ভিডিয়ো গেম রিভিউ – সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭
লেখক: অর্ণব শেঠ
শিল্পী: ইন্টারনেট
CYBERPUNK 2077
Genre: RPG
Publisher: CD Projekt
Release Date: 10 December, 2020
Platform(s): Windows, PlayStation, Xbox
সাইবারপাঙ্ক নামটা কল্পবিজ্ঞান অনুরাগীদের কাছে আজ আর নতুন কিছু নয়। ১৯৭০-৮০-র দশকে প্রযুক্তিবিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ও গ্লোবালাইজেশনের ফলশ্রুতি হিসেবে কল্পবিজ্ঞানের এই উপধারাটির আবির্ভাব। সাইবারপাঙ্কের মূলকথা হল মানুষের দিনযাপনের প্রতি পদে জালের মতো বিছিয়ে থাকা ভবিষ্যত প্রযুক্তি। তা যেমন হতে পারে অত্যাধুনিক যন্ত্রসভ্যতা, রোবোটিক্স, আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সাইবারস্পেস হওয়াও সম্ভব।
কল্পবিজ্ঞানের এই উপধারাটিকে সরাসরি ভিডিয়ো গেমটির শিরোনামে ব্যবহার করেছে সিডি প্রজেক্ট (CD Projekt)। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ২০৭৭ সালের এক ভবিষ্যত প্রযুক্তিনির্ভর জগতের গল্প বলবে গেমটি। আট বছরের দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে ওঠা এই গেমের মূলগল্প একটা শহরকে কেন্দ্র করে— নাইট সিটি(Night City)। যে শহর কর্পোরেট জগতের রাজনীতির জাঁতাকলে পিষ্ট। প্রশাসন ও প্রশাসক প্রায় অস্তিত্বহীন।
নাইট সিটি— দিন অপেক্ষা রাতেই তার জৌলুস বেশি। প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো আছে দারিদ্র্য, অপরাধ জগতের রমরমা, সাইবারসাইকোসিস (Cyberpsychosis)-এর মতো প্রযুক্তিগত রোগ ও রোগী। অত্যাধুনিক ড্রোন, কমব্যাট রোবট, UAV (Unmanned Aerial Vehicle), AI-চালিত গাড়ি ও ট্যাক্সি সার্ভিস কী নেই এই শহরে! মানুষ নিজের প্রয়োজনমতো যন্ত্রাংশ (Cyberware) যোগ করতে পারে নিজের শরীরে। তার জন্য ডাক্তারের বদলে আছে রিপারডক্ (Ripperdoc)। তথ্য দেওয়া নেওয়ার জন্য কানের পিছনে আজকের পেনড্রাইভের মতো লাগিয়ে নিতে পারে ডেটা সার্ড (Data shard)।
গল্পের নায়ক ভি (V)— একজন মার্সেনারি (Mercenary)। টাকার বিনিময়ে ভালোমন্দ সবরকম কাজই সে করে। নিজের পছন্দমতো চরিত্রটির শারীরিক ও মানসিক গঠন তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ আছে গেমে। আছে চরিত্রটির পশ্চাৎপট অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ড বেছে নেবার স্বাধীনতা।
মূল কাহিনি শুরু হয় যখন প্রধান কর্পোরেট সংস্থা আরাসাকা (Arasaka)-র তৈরি একটা বায়োচিপ্ (Biochip) চুরি করতে যায় ভি। আরাসাকা পরিবারের একটি গোপন রহস্য সে জানতে পেরে যায়। হারাতে হয় প্রিয় বন্ধু জ্যাকিকে। দুর্ঘটনাবশত সেই বায়োচিপটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়ে যায় ভি-র মাথার মধ্যে। এরপরে গোটা গল্পটা জুড়ে ভি খুঁজে বেড়ায় মাথা থেকে বায়োচিপ বের করার কৌশল। আলাপ হয় নানা চরিত্রের সঙ্গে। উদ্ঘাটন হয় অনেক রহস্যের অনেক রাজনীতির। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা— কী নেই এই গল্পে! আর সবার উপরে রয়েছে বিভিন্ন ভবিষ্যত প্রযুক্তি।
যে কোনও Role-playing গেম (RPG)-এর মতোই সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭-এ কমব্যাট অপেক্ষা গল্প ও সংলাপই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। অনবদ্য চরিত্রনির্মাণ ও কণ্ঠদান, সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আবহসঙ্গীত। মনোমুগ্ধকর দৃশ্যায়ন— অনেক সময় মনে হতে পারে এ যেন গেম নয় সিনেমা! সংলাপের তারতম্যে বদলে যায় গল্পের গতিপ্রকৃতি। এমনকি গল্পের হতে পারে সাতটি পৃথক পরিসমাপ্তি— ভাবা যায়!
এত কিছুর পরেও এই ভিডিয়ো গেমকে একদম নিখুঁত বলা যায় না। একাধিক বাগ্ (Bug), কমব্যাট সিস্টেমে সাবলীলতার অভাব, ক্ষেত্রবিশেষে প্রযুক্তির আকাশপাতাল পার্থক্য চোখে পড়ার মতো।
পরিশেষে বলা যায়, যারা অত্যধিক লড়াই, গোলাগুলি পছন্দ করে তাদের এই গেম ভালো নাও লাগতে পারে। যারা কল্পবিজ্ঞান ভালোবাসে অথবা একটা ভালো গল্প খোঁজে— এই গেম তাদেরই জন্য। তারা একবার ডুব দিতেই পারে ২০৭৭ সালের এই কল্পজগতে।
Tags: অর্ণব শেঠ, ভিডিয়ো গেম রিভিউ, ষষ্ঠ বর্ষ প্রথম সংখ্যা