তেলেভাজার একদিন
লেখক: রাজকুমার রায়চৌধুরী
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
দিনটা শুরু হয়েছিল সাধারণ ভাবেই। আমি হাতিবাগানের সামনে হাঁটছি৷ এখানে একটা কাজ ছিল৷ থাকি দক্ষিণ কলকাতায়৷ শ্যামবাজারের মোড়ে গেলেই মেট্রো পেয়ে যাব৷ হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তায় যত লোক জন দেখছি কারুর হাতে মোবাইল নেই৷ কি সন্দেহ হল আশে পাশের দোকানগুলোর দিকে চেয়ে দেখলাম৷ যা সন্দেহ করেছিলাম তাই৷ একটা চায়ের দোকান দেখলাম বহুবছর আগে উঠে যাওয়ার কথা৷ এখনো সে চা বিক্রি করছে৷ আবছা যেটুকু স্মৃতি ভেসে আসছে তাতে মনে হল চল্লিশ বছর আগের হাতিবাগানকে দেখছি৷ একটা শাড়ীর দোকানের সামনে আয়না ছিল৷ এখনো সেই আয়নাটাই আছে!
নাহ, আমি কিন্তু সেই যৌবনের আমিতে ফিরে যাই নি; আমি ২০১৭ সালেরই আমি৷ চল্লিশ বছর আগে এই অঞ্চলেই ছিল আমাদের বাড়ি৷ ভাই বোন বাবা মা সবাই মিলে থাকতাম৷ এখন হঠাৎ ভয় হলো, আমার নিজের বাড়িতে ফিরে গেলে তো কেউ বিশ্বাস করবে না এই আমি সেই ৪০ বছর আগের আমি৷ আমার এক দাদা আর দুই বোন মারা গেছে৷ এখন কি গেলে তাদের দেখতে পাব! ভেবেই গা ছম ছম করতে লাগল৷ বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে একই ব্যাপার ঘটবে৷ কারুর পুরোনো ফোন নম্বর জানি না; মোবাইল অকেজো৷ পকেটে নতুন দুহাজার আর পাঁচশো টাকার নোট খেলনার মত৷ বাঁচবো কি করে! যত টাইম ট্রাভেলের গল্প পড়েছি বা সিনেমা দেখেছি, কোথাও এই সমস্যার কথা আছে কি না মনে পড়ছে না৷ পকেটে কয়েক হাজার টাকা আর দুটো ডেবিট কার্ড থাকলেও অনাহারে মরতে হবে৷ হাতিবাগানের কাছেই রাস্তার ধারে একটা লোক খবরের কাগজ বিক্রি করত৷ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দোকানটা দেখতে পেলাম৷ একটা ইংরেজী কাগজ তুলে প্রথম পাতায় তারিখটা দেখলাম, ২৩শে জানুয়ারি ১৯৭৫, মানে চল্লিশ নয় বিয়াল্লিশ বছর আগে ফিরে গেছি৷
আজ ২৩শে জানুয়ারি, নেতাজীর জন্মদিন৷ তক্ষুণি মনে পড়ে গেল লক্ষীনারায়ণ সাউর তেলেভাজার দোকানের কথা৷ নেতাজীর একান্ত ভক্ত এই পরিবার আজ সারা দিন ফ্রী তেলেভাজা দেবে৷ স্কুলে পড়ার সময় এই দিনে প্রতি বছর আসতাম তেলেভাজার লোভে৷ হাতিবাগান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটা৷ সাউর দোকানের সামনে লাইন দিলাম৷ বেশীক্ষণ দাঁড়াতে হল না৷ দশ মিনিটের মধ্যেই দুটো আলুর চপ আর একটা বেগুনি পেলাম৷ খাবার পর রাস্তার কলের জল খেয়ে প্রাণে শান্তি এল৷ জল খেয়ে মুখ মুছছি হঠাৎ পিছন থেকে এক কণ্ঠস্বর “আঙ্কল“, পিছন ফিরে দেখি একটি বারো কি তেরো বছরের ছেলে৷ খুবই বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা৷ ভদ্র ও বটে৷ নইলে আমাকে দাদু বলেও ডাকতে পারতো৷
“কি চাই ভাই?”, আঙ্কল, তোমার হাতে যে যন্ত্রটা দেখলাম ওটা কি ফোন? আমি তেলেভাজার দোকানে লাইনে দাঁড়ানোর সময় অন্যমনস্ক ভাবে মোবাইলটা নিয়ে খুটখাট করছিলাম৷ না মোবাইল এখনো আইনস্টাইনকে ধরতে পারেনি। নিমেষের মধ্যে কলকাতা থেকে আমেরিকাতে কাউকে ফোন বা এমন কি ভিডিয়ো চ্যাট করা সম্ভব করেছে, কিন্তু সময়ের গন্ডি পেরোতে পারেনি৷ হয়ত একদিন পারবে৷ কিন্তু আমার মোবাইলে যে সব ছবি সেভ করা ছিল সব উধাও হয়ে গেছে। আমার খুব আশ্চর্য লাগলো না৷ ছবিগুলো থাকলে ১৯৭৫ আর ২০১৭ এর মধ্যে একটা যোগাযোগ থাকত, সেটা এখন বোধহয় আর সম্ভব নয়৷ যাই হোক, ছেলেটিকে বললাম, “তুমি কি করে বুঝলে?”
বাবা এরকম ফোনের কথা একদিন আমায় বলছিলেন। “তোমার বাবা কি করেন?“
“বাবা ইলেকট্রিকাল ইনজিনিয়ার; চলুন না আঙ্কল আমাদের বাড়িতে। বাবা আপনার ফোন দেখলে খুব খুশি হবেন।“
“কিন্তু তোমার বাবা তো আমায় চেনেন না! কে একটা উটকো লোক ভাববেন।”
“না আঙ্কল, আপনাকে দেখে তো প্রফেসর বলে মনে হয়, বাবা কিছু মনে করবেন না“। এরপর আমাকে প্রায় হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গেল বাড়িতে৷
“তোমার নাম কি?”
“ডাক নাম বাবুই, ভালো নাম অর্ক বসু মজুমদার।“
“আঙ্কল, বাবাকে প্লিস বলোনা আমি তেলেভাজা খেয়েছি।”
“কেন তোমার বাবা কি খুব রাগী?”
“না, বাবা খুব ভাল কিন্তু তেলেভাজা খেতে আমায় বারণ করেছেন৷ আমার না তেলেভাজা খেতে খুব ভাল লাগে।”
“আমিও তোমার দলে৷ তবে তোমার বাবা ঠিকই বলেছেন৷ তেলেভাজা বেশি খাওয়া উচিত নয়৷” আমার কথা শুনে বাবুই খুশীই হোল৷
বাবুইদের বাড়ি তেলেভাজার দোকান থেকে সাত আট মিনিটের হাঁটা পথ৷ এই গলিতে আমার এক স্কুলের বন্ধু থাকত৷ বাবুইদের বাড়িটা দোতলা পুরোনো৷ উত্তর কলকাতার টিপিকাল বাড়ি, বাইরের গেট খুললে খানিকটা ফাঁকা জায়গা৷ বাঁদিকে একটা ছোট বাগান, উত্তর কলকাতার বাড়িতে যা সচরার দেখা যায় না৷ গোলাপ, গাঁদা, জবা আরো কতকগুলি ফুলের গাছ আছে যাদের নাম মনে করতে পারলাম না৷ তবে বাগানটির নিয়মিত পরিচর্যা হয় দেখেই বোঝা যায়৷ ইতিমধ্যে বাবুই এর কাছে অনেক কথা জানতে পারলাম৷ ছুটির দিনে ও টুকাইদের বাড়িতে টেবিল টেনিস খেলতে যায়৷ ওর বাবা খুব ভালো টেনিস খেলতেন৷ বাড়িতে গেলে দেখতে পাব ওর বাবা কত কাপ আর মেডাল পেয়েছেন৷ বাড়ির দরজা খোলাই ছিল৷ ভিতরে ড্রয়িংরুমে একটা বেতের চেয়ারে বসে এক ভদ্রলোক খবর কাগজ পড়ছিলেন৷ আমাকে দেখে বাইরে বেরিয়ে এলেন৷ আমি আমার নাম বললাম, “দেখুন কিছু মনে করবেন না৷ আপনি বোধ হয় বাবুই এর বাবা, ওই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।” “বাবা আঙ্কলের কাছে না একটা দারুণ ফোন আছে“। বাবুই এর কথা শুনে ওর দিকে চেয়ে ভদ্রলোক আস্তে করে বললেন “তুমি তোমার ঘরে যাও, আঙ্কলের সঙ্গে আমি কথা বলছি”৷
বাবুই খানিকটা হতাশ হয়েই চলে গেল৷ তবে পিতৃভক্ত ছেলে আপত্তি জানাল না৷ বাবুই এর বাবা একটা বেতের চেয়ারে আমাকে বসতে বলে নিজে একটা বেতের সোফার এক ধারে বসলেন৷ বসবার ঘরটা খুব একটা বড় নয়৷ বেতের সোফা, চেয়ার ছাড়া একটা কাঠের টেবিল আর চেয়ার৷ টেবিলের উপরে একটা পুরোনো দিনের বড় রেডিয়ো৷ দেয়ালে কতকগুলি ফটোগ্রাফ৷ বেশীরভাগই নিসর্গ দৃশ্যের৷ দুটি যামিনী রায়ের ছবি৷ আসল কি প্রতিলিপি বুঝতে পারলাম না৷
