ছায়া-কায়া
লেখক: লুৎফুল কায়সার
শিল্পী: তৃষা আঢ্য
ছায়া-কায়া
লেখক – লুৎফুল কায়সার
অলংকরণ – তৃষা আঢ্য
বেশ আলো-আধাঁরিময় পরিবেশ। বিশাল ঘরটাতে হালকা হলুদ রঙয়ের ডিমলাইট জ্বলছে। পুরো ঘর জুড়ে অনেকগুলো পুরুষ ম্যানিকুইন দাঁড় করিয়ে রাখা। আবছা আলোতে এই ম্যানিকুইনগুলোর দিকে তাকালে শরীরটা কেমন যেন শিউরে ওঠে!
এই আধো আলোতেই সমানে পিৎজা খেয়ে চলেছেন ওসমানী সাহেব। সামনে বসে থাকা পিৎজা-বয়টি একাধারে অবাক, বিরক্ত এবং কিছুটা ভীত!
খেতে খেতে পিৎজা-বয়টির দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছেন তিনি। ছেলেটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভালো ঘরের ছেলে। সুন্দর চেহারা, গালে খোচা খোচা দাড়ি আর মেদহীন পেটানো শরীর। তবে চোখদুটো দেখলেই বোঝা যায় যে ছেলেটা বেশ ভীতু স্বভাবের। ঘরের আলো-আঁধারি আর দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানিকুইনগুলোর উপস্থিতিতে বেশ অস্বস্তি বোধ করছে সে। বার বার ঘড়ি দেখছে। আর সুযোগে পেলেই সোফার পিছনে যে ম্যানিকুইনটা রাখা আছে সেটার দিকে নজর দিচ্ছে।
এদিকে সোফার সামনের চেয়ারে বসে একমনে পিৎজা খেয়ে যাচ্ছেন ওসমানী সাহেব।
বাইরের ঝড়-বৃষ্টি ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। বজ্রপাতের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে একটু পর পর। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি এই দুর্যোগ থামবে না।
মনে মনে ‘ডায়মন্ড পিৎজা শপ’-এর প্রশংসা না করে পারলেন না ওসমানী সাহেব! পিৎজা যেমন সুস্বাদু তেমনি এই ঝড়ের রাতেও অর্ডার দেওয়ার মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই তার বাড়িতে পিৎজা নিয়ে হাজির হয়েছে এদের পিৎজা বয়!
তাঁর এই আলিশান বাড়িটি একটু শুনশান জায়গাতেই অবস্থিত। আশেপাশে তেমন একটা বাড়িঘরও নেই। বিস্তর জায়গা জুড়ে শুধুই বাড়িটি, সঙ্গে একটি বাগান। আর বাড়ির সীমানা প্রাচীর শেষ হলেই পিছনে একটা বিরাট দীঘি, দু-পাশে ফাকা জায়গা আর সামনে হাইওয়ে। একমাত্র মোড়টাতে পৌঁছতে হলেও অন্তত দশ মিনিট হাঁটতে হয়।
‘ডায়মন্ড পিৎজা শপ’ ইতিমধ্যেই শহরে বেশ আলোড়ন তুলেছে। সবার সাধ্যের ভিতরেই অনেক ভালো পিৎজা বানাচ্ছে তারা। দেশে এই প্রথম তাদের নিজস্ব পিৎজা বয়দের মাধ্যমে হোম ডেলিভারির সুযোগও দিচ্ছে। খুব অল্প খরচেই ঢাকা শহরের যে কোনও জায়গাতে তারা হোম ডেলিভারি দেয়। অর্ডার প্লেস করে ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিলেই বাইকে করে পৌঁছে যায় তাদের পিৎজা-বয়রা। এদের পিৎজা বয়রা প্রায় সবাই-ই শিক্ষিত ছেলে। বিভিন্ন ভার্সিটির ছাত্র। সবাইকে ক্লাস টাইমের সঙ্গে মিলিয়ে শিফট দেয় ওরা। কারও কোন সময়ে ক্লাস থাকলে সেই সময়টাতে তাকে সার্ভিস দিতে হয় না। কর্মচারীদের ভালো মন্দের ব্যাপারটা বেশ ভালোই দেখা হয় আর এজন্যই অল্প সময়েই বেশ ভালো কিছু কর্মচারী পেয়ে গেছে তারা। বাংলাদেশে পার্টটাইম জবের ব্যাপারটা আসলেই আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কয়েক বছর আগেও ব্যাপারটা চিন্তাই করা যেত না।
ফেসবুকে প্রথম এই পিৎজা শপের নাম দেখেছিলেন ওসমানী সাহেব। বিভিন্ন ফুডি গ্রুপগুলোতে ওদের পিৎজা আর সার্ভিস নিয়ে পোস্ট হয়েছে অগণিত সব পজিটিভ রিভিউ। ওদের ফ্যানপেজটাও বেশ সাজানো-গোছানো। কেউ চাইলে ওখানেও ইনবক্সে অর্ডার দেওয়া যায়।
ঝড় না থামা পর্যন্ত ছেলেটিকে বাড়িতেই বসতে বলেন তিনি। একটু ইতঃস্তত করলেও পরে বসে অপেক্ষা করতে রাজি হয়ে যায় ছেলেটি। এই ঝড়ের ভিতরে বাইক চালানো আসলেই খুবই কষ্টকর একটা ব্যাপার। সেই জন্যই হয়তো রাজি হয়েছে সে।
এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। তবে ছেলেটির সামনেই পিৎজা খেতে শুরু করার ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত! হয়তো ছেলেটিও এর আগে কখনও এমন গ্রাহক দেখেনি।
“আমি খুবই ক্ষুধার্থ ইয়ং-ম্যান। তাই তোমার সামনেই খাচ্ছি। তোমাকে অফার করা উচিত ছিল, তবে এটুকুতে আমারই পেট ভরবে না। আরও কিছু খেতে হবে। তাই অফার করতে পারলাম না। তুমি মাইন্ড করছ না তো?”, গমগমে কণ্ঠে বলে উঠলেন ওসমানী সাহেব।
“না না স্যার। সমস্যা নেই”, পিৎজা বয়ের গলাটা কেমন যেন কাঁপছিল!
