খাচ্ছিলো তাঁতী তাঁত বুনে!
লেখক: গুরনেক সিং
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
ঐ যে কথায় বলে না – কপালের লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না? – আমারও হয়েছিল তাই! নইলে বেশ তো ছিলাম মশাই, সেথ্না সাহেবের আস্তাবলে ট্রেনার হিসেবে। সকাল–সন্ধ্যে কুল্লে হাফ ডজন ঘোড়া নিয়ে কারবার – তার মধ্যে দুটি আবার বিলকুল বাচ্চা। তবে পেডিগ্রি ভালো। ওদের মা উনিশ শো বত্রিশে কিং জর্জ কাপে বাজী মেরেছিল – বাপও ভালো। ওদের মা জীবনে কম বাজী পায়নি। তাই আশা ছিল ঠিক মতো ট্রেনিং দিয়ে নিলে হয়তো মেহনতে পুষিয়ে যাবে। এ ছাড়া বাকি কয়েকটি ছিল বয়স্ক ঘোড়া। আমার কাজের মধ্যে কাজ ছিল সকালে রেস গ্রাউন্ডে রুটিন মাফিক ঘোড়াগুলির অ্যাক্শন চেক করা আর ওদের টাইমিং ক্লক্ করা। মাত্র ঘণ্টা কয়েকের ওয়াস্তা। আর সন্ধ্যাবেলায় কোল্ট্ দুটোকে নিয়ে কোর্সে দৌড়াবার ট্রেনিং দেওয়া। ট্রেনারের যা কাজ আর কি! সেথ্না সাহেব মাইনেও মন্দ দিতেন না – প্রায় সাড়ে বারো শো টাকার মতো – তাছাড়া বোনাসও আছে। সেবার যখন আমাদের স্টেব্লের ঘোড়া ‘প্লে–বয়’ কুইন্স্ কাপ পেলো, তখন উনি হাজার টাকা বোনাসও দিয়েছিলেন। মোটামুটি সব মিলিয়ে মন্দ ছিলাম না।
তবে ঐ যে বলে না – কপালের লিখন কেউ খন্ডাতে পারে না? – আমারও হোল তাই। পড়লাম গিয়ে চন্দর খপ্পরে। চন্দকে চেনেন না? চন্দ হোল ও লাইনের ধুরন্ধর দালাল। রেস জগতের যাবতীয় ঘটন–অঘটন তার নখাগ্রে। রেস–কর্তাদের উঁচু আর নীচু মহলে ওর সমান যাতায়াত। রেস–সমাজের যে খবর চন্দ জানে না, সে খবর জানবার মত নয়!
একদিন সন্ধ্যেবেলায় কোর্সে স্পেয়ার জকিরা কোল্ট্ দুটোকে ট্রায়াল রান করাচ্ছে। আমি মেম্বার্স এন্ক্লোজারে একটি বেতের চেয়ারে বসে, এমন সময় চন্দ এলো! “কি মিত্তির, কেমন চলছে?” বলে অন্য চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো অনুমতির অপেক্ষা না করেই।
বললাম, “চলে যাচ্ছে এক রকম – আমাদের আবার চলা! তারপর, তুমি কেমন আছো?”
বললে, “আছি ভালোই। কয়েকদিন থেকেই তোমাকে কন্ট্যাক্ট্ করবার কথা ভাবছি – নানান্ ঝামেলায় সেটা আর হয়ে উঠছে না। – চাকরি করবে?”
বললাম, “বর্তমানে আমি যে বেকার আছি, সে খবর তোমাকে কে দিলো?”
“বেকার হতে যাবে কেন? বালাই ষাট!” বল্লে – “তবে এর চেয়ে ভালো মাইনের চাকরি একটি আমার হাতে ছিল! তুমি এগ্রি করলে তাঁর স্টেবলের সিকি অংশ তোমার নামে লিখে দিতেও রাজী আছেন ভদ্রলোক! – ট্রাই নিয়ে দেখবে নাকি, ব্রাদার – বেশ শাঁসালো সওদা!”
ট্রেনার হিসেবে একজন কেষ্ট–বিষ্টু না হলেও বাজারে নেহাৎ ফেলনাও আমি নই। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নামী ঘোড়া এ শর্মার হাত দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমার উইনিং অ্যাভারেজ খুবই ভালো থাকে বরাবর, এ বছর তো এখন পর্যন্ত আশাতীত রকম ভালো। অতএব নতুন অফারে খুব বেশী আশ্চর্য হলাম না – তবে অবাক হলাম সিকি অংশ দেবার কথা শুনে। বললাম, “ভদ্রলোক কে?”
