ভারতীয় বিজ্ঞানের বিস্মৃত স্বধর্ম ও সত্যজিৎ রায়
লেখক: সিদ্ধার্থ ঘোষ
শিল্পী: জটায়ু
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু একটা মাত্র গল্প লিখেছেন এবং সেটা এস.এফ. বা সায়েন্স ফিকশন। আর সত্যজিৎ বাংলায় প্রথম যে গল্পটা লেখেন সেটা এস.এফ.। বাংলার কৃতী সাহিত্যিকদের মধ্যে দ্বিতীয় জন নেই যিনি সায়েন্স ফিকশন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। জগদীশচন্দ্র ও সত্যজিতের মধ্যে এস.এফ. সম্পর্ক আরও বেশ কিছু সূত্রে গ্রথিত। ছদ্মনামে লেখা জগদীশচন্দ্রের গল্পটি ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ গ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই পুরস্কারের প্রবর্তক, সুগন্ধী নির্মাতা ও যন্ত্রবিশারদ এইচ. বসু। এইচ. বসু অর্থাৎ হেমেন্দ্রমোহনের সঙ্গে জগদীশচন্দ্র ও সত্যজিতের পারিবারিক সম্পর্কের কথা আগে বলে নেওয়া উচিত। সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোরের বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এইচ. বসুর। আর জগদীশচন্দ্রের দুই বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হেমেন্দ্রমোহনের দুই কাকার, স্বনামধন্য আনন্দমোহন ও মোহিনীমোহনের। এইচ. বসু মারা যান সত্যজিতের জন্মের বেশ কয়েক বছর আগে, কিন্তু এই বসুবাড়ির বিজ্ঞান ও কারিগরি চর্চার পরিবেশ বালক বয়সেই সত্যজিৎকে আকৃষ্ট করেছিল। এইচ. বসুর পুত্র মুকুল, সত্যজিতের মুকুল কাকা সে-যুগের বিখ্যাত সাউন্ড-রেকর্ডিস্ট। সত্যজিৎ লিখেছেন, তাঁর মুকুলকাকা “পড়াশুনা খুব বেশি দূর করেননি, কিন্তু যন্ত্রপাতির অসাধারণ মাথা। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জগদীশ বোসের সূক্ষ্ম সব গবেষণার যন্ত্র কলকাতায় একমাত্র উনিই সারাতে পারতেন।” বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ও প্রযুক্তিবিদ মুকুল বসুর ছায়া পড়েছে প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রের ওপর। প্রোফেসর শঙ্কু কেন গিরিডিতে গবেষণাগার খুললেন, সেটাও জানা দরকার। জগদীশচন্দ্র, এইচ. বসু ও রায় পরিবারের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে গিরিডি। পিতা সুকুমারের সঙ্গে বছর দুয়েক বয়সে গিরিডি ভ্রমণের যে স্মৃতিটুকু সত্যজিৎ পরিণত বয়সে লিপিবদ্ধ করেন, সেটাও আকর্ষণীয়। বুড়ো চাকর প্রয়াগ বালি খুঁড়ে জল বার করে সত্যজিৎকে অবাক করেছিল। শঙ্কুর ভৃত্যের নামও কাছাকাছি— প্রহ্লাদ। আর মাটির নীচ থেকে জল বার করার ব্যাপারটাকে ঘিরেই তো ‘এলিয়েন’-এর মূল টেনশন রচিত হয়েছে। গিরিডিতে রায় পরিবারের নিজের বাড়ি না থাকলেও, উপেন্দ্রকিশোরের সময় থেকেই আত্মীয় বা পরিজনদের বাড়িতে বারবার উঠেছেন তাঁর। লাল কুঠি নর্থ ভিউ, রুবি লজ, হোম ভিলা বা এইচ বসুদের রোজ ভিলায়। হোম ভিলায় বসে সুকুমার ‘হ য ব র ল’ লিখেছিলেন তাঁর দিনান্তবেলায়। জীবনের শেষ পর্বে জগদীশচন্দ্রও শীতকালীন অবকাশযাপনে প্রায়ই গিরিডি যেতেন। গিরিডিতে রায় বাহাদুর এ.এন. মিত্রের বাড়িতে জগদীশচন্দ্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৩৭-এর ২৩ নভেম্বর। সুতরাং গিরিডিতে বিনা কারণে শঙ্কু তাঁর ‘আর অ্যান্ড ডি’ সেন্টার স্থাপন করেননি।