“চা, কফি বা অন্য কিছু যে অফার করব সেটাও সম্ভব না, বাড়িতে খাবার কিছুই নেই।”
“কোনও সমস্যা নেই স্যার। আমাদের পিৎজা কেমন লাগলো?”
“ভালোই!” পিৎজা খেয়ে প্রায় শেষ করে এনেছেন তিনি।
ছেলেটা একটু হতাশই হল যেন। হয়তো সে আরেকটু বেশী প্রশংসা আশা করেছিল।
আরও কিছুক্ষণ নীরবতা।
“নাম কি তোমার?” আবারও নীরবতা ভাঙ্গলের ওসমানী সাহেব।
“সুকান্ত…. সুকান্ত দেবনাথ।”
“আমার নাম সিরাজুম মুনীর ওসমানী। যদিও সবাই আমাকে ওসমানী সাহেব বলেই জানে,” খাওয়া শেষ করে ছোট বাচ্চাদের মতো পিৎজার প্যাকেটটা মেঝেতে ফেলে দিলেন ওসমানী সাহেব।
আড়চোখে পিৎজা বয় ওরফে সুকান্ত’র দিকে তাকালেন তিনি। ছেলেটার মধ্যে ভাবান্তার নেই কোন। আলতো করে মাথা নাড়লো শুধু একটু। বোঝাই যাচ্ছে ওসমানী সাহেবের সঙ্গে বেশী কথা বলার ইচ্ছে তার নেই। এখান থেকে ভাগতে পারলেই বাঁচে।
“তা পড়াশোনা কোথায় করা হয় ইয়ং ম্যান?” একদৃষ্টিতে পিৎজা বয়টির দিকে চেয়ে আছেন ওসমানী সাহেব।
“আমি ইস্টার্ন ভার্সিটিতে বিবিএ করছি, থার্ড ইয়ার,” সুকান্ত’র কণ্ঠে কেমন যেন একটা বিরক্ত।
“তুমি কি জীবনে কখনও প্যারানরমাল কিছু এক্সপেরিয়েন্স করেছ?” একটা সিগারেট ধরালেন তিনি।
“না স্যার।”
“আজব না ব্যাপারটা? আমাদের দেশে পিৎজা-বয় কালচারটা কেবল শুরু হল! কিন্তু তুমি কি জানো, পৃথিবীতে পেশা হিসাবে সবচেয়ে বেশী অতিপ্রাকৃত এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে পিৎজা-বয়দের। তাও পিৎজা ডেলিভারি দিতে গিয়ে।”
“তাই?” সুকান্ত’র কণ্ঠে বিস্ময়।
“পিৎজা-বয়দের নিয়ে অনেক গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নেটে! ঝড়টা মনে মনে হয় থামবে না অতো তাড়াতাড়ি,” সিগারেটে একটা দীর্ঘটান দিলেন তিনি।
সুকান্ত যেন একটু ভয় পেল।
বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। একটানা ধূমপান করে যাচ্ছিলেন ওসমানী সাহেব।
আবার মুখ খুললেন তিনি, “সুকান্ত, তোমাকে কিছু বিদেশী পিৎজা বয়দের এক্সপেরিয়েন্স শোনাই? কি বল? এই ঝড় বৃষ্টির রাতে অতিপ্রাকৃত গল্প জমে ভালো। কি বল?”