“তুমি ঠিক চিনবে বা, নাম হচ্ছে প্রফেসার কি সাম্ চাকলাদার – এলাইনে বিলকুল নতুন লোক। তবে এমন এক মোক্ষম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উনি আবিষ্কার করেছেন যে, সেই পদ্ধতিতে ঘোড়াকে ট্রেন করলে একেবারে সিওর উইনার! -” বলে সন্ধানী চোখে আমার মুখের দিকে তাকালো চন্দ।
বল্লাম, “মাপ করো, ভাই – ও সবে আমি নেই! আজ পর্যন্ত কতো ‘মোক্ষম পদ্ধতি’ তো দেখলাম এই রেসের মাঠে – কিন্তু কাউকেই তো ঐ দিয়ে করে খেতে দেখলাম না। তা ছাড়া এই প্রফেসর–টফেসর গুলোর ওপর আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই।”
“আহা, একবার দেখতে দোষটা কি? টালী লিংক তো এখান থেকে বেশী দূর নয়; চলোই না আমার সংগে, একবার ব্যাপারটা নিজের চোখে দেখে এসো। যদি বোঝ যে পোষাবে না, ‘না’ করে দেবে। যে লোকটা তোমায় দু হাজার মাইনে আর লাভের সিকিভাগ দিতে চায়, সেও নিশ্চয়ই কিছু না বুঝে–সুঝে অফারটা দিচ্ছে না!”
কি আর করা – চন্দকে এড়ানো বরাবরই শক্ত।
বললাম, “তবে তাই চলো। কিন্তু আধ ঘন্টার বেশী আমি সময় দিতে পারবো না! -”
“ব্যস ব্যস, ওতেই হবে। চলো না, নিজের চোখেই ব্যাপারটা দেখবে চলো।”
গেলাম – না গিয়ে উপায়ও ছিল না আমার। চন্দ যখন নিজের পকেট থেকেই ট্যাক্সি ভাড়াটা দিলো, তখন একটু অবাক হলাম। ওকে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে আমি কমই দেখেছি। তখনই আমার সাবধান হওয়া উচিৎ ছিল; বোঝা উচিৎ ছিল যে – যাক গে!
প্রফেসর চাকলাদার নামে যে ভদ্রলোকটির সংগে ও আলাপ করিয়ে দিল, তাঁকে দেখে আমার মোটেই শ্রদ্ধা হোল না। একজন কালো, বেঁটে, টেকো ও মোটা লোককে দেখে শ্রদ্ধা না হওয়াটা খুব অন্যায় নয়। কিন্তু সেই অশ্রদ্ধাকে ছাপিয়ে ছলাৎ করে আমার দেহের রক্ত মাথায় উঠলো, যখন ভদ্রলোকের স্টেব্ল্টি দেখলাম। মনে হোল যেন কোনো ঘোড়ার হাসপাতালে এসে পড়িছি বুঝি! তিনটে বেতো রোগী হাড় জিরজিরে ঘোড়া কোনোক্রমে চার–পায়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত ভাবে ঘাস খাচ্ছে – ঘাস খাওটাই যেন একটা বিরাট পরিশ্রমের কাজ! এদের তুলনায় রমজান মিঞার ছ্যাকড়া গাড়ীর ঘোড়াদের বোধহয় পক্ষীরাজ আখ্যা দেওয়া চলে! ওদের মধ্যে একটিকে আবার জিন–লাগাম এঁটে তৈরী রাখা হয়েছে।
“কেমন দেখছেন-?” প্রফেসর চাকলাদার পরম স্নেহে জিন লাগানো ঘোড়াটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন আমাকে।
চন্দ বোধহয় আমার মনের ভাবটা কিঞ্চিৎ আন্দাজ করতে পেরেছিল। বললো, “ঘোড়াটা গত হপ্তার অক্শানে প্রফেসর চাকলাদার বেশ দাঁও মতো কিনে ফেলেছেন হে – মাত্র পাঁচ শো টাকায় (বুঝলাম চন্দ দালাল ছিল!) তবে এখানে ইম্পর্ট্যান্ট হচ্ছে প্রফেসর চাকলাদারের যুগান্তকারী আবিষ্কারটি। যাকে বলে একেবারে মোক্ষম পদ্ধতি – সিওর উইনিং!”