এস.এফ চরিত্র হিসেবে শঙ্কুর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ভারতীয় বিজ্ঞানের জনক জগদীশচন্দ্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আছে। শঙ্কু একাধারে বিজ্ঞানী ও কারিগর। যন্ত্র নির্মাণে ও উদ্ভাবনে দক্ষ। জগদীশচন্দ্রও তাঁর গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় যন্ত্রপাতি নিজেই তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন তথাকথিত ‘অশিক্ষিত’ স্থানীয় কারিগরদের দিয়ে। আজকের দিনের প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা এ-যুগের মালেক, পুঁটিরাম, বারিক, জামশেদ বা রজনীকান্ত প্রমুখকে দিয়ে তাঁদের ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করিয়ে নেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। ডলার ও ইনডেন্ট নির্ভর আধুনিক ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি, স্বয়ং ইন্সট্রুমেন্ট নির্মাণকারী গবেষক জগদীশচন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
‘ভারতীয় বিজ্ঞান’ কথাটা অনেকের কাছেই আপত্তিকর। ‘বিজ্ঞান’-এর দেশ-বিভাগে তাদের আপত্তি। কিন্তু ‘ভারতীয় বিজ্ঞানী’ বলে যে কিছু মানুষজন থাকতে পারে, সে-বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা কঠিন। আর ভারতীয় মানুষ হলে তার স্বাদেশিকতা বোধ থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে, পরাধীন দেশের মানুষ হলে। আধুনিক বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ভারতকে যিনি প্রথম সম্মানের আসনে বসিয়েছিলেন, সেই জগদীশচন্দ্রের পক্ষে তাঁর গড়া যন্ত্রপাতির দেশি নাম রাখাটাই স্বাভাবিক। চেষ্টার ত্রুটি করেননি তিনি ‘কুঞ্চনমান’, ‘শোষণমান’ বা ‘বুদ্ধিমান’ ইত্যাদি তার সাক্ষী। শঙ্কুর তৈরি অসামান্য কিছু উদ্ভাবনও একইভাবে ভাষার গৌরব বহন করছে— বটিকা ইন্ডিকা, তৃষ্ণাশক, জৃম্ভণাস্ত্র ইত্যাদি।
আধুনিক বিজ্ঞান-জগতের নায়কদের মধ্যে জগদীশচন্দ্র প্রথম ভারতীয় চরিত্র, আর সায়েন্স ফিকশনের দুনিয়ায় ভারতীয় বিজ্ঞানের আর্কিটাইপ প্রোফেসর শঙ্কু। শঙ্কুর আবির্ভাবের লগ্ন থেকেই ব্যাপারটা স্পষ্ট। ১৯৬১-তে ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’ যখন ‘সন্দেশ’-এ ছাপা হচ্ছে, ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ পাড়ি দেওয়ার সুবাদে ‘বিজ্ঞান’ তখন স্ফীতগর্ব। রুশ-মার্কিনি মহাকাশ বিজয়ের ঠান্ডা লড়াই শুরু হওয়ার আগেই শঙ্কুর তৈরি রোবট বিধুশেখরের কণ্ঠে তখন দেশপ্রেমের গানের (প্যারোডি) মাধ্যমে এই (ধরনের) অভিযানের যে জাতীয়তাবাদী অহমিকা থাকে— তার ইঙ্গিত বহন করে। তাকে ব্যঙ্গ করে।
ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের পর ইংরেজ উপনিবেশ হিসেবে ভারতের বিচিত্র অভিজ্ঞতারই যেন মূর্ত প্রতিনিধি শঙ্কু। আমরা জানি, উনিশ শতকে স্টিমার, রেলওয়ে ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুবাদে একদিক থেকে ভারত যেমন বাষ্পীয়শক্তি চালিত যন্ত্রযুগে প্রবেশ করে, তেমনই ভারতের প্রাচীন হস্তশিল্প ব্যবস্থারও বিনাশ সূচিত হয়। আসলে আধুনিক যন্ত্রকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল শুধু রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করতেই। ভারতের আকাশে স্টিম-এজের ধোঁয়া বিভ্রান্তিকর। নতুন শিল্পকে তা উৎসাহিত তো করেইনি, উলটে বিনাশের পথ তৈরি করেছে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের। আধুনিকতম প্রযুক্তির স্পর্শে এসেও এই যে শিল্প-বিনাশ, ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন— তার সম্বন্ধে শঙ্কু এবং সত্যজিতের এস.এফ.-এর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শঙ্কুর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিবিধ উদ্ভাবন বা নির্মাণের বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকেই ধরা পড়ে। আধুনিকতার সঙ্গে ভারতীয় হস্তশিল্প সংক্রান্ত ঐতিহ্য কীভাবে সেখানে জড়িয়ে আছে। শঙ্কুর তৈরি বিধুশেখর বা রোবুর চেয়ে ক্ষমতাধর ও বুদ্ধিমান রোবট কেউ তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, রোবুর ট্যারা চোখ। ট্যারা চোখই জানিয়ে দিচ্ছে, এই যন্ত্রমানুষের জন্ম দিয়েছে এক হস্তশিল্পী। হস্তশিল্পের সঙ্গে যন্ত্রশিল্পে মিলন ঘটিয়েছেন শঙ্কু— যেটা ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের কাছে শিক্ষামূলক। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা যুক্ত করেই এগোতে হবে। জগদীশচন্দ্রের সারা জীবনের সাধনাও একই দর্শনজাত। শঙ্কু নিজেই বলে গেছেন, “আমার তৈরি জিনিসগুলোর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী বা হিতসাধক— যেমন অ্যানাইহিলিন বা মিরাকিউরল ওষুধ বা অমনিস্কোপ বা মাইক্রোসোনোগ্রাফ বা স্মৃতিউদঘাটক যন্ত্র রিমেমব্রেন, এর কোনওটাই কারখানায় তৈরি করা যায় না। এগুলো সবই মানুষের হাতের কাজ…” শঙ্কুর এই উক্তির মধ্যে এক সেমিয়োলজিক্যাল ইঙ্গিত রয়েছে। বিজ্ঞানী তথা প্রযুক্তিবিদ রূপে শঙ্কু হিতসাধক জিনিসগুলোকেই শক্তিশালী বলে গণ্য করেন।
এই ‘হিতসাধক’ শব্দটিকে ঘিরে শঙ্কুসহ সত্যজিতের এস.এফ.-এর যাবতীয় নায়ক-চরিত্রের আবির্ভাব। কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে বললে, বিজ্ঞানের সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের সম্পর্কটাকেও এই সুবাদে একবার পরখ করে নেওয়া হয়। নিউটনের থার্ড ল’ ভারত-পাকিস্তান ভেদাভেদ মানে না। কিন্তু এই থার্ড ল’ অবলম্বনে জাত প্রযুক্তি বা প্রকৌশলের বা তার প্রয়োগের পেছনে ব্যক্তির বা সমষ্টির, মানুষের বা রাষ্ট্রের স্বার্থ কাজ করবেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগৎ দেশ-নিরপেক্ষ, নৈতিকতা-নিরপেক্ষ। কিন্তু এই দেশ ও নৈতিকতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করার সুযোগ রয়েছে বলেই সাহিত্যের একটা ধারা (genre) রূপে সায়েন্স ফিকশনের সার্থকতা। কোন সূত্রকে কোথায় ‘অবিজ্ঞানী’ সত্যজিৎ লঙ্ঘন করেছেন, তা নিয়েও চর্চা কম হয়নি। তার একটা কারণ অবশ্যই ঈর্ষা— লেখক সত্যজিতের অতুলনীয় সাফল্য। আর দ্বিতীয় কারণ, এখনও অনেক সমালোচক এস.এফ.-এর সঙ্গে ‘পপুলার সায়েন্স’-এর তফাত বোঝেন না। এস.এফ. লেখকের কোনও দায় নেই বিজ্ঞানের অ-আ-ক-খ পাঠদানের। এস.এফ. নামক সাহিত্যিক উপকরণের বিভব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না-থাকার অভিযোগে সত্যজিৎকে অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃতর প্রবক্তারূপে অবৈজ্ঞানিক লেখাজোখার জন্যও দায়ী করা হয়েছে। অথচ কেউ খেয়াল করেননি, ‘শুদ্ধ’ বিজ্ঞানচর্চায় যে-মূল্যবোধের কোনও স্থান নেই, সেইটিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই প্রয়োজন হয় নকুড়বাবুর ‘অলৌকিক’ সব ক্ষমতার। সেই সঙ্গে এটাও লক্ষ করার বিষয়, সত্যজিতের গল্পে গ্রহান্তরের আগন্তুকদের অলৌকিক প্রতিভা বঙ্কুবাবু বা ‘দি এলিয়েন’ চিত্রনাট্যের হাবার মতো সরল অথচ পর্যুদস্ত মানুষের হিতার্থে নিয়োজিত হয়। তেমনই তাঁর গল্পে সাদামাটা মানুষই শুধু অর্জন করার সুযোগ পায় অলৌকিক ক্ষমতা।
‘দি এলিয়েন’ এবং তার আগে-পরে রচিত বিভিন্ন উপাখ্যানে সত্যজিৎ গ্রহান্তরের আগন্তুকদের নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। পৃথিবীর চেয়ে উন্নততর প্রযুক্তিবিদ্যার অধিকারী বলেই তারা নিশ্চয় আমাদের গ্রহে এসে পৌঁছোতে পেরেছে। তা সত্ত্বেও তারা কিন্তু আমাদের প্রযুক্তিবলে পরাস্ত করে, ইংরেজ শাসনাধীন ভারতের মতো কোনও উপনিবেশে পরিণত করতে চায়নি। এমনকী, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর ইতিহাসকে তারা পৃথিবীর মানুষের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কোনও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবও জাহির করেনি। ‘মহাকাশের দূত’ গল্পের আগন্তুকরা মানবসমাজের খাদ্য, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি বিবিধ সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিল। কিন্তু কোনও তৈরি সমাধান দিয়ে যায়নি তারা। সত্যজিতের প্রথম বাংলা গল্প, ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’র মধ্যেই নিহিত ছিল ‘এলিয়েন’-এর ভ্রূণ। কিন্তু দার্শনিক স্তরে ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ থেকে ‘এলিয়েন’ একটা বিশাল উত্তরণ। ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ গল্পে তিনি গ্রহান্তরের প্রাণীকে মহান করেছিলেন। গল্পে ওই প্রাণীই দাতা। আর মানুষ বন্ধুবাবু সেই দান গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ‘দি এলিয়েন’ চিত্রনাট্যে সত্যজিৎ মহান করেছেন এই পৃথিবীর বালক হাবাকে। এলিয়েন হাবাকে কোনও উপহার দিতে পারেনি। বরং হাবা-ই এলিয়েনকে ‘অনেক’ দিয়েছে। এইভাবেই এলিয়েন হাবার কাছে ঋণী হয়ে ওঠে। এই কারণেই ‘দি এলিয়েন’ চিত্রনাট্যে সত্যজিতের মানব-ভাবনায় এক অমোঘ উত্তরণ ঘটেছে। গ্রহান্তরের বন্ধু অ্যাং-এর কাছ থেকে বঙ্কুবাবু সুপরামর্শ পান। আর এলিয়েন শেষ পর্যন্ত যখন পৃথিবী দর্শন করে ফিরে যায়, তার সঞ্চয়ের মধ্যে প্রযুক্তিসফল পৃথিবীর কোনও যন্ত্রপাতি বা প্রকৌশল স্থান পায় না। প্রান্তিক দারিদ্রের মধ্যে বাস করে যে হাবা, তার কাছ থেকে শেখা ফুল-নদী ধানখেত নিয়ে সহজ একটা লোকগীতির সুর আর বাণী, হাবা-র উপহার দেওয়া ব্যাং, সাপ, জোনাকি, পদ্মফুল ও কাঠবিড়ালিটা সেরা সংগ্রহ। বঙ্কুবাবু অ্যাং-এর কাছে কৃতজ্ঞ, আর এলিয়েন কৃতজ্ঞ হাবার কাছে। জড়-বিজ্ঞানের কার্য-কারণ সম্পর্ককে যান্ত্রিকভাবে স্বীকার করে নেওয়ার পেছনে রয়েছে উচ্চ-বিজ্ঞানের হাতে নিম্ন-বিজ্ঞানের পরাভবের স্বীকৃতি। যা প্রকারান্তরে, সাম্রাজ্যবাদী অভিপ্রায়কেই সমর্থন করে। প্রযুক্তিগত ব্যুৎপত্তির দোহাই পাড়ে। ‘এলিয়েন’ সহ সত্যজিতের যাবতীয় এস.এফ. এই ভ্রান্ত বিবেচনার বিরুদ্ধ থিসিস।
উন্নত বিজ্ঞানের সঙ্গে হস্তশিল্পের সেতুবন্ধন করে সত্যজিৎ রায় ভারতীয় বিজ্ঞানের বিস্মৃত স্বধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আজকের এই বিদেশি যন্ত্র-নির্ভরতার যুগে, ভারতীয় বিজ্ঞান সম্পর্কে সত্যজিতের এই দৃষ্টিকোণ আরও মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
প্রথম প্রকাশ: সানন্দা, ৮ জুলাই ১৯৯৪
Tags: জটায়ু, পঞ্চম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, সত্যজিৎ রায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ
একজন প্রাজ্ঞ লেখক আর একজন গুণী স্রষ্টার একটি বিশেষ দিগন্তের আলোকপাত করছেন নির্মোহ বয়ানে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখেও কিভাবে যৌক্তিক বিন্যাসে নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন করা যায় তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই রচনাটি।
দয়া করে মুক্তমনা ব্লগে প্রকাশিত সত্যজিৎ রায়ের প্রোফেসর শঙ্কুর ক্রিটিক পরে দেখুন।https://blog.mukto-mona.com/2011/12/23/21123/। সায়েন্স ফিকশন লেখকের সাধারণ বিজ্ঞানের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই এটা মানতে পারলাম না। লেখক হিসেবে সায়েন্স
আরর ফিকশন যদি না মেলে তবে সেটি কেবল সায়েন্স সুগন্ধযুক্ত শিশুতোষ রচনা। সত্যজিৎ অসাধারণ কারণ বিশ্বাসযোগ্য কাহিনী বিন্যাস ও মেদহীন রচনা ।
লেখক সিদ্ধার্থ ঘোষ বা আমিতাভ ঘোষ বাংলার একজন সেরা কল্পবিজ্ঞান লেখক ও প্রযুক্তি গবেষক ছিলেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় ১৯ বছর আগে। সুতরাং মুক্তমনার ব্লগ পড়ে দেখার তাঁর আর কোনো উপায় নেই। ধন্যবাদ।