“আচ্ছা স্যার,” অস্বস্তির স্বরে জবাব দিল সুকান্ত।
মনে মনে হাসলেন ওসমানী সাহেব, ‘কাস্টমারকে খুশি করার জন্য এদেরকে মাঝে মাঝে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়’।
আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে শুরু করলেন তিনি, “আমেরিকার পেনসিলভেনিয়াতে একবার ‘রবার্ট’ নামের এক পিৎজা-বয়কে একটা অদ্ভুত ঠিকানাতে ডেলিভারি দিতে বলা হয়। ঠিকানাটা লোকালয় থেকে বেশ দূরেই। আমেরিকাতে বেশ কিছু ধনী মানুষ আবার লোকালয় থেকে দূরে বাস করতেই ভালোবাসে। ধনী কাস্টমারের কাছ থেকে বেশ ভালো টিপসের আশা নিয়ে খুশি মনে রওনা দিল রবার্ট। সে গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখে যে ওটা একেবারেই পরিত্যক্ত একটা বাড়ি। ভেতরেও কেউ থাকে বলে মনে হয় না। আশেপাশেও কোনও বাড়ি নেই। তবে বাড়ির বাইরে কলিংবেল ছিল। পর পর দুবার বেল বাজাল সে। কিন্তু ভিতর থেকে কোনও সাড়া-শব্দ নেই! রবার্ট সাবধানে গাড়ির গা ঘেঁষে দাঁড়াল।”
আবার ধূমপানে মজে গেলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা।
“এরপর কি হল স্যার?” জিজ্ঞাসা করলো সুকান্ত।
“সে অফিসে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করল যে তাকে সঠিক ঠিকানা দেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু সেখান থেকে তাকে জানানো হল যে তাকে ওখানেই যেতে বলা হয়েছে। রবার্ট কি করবে বুঝে পারচ্ছিল না। পিৎজা ফিরত নিয়ে গেলে বসের কড়া কথা শুনতে হবে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতেও তার ভয় ভয় লাগছিল। কেমন একটা নির্জন জায়গা, যেটা ওর স্নায়ুর ওপর প্রচন্ড চাপ ফেলছিল,” এ পর্যন্ত বলে আবার থেমে গেলেন তিনি।
সুকান্ত’র চোখেমুখে আগ্রহী একটা ভাব ফুটে উঠেছে। বোঝাই যায় এসব গল্প শুনতে তার ভালোই লাগে।
মনে মনে হেসে আবার শুরু করলেন ওসমানী সাহেব, “রবার্ট ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিল। এমন সময়েই বাড়ির দোতলার একটা জানালার দিকে চোখ গেল ওর। কেউ যেন ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে অন্ধকারে তাকে দেখা যাচ্ছিল না। ‘হ্যালো, ওখানে কেউ আছেন? পিৎজা নিয়ে এসেছিলাম’, এই বলে কয়েকবার ডাক দিলো রবার্ট। কিন্তু সেই মূর্তির কোনও ভাবান্তর নেই। ব্যাপারটা ভালো ঠেকলো না রবার্টের কাছে। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে তার গাড়িতে উঠে গেল এবং গাড়ি চালু করে হাইওয়েতে উঠে গেল। কিন্তু গাড়িটা ঠিকমত চলছিল না! কেমন জানি ঝাঁকুনি খাচ্ছিল। কিছুদূর গিয়ে সে গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে দেখল যে গাড়ির সামনের দুটো টায়ার কেউ ফুটো করে দিয়েছে!”
“আশ্চর্য! রবার্ট না গাড়ির কাছেই দাড়িয়ে ছিল? তাহলে টায়ার কে ফুটো করল?”
“ওই ভয়টা পাওয়ার সুযোগই পেল না রবার্ট কারণ তখন সে স্ট্রিট লাইটের আলোতে রাস্তার অপর পাশে আবছা সেই মূর্তিটাকে দেখতে পেল, যেটাকে সে বাড়ির দোতলাতে দেখেছিল! একটু এগিয়ে এসে একেবারে লাইটের নিচে দাঁড়াল সে। রবার্ট এবার তার মুখটা দেখতে পেল। একজন মহিলা! মধ্যবয়স্ক মহিলা, চেহারা ফ্যাকাসে… একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আতংকে একেবারে জমে গেল রবার্ট, ওর হাত থেকে পিৎজাগুলো পড়ে গেল! কোনোমতে মোবাইল বের করল রবার্ট, ৯১১ এ ফোন দেওয়ার জন্য আর তখনই সে দেখতে পেল স্ট্রিট লাইটের নিচে কেউ নেই! এবং আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল মাটিতে পড়ে থাকা পিৎজাগুলোও নেই!”
“তারপর?”
“৯১১ এ ফোন দেওয়ার পর পুলিশ রবার্টকে গাড়ির দরজা লক করে গাড়ির ভিতরেই বসে থাকতে পরামর্শ দিলো। আর রবার্ট তাই করল। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলো। পুলিশ রবার্টকে সঙ্গে নিয়ে সেই পুরানো বাড়িতে গেল। সেই বাড়ি আগাগোড়া সার্চ করা হল কিন্তু কাউকেই পাওয়া গেল না। ধুলায় আর মাকড়সার জালে ভর্তি ছিল বাড়িটি, অনেকদিন কেউ না বসবাস করলে যা হয় আর কি!”
“সেই মহিলাকে আর পাওয়া গেল না?”
“তা গিয়েছিল। তবে পুলিশ পায়নি। রবার্টই পেয়েছিল।”
“বাড়ির দোতলার একটা ঘরে বেশ কিছু ছবি ছিল। সেগুলোর মধ্যেই ওই মহিলার একটা ছবি দেখেছিল রবার্ট!”