“তাহলে এবার মাঠে যাওয়া যাক কি বলেন?” প্রফেসর চাকলাদার গদ গদ ভাবে বললেন।
একবার ইচ্ছে হোল দুত্তোর বলে কেটে পড়ি। এই ঘোড়ার ট্রেনার হওয়ার চেয়ে সার্কাসের ক্লাউন হওয়া অনেক ভালো। তবে কৌতুহল বড় বালাই। মনে হোল দেখাই যাক না–
প্রফেসর চাকলাদার নিজেই চাপলেন ঘোড়াটার পিঠে। ঘোড়াটার পিঠ ধনুকের মতো বেঁকে গেল – মনে হলো যে–কোন মুহুর্তে বেচারী মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কেন যে পড়লো না সেটাই একটা রহস্য।
কোর্সের অন্যপ্রান্তে যাবার আগে একটা বাইনোকিউলার আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন প্রফেসর চাকলাদার। বললেন, “আপনি ঘোড়াটা সম্পর্কে যাই কেন ভেবে থাকুন না, মিস্টার মিত্র, এই বাইনোকিউলার দিয়ে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত এর মুভ্মেন্টস্টা শুধু ভালোভাবে মার্ক করে যাবেন আপনি আর টাইমিংটা একটু ক্লক্ করবেন, প্লীজ!”
বুঝলাম, এও এক যন্ত্রণা হোল। একমাইল পোষ্ট থেকেও যদি দৌড়ায়, তাহলে এক মাইল কভার করতে ওর দশ মিনিটের কম নিশ্চয় লাগবে না! আর ওই দশ মিনিট বাইনোকিউলারটা চোখে ধরে আমাকে ওর মুভ্মেন্টস্ মার্ক করতে হবে! ভালো জ্বালায় পড়া গেল দেখছি।
যতোক্ষণ না প্রফেসর চাকলাদার মাইল পোষ্টের কাছে গেলেন, ততোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চন্দকে শান্ত করতে লাগলাম, অবশ্য মনে মনে। ওযে আমাকে এখানে এনে এমন একটা হাস্যকর ব্যাপারের মধ্যে জড়িয়ে ফেলবে সেটা জানলে আমি হাজার অনুরোধেও এ পথ মাড়াতাম না। থাকগে। আসল কথায় আসি। অবশেষে প্রফেসর চাকলাদার তাঁর বাহনটি নিয়ে নির্দিষ্ট মাইল পোষ্টের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর রুমাল নেড়ে আমাকে ইশারা করলেন। আমি ভারী বাইনোকিউলার টা চোখে লাগিয়ে নিলাম। দেখলাম, সে এক অতি হাস্যকর ব্যাপার। মোটা ভারী দেহটা নিয়ে প্রফেসর চাকলাদার ঘোড়াটির পিঠে কুঁজো হয়ে বসে আছেন। এক হতে লাগাম ধরে আছেন, অন্য হাতে চশমা সামলাতে ব্যস্ত!
পরমুহুর্তে ঘোড়াটি ছুটলো। সংগে সংগে হাতের স্টপ্ ওয়াচটি চালিয়ে দিলাম। কিন্তু এ কি! এটা কি সেই ঘোড়া যেটা আমি খানিক আগে দেখেছি? নিজের চোখকে পর্যন্ত বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না। ঘোড়া তো ছুটছে না, যেন হাওয়ায় উড়ে চলেছে। প্রফেসর চাকলাদারের আড়াই মণ প্লাস নিজের পনেরো সের ওজন পিঠে নিয়েও এমন স্পিডে ছুটেছে যে না দেখলে প্রত্যয় হয় না। দেখতে দেখতে ও এক মাইল কোর্স উড়ে পার হয়ে এলো। বাইনোকিউলার নামিয়ে স্টপ ওয়াচ দেখলাম দু মিনিট বাইশ সেকেন্ড। …অদ্ভুত! অবিশ্বাস্য!! গত ডার্বির উইনার ‘ফ্লাইং সসার’ ঘোড়ার উইনিং টাইম ছিল তিন মিনিট পাঁচ সেকেন্ড!
কখন যে প্রফেসর চাকলাদার আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি। বললেন, “কেমনটি দেখলেন, মিস্টার মিত্র?”
বললাম, “দেখলাম ভালই, তবে সত্যিকারের রেসে ও খেল দেখানো যাবে না।”
“কেন – কেন – ?”