বাবুই এর বাবার দোহারা চেহারা রং ফর্সার দিকেই৷ হাইট মনে হয় পাঁচ নয় এর কাছাকাছি৷ বয়স পঞ্চাশের মত হবে৷ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা৷ বাবুই এর কাছ থেকে ওনার নাম শুনেছি৷ অমিতাভ বসু মজুমদার৷ আমার নাম ছাড়া কি পরিচয় দেব৷ এমন কি এই নাম যে আমার নাম তারও নথিপত্র আমার কাছে নেই৷ উনি একটা বেতের চেয়ারে আমাকে বসতে বলে নিজে একটি সোফায় আমার মুখোমুখি বসে আমার মোবাইলটা দেখতে চাইলেন৷ মোবাইলটা উল্টেপাল্টে ভাল করে দেখে বললেন “এই মোবাইল আপনি কোথায় পেলেন? এই প্রযুক্তি বাজারে আসতে এখনো তিরিশ চল্লিশ বছর লাগবে“।
আমি বললাম “সে আর এক গল্প৷ আপনি এক বর্ণও বিশ্বাস করবেন না“।
“তাও বলুন না“। আমি হাতিবাগান থেকে যা যা ঘটেছে সব বললাম, তবে বাবুই এর সঙ্গে যে তেলেভাজার লাইনে দেখা, সেটা চেপে গেলাম৷ আমার কথা শোনার পর অমিতাভ বাবু খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন৷ তারপর বললেন, “আপনার মোবাইল আর ঘড়িটা না দেখলে আমি আপনার একটাও কথা বিশ্বাস করতাম না“। ঘড়ি শুনে আমার মনে হল, তাইতো যে ঘড়ি আমি পড়ে আছি এটাও স্মার্ট ঘড়ি৷ সময় দেখা ছাড়াও মোবাইল ক্যামেরা রেডিও সব কিছুই এতে পাওয়া যায়৷
“আচ্ছা ঠিক কোন সময় আপনার মনে হল আপনি চল্লিশ বছর আগে আপনি ফিরে এসেছেন?”
“দেখুন এখন মনে হচ্ছে হাতিবাগানের আগেই আমার এটা খেয়াল করা উচিত ছিল৷ রূপবানীর কাছে আসতেই আমার মাথায় একটা শক টের পাই৷ তখন সেই পুরোনো রূপবানী আর স্টার থিয়েটার দেখেই বোঝা উচিত ছিল৷ এখনকার স্টার থিয়েটার আগুন লেগে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়৷ নতুন আধুনিক স্টার থিয়েটারে একতলায় একটা অংশে নাম করা একটা রেস্তোরাঁ হয়েছে৷ আর অন্য অংশে আধুনিক সিনেমা হল৷ শুনছি একটা শপিং মল ও হবে৷”
“আচ্ছা আপনি তো বললেন এই অঞ্চল আপনার চেনা কারণ এখানেই আপনার বাড়ি। ওই বাড়িতে আপনার জন্য হয়ত বাড়ির লোক অপেক্ষা করছে৷ কিছুক্ষনের জন্য আপনি বাইরে আছেন; যত রাতই হোক ঠিক ফিরে আসবেন৷ আমি জানি আপনাকে কেউ চিনতে পারবে না৷ কিন্তু এটাতো বলতে পারবে যে আপনার নামে একজন ও বাড়িতে থাকে৷ এটা ও তো আপনার একটা পরিচিতি“।
ওনার কথা শুনে আমি বললাম, “ওখানেই তো মুস্কিল!”
“কেন?”
“ঘটনাচক্রে আমি এমন একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি, যখন আমি বাবা মার সঙ্গে থাকতাম না৷ তাছাড়া আমার বাবা কলকাতার বাড়ি ছেড়ে উত্তরপাড়ায় বাড়ি তৈরী করে ওখানেই থাকেন৷ আমার ভাই বোনেরাও ওখানে থাকে, মানে ১৯৭৫ সালে থাকত“।
“আপনি কোথায় থাকতেন?”