“ও পুলিশকে ছবিটি দেখিয়েছিল না?”
“কীভাবে দেখাবে? ছবিটির নিচে লেখা ছিল: Emma Stewart (1986-2005)”
“ওহ গড! মানে ২০০৫ সালে মহিলা মারা গেছেন!”
“হ্যা, ওটা দেখালে তো পুলিশ তাকে পাগল মনে করত। পরে পিৎজা স্টোরে যে নাম্বার দিয়ে কল করে অর্ডার প্লেস করা হয়েছিল তা চেক করে পুলিশ। দেখা যায় যে ওই বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরের একটি ফোনবুথ থেকে অর্ডার করা হয়েছিল।”
“তিন কিলোমিটার!”
“এরপর রবার্ট পিৎজা ডেলিভারির কাজ ছেড়ে দেয়। একটা সুপারমার্কেটে কাজ নেয় সে।”
বাইরে ঝড় বৃষ্টির মাত্রাটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে! হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন ওসমানী সাহেব। রাত আটটা বাজে। সামনে সুকান্ত থম মেরে বসে আছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বেশ ভয় পেয়েছে।
আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালেন ওসমানী সাহেব। প্রচন্ড রকমের ধূমপায়ী তিনি। ইংরেজীতে যাকে বলে ‘চেইন স্মোকার’।
“ঝড় বৃষ্টি তো খুব তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হচ্ছে না!” ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন তিনি।
“সেটাই তো মনে হচ্ছে”, গলাটা কাঁপছে সুকান্ত’র।
“তাহলে আরেকটা গল্প বলাই যায়, কি বল?”
“উমমম…. আচ্ছা বলুন স্যার।” হাত ঘড়িটা একবার দেখে বলল সুকান্ত।
সিগারেটটা শেষ করে অ্যাশট্রেতে তে ফেললেন ওসমানী সাহেব। তারপর শুরু করলেন, “এই গল্পটা প্যাট্রিক নামের এক পিৎজা-বয় এর। ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে বসবাস করত সে। তুমি কি জানো যে ইংল্যান্ডের ভিতরে নিউক্যাসল নিয়েই সবচেয়ে বেশী ভূতুড়ে গালগল্প প্রচলিত আছে?”
মাথা নাড়লো সুকান্ত, সে জানে না।
“সেদিন নাইট শিফটে কাজ করছিল প্যাট্রিক। হঠাৎ করে একটা ফোন আসে। ফোন থেকে তিনটা লার্জ সাইজের পিৎজা অর্ডার করা হয়। তখন বেশ রাত হয়েছিল আর এত রাতে তিনটা লার্জ সাইজের পিৎজার অর্ডার দেখেই প্যাট্রিক ধরে নেয় যে কেউ হয়তো মিডনাইট পার্টি করছে! কিন্তু প্যাট্রিক তো আর জানতো না যে তার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে! …… ঠিকানা মতো গিয়ে প্যাট্রিক কি দেখলো বল তো?”
“পুরানো একটা বাড়ি?” সাদিকের কণ্ঠের কাঁপুনির ভাবটা এখনো আছেই।
“আরে না না,” হেসে উঠলেন ওসমানী সাহেব, “সে একটা খুব সুন্দর আর ছিমছাম বাড়ি দেখতে পেল। তবে জায়াগাটা নিরিবিলি। বাড়ির পাশে একটা ওক গাছ আর ওতে একটা দোলনা ঝুলছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা কি জানো? দোলনাতে একটা পুতুল বসে আছে, বেশ বড় আকৃতির একটা পুতুল! আর বাড়িটাও শুনশান। মনে হচ্ছিল না যে ভিতরে কোনো পার্টি হচ্ছে! বার বার ডোরবেল বাজিয়েও যখন কেউ দরজা খুললো না তখন একটু ভয়ই পেয়ে গেল সে।”
“সে কি ফিরতি পথ ধরল এরপর?”
“একটা ব্যাপার কি জানো সুকান্ত? পশ্চিমা দেশগুলোতে ওপর-ওয়ালারা খুবই কঠোর হন। যে কোনো মূল্যে কাজ আদায় করে নিতে চান তারা। রবার্টের মতো প্যাট্রিকের পক্ষেও ফিরে যাওয়াটা সম্ভব ছিল না। সে বাড়ির পিছনের দিকে গেল। সেখানে ব্যাকইয়ার্ড, আর অবাক হয়ে খেয়াল করল যে ব্যাকইয়ার্ডের দরজাটা খোলা!”
“ব্যাকইয়ার্ডের দরজা খোলা মানে তো বাড়িতে কেউ ছিল! তাই না?”
“সেটাই মাথাতে আসলো প্যাট্রিকের। কিন্তু অনেক বারই তো ডোরবেল বাজিয়েছিল সে! কেউ দরজা খুললো না কেন? এসব ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে চলে এল প্যাটিক আর তখনই ভিতরে চোখ পড়ল তার! একটা ডাইনিং টেবিল এর মতো আর তার উপরে একটা মানুষের মস্তকহীন মৃতদেহ! আর ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে কে বসে আছে জানো?”