“ঘোড়াকে নেশা করিয়ে রেস দৌড়ানো অপরাধ। তাতে আপনার জেল হবে আর আমার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে!”
“আহা – হা! তুমি এই যখন না বুঝে সুঝে হুট্ করে একটা কথা বলে ফেল মিত্তির, তখন আমার বড় রাগ হয়!” চন্দ হাঁ হাঁ করে উঠলো।
“তাহলে ঘোড়াটা ড্রাগ্ড্ নয়?”
“না, মোটেই না। ওই যে বলছিলাম একটা মোক্ষম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি -”
“দুত্তোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি! তুমি কি বলতে চাও ওই বেতো ঘোড়াটা শুধু মাত্র ট্রেনিং এর জোড়ে একটা রেকর্ড রান করে বেরিয়ে গেল?”
“না, তাও না। একটু ধৈর্য ধরে না শুনলে ব্যাপারটা তোমায় বোঝাই কি করে? না, ঘোড়াটিকে ড্রাগ্ও দেওয়া হয়নি আর তেমন কোন ট্রেনিংও দেওয়া হয়নি। আসলে ও ক্ষেত্রে প্রফেসর চাকলাদার তাঁর একটি গোপন আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়েছেন যার ফলে এই অসম্ভবটি সম্ভব হয়েছে।”
“একটু খোলসা করে বলো।”
“আমি বলছি-” প্রফেসর চাকলাদার মৃদু হেসে বললেন, “আমি একটা এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি যার দ্বারা আর্থের গ্র্যাভিটেশন ফোর্সকে -”
“সোজা ভাষায় বলুন -”
“ও – হ্যাঁ। পদ্ধতি টির নাম হোল অ্যান্টি–গ্র্যাভিটি। একটি বিশেষ ভাবে প্রস্তুত প্রিন্টেড্ সার্কিটকে একটি বিশেষ পোটেন্শিয়ালের ইলেকট্রিক ফিল্ড দিয়ে যদি অ্যাক্টিভেটেড করা যায় তাহলে সেই সার্কিটটির ওপর গ্র্যাভিটির অর্থাৎ তখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণী শক্তির কোনো প্রভাব থাকবে না। অর্থাৎ তখন ঐ প্রিন্টেড সার্কিটের অপর যে বস্তুই রাখা হোক না কেন, তার ওজন হবে শূণ্য!”
“আরো একটু খোলসা করে বলুন -” আমার কৌতুহল ও উত্তেজনা এখন বাড়তে আরম্ভ করেছে।
“আসলে কারিকুরিটা করা আছে ঘোড়ার জিনের মধ্যে! একটা পাতলা ধাতুর পাতে সার্কিটটি প্রিন্ট করে জিনের চামড়ার মধ্যে খুব সাবধানে সেলাই করা আছে, বাইরে থেকে তার কিছুই বোঝবার উপায় নেই। ইলেকট্রিক ফিল্ড দিয়ে ঐ সার্কিটটিকে যখনই অ্যাকটিভেটেড করা হবে তখনই ঐ জিন আর তার ওপর বসা মানুষের ওজন হয়ে যাবে শূন্য! (বিভিন্ন পোটেন্শিয়ালের ইলেকট্রিসিটি দিয়ে ইচ্ছে মতো এই রি–অ্যাকশন কন্ট্রোল করে ওজন অর্ধেক অথবা সিকি ভাগ কমিয়ে দেওয়া যায় প্রয়োজন মতো) ! তখন ঘোড়াটি দৌড়াবে বিলকুল ভারমুক্ত হয়ে এ যেন জকি আর জিন ছাড়াই ঘোড়া রেসে দৌড়াচ্ছে। এমতাবস্তায় যে কোন সাধারণ ঘোড়া যে কোন চ্যাম্পিয়ন ঘোড়াকে রেকর্ড টাইমে হারিয়ে দিতে পারে!”
