরক্তি।
‘আপনার কি মনে হয় যে যাদেরকে মেরেছিলেন, এরা তাদের মতোই বুদ্ধিমান?’
ক্লিওনি উঠে গিয়ে রিত্রিয়ান গাছগুলোতে অল্প করে জল দিতে থাকেন।
‘বুদ্ধিমান প্রাণীরা সবকিছু তাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয় দিয়ে ধরার চেষ্টা করে, বোঝার চেষ্টা করে,’ শান্ত কণ্ঠে বললেন ক্লিওনি। ‘এর বাইরে তারা যেতে চায় না, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। আমরা ফাঁদ পেতে কলোনি করার দুটো পরিকল্পনা বানচাল করেছি, ওদেরকে শেষ করে দিয়েছি। ওদের জন্য পেতে রাখা এই ফাঁদগুলো কিন্তু চোখে দেখা যায়। যন্ত্রের মতো দেখতে বিশাল বাক্সগুলো কিংবা খেতের পরে খেত জুড়ে রিত্রিয়ান—যাই বলুন না কেন, অতি বুদ্ধিমান কেউ হলে কিন্তু ওগুলোর ধারে কাছেও পা মাড়াত না। অথচ তারা আমাদের এই ফাঁদে পা দিয়েছে।’
‘কেন দিয়েছে বলে আপনার মনে হয়?’
‘একটি প্রাণীর কোন মাত্রার বুদ্ধিমত্তা আছে, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন তার ষষ্ট ইন্দ্রিয়ের কার্যক্ষমতা দিয়ে,’ ক্লিওনি বললেন। বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীই আগে থেকে খুব বেশি বিপদ আঁচ করতে পারে না। কোথাও কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে বুদ্ধিমান প্রাণী আগে থেকে বিপদটা টের পেয়ে সেই জায়গা চেড়ে চলে যেতে পারে না। অথচ অনেক নীচুস্তরের প্রাণী ব্যাপারটা আগে থেকে অনুভব করতে পারে। কারণ? নীচুস্তরের প্রাণীদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অত্যন্ত প্রবল, বুদ্ধিমান প্রাণীর নয়। সেজন্য যারা অতি বুদ্ধিমান, তারা প্রযুক্তির ওপরে নির্ভর করে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা নিজেদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ঘাটতিটাকে পূরণ করে। অতি বুদ্ধিমান কোনো প্রাণী ফাঁদগুলো চোখে দেখুক বা না দেখুক, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপারটা ঠিকই ধরে ফেলবে। তথ্য উপাত্ত থেকে ঠিকই বুঝে যাবে যে কোনো একটা বিপদ ঘটতে যাচ্ছে।’
দ্রিষিন বললেন, ‘মানে বলতে চাইছেন আমরা যদি মাটির ওপরে অদৃশ্য ইলিসিয়াম ফুল রেখে আসি, যেগুলো প্রাণীকোশের অস্তিত্ব টের পেলেই বাতাসে নিঃশব্দে বিষাক্ত পোলনিয়াম গ্যাস ছড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলো দেখে ওরা সন্দেহ করবে?’
‘অদৃশ্য ইলিসিয়াম হোক বা বাতাসে উচ্চমাত্রার ক্লোরিন রেণু ছড়িয়ে দেওয়া অদৃশ্য ন্যাক্রোবিয়াম ফুল হোক, এই মুহূর্তে না হলেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওরা ঠিকই বুঝে ফেলবে। আমাকে একটা কথা বলুন।’
দ্রিষিন জিজ্ঞাসু চোখে ক্লিওনির দিকে তাকিয়ে থাকেন। ক্লিওনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা কীভাবে প্রথম ওদের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা করছি?’