“কে?”
“ওই পুতুলটা! ভয় পেয়ে নিজের গাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করল প্যাট্রিক। আর গাড়ির কাছে এসেই তাঁর নজরে পড়ল সেই দোলনাটার দিকে। ওখানে পুতুলটার জায়গাতে একটা ছোট্ট মেয়ে বসে আছে! প্যাট্রিকের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে সে! আতংকে প্যাট্রিকের হাত থেকে পড়ে গেল পিৎজাগুলো। কোনোমতে গাড়িতে উঠে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচলো সে।”
“তারপর?”
“প্যাট্রিকের কথা কেউ বিশ্বাস করলো না! না পুলিশ, না পিৎজা শপের মালিক। এমনকি সেই বাড়িটাও পরে গিয়ে দেখা হলো। সুন্দর সাজানো বাড়ি। এক নিঃসন্তান দম্পত্তি বাস করে সেখানে। তারাই পিৎজা অর্ডার দিয়েছিল। কিন্তু তারা জানালো কোনো ডেলিভারি হয়নি। সেই ওকে গাছটাও ছিল তবে সেখানে কোন পুতুল ছিল না। আর রাস্তাতে পড়ে ছিল না কোনও পিৎজা… এই ঘটনার পরে প্যাট্রিকও ঠিক রবার্টের মতোই চাকরী ছেড়ে দেয়।”
“অদ্ভুত!”
“তাই বটে! গোটা পৃথিবী জুড়ে পিৎজা বয়রা এইরকম ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে অনেকবার। কেন এগুলো হয়? কিসের জন্য হয়? প্রেততত্ত্ববিদরা এটাকে একবার রেড ইন্ডিয়ানদের মিথ দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।”
“কী সেটা?”
“রেড ইন্ডিয়ানদের মতে: পৃথিবী সৃষ্টির পর পবিত্র আত্মারা মানুষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমবার মানুষ সৃষ্টি করেন তারা ভূট্টা থেকে। কিন্তু সেই মানুষের দেহে প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগেই সেটা নষ্ট করে দেয় অশুভ আত্মারা। এরপর তারা মানুষ সৃষ্টি করেন গম দিয়ে। কিন্তু সেটাকেও একই ভাবে নষ্ট করে দেয় অশুভ আত্মারা। তৃতীয়বার মানুষ সৃষ্টি করা হয় মাটি দিয়ে আর মহান ম্যানিটু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মানে হলো, তৃতীয় বারের বার সফল হন পবিত্র আত্মারা। সেই থেকেই ‘তিন’ সংখ্যাটির প্রতি প্রচন্ড রাগ অশুভ আত্মাদের। বুঝলে ব্যাপারটা?”
“ইয়ে মানে….. না স্যার।”
“বুঝবে সেটা আশাও করিনি”, মৃদু হাসি দিলেন তিনি। “আমরা যখন পিৎজা কাটি তখন ত্রিভুজ হিসাবে কাটি তাইনা? ‘তিন’ …. আর এজন্যই পিৎজা-বয়দের উপর প্রচন্ড রাগ অশুভ শক্তিদের। একটা জিনিস খেয়াল করেছ? রবার্ট এবং প্যাট্রিক দুজনের কেসেই কিন্তু সেই ফেলে যাওয়া পিৎজাগুলো আর পরে পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?”
“আসলেই তো! ওগুলো কোথায় যায়? কেউ কি খেয়ে নেয়?”
“তুমি কি জন কাসুবার নাম শুনেছ?”
“না স্যার।”
“ভদ্রলোক একজন বিখ্যাত প্রেততত্ত্ববিদ। তিনি বলেন, ‘হয়তো অতিপ্রাকৃত শক্তিগুলো পিৎজা খেতে অনেক পছন্দ করে কিন্তু এর দাম দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এজন্যই তারা এইভাবে পিৎজা বয়দের ভয় দেখায়!’ মজার না ব্যাখ্যাটা?”
“মানে ভূতে পিৎজা খায়?”
“অমনটাই ওঁর মত।” একটু থামলেন ওসমানী সাহেব। “এই তুমি কি কফি খাবে? হুট করে মনে পড়ল বাড়িতে কফি আছে! দু-কাপ করে নিয়ে আসি? বৃষ্টি তো এখনো থামেনি?”