“বুঝলাম। কিন্তু তবু আপনারা ধরা পড়ে যাবেন। সার্কিটটা না হয় জিনের মধ্যে সেলাই করে লুকিয়ে রাখলেন, কিন্তু ব্যাটারী ট্যাটারি ? ও সব তো বাইরে রাখতেই হবে! তাতেই আপনারা ধরা পড়ে যাবেন।”
“না, ব্যাটারির কোনো দরকারই পড়বে না। আমাদের কাজের পক্ষে অত্যন্ত লো পোটেন্সিয়ালের সামান্য ইলেকট্রিসিটিই দরকার আর সেই ইলেকট্রিসিটি জোগাবে আপনার হাতের এই বাইনোকিউলারটি।”
আমি অবাক হয়ে হাতের বাইনোকিউকুলারটির দিকে তােকালাম।
“এই বাইনোকিউলারটি বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে, এতে দূরবীণের লেন্সের সংগে ফিট্ করা আছে একটি ফটো–ইলেকট্রিক সেলের কমপ্লেক্স। যতেক্ষণ ধরে এটি ছুটন্ত ঘোড়ার জকি আর জিনের ওপর ফোকাস করে রাখা হবে ততোক্ষণ এটি থেকে প্রিন্টেড্ সার্কিটে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিসিটির সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া একটি ছোট বোতামের সাহায্যে আপনি এখান থেকেই ইলেকট্রিক পোটেন্সিয়ালের হ্রাস বৃদ্ধি করে জিন আর জকির ওজন ইচ্ছেমতো কন্ট্রোল করতে পারবেন। ধরুন, হয়তো দেখলেন শূন্য ওজনে ঘোড়টি অবিশ্বাস্য রকম ব্যবধানে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আপনি বোতামটির সাহায্যে পিঠের ওজনটি একটু বাড়িয়ে দিতে পারবেন ফলে ঘোড়ার গতিও কমে যাবে। আসলে ঘোড়াকে চালাবেন আপনি, জকি নয়। জাকির কাজ শুধু লাগাম ধরে বসে থাকা।”
বললাম, “সেটা না হয় হোল! কিন্তু ও ব্যাপারে আমাকে জড়াতে চাইছেন কেন? যা দেখলাম, তাতে আপনারা নিজেরাই যে কোনো রেস অতি সহজেই জিততে পারবেন।”
“আপনাকে দরকার নামের জন্যে। আপনি এ লাইনে একজন বিখ্যাত ট্টেনার। আপনার নাম ও ঘোড়ার সংগে জড়িত থাকলে চট করে কেউ ফন্দীর কথা ভাবতে পারবে না। ধরে নেবে, হয়তো এর জন্যে মূলতঃ আপনার ট্রেনিংই দায়ী। তাছাড়া, আমি নিজেও প্রচার করে দেবো যে, রেস–হর্স ট্রেনিংয়ের এমন একটি বৈজ্ঞানিক পন্থা আমি আবিষ্কার করেছি — যাতে যে কোনো সাধারণ ঘোড়াকে অতি সহজেই ভালো রানার করে তোলা যায়। পেডিগ্রির থিওরীটা নস্যাৎ করে আমি নতুন একটা কমপ্লিকেটেড্ থিওরী দিয়ে দোৰো, যেটি সাধারণ লোকে চট করে বুঝতে পারবে না – আর যারা বুঝবে, আমাদের সাফল্য দেখে বোকা বনবার ভয়ে তারা প্রতিবাদ করতে সাহস পাবে না। তাহলেই লোকে মোটামুটি ব্যাপারটা লজিকাল বলে ধরে নেবে। বলুন, আপনি আমাদের প্রস্তাবে রাজী? দু‘হাজার মাইনে আর টোটাল উইনিংয়ের সিকি অংশ বোনাস! —বলুন!”
চন্দ বললে, “নিজের চোখেই তো সব দেখলে ভায়া, কোনো রিস্ক নেই– এভরিথিং টু গেন! ভিড়ে পড়ো।“
কি যে হোল আমার ! কিছু না ভেবে হঠাৎ সম্মতিসূচক হাত বাড়িয়ে দিলাম। আমার চারপাশে তখন সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়কে’র স্বপ্নের মতো কারেন্সি নোটের বৃষ্টি হচ্ছে! হায়রে, স্বপ্নের পরবর্তী অংশটা তখন যদি মনে পড়তো!
এর পর আমার প্রথম কাজ হল একটি ভালো জকি জোগাড় করা। প্রফেসার চাকলাদার অবিশ্যি নিজেই জকি হতে রাজী ছিলেন। কিন্তু আইনগত বাধা ছিল, রিস্কও ছিল। আমাকে ঠিক যে কারণে ওঁরা দলে নিলেন, একটি ভালো আর নামী জাকিরও প্রয়োজন ছিল ঠিক সেই কারণেই।
অবিশ্যি তাতে বিশেষ অসুবিধে হোল না। জনসন ছিল আমার বন্ধু, এ–ওয়ান্ জকিও বটে। খ্যাতিও কম ছিল না ওর। বছরের বেশী ভাগ সময়ই ঋণে ডুবে থাকতো – অথচ রোজগারও করতো কম নয়!
