লিমেরিকে আসিমভ
লেখক: কল্পবিশ্ব ইভেন্টের লেখকেরা
শিল্পী: সৌরভ ঘোষ
ফেসবুকের কল্পবিজ্ঞান গ্রুপে বসেছিল লিমেরিক অনুবাদের আসর। কিংবদন্তি কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজাক আসিমভের লেখা লিমেরিক অনুবাদ করেছিলেন গ্রুপের সদস্যরা। সেই সব অনুবাদ এবার তুলে ধরা হল কল্পবিশ্বের পাঠকদের সামনে। চাইলে আপনারাও নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
লিমেরিক:: ১
আসিমভ বেশ কিছু লিমেরিক শার্লক হোমসকে নিয়ে লিখেছিলেন— তার একটা রইল, দেখি এটা নিয়ে আমাদের কবিরা কী করেন।
The Adventure of the Sussex Vampire
There’s a beautiful wife from Peru
Whose behavior has Bob in a stew.
He tells Holmes that she’s wild;
That she’s bitten their child.
Can it be we’ve a vampire in view?
—Isaac Asimov
দিগন্ত ভট্টাচার্য
পেরু থেকে এল এক চাঁদপানা বউ যে,
বর তার বব ভাই কলমে ও কাগজে;
ছেলে রাতে কাঁদে তার,
বউ কি ভ্যাম্পায়ার?
সমাধান আছে শুধু হোমসেরই মগজে!
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জি
সুন্দরী বউটি সে ছিল পেরুবাসিনী,
কেঁদে তবু বলে বব, ‘ও সর্বনাশিনী!
যেই কোলে ওঠে ছেলে,
কামড়ে রক্ত খেলে,
হোমসবাবু দিন বলে ও কি তবে পিশাচিনী?’
কৌশিক মজুমদার
পেরু থেকে আসা এক সুন্দরী বালা
কেন যে রক্ত খায়? এ যে বড় জ্বালা।
তার স্বামী ভয় পায়,
“ও ছেলেকে কামড়ায়।
হোমসবাবু এ কি তবে মহিলা ড্রাকুলা?”
অদিতি সরকার
পেরুদেশ থেকে এল সুন্দরী বউ গো
হালচাল দেখে তার বব হয়রান তো
হোমসদাকে ডেকে বলে
রোজ আদরের ছলে
খোকাকে কামড়ে খায় ভ্যাম্পি জননী গো!
ঋজু গাঙ্গুলী
পেরু থেকে এল বউ, রূপে-গুণে পাকা সে,
তবু তাকে দেখে বব হয়ে গেছে ফ্যাকাশে।
“এ কী জ্বালা?” কেঁদে কয়,
“ছেলেকে সে কামড়ায়!”
কেস নিয়ে এল তাই হোমসের সকাশে।
সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়
পেরুসুন্দরী কান্তা তাহার,
স্বভাবেতে জাগে ভয় অনিবার।
সরলাক্ষে করে হোম আহ্বান,
পুত্র রুধির মাতা করে পান!!
সাসেক্স ডাকিনী জাগিছে আবার?
সৌম্য মুখার্জি
পেরু থেকে সুন্দরী বউ ববের বাড়ি এসে
এমন কাণ্ড বাধায়, গেছে বব-বেচারা ফেঁসে।
“বউটা আমার নট অলরাইট,
খোকার গায়েই বসায় বাইট,
শার্লকদা, ফাঁসলাম কি ভ্যাম্পায়ারের কেসে?”
লিমেরিক:: ২
আসিমভের আরও একটা শার্লকিয়ান লিমেরিক
The Adventure of the Naval Treaty
—Isaac Asimov,
Poor old Phelps faces prospects of doom
And yet all he can do is fume.
The pact’s gone- He was sentry-
There’s no sign of an entry
But our Holmes can decode the locked room
অদিতি সরকার
ওই বুড়ো ফেল্পস খুড়ো মাথায় পড়েছে বাজ
ওরে বাবা কী যে হবে ভেবে বুড়ো হাঁসফাঁস
চুক্তি গায়েব হায়-বুড়ো ছিল পাহারায়
অথচ তালাটি আছে পরিপাটি সজ্জায়
হোমস ছাড়া সমাধান কে-ই বা করবে আজ।
কৌশিক মজুমদার
পার্সি ফেল্পসের ভাগ্যের দোষ
রেগে তাই সে বেচারি করে ফোঁস ফোঁস
চুক্তি গায়েব হল
কী করে তা উবে গেল
লকড রুমে শার্লক গলালেন Nose.