“আচ্ছা স্যার”, হালকাভাবে মাথা নাড়লো সাদিক।
কফি বানাতে বানাতে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন ওসমানী সাহেব। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ঝড় থেমে গেছে তবে বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। জানালা দিয়ে বাড়ির মেইন গেটটাও দেখা যাচ্ছে। দারোয়ান বেটা গেট থেকে একটু দূরে ঝুপড়ি ঘরটাতে বসে একমনে বিড়ি টানছে। ঘড়িতে সময় দেখলেন তিনি, রাত পৌঁনে নয়টা বাজে।
অকৃতদার মানুষ ওসমানী সাহেব। আত্নীয়-স্বজনও তেমন নেই। তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনের প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত’র সঙ্গী হল দারোয়ান ‘আনোয়ার মিয়া’। একটু দূরে একটা বস্তিতে তার বাস। লোকটা বেশ ভালোই, কথাবার্তাও কম বলে।
কফি বানিয়ে নিয়ে ড্রইং রুমে ফিরে এলেন ওসমানী সাহেব। সুকান্ত মোবাইলে কি যেন দেখছিল। ফেসবুক ব্রাউজিং করছিল হয়তো। তাঁর পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকাল সে। তার হাতে কফির কাপটা ধরিয়ে দিলেন ওসমানী সাহেব।
“ঝড় তো থেমে গেছে, কিন্তু বৃষ্টি এখনও হচ্ছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যাবে। এর ভিতরে আরেকটা গল্প বলে ফেলি কি বল?” কফির কাপে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে বললেন তিনি।
“জি স্যার! ঠিকাছে।” কাপটা টেবিলে রেখে উনার মুখের দিকে তাকাল সুকান্ত।
“এই গল্পটা না আমাদের দেশের এক ছেলের! তার সঙ্গে ১৯৯০ এর দিকে ঘটেছিল এই ঘটনাটা!”
“কী বলেন স্যার! আমাদের দেশে তখন পিৎজা ডেলিভারি?”
“আরে না না। ছেলেটা কিছুদিনের জন্য কানাডাতে ছিল। তখন সে পার্টটাইম জব হিসাবে এইটা শুরু করে। তবে একটা ব্যাপার কি জানো? এই গল্পটা তুমি কোথাও পাবে না! না নেটে, না কোনও বইয়ে!”
“কেন স্যার?”
“গল্পটা শুনলেই বুঝবে! শুরু করি তাহলে কেমন?”
“জি স্যার।”
“কানাডার আলবার্টাতে থাকত ছেলেটা। তার অ্যাপার্টমেন্টের পাশের-ই একটা পিৎজা শপে পার্টটাইম চাকরী করত। তবে যেদিন ওর সঙ্গে ওই অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটে সেই দিনটা কেমন ছিল জানো?”, রহস্যময় ভাবে ফিসফিসিয়ে উঠলেন ওসমানী সাহেব।
“না স্যার! আমি কীভাবে জানব?” সুকান্ত’র কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি। বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। কণ্ঠই প্রমান করে যে এই অদ্ভুত লোকটার গল্প আর ভালো লাগছে না তার।
“সেই দিনটা ছিল আজকের মতো! এইরকম-ই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। আর ঠিক আমার বাড়ির মতোই লোকালয় থেকে দূরে একটি বাড়িতে ডেলিভারি দিতে যায় সেই ছেলেটি। আরও অবাক করা ব্যাপারটা কী জানো?”
“কী?”
“ঐ বাড়িটাতে তাকে ঠিক আজকের মতোই একটি আধো অন্ধকার ঘরে বসতে দিয়েছিলেন ওই বাড়ির মালিক ‘রেঁনে ডুপ্রি’….. ব্যাপারটা অদ্ভুত না?” কফির কাপটা রেখে সাদিকের দিকে তাকালেন তিনি।
ছেলেটা কেমন যেন বিরক্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আবার শুরু করলেন তিনি, “ওই ঘরেও একগাদা ম্যানিকুইন ছিল। ঠিক আমার ঘরের মতোই। আসলে মিস্টার ডুপ্রি ছিলেন একজন কালো জাদুকর। তাঁর বাড়িতে যারাই যেত তাদেরকেই তিনি ম্যানিকুইন বানিয়ে রেখে দিতেন। আর তাদের আত্মাকে কয়েদ করে রাখতেন। নিজের এক বিশেষ সাধনার জন্য। তবে তিনি ওই পিৎজা বয়কে কিন্তু ম্যানিকুইন বানানোর জন্য ডেকেছিলেন না! কেন ডেকেছিলেন বল তো?”
“কেন?”
“তিনি নিজের আত্মাকে ওই পিৎজা-বয়ের শরীরে স্থাপন করে দেন।”
“এটা কেন করেছিলেন তিনি?”
“কারণ তার বয়স আটাশি বছর হয়ে গিয়েছিল। বুড়ো হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আর তার সাধনা শেষ করার জন্য নতুন শরীরের দরকার ছিল।”
“অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার!” বিরক্তির চরম মাত্রাতে চলে গেছে ছেলেটি।
“সকালবেলাতে শরীর ওর আত্মার-ই নিয়ন্ত্রনে থাকে কিন্তু সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার ডুপ্রি নিয়ন্ত্রন করেন তাকে। মিস্টার ডুপ্রি আজও সেই লোকের শরীরের ভেতর থেকে নিজের সাধনা করে চলেছেন। কেউ জানে না যে ওই লোকের শরীরে দুই আত্মা বাস করে।”
“কেউ জানে না তো আপনি জানলেন কীভাবে?”
