পরীক্ষা
লেখক: ফ্রেডরিক ব্রাউন, অনুবাদ: সৌরভ রায়
শিল্পী: জটায়ু
‘প্রথম টাইম মেশিন, ভদ্রমহোদয়গণ।’ গর্বের সঙ্গে তার দুই সহকর্মীকে জানালেন প্রোফেসর জনসন, ‘সত্যি বলতে কী, এটি ছোট আকারের এক পরীক্ষামূলক মডেল। তিন পাউন্ড, পাঁচ আউন্সের কম ওজনের জিনিসের ক্ষেত্রেই এটা শুধু কাজ করবে। তাও অতীত বা ভবিষ্যতে বারো মিনিটের মতো দূরত্ব পর্যন্ত। তবে এটা কাজ করবে।’
ছোট আকারের মডেলটি দেখতে ওজন মাপার ছোট যন্ত্রের মতো। পার্থক্য শুধু এটার প্ল্যাটফর্মের নীচের অংশে দুটি ডায়াল আছে।
প্রোফেসর জনসন ছোট একটি ধাতব ঘনক হাতে নিলেন। ‘এই জিনিসের ওপর পরীক্ষা চালানো হবে। এটা একটা পিতলের ঘনক। ওজন এক পাউন্ড, দুই দশমিক তিন আউন্স। প্রথমে এটাকে আমি পাঁচ মিনিট ভবিষ্যতে পাঠাব।’
তিনি টাইম মেশিনটির দিকে ঝুঁকে একটি ডায়াল সেট করে দিলেন। ‘আপনাদের ঘড়ির দিকে তাকান।’ তিনি বললেন।
সবাই তাদের ঘড়ির দিকে তাকাল। প্রোফেসর জনসন ঘনকটিকে আলতো করে মেশিনের প্ল্যাটফর্মের উপর রেখে দিলেন। জিনিসটা গায়েব হয়ে গেল।
কাঁটায় কাঁটায় ঠিক পাঁচ মিনিট পর জিনিসটা আবার ফিরে এল।
প্রোফেসর জনসন জিনিসটাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নিলেন। ‘এবার পাঁচ মিনিট অতীতে পাঠাব।’ প্ল্যাটফর্মের অন্য ডায়ালটি সেট করলেন তিনি। ঘনকটিকে হাতের মধ্যে ধরে তিনি তার ঘড়ির দিকে তাকালেন। ‘তিনটে বাজতে ছ-মিনিট বাকি আছে। আমাকে এখন এর মেকানিসম চালু করে দিতে হবে— ঘনকটিকে প্ল্যাটফর্মে রাখার মাধ্যমে— ঠিক তিনটের সময়। তাহলে, ঘনকটা আমার হাত থেকে গায়েব হয়ে যাবে, হাজির হবে প্ল্যাটফর্মের ওপর। তিনটে বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে এটা ঘটবে, আমি সেখানে জিনিসটা রাখার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে।’
‘তাহলে, জিনিসটাকে আপনি সেখানে কীভাবে রাখবেন?’ তার এক সহকর্মী জিজ্ঞেস করে বসলেন।
‘এটা সম্ভব। আমি যখনই আমার হাত মেশিনটার কাছে নিতে থাকব, জিনিসটা প্ল্যাটফর্ম থেকে গায়েব হয়ে আমার হাতে চলে আসবে। যেন আমি তিনটের সময় জিনিসটাকে সেখানে রাখতে পারি। দয়া করে দেখতেই থাকুন না কী হয়।’
ঘনকটি তার হাত থেকে গায়েব হয়ে গেল।
আবির্ভূত হল টাইম মেশিনের প্ল্যাটফর্মের ওপর।
‘দেখলেন তো? এটা ওখানে আছে। আমি এটাকে ওখানে রাখার পাঁচ মিনিট আগেই আছে।’
তার অন্য সহকর্মী ভুরু কুঁচকে ঘনকটির দিকে তাকালেন। ‘কিন্তু,’ তিনি বললেন, ‘আপনি ওখানে রাখার পাঁচ মিনিট আগেই জিনিসটা ওখানে চলে এসেছে। আপনি যদি এখন মন বদলে ফেলেন? কী হবে যদি তিনটের সময় জিনিসটাকে ওখানে না রাখেন? তাহলে কি কোনও ধরনের প্যারাডক্সের সৃষ্টি হবে না?’
‘দারুণ আইডিয়া,’ প্রোফেসর জনসন বললেন, ‘আমি তো এ ব্যাপারে ভাবিইনি। এটা করলে দারুণ হবে। আমি জিনিসটাকে রাখব না…’
তেমন কোনও প্যারাডক্সের সৃষ্টি হল না। ঘনকটা আগের মতোই রইল।
কিন্তু বাদবাকি মহাবিশ্ব, প্রোফেসররা এবং সকলে, গায়েব হয়ে গেল।
Tags: অনুবাদ গল্প, জটায়ু, ফ্রেডরিক ব্রাউন, ষষ্ঠ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, সৌরভ রায়