সৌম্য মুখার্জি
হতভাগা ফেল্পসের মারা যাবে ড্যাশ;
রাগ ছাড়া করবারও কিছু নেই, ব্যাস।
চুক্তিটি চুরি গেছে তার প্রহরায়-
কোন শালা ঢুকেছিল কীভাবে সেথায়-
শার্লকবাবু বলো, দেব মোটা ক্যাশ।
ঋজু গাঙ্গুলী
ফেল্পসের কপালখানা দেখছি বেজায় মন্দ।
রেগে আগুন হলেও সবে তারেই করে সন্দ!
তার জিম্মা থেকেই কিনা চুক্তিপত্র হাওয়া,
অন্য কেউ তো করেনি ওই ঘরে আসাযাওয়া!
হোমস ছিলেন, তাই না ঘুচল বন্ধ ঘরের ধন্দ!
অনির্বাণ বিশ্বাস
মন্দ কপাল ফেল্পস ভায়া জ্বলছে দারুণ রাগে
রেগেমেগে ভাবছে যদি জানতে পেতেম আগে
চুক্তিখানা হারাল যেই রাতে
বন্ধ ঘরে সেই ছিল পাহারাতে,
শেষমেশ হোমস আনে রহস্য বাগে।
সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়
শমন ছায়ার আড়ে ফেল্পস মন্দভাগ্য,
শঙ্কা মনেতে তার করেছে সে রাগ গো!
চুক্তি মুক্তি পেল ছিল সে পাহারা।
দুর্ভেদ্য সেই ঘরে এল যে কাহারা?
সরলাক্ষ বুদ্ধিতে শেষে খুলে যায় ভাগ্য।
দিগন্ত ভট্টাচার্য
ফেল্পস কেন খেল বাঁশ, ধাঁধা বড় জোরদার
ক্ষেপে গিয়ে খোঁড়ে মাথা, শাপ দেয় বারবার;
ছিল সে-ই দারোয়ান
তারপরও চুরিখান-
রহস্যভেদ? সে তো হোমসেরই কারবার!
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জি
কপালদোষে ফেল্পিখুড়োর ঘুম গিয়েছে উড়ে,
রাগের চোটে দিক সে যতই চিলচিৎকার জুড়ে,
বন্ধ ছিল দরজা যে, তাও,
তার পাহারায় দলিল উধাও,
হোমস আছেন, রক্ষে সেটাই, নেই সমাধান দূরে!
রূপসা বন্দ্যোপাধ্যায়
চুক্তি চুরির সময় আমার সেই ঘরেতেই বসা
কাল হয়েছে! বললেন ফেল্পস, হায় রে শনির দশা!
সবাই দেবে আমায় যে দোষ,
দয়া করুন মিস্টার হোমস!
বাঁচান আমায়! বুদ্ধিটাকে করুন মাজা ঘষা।
লিমেরিক:: ৩
Said an ovum one night to a sperm,
“You’re a very attractive young germ.
Come join me, my sweet,
Let our nuclei meet
And in nine months we’ll both come to term.”
—Isaac Asimov, Lecherous Limericks
সৌম্য মুখার্জি
সেই রাতে ডিম্বাণু শুক্রাণুটিকে
বলে কিনা, “হ্যান্ডসাম, এসো এই দিকে,
এসো মিলি এক সুরে
পাঁউরুটি ঝোলাগুড়ে,
ন’মাসের শেষে গোল পেনাল্টিকিকে।।”
ঋজু গাঙ্গুলী
ডিম্বাণু বলে ওঠে, “হ্যাঁ হে শুক্রাণু,
রূপ তেরা মস্তানা, কাছে এসো জানু!
মিলে যাক আমাদের দেহ আর দিল,
ন’মাসেই তাল হবে আমাদের তিল!”
কৌশিক মজুমদার
ডিম্বাণু বলে ওগো শুক্রাণু শোনো
তোমা হেন সুন্দর দেখিনি কখনও
মিলিবে জিনেতে জিন
মিয়োসিস। সে কী সিন—
নয় মাস বাদে পাবে ফলাফল জেনো।
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
সেই রাতে হেসে কয় ডিম্বাণুদেবী—
কই হে শুক্রাণু, কাছে এসো দিকি!
তুমি বাওয়া ধড়িবাজ
মনে হাসি, মুখে লাজ
নয় মাস পরে চাই ফুটফুটে বেবি!
সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়
স্ত্রী বীজ একদা কহিল পুং বীজে,
হেরি বিধি সুন্দর তোমারেই সৃজে।
কাছে এসো হে প্রিয়,
দোঁহারি মিলন লাগি
নবম মাসেতে শেষে প্রাণবায়ু রবে জাগি।
অদিতি সরকার
এক রাতে ডিম্বাণু ডেকে বলে হ্যান্ডসাম ছটফটে শুক্রাণুটিকে
“এই যে তরুণ হিরো টুক করে এসো দেখি একবার আমার এদিকে
দুজনাতে ভালোবেসে
শাঁসেখোলে মিলেমিশে
দেখে নিও মাস নয় পরে ঠিক স্যাট করে নামাব রিপোর্ট কার্ডটিকে।”
দিগন্ত ভট্টাচার্য
লাজরাঙা হয়ে নতমুখী এক ডিম্বাণু ডেকে কয়
শুক্রাণু তুমি কেবলই আমার, আমি কি তোমার নয়?
ওগো প্রিয় মোর, খোলো বাহুডোর
এই রাত কেন হতে দাও ভোর?
বাঁধা পড়ে মোরা একপ্রাণ হব, নেই কোনও সংশয়!
রাকেশ কে দাস
একদা নিশীথে ডাকি শুক্রাণুকে,
ডিম্বকোষ কহে ‘ওগো’ আশ্লেষ-সুখে।
‘মিলাইতে কোষ-অন্তর
এসো, শ্যামল গুণধর
পরিণতি পাবে দেখো ন’মাসের মুখে।’
অনির্বাণ বিশ্বাস
ডিম্বাণু এক শুক্রাণুকে বললে ডেকে, বেবি—
দেখতে তুমি হ্যান্ডু ভারী, লাগছে তোমায় হেভি।
এসো, বাসা বাঁধো দিল-এ
মোরা দুটি কোষে মিলে,
নয় মাস প্রেম করে, আনি দ্যাবা দেবী।
অভীক সরকার
কহিলো শুক্র অণু উচ্চ করি শির
“শুনো তবে ডিম বানো, রাখো মতি ধীর।
সিভিল ম্যারেজ হবে,
সেকুলার কবে সবে,
নয় মাস বাদে প্রেম জমে হবে ক্ষীর।
লিমেরিক:: ৪
There was once was a girl who drank gin.
That isn’t too bad to begin,
But reiteration
Shows a high correlation
With behavioral lapses called sin.
—Isaac Asimov
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জি
ছিল সে এক ধন্যি মেয়ে বাসত খেতে ধেনো,
নয় মোটেও দোষের সেটা, দিব্যি ক’রে জেনো,
পরন্তু তার স্বভাবদোষে,
পায়ের নীচে পড়ল খসে—
চরিত্র, আর করল না সে কিচ্ছুটি ‘মেন্টেন’ও!
ঋজু গাঙ্গুলী
জিনের মজায় মজল যে এক ললনা,
শুরুতে সে বোঝেনি তার ছলনা।
কিন্তু বোতল শেষে,
ফেঁসে প্রচুর কেসে,
বলল কেঁদে, “এমন হবে, আগেই কেন বলো না?”
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
এক যে ছিল কন্যে, খেত সে মদ্য
এভাবেই শুরু করি আমার এ পদ্য।
ক্রমে পানাসক্তি মাথায় চড়ে,
তার মনুষ্যত্ব পিছলে পড়ে—
হয় চরিত্রস্খলন, তারে পাপ কয় অদ্য।
সৌম্য মুখার্জি
খুকুমণি খেয়েছিল ‘বাংলা’ ঢুকুঢুকু,
প্রথম দিকে ক্ষতি তাতে হয়নি এতটুকু।
পেগের পরে চড়েছে পেগ
চড়ল মাথায় সেক্সি আবেগ
গুণাহ করে এখন শেষে হাসপাতালে খুকু।।
দিগন্ত ভট্টাচার্য
এক যে ছিল মেয়ে, সে মদটি খেত চেয়ে,
‘ঈপ্পি’ বলে লম্ফ দিত জিন-এর গেলাস পেয়ে!
অতি আসবসেবন-ফলে
তার লিভারই গোলমেলে,
এলএফটি-র রিপোর্ট দেখে উঠল ঘেমে-নেয়ে!
অদিতি সরকার
এককালে ছিল এক জিনপায়ী তরুণী
শুরুতে ব্যাপারটাকে কেউ তত ধরেনি
কিন্তু তা রোজই হলে
কাণ্ডটা গোলমেলে
চরিত্র হড়কিয়ে হল যা, তা করুণ-ই।
Tags: আইজাক আসিমভ, পঞ্চম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, লিমেরিক, সৌরভ ঘোষ