মৃদু হেসে উঠে গিয়ে একটা সুইচ চাপলেন ওসমানী সাহেব আর দেয়ালের আরেকটা ডিমলাইট জ্বলে উঠলো। তার ঠিক নীচেই একটা ফটো। ফটোতে দেখা যাচ্ছে একজন লোক পিৎজা বয়ের ইউনিফর্ম পরে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। ওসমানী সাহেবের অল্প বয়সের ছবি ওটা!
অবাক হয়ে সুকান্ত ছবিটা দেখছিল। তারপর বলে উঠলো, “এটা আপনি না?”
“আমিই সেই পিৎজা বয়! আর আমিই মিস্টার ডুপ্রি!” চিৎকার করে উঠলেন ওসমানী সাহেব।
“আপনি একজন বদ্ধ উন্মাদ! আমি এখান থেকে যাচ্ছি,” উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে হাটলে লাগলো সুকান্ত।
কিন্তু একি! দরজা খুলছে না কেন! দরজা লক করা!
পিছে ঘুরলো সুকান্ত। ততক্ষণে তার অনেক কাছে এসে পড়েছেন ওসমানী সাহেব।
“আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিলেই তুমি ম্যানিকুইন হয়ে যাবে। বন্দী হয়ে যাবে তোমার আত্মা। এই বাড়ি থেকে কেউ ফিরে যায় না! তুমিও যাবে না।” ক্রুর হাসি দিয়ে বললেন তিনি।
পিছু হটতে লাগল সুকান্ত। আর তাকে সুযোগ দিলেন না ওসমানী সাহেব। এক দৌড়ে গিয়ে তাকে ছুঁয়ে দিলেন তিনি। সুকান্ত এতোটাই ভয় পেয়ে গেল যে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ল!
ব্যাপারটা যে এভাবে তার প্ল্যানের বাইরে চলে যাবে সেইটা ভাবতেও পেরেছিলেন না ওসমানী সাহেব। ঘটনার আকস্মিকতাতে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইলেন তিনি। তারপর সাদিকের হাতের নাড়ি চেক করলেন। বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো তাঁর, নাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না! মারা গেছে সুকান্ত!
মানুষকে ভয় দেখাতে বরাবরই ভালোবাসের তিনি। এজন্য কতজনের বিরাগভাজন হতে হয়েছে তাকে! মিস্টার ডুপ্রির গল্পটা একেবারেই বানিয়ে বলেছেন তিনি। কানাডাতে অমন কারো সঙ্গেই দেখা হয়নি তার।
কিন্তু ছেলেটা এইভাবে ভয় খেয়ে মারা যাবে এটা চিন্তাও করতে পারেননি তিনি!
ভাবতে লাগলেন ওসমানী সাহেব। সুকান্ত’র লাশটাকে যেভাবেই হোক গুম করতে হবে। ও এখানে যে বাইকটাতে করে এসেছে সেটাও ব্যবস্থা করতে হবে আর ওর মোবাইলটাকেও ঠিকঠাক মতো বন্ধ করতে হবে।
হাতে রুমাল জড়িয়ে সুকান্ত’র পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলেন তিনি। এখনো চলছে। বন্ধ করা যাবেনা। কারন নিখোঁজ সাদিকের খোজ করতে পুলিশ মোবাইল রেকর্ড চেক করবে আর তাতে যদি দেখা যায় যে তার বাসাতে এসে মোবাইল সুইচড অফ হয়েছে তবে সমস্যা হয়ে যাবে।
বাইকটাকে চালিয়ে নিয়ে কোথাও রেখে আসতে হবে। তারপর মোবাইলটা দূরে কোথাও ফেলে আসতে হবে। আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে এগুলো। সুকান্ত’র লাশটা মেঝেতেই পড়ে থাক। তার বাড়িতে সাধারণত কেউ আসে না।
ঘড়ি দেখলেন তিনি। রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাইক আর মোবাইলের ব্যবস্থা করে ট্যাক্সি ধরে বারোটার মধ্যে ফিরে আসা যাবে। তারপর আনোয়ারকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে লাশটাকে কোনও জায়গাতে গুম করা যাবে।
বারান্দাতে এসে দাড়ালেন তিনি। আনোয়ারকে দেখা যাচ্ছে।
“আনোয়ার! এই আনোয়ার!” ডাক দিলেন তিনি।
“জে ছার!” একটু এগিয়ে এসে উত্তর দিল সে।
“বাইকটা কোথায়?”
“বাইক মানে স্যার?”
“আরে মোটর সাইকেলটা কোথায়?”
“কুনো মোটর সাইকেল নাইতো ছার আমগো! বাইরে থেইকাও তো কেউ আনেনাই!”
তার মানে সুকান্ত বাইকে এসেছিল না! মনে মনে খুশি হলেন ওসমানী সাহেব।
“আচ্ছা ঠিকাছে তুমি কাজে যাও”, এখনই আনোয়ারকে সাদিকের লাশের ব্যাপারটা না বলার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
ঘরে এসে সোফাতে বসলেন তিনি। পরবর্তী প্ল্যানিং ঠিক করতে লাগলেন। বাইকটা না থাকাতে ব্যাপারটা কিছুটা সহজ হয়ে গেছে।
এমন সময়ে তার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকালেন ওসমানী সাহেব। ‘ডায়মন্ড পিৎজা’ থেকে ফোন দিয়েছে! ওদের নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিলেন তিনি।
ভয় পেলেন ওসমানী সাহেব! তবে কি ওরা এখনই সুকান্ত’র খোঁজ শুরু করে দিয়েছে?