“আমি বালিগঞ্জের কাছে একটা হোটেলে থাকতাম৷ পেয়িং গেস্টের মত৷ কিন্তু আমার এখন কিছুই মনে নেই৷ তখন একটা সরকারী কলেজে সবে জয়েন করেছি৷ যাতায়াতের সুবিধে হত৷”
“আপনার সাবজেক্ট কি ছিল? আমি বললাম আমার MSc ফলিত গণিত হলেও পি এই ডি ফিজিক্সে৷”
এরপর অমিতাভ বাবু আমাকে নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন৷ বেশিরভাগই বিজ্ঞান ও কমপিউটার সম্পর্কে৷ হিগস বোসন ২০১৩ সালে পরীক্ষাগারে আবিষ্কৃত হয়েছে শুনে বললেন যে, অংক কষে তো আগেই বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু এতদিন লাগল একে খুঁজতে৷ আমি বললাম এর আগে এত শক্তিশালী accelerator তৈরী করা যায় নি৷ এর পর ফিফথ জেনারেশন কমপিউটার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ – আইপ্যাড ইত্যাদির কথা খুব মন দিয়ে শুনলেন৷ তবে মনে হল উনি জানতেন এগুলি আবিষ্কার হবে শুধু সময়ের অপেক্ষা৷
বললেন উনি হয়তো সব দেখে যেতে পারবে না, তবে বাবুই পারবে৷ আমি বুঝতে পারছিলাম এ সমস্ত আবিষ্কার আর প্রযুক্তির আলোচনা করে উনি খুব বুদ্ধিমানের মতো জানার চেষ্টা করছিলেন আমি ইম্পস্টার কিনা৷ আমার কয়েকটি পেপার ১৯৭৫ সালের মধ্যেই নামকরা ফিজিক্সের জার্ণালে ছাপা হয়েছে৷ কিন্তু তাদের লেখক পদ্মনাভ চৌধুরী যে আমি, তা কি করে প্রমাণ করব! অমিতাভ বাবু বললেন, “তাহলে আপনার কোন পরিচিতিই নেই৷ দেখুন টাইম ট্রাভেল এখনো কল্পবিজ্ঞানই ২০১৭ কেন আরো একশ বছরেও এটা শুধুই কল্পনাই থাকবে৷ কিন্তু আপনার মোবাইল, ঘড়ি, নতুন দুহাজার টাকার নোট আর ডেবিট কার্ড দেখে খটকা লাগছে৷ কিন্তু এখন আপনি কি করবেন?”
আমি বললাম “বড়বাজারে একটা মুটের চাকরী পেলেও নেব ভাবছি৷ ওখানে কোন পরিচয় পত্র লাগবেনা!”
“আপনার যা বয়স আপনি ওই পরিশ্রম করতে পারবেন না৷ তাছাড়া ওখানেও দেশওয়ালী ভাই না থাকলে ঢোকা শক্ত৷ আপনি কি হায়ার সেকেন্ডারী লেভেলে ফিজিক্স আর অংক পড়াতে পারবেন?”
“তা পারব৷ কিন্তু স্কুলে চাকরী দেবে কে?”
“না স্কুলে নয়৷ একটা কোচিং ক্লাসে৷ কোচিং ক্লাস যে চালায় আমার চেনা৷ ওখানে যিনি আগে পড়াতেন তিনি একটা ভালো চাকরী পেয়ে ছেড়ে দিয়েছেন৷ ফুল টাইম জব৷ আমি বললে আপনার পরিচয় পত্র লাগবে না৷ মাইনে আপাতত মাসে দুশো টাকা পাবেন৷” দুশো টাকা শুনে আমার মুখে হয়ত খানিকটা হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছিল৷
“এখন কিন্তু প্রাইভেট স্কুলে এরকম মাইনেই দেয়৷ এই নোবল প্রফেশনে যাঁরা আছেন তাঁরা আমাদের দেশে মুটে মজুরদের মতই মাইনে পান৷
আমি বললাম আমি জানি৷ আমি একটি অতি সাধারন প্রাইভেট স্কুলে পড়েছি৷ টিউশনি না করলে টিচাররা খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতেন না৷ ২০১৭ সালেও একই অবস্থা৷ অবশ্য যাঁরা সরকারী স্কুলে বা নামী দামী স্কুলে পড়ান তাঁদের অবস্থা স্বচ্ছলই বলা যায়৷ আমি এই চাকরী নোব৷ এছাড়া উপায় কি! মনে মনে ভাবলাম আমার পকেটে কোচিং ক্লাসের পাঁচ বছরের মাইনে আছে৷ কিন্তু তা নামকে ওয়াস্তে৷ এখন তার দাম কাণা কড়িও নয়৷
অমিতাভ বাবু বললেন, “আপনি হয়ত ভাবছেন এই টাকায় চালাবেন কি করে! বউবাজারে শ্রীগুরু নামে একটা মেস আছে, আপনি যদি একাই একটা ঘর নিয়ে থাকেন, খাওয়া থাকা সমেত একশো আশি টাকা৷ হ্যাঁ, আর একটা কথা, আপনি সপ্তাহে দুদিন করে বাবুইকে পড়াবেন৷ আমার ছেলে বলে বলছিনা, ও বেশ বুদ্ধিমান; ওর ক্লাসের পড়া ও নিজেই পারবে৷ আপনি ওকে একটু হায়ার লেভেলে পড়াবেন৷ আপনাকে আমি মাসে দুশো টাকা দেব৷”
আমি বললাম, “বেশ আপনি যা বললেন তাই করব৷ আবার ২০১৭ দেখার অনেক আগেই আমি পৃথিবী ছাড়ব এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ তবে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“বলুন৷ কি জানতে চান তা বুঝতে পারছি, তাও বলুন৷”
আমি বললাম, “আপনি তো টাইম ট্রাভেল, এই সবে বিশ্বাস করেন না৷ তা হলে আমার জন্য এত করছেন কেন?”