‘ওদের রকেট থেকে পাঠানো বিভিন্ন আলোকরশ্মি থেকে বুঝেছি যে ওরা মাটির ওপরে আর নীচে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।’
‘হ্যাঁ,’ দ্রিষিনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন ক্লিওনি। ‘তার মানে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। ওদের রকেটটাকে খালি চোখে দেখে কোনো কিছু আঁচ করার মতো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাদের নেই। তাই আমরা যদি খুব দ্রুত একটা ব্যবস্থা না নিই—সেটা দৃশ্যমান হোক কিংবা অদৃশ্য, একটা সময় ওরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের পেতে রাখা ফাঁদগুলোকে আন্দাজ করে ফেলবে। আর ওরা শুধু ব্যাপারটা অনুমান করেই চুপ করে বসে থাকবে না। ওরা নিশ্চিত হয়ে জানতে চাইবে যে ফাঁদগুলো ওদের জন্য কে রেখে দিচ্ছে। কারণ, যারা তাদের জন্য এমন বুদ্ধিমান ফাঁদ পেতে রাখতে পারে তারা নিশ্চিতভাবেই এখানে ওদের নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ।’
‘হ্যাঁ।’ বললেন দ্রিষিন। ‘সেই সঙ্গে এটাও ওরা খুব দ্রুত বুঝে ফেলবে যে দশ হাজার বছর ধরে মাটির নীচে থেকে এখন আমরা আলোতে অস্বস্তিবোধ করি। ওপরের এত আলোতে গিয়ে আমরা ওদেরকে আক্রমণ করতে পারব না।’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দ্রিষিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে এখন কী করা উচিত?’
‘আমাদেরকে এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে আমাদের গ্রহে ওরা কখনও আর না আসে।’
‘ওদেরকে মেরে ফেলব?’
ক্লিওনি দ্রিষিনের কথায় যারপরনাই বিরক্ত হলেন। এইরকম স্থূলবুদ্ধির একজন কীভাবে বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান হতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি মনে মনে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকেন।
‘পাগল হলেন আপনি?’ চোখ কপালে তুলে বললেন ক্লিওনি।
‘কেন, কী বললাম আমি?’ অবাক হয়ে বললেন দ্রিষিন।
‘বোঝাই যাচ্ছে যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণীদের সম্পর্কে আপনি তেমন কিছু জানেন না। যে কোনো বুদ্ধিমান প্রজাতি দলবদ্ধ, সমাজবদ্ধ। দল বা সমাজের জন্য তাদের দায়বদ্ধতা থাকে। মাটির ওপরে ওদের সঙ্গে যদি রক্তপাত ঘটানো হয়, তাহলে তাদের রকেট থেকে যদি কোনোভাবে একটা ডিসট্রেস সিগন্যাল ওরা নিজেদের গ্রহে পাঠিয়ে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে ওরা দলবল সহ চলে আসবে। তা সে ওদেরকে উদ্ধার করার জন্য হোক কিংবা প্রতিশোধের জন্য হোক। আমাদের পরিকল্পনায় এমন কিছু থাকা যাবে না যাতে আমাদের অস্তিত্ব ওদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে।’
‘আপনার পরিকল্পনাটা তাহলে কী?’
‘আমাদেরকে অন্য কোনো ভাবে ফাঁদ পাততে হবে,’ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন ক্লিওনি। ‘অদৃশ্য একটা ফাঁদ। রক্তপাতহীন একটা ফাঁদ। এমন একটা ফাঁদ যে ফাঁদের কারণে শুধু রকেটের ভেতরের ওরা না, ওদের সমস্ত জাতিটা ধ্বংস হয়ে যায়।’
‘কিন্তু কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করলেন দ্রিষিন।
‘কীভাবে সেটা অবশ্য এখনও আমি জানি না,’ বললেন ক্লিওনি। ‘আমাকে ভেবে দেখতে দিন।’
‘অবশ্যই,’ মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন দ্রিষিন। ‘আপনি সময় নিন। তবে আপনার অনুমান সত্যি হলে আমাদের হাতে কিন্তু আর খুব বেশি সময় নেই। ওরা যদি একবার বুঝতে পারে আমরা মাটির নীচে আছি, তাহলে কিন্তু আমাদের ধ্বংস নিশ্চিত।’