তাকে খুব সাবধানে বাজিয়ে দেখলাম। খুব সহজেই টোপ গিললো। বুঝলাম, টাকার জন্যে ও এখন সব কিছুই করতে পারে।
আট্ঘাট বেঁধে নামলাম আসরে। পক্ষীরাজটির নাম দিলাম ‘মাই হোপ্’। নাম গোত্রহীন “মাই হোপ্’ ফাস্ট এন্ট্রিতে অডস্ পেলো ওয়ান টু টেন! বাইরের বুকিরা দর দিলো ওয়ান টু ফিফটিন। গোড়ার দিকে কিছু ভাগ্য–সন্ধানীরা বাজীও ধরলো। কিন্তু রেস শুরু হবার কিছুক্ষণ আগে ঘোড়া দর্শনের পালায় তারা সকলেই মাথায় হাত দিয়ে বসলো ওই পক্ষীরাজটির ওপর অধিষ্ঠিত জনসনকে দেখে অনেকে ডন্ কুইকজোট বলে ঠাট্টা করতেও ছাড়লো না। বাইরের বুকিংয়ে এক লাফে দর উঠে গেল ওয়ান টু ফর্টিতে। অর্থাৎ “মাই হোপ্” যদি কেউ হোপ করে বাজী ধরে পাঁচ টাকা, “মাই হোপ’ জিতে গেলে তার প্ৰাপ্য হবে চল্লিশ গুণ অর্থাৎ —দু’শো টাকা! পাবলিক অবিশ্যি আর ওপথে গেল না, মাত্র কয়েকজন দুরাশাবাদী ছাড়া। বেনামীতে শতখানেক টাকা ধরলাম মাত্র আমরা চারজন–আমি, চন্দ, জনসন আর প্রফেসার চাকলাদার।
রেস শুরুর কিছুক্ষণ আগে আমি মেম্বার্স স্ট্যান্ডে বাইনোকিউলিয়ারটি বাগিয়ে জায়গামতো দাঁড়ালাম। এতোক্ষণ মাই হোপের পিঠটি জনসন সাহেবের ভারে ধনুকের মতো বেঁকে ছিল – বাইনেকিউলার দিয়ে দেখলাম হঠাৎ তার পিঠ সোজা হয়ে গেল। বুঝলাম, অ্যান্টি গ্র্যাভিটির কাজ আরম্ভ হয়ে গেছে।
তারপর রেস শুরু হােল। সে রেসে ‘মাই হোপ’ বাদে ঘোড়া ছিল ছ’টি তার মধ্যে দুটি ছিল আবার হট্ ফেভারিট, ঐ দুটির মধ্যেই একটির জেতার কথা। কিন্তু সারা ময়দানকে চমক লাগিয়ে বন্দুক থেকে ছোটা বুলেটের মতো ‘মাই হোপ’ প্রথম চোটেই এগিয়ে গেল প্রায় দু লেংথ! …আর কেউ কিছু বোঝবার আগেই সারা মাঠে আগুন লাগিয়ে প্রায় পাঁচ লেংথের ব্যবধানে জিতে গেল, “মই হোপ”। বাইনেকিউলারের মধ্যে দিয়ে দেখলাম জনসন খুশী মুখে হাত নাড়ছে। সারা মাঠে তখন হৈ হট্টগোলের মধ্যে কান পাতা দায়। ব্যাপারটা সত্যিই অভাবনীয়! তাই রেস কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ফলাফল ঘোষণাটা আটকে দিলেন। ঘোড়াটিকে বিশেষজ্ঞরা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পরীক্ষা করলেন, নানান্ রকম টেস্ট করা হোল, প্রফেসার চাকলাদারের ইন্টারভিউ নেওয়া হোল। উনি রাজনৈতিক নেতাদের মত এক বিরাট ভূমিকা ফেঁদে নিয়ে তাঁর নতুন থিওরীর কথা বললেন। জাজেরা কেউ হলেন ইম্প্রেসড্, কেউ কনফিউসড্, কেউ বা হতভম্ব! শেষে সকলে রায় দিলেন : না, কোনো গোলমাল নেই, ঘোড়া নিজ গুণেই জিতেছে!
ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া হোল! ‘মাই হোপ’ জিতেছে। একশো টাকায় আমরা চার হাজার টাকা করে পেলাম প্রত্যেকে। স্টেক মানি ছিল দশ হাজার – সেখান থেকে ভাগ পাওয়া গেল আড়াই হাজার করে। মন্দ নয়, কি বলেন?
সেই আমাদের জয়যাত্রা আরম্ভ হোল ।
পরের হস্তায় মাই হোপের ওপর ওয়েট বাড়িয়ে দেওয়া হোল আট সের। অবিশ্যি আঠারো সের বাড়িয়ে দিলেও বিশেষ ক্ষতি বৃদ্ধি হোত না। আবার ‘মাই হোপ” অতি সহজেই জিতলো–জেতবারই কথা।
পুবে জয়যাত্রার পালা সাংগ করে আমরা পশ্চিমে পাড়ি দিলাম। সেখান থেকে দক্ষিণে–তারপর দক্ষিণ–পশ্চিমে। মাই হোপের তখন ভুবনজোড়া না হোক, ভারত জোড়া নাম তো বটেই।
পরে আমরা খুব বেশী দর আর পেতাম না অবশ্য। ওয়ান টু টু কি ওয়ান টু থ্রী বড় জোর। কারণ সকলেই প্রায় বুঝে ফেলেছিল যে ‘মাই হোপ’ দেখতে যাই হোক না কেন দৌড়ায় কিন্তু জব্বর। কিন্তু তাতে আমাদের বিশেষ চিন্তার কারণ ছিল না। কারণ জয় সম্পর্কে নিশ্চিত থাকায় আমরা এরপর ব্যক্তিগতভাবে বেশ মোটা টাকাই বাজী ধরতাম – অলওয়েজ হাজারের ঘরে! তাতে মোটামুটি টাকাটা ডবল হয়ে ফিরে আসতো — তাছাড়া স্টেক মানির সিকি ভাগ তো ছিলোই। শিগগিরই প্রফেসার চাকলাদার ‘মাই হোপ’ জাতীয় আর একটি অখ্যাত ঘোড়া রেসে নামাবার জন্যে একটি নতুন সার্কিট তৈরীর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অতএব অদূর ভবিষ্যতে আমাদের চিন্তিত হবার কেন কারণই ছিল না।
তারপরই ঘটলো সেই অঘটনটি। সেই কথাতেই আসছি। বম্বে রেসে সেটা আমাদের প্রথম এন্ট্রি। যে রেসে ‘মাই হোপ’ ঠাঁই পেয়েছে, সে রেসে আরো অনেক বাঘা বাঘ ঘোড়া আছে – ‘মাই হোপ’কে বম্বের পাব্লিক তাই খুব বেশী ইম্পৰ্ট্যান্স দেয় নি। বাংলার মাটি আর বম্বের মাটির ফারাক আছে তো! তাই আমরা ভালো দরই পেলাম ওয়ান টু এইট্!
সারা মাঠ লোকে লোকারণ্য, কোথাও তিল ধারণের ঠাইটুকুও নেই।
আমি ছিলাম স্পেসাল গেস্ট এনক্লোজারের স্ট্যাণ্ডের মাথার দিকে। আর বাইনোকিউলারটি দিয়ে এক মনে লক্ষ্য করছিলাম স্টার্টিং পোস্টের কাছে জড়ো হওয়া ঘোড়াগুলোকে। আমার বাইনেকিউলারের প্রধান লক্ষ্য ছিল অবশ্য ‘মাই হোপ’।
আমার ঠিক পাশে ছিলেন একটু মোটামতো গুজরাতী ভদ্রলোক। মাই হোপের একজন আড্মায়ারার তিনি। কারণ, জানতে পারলাম, প্ৰথম কয়েকটি রেসে নাকানি–চোবানি খাওয়ার পর এখন ‘মাই হোপ’ই তার লাস্ট হোপ। পাঁচ হাজার টাকা বাজী ধরেছেন উনি মাই হোপের ওপর। বললেন, এ রেসে জিতে গেলে আর কখনো এ মুখো হবেন না।
রেস শুরু হবার আগে থেকেই সে ভদ্রলোকের উত্তেজনা প্ৰকাশ পেতে লাগলো। কখনো উঠে দাঁড়ান, কখনো আবার বসে পড়েন। কখনো বা সিগারেট ধরান, তারপর একটান টেনে নিয়েই সেটি ছুঁড়ে ফেলে আবার উঠে দাঁড়ান। কখনো বা আমার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন “ও বাবুজী, ঠিক জেতেগা তো? অ্যাঁ, কেয়া বোলা?”