আমার কথা শুনে অমিতাভ একটু হাসলেন, “প্রথম কারণ আমার ছেলে৷ ওর একটা দারুণ ক্ষমতা আছে৷ লোক চিনতে পারে৷ ওকে দেখে মনে হল ইতিমধ্যেই আপনার ভক্ত হয়ে গেছে৷ ও আপনাকে হয়ত অনেক গল্প করেছে নিশ্চয়?”
“তা করেছে“।
“কিন্তু ওর মার কথা বলেছে কি?”
“না তা বলেনি৷”
“পাঁচ বছর আগে ও মাকে হারায়৷ আমার এক দূর সম্পর্কের পিসী আমাদের এখানে থাকেন৷ উনিই ওর দেখাশুনো করেন৷ অবশ্য রাতদিনের একটা কাজের মেয়ে আছে৷ আমাকে কাজের জন্য মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয়৷ ফিরে এলে আমাকে ছাড়তে চায়না৷ ওর মনে নানা প্রশ্ন৷ আমার সঙ্গেই বকবক করে। আমার পিসী খুব বেশী লেখা পড়া করেন নি, ওর বেশীর ভাগ কথা উনি বুঝতেই পারেন না৷ তবে পিসীকে ও খুব ভালবাসে৷”
আমি চুপ করে রইলাম৷ ইতিমধ্যে কাজের মেয়েটি এক ট্রেতে করে কফি ও বিস্কুট নিয়ে এসেছে৷ অমিতাভ বললেন, “কফি খেয়ে নিন৷ তার পর আপনার পরের প্রশ্ন শুনব৷”
কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি বললেন আমার মোবাইলটা খুব উন্নত ধরণের৷ তার মানে কি প্রিমিটিভ মোবাইল এখন বাজারে এসেছে? আমার যতদূর মনে হয় ১৯৭৫ সালে কোন মোবাইল আমি দেখিনি!”
“আপনি ঠিকই বলেছেন৷ তবে আমি যতদূর জানি চল্লিশের দশকেই মোবাইলের বেসিক টেকনোলজি আবিষ্কৃত হয়৷ তবে মোটরোলা বলে এক কোম্পানী প্রথম মোবাইল তৈরী করে ১৯৭৩ সালে৷ খুবই সীমিত ক্ষমতা ছিল তার৷ তবে বাজারে আসতে আরো পাঁচ–ছ বছর লাগবে৷ তাও প্রথমে ইউরোপ আমেরিকায়। আমাদের দেশে আসতে আরো সাত আট বছর লাগতে পারে!”
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম উনি কি নিঁখুত ভবিষ্যতবানী করছেন৷ ১৯৮২ তে ইটালিতে মোবাইলের ব্যবহার দেখেছি৷ বাসে উঠেই লোকেরা, বিশেষ করে মহিলারা, ব্যাগ খুলে pronto দিয়ে শুরু করে অনর্গল কথা বলতো৷ বোকার মত চেয়ে দেখতাম৷ আমাদের দেশে নব্বই দশকে এর ব্যবহার দেখি৷ আমি প্রথম মোবাইল কিনি ১৯৯৭ তে৷ তার পর তো হুহু করে মোবাইলের ব্যবহার শুরু হয়৷ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অমিতাভ বললেন, “আপনি হয়ত ভাবছেন, আমি কি করে এসব ভবিষ্যতবাণী করছি৷ আমি যে আমেরিকান কোম্পানীতে কাজ করি সেই কোম্ণানী মোবাইল বানানোর চেষ্টা করছে৷ আমি আর এন্ড ডি বিভাগের হেড। আর আর একটা কথা, এখানে লাঞ্চ খেয়ে যাবেন৷ আমার একটা মিটিং আছে তার সঙ্গে লাঞ্চও আছে৷ আমি স্নান করেই বেরিয়ে যাব৷ বাবুই আপনাকে সঙ্গ দেবে৷ আপনার মোবাইলটা ধার নিচ্ছি৷ কাল ফেরৎ দেব৷ আর দুশো টাকা রাখুন৷ মেসে পনের দিনের আগাম টাকা চাইবে৷ না এটা কোন দান নয়৷ আপনাকে অ্যাডভানস দিচ্ছি মনে করুন৷
তিন মাস হয়ে গেল শ্রীগুরু মেসে৷ প্রথম প্রথম মনে হত মেসের বাসিন্দারা একেবারে সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমা থেকে উঠে এসেছে৷ পরে অবশ্য দেখলাম বেশীর ভাগই ছাপোষা মানুষ৷ শুধু প্রাণকেষ্ট হালদার বলে এক ভদ্রলোক কমেডিয়ানের রোল টা নিয়েছেন৷ নানা রকম জোকস ও মজার গান ওনার স্টকে আছে৷ তবে লোকটা খারাপ নয়৷ মেসের বাসিন্দারা কেউ বর্দ্ধমান, কেউ নৈহাটি, কেউ বা জয়নগর থেকে