ক্লিওনির সঙ্গে করমর্দন করে লিফট ধরে বিজ্ঞান একাডেমির হেডকোয়ার্টারের দিকে চলে যান দ্রিষিন।
দ্রিষিন চলে যাবার পরে নরম একটা চেয়ারে আরাম করে বসেন ক্লিওনি। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন তিনি। চিন্তা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পরে পায়ের কাছে কিছু একটা নড়াচড়া অনুভব করেন তিনি। ঘুমটা ভেঙে যায় তার।
চোখ খুলে দেখেন তার পায়ের কাছে একটা বড়োসড়ো করাল ঘুর ঘুর করছে। কালো রঙের ছোট্ট বিচির মতো চোখ দিয়ে চারপাশটাকে দেখছে। নাক দিয়ে শোঁকার চেষ্টা করছে। আর গোঁফ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কোনো বিপদ আছে কী না। একদৃষ্টিতে মরার মতো পড়ে থেকে করালটার কাজকারবার দেখতে থাকেন ক্লিওনি।
কী এমন ফাঁদ বানানো যায় যেটা দিয়ে এই গ্রহ থেকে এই করাল প্রাণীটাকেই পুরোপুরি শেষ করে দেয়া যাবে? ভাবতে থাকেন ক্লিওনি। চিন্তা করতে করতে এক সময় ক্লিওনির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তার মনে হতে থাকে তিনি করালগুলোকে চিরতরে শেষ করে দেবার মতো একটা সমাধান পেয়ে গেছেন। সমাধানটিতে রক্তপাত হবে না। ফাঁদটা হবে অদৃশ্য। তিনি এক ধরনের ছোঁয়াচে মাইক্রো অর্গানিজম তৈরি করে ফেলবেন। মাইক্রো অর্গানিজমটা বাতাসে ভেসে গিয়ে করালগুলোর শরীরে গিয়ে ঢুকবে। এর পরে ধীরে ধীরে সেটা বংশ বিস্তার করতে থাকবে অন্য করালের দেহে। পুরুষ এবং নারী করাল উভয়েই অর্গানিজমটার বাহক হবে। কিন্তু অর্গানিজমটা কাজ করবে শুধুমাত্র পুরুষ করালগুলোর ওপরে। অর্গানিজমটার কাজ হবে সমস্ত পুরুষ করালকে নপুংসক করে ফেলা।
নাহ, এতে করালগুলোর পুরো কলোনি শেষ করে ফেলতে একটু দেরি হবে। ক্লিওনি ভাবতে থাকেন ব্যাপারটাকে আরও কীভাবে দ্রুততর করে ফেলা যায়। এবং তিনি ঠিক করলেন যে তিনি দ্বিতীয় এক প্রকার ছোঁয়াচে মাইক্রো অর্গানিজম তৈরি করে ফেলবেন। এই দ্বিতীয় মাইক্রো অর্গানিজমটা একইভাবে স্ত্রী করালগুলোর শরীরে ঢুকে তাকে সন্তান ধারণের অযোগ্য করে দিবে। এর ফলে করালগুলো সব নির্বংশ হয়ে যাবে, চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রাণীগুলো।
ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড উত্তেজনা অনুভব করছেন তিনি। একই উপায়ে এই দুই ধরনের মাইক্রো অর্গানিজম বানিয়ে তিনি ওই প্রাণীগুলোর জন্য ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করবেন। মাটির ওপরে বাতাসে অদৃশ্য আততায়ীর মতো ছড়িয়ে দেওয়া হবে মাইক্রো অর্গানিজমগুলোকে। ক্লিওনি রকেট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে আসা কিছু ফ্লাস্ক দেখেছেন। ফ্লাস্কগুলোকে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গেছেন ওরা এখান থেকে বাতাসের নমুনা নিতে চেষ্টা করছে। একবার যদি মাইক্রো অর্গানিজমটা ওদের ফ্লাস্কে ঢুকে পড়ে, তাহলে বাকি কাজ প্রাণীগুলো নিজেরাই সেরে ফেলবে। রকেটে করে মাইক্রো অর্গানিজমগুলোকে সুপ্তভাবে ওরা নিয়ে যাবে ওদের গ্রহে। এর পরে কাজ শুরু করবে অর্গানিজম দুটো। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রাণীগুলো। নিজেরা মরবে, ওদের মতো অন্য যেসব প্রাণীস্বত্ত্বা ওদের গ্রহে আছে, সবাইকে মারবে। এক ফোঁটাও রক্তপাত না ঘটিয়ে ওদেরকে শেষ করে দিতে এর থেকে ভালো উপায় আর কী হতে পারে!