“হ্যালো!” কোনওমতে ফোনটা রিসিভ করলেন তিনি।
“হ্যালো স্যার! ডায়মন্ড পিৎজা শপ থেকে বলছি। আমরা অনেক দুঃখিত স্যার!” ওপাশের অল্পবয়সী ছেলেটি বলে উঠল।
“কেন?”
“আজকে আপনার পিৎজা ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি স্যার! ঝড়ের কারণে আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি অত দূরে ডেলিভারি দেওয়া। আপনি যদি চান তবে কালকে ডেলিভারি দিতে পারি!”
“কি বলেন! পিৎজা এনেছিল তো! পিৎজা বয় সুকান্ত”, বিস্ময়ের চরম সীমাতে পৌঁছে গেলেন ওসমানী সাহেব।
“আপনার ওখানে কোন ডেলিভারি আমরা দেইনি স্যার। হয়তো সে অন্য কোনও পিৎজা হাউজের ছিল। যদিও আমরা ছাড়া কেউই এতো রাতে হোম ডেলিভারি দেয়না। তারপরেও নতুন সার্ভিস তো হতেই পারে। আর সুকান্ত নামে এখন আমাদের কোন পিৎজা বয় নেই!”
“এখন নেই মানে? আগে ছিল?”
“সুকান্ত দেবনাথ বলে একজন ছিল। তবে তিনমাস আগে সে এক জায়গায় ডেলিভারি দিতে গিয়ে রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। এরপর আর ওই নামে কেউ নেই।”
“কী বলেন! তাহলে কে এসেছিল?”
“বললাম না স্যার? আপনি সম্ভবত মনের ভুলে আমাদের সঙ্গে অন্য কোথাও অর্ডার দিয়েছিলেন। সে হয়তো তাদেরই কর্মচারী। আপনি আমাদের ফেসবুক পেজ দেখতে পারেন। সুকান্ত’র মৃত্যুর খবর এখনও সেখানে ‘পিনড পোস্ট’, কারণ সে আমাদের একজন শেয়ারহোল্ডারও ছিল।”
ফোনটা রেখে কোনমতে ফেসবুক লগ-ইন করলেন ওসমানী সাহেব। ডায়মন্ড পিৎজার পেজে পিনড পোস্টে ইংরেজী লেখা: ‘We Mourn’ সঙ্গে আরও অনেক কিছুই লেখা তবে পোস্টের সঙ্গে হাসিমুখে পোজ দেওয়া যে ছেলেটার ছবি রয়েছে সেটা আর নয় সেটা সুকান্ত-ই! সেই ভীতু আর বিরক্ত পিৎজা বয় যে আজ সন্ধ্যাতে তাঁর কাছে পিৎজা নিয়ে এসেছিল!
মেঝেতে যেখানে সুকান্ত’র লাশ পড়েছিল সেদিকে তাকালেন তিনি। আর তখন আতঙ্কের একটা হীমস্রোত বয়ে গেল তাঁর মেরুদন্ড দিয়ে!
জায়গাটা পুরো ফাঁকা! কিচ্ছু নেই!
হুড়মুড় করে বারান্দাতে এসে দাড়োয়ানকে ডাকলেন তিনি, “আনোয়ার মিয়া! আনোয়ার মিয়া!”
“জে ছার”, উত্তর দিলো দাড়োয়ান।
“সন্ধ্যাতে যে লোকটা এসেছিল সে কি বের হয়ে গেছে?”
“আইজ তো বাড়িত বাইরে থেকে কেউ আসেনাই ছার! আসার কথা ছিল কি?”
“কী বলো তুমি! কোনও পিৎজা বয় আসেনি?”
“কী বয় কইলেন ছ্যার? নাহ তো, কেউ তো আসেই নাই। আমি তো গেটেই বইসা আছি।” আনোয়ারের কণ্ঠে বিস্ময়।
একদম পাথরের মূর্তির মতো বারান্দাতে দাড়িয়ে রইলেন ওসমানী সাহেব!
অন্ধকার প্রকৃতির ছায়া আর কায়াগুলো যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল!
Tags: ছায়া-কায়া, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, তৃষা আঢ্য, পূজাবার্ষিকী, লুৎফুল কায়সার
গল্পটা ভাল তবে একটু এডিটিং-এর দরকার ছিল। আর বেশ কয়েকবার সুকান্ত নামের যায়গায় সাদিক নাম লেখা হয়েছে – দু এক যায়গায় মুদ্রাদোষের মতন – ‘আসলেই’ – শব্দটা এসে গেছে যেটা ঠিক খাপ খাচ্ছে না।
Last ta ro kora j2o … 2nd part cyle dwa j2e pare !!
Sukanta ar sadik ta bad dile valoi laglo. Onek gulo popular golpo jure Ekta final suspence.