এসেছেন৷ প্রায় সবাই শুক্রবার দেশের বাড়িতে চলে যান৷ সোমবার কাক ভোরে বেড়িয়ে অফিস সেরে সন্ধ্যা বেলায় মেসে ফিরে আসেন৷ মেসের মালিক কাম ম্যানেজার গোবিন্দ সামন্তের বাড়ি বাঁকুড়ায়৷ উনি মাসে একবার বাড়ি যান৷ কিছু জমি জমা আছে৷ শ্রীপতি সরকার আমার পাশের ঘরে থাকেন৷ উনি কোথাও যান না৷ আমার এখন যা অবস্থা ওনার ও তাই , ত্রিভুবনে কেউ নেই৷ একটা স্কুলে পড়ান৷ দুটো টিউশনি করেন৷ বই পড়ার শখ আছে৷ ওনার সঙ্গেই আমার কিছু কথাবার্তা হয়৷ এখানে কেউ অন্যের ব্যাপারে খুব একটা নাক গলায় না৷ আমার বাড়ি হুগলি জেলার একটি গ্রামে জানার পর কেউ আর খুঁটিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি৷ আমার ঘরটা খুবই ছোট; একটা খাট একটা ছোট টেবিল আর হাতল ভাঙ্গা একটা চেয়ার বাদ দিলে নড়াচড়া করার জায়গা নেই বললেই চলে৷ আমি অবশ্য এখন মুক্ত পুরুষ৷ অমিতাভবাবু প্রথম দিন যা টাকা দিয়েছিলেন তা থেকে মেসের আগিম দিয়ে যে টাকা বেঁচে ছিল তা দিয়ে একটা ধুতি, দুটো খদ্দরের পাঞ্জাবী , দুটো গেঞ্জি, দুটো আন্ডার ওয়্যার, একটা দাঁতের মাজন আর একটা গামছা কিনেছি৷ সবই হাতি বাগান থেকে কেনা৷ কত সহজে মানুষ বাঁচতে পারে, মেসে না এলে জানতে পারতাম না৷ কোচিং ক্লাসের মাইনে পাওয়ার পর একটা ছোট রেডিয়ো কেনাই ছিল আমার একমাত্র বিলাসিতা৷ কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে কয়েকটা কবিতার বই আর অংক আর ফিজিক্সের বই সেকেন্ড হ্যান্ড বই এর দোকান থেকে কিনেছি৷ অমিতাভবাবুও কয়েকটা বই দিয়েছেন৷ সব বই বিছানার উপরে রাখা৷ মেসে খাওয়া দাওয়া খুব সিম্পল; সকাল আটটার সময় একপিস টোস্ট আর চা৷ দুপুরে ডাল ভাত মাছের ঝোল৷ চারা পোনা বা ছোট একপিস অন্য কোন মাছ৷ রাত্রে মাঝে মাঝে আধ খানা ডিম থাকত৷ আমি রাতে রুটি তরকারী খাই৷ বুধবার দিন মাংস হত তবে তার জন্য তিন টাকা চাঁদা দিতে হয়৷ একটা জাবদা খাতা কিনেছি আর দুটো ফাউনটেন পেন৷ সুলেখা কালি ও কিনেছি৷ রোজই ডায়েরী লিখছি৷ খরচের হিসেব ও৷ মেসের ঘরে কোন আলমারী নেই৷ একটা সস্তা ফোমের ব্যাগ কিনেছি৷ টাকা পয়সা মোবাইল ঘড়ি সব ব্যাগে থাকে৷ মোবাইল অমিতাভ বাবু যেদিন নিয়েছিলেন তার পরদিনই ফেরৎ দিয়েছিলেন৷ ওনাকে অফিসের এক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার মোবাইল দেখে বলেছেন, এই প্রযুক্তি আগামী তিরিশ বছর পরে আসতে পারে তার আগে নয়৷ কোচিং ক্লাসে আমার খানিকটা সুনাম হয়েছে৷ ওরা ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী টাকা দেয়৷ তবে মোটামুটি দুশোর কাছাকাছি পাই৷ বাবুইকে পড়াতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না৷ ইতি মধ্যে ক্যালকুলাস ও খানিকটা আয়ত্ত করেছে৷ তবে ওর সবচেয়ে আগ্রহ আমার কাছে আগামী দিনের গল্প শোনা৷ আমি যে ২০১৭ সালের লোক এটা ওর বাবা না বিশ্বাস করলেও ও পুরোপুরি বিশ্বাস করে৷ আমার সময়ে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, আইপ্যাড ইত্যাদির কথা শুনতে খুব ভালবাসে৷ একদিন ফেসবুকের গল্প শুনে ওর চোখ চক চক করে উঠল৷ বলল, “আমি বড় হলে এসব দেখতে পাব?”