আনন্দে ক্লিওনির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতে থাকে। তার ঠোঁট জোড়াতে ক্রুর এক ফালি হাসি লেগে আছে। লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। এখুনি কাজে লেগে যেতে হবে। বিজ্ঞান একাডেমিকে জানানোর জন্য তিনি ধীর হাতে ফোনটা তুলে নেন।
***
একটা বিশাল সমতলভূমিতে নাকটাকে তিন সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে রকেটটা।
কন্ট্রোল ডেকের একটা মনিটর থেকে বিপ বিপ করে একটা শব্দ ভেসে আসছে। দুজন নভোচারী মনিটরের দিকে তাকিয়ে সেখানে ভেসে থাকা তথ্যটা দেখল। গ্রহটার মাটির ওপরে পুরোটা দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাপিং করা শেষ হল তাদের। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল দুজনই। ব্যাপারটা আসলেও হতাশাজনক। এবারো কোথাও কিছু চোখে পড়ল না। প্রাণহীন একটা গ্রহ। অথচ বায়ুমণ্ডল একেবারেই পৃথিবীর মতো। ঠিক কী কারণে এই গ্রহে প্রাণের এক ফোঁটা স্পন্দন নেই, সেটা অনেক ভেবেও নভোচারী দুজন বের করতে পারেনি।
‘মাটির নীচে চলে গেল না তো ওরা?’ প্রথমবার গ্রহটার ম্যাপিং শেষ করে জিজ্ঞেস করেছিল একজন নভোচারী।
‘একেবারে খারাপ বলোনি,’ জবাবে বলেছিল অন্যজন। ‘পৃথিবীতে মাটির নীচে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়েও যেতে পারে ওদের। হয়তো এখানে এসে আবার সেই মাটির নীচে চলে গেছে। মানুষের অভ্যাস খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস। মানুষ নিজের দীর্ঘদিনের অভ্যাসের বাইরে কোনো কিছু করতে পারে না।’
এরপরে দুই নভোচারী মিলে গ্রহটার মাটিতে ড্রিল করা শুরু করেছিল। মাটির গভীরে কিছুদূর গিয়ে গিয়ে টেলিমেট্রি বসাতে শুরু করেছিল। কিন্তু তখনও তাদেরকে হতাশই হতে হয়েছিল। ওরা যাদেরকে খুঁজছে, তাদেরকে কোথাওই পাওয়া গেল না।
‘তাজ্জব! গেল কোথায়?’
‘আমরা কি আসলেও নিশ্চিত যে মানুষগুলো এখান পর্যন্ত এসেছিল? এমন কি হতে পারে না যে পৃথিবী থেকে এখানে আসার পথে ওরা কোনো দূর্ঘটনার স্বীকার হয়েছিল? কলোনি করতে পাঠানো সবাই হয়তো সেই দূর্ঘটনায় মারা পড়েছিল?’
‘নাহ, মনে হয় না! পৃথিবীর সঙ্গে ওদের রকেটের সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু তারপরেও ওদের গতিবিধির পুরোটা আমরা ঠিকই দেখতে পাচ্ছিলাম। ওদের রকেট থেকে পাঠানো তথ্যমতে রকেটটা ঠিকই দশ হাজার বছর আগে এখানে অবতরণ করেছিল। রকেটের ক্রায়োচেম্বারে ঘুমিয়ে থাকা সব যাত্রী, স্পার্মব্যাঙ্কের মানব ভ্রূণগুলো তখনও সব অক্ষত ছিল। কিন্তু এরপরেই ওদের সঙ্গে আমাদের সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
‘তাহলে এখন কী করব? চলে যাবো?’ নভোচারীদের একজন কিছুতেই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। তার কাছে ব্যাপারটা একধরনের পরাজয়ের মতো মনে হতে থাকে।
‘এছাড়া আর উপায় কী?’
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নভোচারীটি বলল, ‘একটা কথা মনে করেই কষ্ট হচ্ছে।’
‘কী?’