আমি বললাম, “নিশ্চয়ই পাবে, কিন্তু তুমি তখন তোমার বাবার মত বড় হয়ে যাবে“। মোটের উপর আমি ভালোই আছি৷ সুখ কাকে বলে এখনো জানি না৷ তবে পরম শান্তিতে আছি৷ প্যান কার্ড, আধার কার্ড, গাদা গুচ্ছে আই ডি পাস ওয়ার্ড মুখস্থ রাখার ঝামেলা নেই৷ অবসর সময়ে রেডিয়োতে গান শুনি, বই পড়ি, অঙ্ক কষি৷ মাঝে মাঝে শ্রীপতি বাবুর সঙ্গে দাবা খেলি৷ লোকটাকে আমার বেশ ভালো লাগে। ট্রামের একটা মান্থলি করিয়েছি৷ ছুটির দিনে ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার চষে বেড়াই৷ ১৯৭৫ সালের কলকাতার স্বাদ আর একবার পাওয়ার জন্য৷ মাঝে মাঝে দু একটা চেনা মুখের দেখা পাই অন্তত চেনা চেনা মনে হয়৷ কিন্তু তাদের চোখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারি আমাকে তারা বিন্দুমাত্র চিনতে পারেনি৷ ইতিমধ্যে স্টারে একটা থিয়েটারও দেখেছি৷ বাবুইকে নিয়ে একটা সার্কাসও দেখেছি৷ বাবুইদের বাড়িতে গেলে ওর পিসি ইন্দুবালা না খাইয়ে ছাড়বেন না৷ কোনদিন লুচি আলুর দম, কোনদিন বা সুজি আর মিষ্টি৷ মাঝে মাঝে অমিতাভ বাবুর সঙ্গে নানান বিষয়ে গল্প করি৷ মনে হচ্ছে আর একটা বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছি৷ মন্দ কি! একেবারে মুক্ত পুরুষ হতে গেলে সাধু হতে হয়৷
দেখতে দেখতে বর্ষাকাল এসে গেল৷ একটা ছাতা না কিনলেই নয়৷ শ্যামবাজারে কয়েকটা ভালো ছাতার দোকান আছে৷ এগুলি আসলে কাপড়ের দোকান৷ তবে বর্ষার আগেই ছাতা পাওয়া যায়; ছাতার স্টক ও ভালো৷ আমি ট্রামে করে রূপবানীর স্টপে নামলাম৷ একবার হাতিবাগান হয়ে যাব৷ চশমার ডাঁটি আলগা হয়ে গেছে৷ এখানে রাস্তার দোকানগুলোতে খুব সস্তায় চশমার ফ্রেম পাওয়া যায়৷ কিন্তু ট্রাম থেকে নামতেই মাথায় আবার সেই শক৷ আমি রূপবানীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম পুরোনো একটা বাড়ি ভেঙ্গে তার জায়গায় ঝলমলে শপিং মল৷ তাহলে কি আবার ২০১৭ সালে ফিরে এলাম? এখান থেকেই আমি ১৯৭৫ সালে ফিরে গেছিলাম৷ তাহলে কি অমিতাভবাবু, বাবুই, শ্রীগুরু মেস, শ্রীপতি বাবু সব স্বপ্ন! বা হ্যালুসিনেশন? কিন্তু আমার হাতে এখনো সেই ফোমের ব্যাগ, পকেটে পুরোনো টাকা! পরনেও ধুতি পাঞ্জাবী৷ তা হলে কি আর একটা প্যারালাল বিশ্বে ঢুকে পড়েছিলাম? ১৯৭৫ সালে অতীত আমি যে বিশ্বে ছিলাম সেখানে হয়ত বাবুইরা বা শ্রীগুরু মেস কিছুই ছিল না৷ তবে একটা খটকা লাগল৷ ২০১৭ সালে এই শপিং মলটা ছিল না! লক্ষীনারায়ণ সাউর দোকানে গেলাম সন্দেহ নিরসন করার জন্য৷ এই একটা দোকান যেখানে ওয়াজেদ আলীর কথাটা এখনো খাটে৷ সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে! শুধু মহাভারতের জায়গায় তেলেভাজা! তবে দোকানটা এখন আধুনিক রেস্তোঁরার মত ঝাঁ চকচকে৷ দোকানের উপর খুব বড় করে লেখা Laxminarayan Shaw and Sons. তেলেভাজা ছাড়াও নানা খাবার পাওয়া যায়৷ আমি পরীক্ষা করার জন্য একটা একটাকার নোট দিয়ে দুটো কাশ্মীরি চপ দিতে বললাম৷ ১৯৭৫ সালে একটা চপের দাম ছিল চার আনা৷ যে লোকটিকে টাকা দিলাম সে নোটটাকে উল্টে পাল্টে দেখে বলল, “বাবু এ নোট কোথায় পেলেন?
“কেন বলতো?“
“এতো বহুদিন বাতিল হয়ে গেছে৷ দাদুর কাছে কয়েকটা আছে৷ শখ করে রেখে দিয়েছেন৷ আর তাছাড়া বাবু একটা চপের দাম চার টাকা“।
আমি ব্যাগ খুলে নতুন পাঁচশো টাকার নোট দেখিয়ে বললাম, “এটা চলবে?”
“হ্যাঁ বাবু, এটা চলবে৷ কিন্তু এত ভাঙ্গানি তো এখন নেই৷ বিকেলে আসবেন ভাঙ্গিয়ে দেব“।
দোকানে একটাটা হিন্দি খবরের কাগজ দেখলাম একটা টেবিলের উপর ভাঁজ করে রাখা৷ আজকের কাগজ কিনা জিজ্ঞেস করত লোকটা মাথা নেড়ে জানাল আমি ঠিকই আন্দাজ করেছি৷ কাগজটায় আজকের তারিখ দেখে আমার ভিরমি খাবার অবস্থা আর কি৷ আজকের তারিখ পয়লা এপ্রিল দুহাজার আঠারো৷ আমি তো আতান্তরে পড়লাম৷ একবছরেরও বেশী সময় আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে৷ বাড়ির লোকে নিশ্চয় থানা পুলিশ করেছে৷ এতদিন পরে হয়ত ধরেই নিয়েছে আমি আর বেঁচে নেই৷ সাত বছর নিরুদ্দেশ থেকে লোকে বাড়ি ফিরেছে এরকম ঘটনা কাগজে পড়েছি৷ কিন্তু তারা কেউ ভবিষ্যৎ থেকে ফেরৎ আসেনি৷ আমাকে আবার থানায় বা কোর্টে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে আমিই সেই পদ্মনাভ চৌধুরী৷ অবশ্য আমার কাছে যে নতুন টাকাগুলো আছে তা এখনো বাতিল হয়নি৷ মোবাইলটা অন করার চেষ্টা করলাম, স্ক্রীন কালো৷ খুব সম্ভব ব্যাটারিতে চার্জ নেই৷ ব্যাগে দুটো ডেবিট কার্ড এখনো ভ্যালিড। বাড়ি ফিরে যাব, নাকি এই সুযোগে একেবারেই হারিয়ে যাব? আমি ধার্মিক নই৷ কিন্তু উত্তর কাশী জায়গাটা আমার ভালো লেগেছে৷ মাঝে মাঝেই মনে হত জীবনে যে কটা দিন আছে ওখানেই কাটাই৷ কিন্তু সংসারের মায়া কাটানো কঠিন ব্যাপার। যদিও মেসে থেকে উপলব্ধি করেছি কত সহজে বেঁচে থাকা যায়৷ হাজারটা গ্যাজেট আর অপ্রয়োজনীয় ব্যস্ততায় আমরা জীবনটা জটিল করে তুলেছি৷ যে কটা টাকা এখনো ব্যাঙ্কে আছে উত্তর কাশী না হোক একটা ছোট নিরিবিলি জায়গায় কাটিয়ে দিলে মন্দ কি! শুধু কয়েকটি সাহিত্যের আর অঙ্কের বই৷ এর বেশী কিছু দরকার নেই৷ তবে বাবুইকে মিস করব৷
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, কল্পবিজ্ঞান গল্প, তেলেভাজার একদিন, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, রাজকুমার রায়চৌধুরী
Aah, Jodi otite jete partam! kotojon r songe je dekha kora jeto!
যাহ! গল্পটা যেন ঠিক শেষ হল না।
বড্ডো তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে যেন। যেন একঠোঙা তেলেভাজাও শেষ হলো না , গল্প ফুরিয়ে গেল। প্লট যা তাতে আরেকটু বিস্তৃতির দাবি রাখে বলে আমার মনে হয়েছে। একবছর তো কম সময় নয়, তার বর্ণনা এত সংক্ষিপ্ত কেন? এ যেন খসড়া, আসল গল্পটি লেখক পরে লিখবেন।
গল্প লেখার সময় লেখকের শব্দ সীমার কথা মাথায় না রাখাই ভালো। পরে সময় নিয়ে সংক্ষেপ করাটাই ভালো। আরো লিখুন। প্লট আমার মনমতো, তাই মন ছুঁয়ে গেছে। কিন্তু আরেকটু মুন্সিয়ানার ছোঁয়া চাই, নইলে ঠিক মন ভরে না।
বাহ:। ভালোই লাগলো।