‘মানুষগুলো এখানে থাকলে ওদেরকে পৃথিবীর এখনকার অবস্থাটা জানিয়ে দিয়ে যেতে পারতাম। ওদেরকে আমরা পাঠিয়েছিলাম বাসযোগ্য এই গ্রহে আমাদের দ্বিতীয় ঠিকানা করার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে। বেচারিরা যখন পৃথিবী ছেড়েছিল, তোমার মনে আছে কী অবস্থা ছিল?’
ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকালো অন্য নভোচারীটি। সবই মনে আছে তার। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরের অংশটাতে তখন শুক্রের মতো সালফিউরিক অ্যাসিডে ভরা। বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, ফ্লোরিন আর কার্বন গ্যাস। কিছু কিছু মহাদেশের বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা ছেয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর মানুষ তখন তাদের সবকিছু ফেলে মাটির নীচে বাস করতে শুরু করে। পশ্চিমাঞ্চল থেকে একটাই রকেট ছাড়তে পেরেছিল তারা। সেই রকেটে করে একদল মানুষকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই গ্রহে। বসবাস শুরু করার জন্য। এরপরে পরিকল্পনা ছিল গ্রহটাতে থিতু হয়ে ওরা পৃথিবী থেকে একে একে মানুষগুলোকে নিয়ে এখানে পাড়ি জমাবে। সেটা আর হয়নি। তবে মানুষ বড়োই বুদ্ধিমান প্রজাতি। পৃথিবীর মানুষগুলো ঠিকই পৃথিবীকে কয়েক হাজার বছরের ভেতরে বাসযোগ্য করে ফেলল। তারা আবার মহাকাশে তাদের যাত্রা শুরু করল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এখন আগের মতোই স্বাভাবিক। মানুষগুলোর জীবনযাপনও এখন স্বাভাবিক। পৃথিবীর মানুষেরা কিন্তু নিজের আত্মীয়স্বজন ছেড়ে অনিশ্চিতের দিকে যাত্রা করে এই গ্রহে আসা মানুষগুলোর কথা ভোলেনি। তাদেরকে পৃথিবীর সুসংবাদটা দিতে এই গ্রহে বেশ কিছু অনুসন্ধানী দল পাঠিয়েছিল। নভোচারী দুজনও তেমনি একটি দল। হয়তো বা এখানে আসা শেষ দল!
‘আমরা বরং কিছু উপাত্ত আর নমুনা সংগ্রহ করে চলে যাই। যদি আবার কখনও আমাদের এখানে ফিরে আসতে হয়!’
নভোচারী দুজন ক্যানিস্টার ভরতি করে কিছু রুক্ষ মাটি, পেইনাইটের মতো দূর্লভ এবং মহাবিশ্বের সবচেয়ে দামি আকরিক, সামান্য কিছু জীবাশ্ম আর ফ্লাস্ক ভরে বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করে। এরপরে তারা বিষাদ ভারাক্রান্ত মনে পৃথিবীর দিকে যাত্রা করে।
***
ক্লিওনি যখন রকেটটাকে তাদের গ্রহ ছেড়ে চলে যেতে দেখছিলেন, তার ঠোঁটে একটা অদ্ভুত ধরনের হাসি লেগেছিল। একধরনের আত্মতৃপ্তির হাসি। খুব শিগগিরিই হয়তো তিনি গ্রহটির অধিপতি হয়ে যাবেন। আর হবেনই বা না কেন? তিনি না থাকলে এই মানুষগুলোকে বারবার কে বাঁচাতে পারত? কেউ না!
একবারের জন্য হলেও তার মাথায় যে চিন্তাটি আসেনি, তা না। মাঝেমধ্যেই চিন্তাটি তার মাথায় উঁকি দিয়ে গেছে—হতেও তো পারে রকেটটি পৃথিবী থেকে এসেছে! তবে চিন্তাটি ক্লিওনি খুব সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন, কাউকে জানাননি। এত দীর্ঘ সময় পরে তাদের কথা মনে করে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা পৃথিবী থেকে কারো আসার কথা নয়।
Tags: অষ্টম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, রুশদী সামস