রেস শুরু হোল। দীর্ঘ রেস থাকায় প্রথম দিকে ওজনটাকে একেবারে শূন্যে না নামিয়ে অর্ধেক করে দিলাম। হতভাগা ঘোড়াটা তাতেই ফিফথ প্লেসের বেশী এগুতে পারলো না! এইভাবে চললো কিছুক্ষণ, তারপর উইনিং পোস্টের ফার্লং–দুই আগে বেণ্ডের মুখে বোতামটি ঘুরিয়ে ওজনটি দিলাম একেবারে শূন্য করে। আর সংগে সংগে ‘মাই হোপ’ চার–চারটি বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিদ্যুৎ বেগে পার করে এগিয়ে গেলো। …আর মহা উল্লাসে পাশের গুজরাতী ভদ্রলোকটি লাফিয়ে উঠলেন–তারপর আনন্দের আতিশয্যে, আমি কিছু বোঝবার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি নিজেকে মুক্ত করবার জন্যে প্ৰাণপণে টানা–হ্যাঁচড়া করতে লাগলাম! কিন্ত কাঁকস্য পরিবেদনা। চল্লিশ হাজার টাকা জেতার আনন্দে ভদ্রলোক তখন পুরোপুরি পাগল। “মার দিয়া, মার দিয়া!” বলে তিনি আরো জোরে চেপে ধরলেন আমাকে! আর এই টানা–হ্যাঁচড়াতে আমার হাতের বাইনোকিউলারটি ছিটকে পড়লো সাত হাত দূরে।
ছুটন্ত অবস্থায় আপনার ঘাড়ে যদি দেড় মণ ভারী বোঝা ফেলে দেওয়া হয় তখন আপনার অবস্থাটি কি দাঁড়াতে পারে আপনি কল্পনা করে দেখেছেন কি? যতোই কল্পনা করুন, আসল ব্যাপারটি আপনি কিন্তু কিছুতেই আঁচ করতে পারবেন না। পারতেন–যদি সেদিন বম্বের মাঠে মাই হোপের অবস্থাটি স্বচক্ষে দেখতেন।
উইনিং পোস্টের কয়েক গজ মাত্র দূরে ব্যাপারটা ঘটলো। পাখীর পালকের মতো উড়ে চলা মাই হোপের দেহটা হঠাৎ ধনুকের মতো বেঁকে গেল। কারণ, যে মুহুর্তে বাইনোকিউলারটি লক্ষ্যচ্যুত হোল, জকি আর জিনের ওজনটি আকাশ থেকে পড়া দেড়মণি বোঝার মতোই এসে পড়লো ওর পিঠে। ঐ গতিতেই বেচারী এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলো, কিন্তু সেটা পারবে কেন? পড়লো হুমড়ি খেয়ে! জনসন ওর পিঠ থেকে ছিটকে পড়লো দশ হাত দূরে। অন্য ঘোড়াগুলি একে একে ওকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল অবলীলাক্রমে!
ব্যাপারটা ঐখানেই শেষ হলে কিছু বলার ছিল না। ছুটন্ত ঘোড়ার হঠাৎ পড়ে যাওয়াটা এমন কিছু অবাক কাণ্ড নয়। কিন্তু মই হোপের পড়ার ধরনটাই অনেককে অবাক করলো। জাজ্দের চোখও সেটা এড়ায়নি। তাই আবার শুরু হলো তদন্ত। তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান চালালো তারা। প্ৰিণ্টেড সার্কিটটা আর গোপন রাখা গেল না।
তবু হয়তো তারা কিছুই বুঝতে পারতো না, কারণ অ্যান্টিগ্র্যাভিটির আইডিয়া তাদের কল্পনারও বাইরে। কিন্তু এই প্রফেসাররা যে এমন ভীতু হয়, সেটা আমি জানতাম না। পুলিশের কয়েকটি বাঘা অফিসারের ধমকে ভ্যাঁ করে সব আইডিয়াটা ফাঁস করে দিলেন প্রফেসার চাকলাদার !
চন্দর, আমার আর জনসনের দু বছর করে জেল হয়ে গেল। উপরি হিসেবে আমার আর জনসনের লাইসেন্সটাও বাতিল হয়ে গেল—মোটা টাকা জরিমানাও গুনতে হোল!
আর প্রফেসার চাকলাদার–উনি বেশ বহাল তবিয়াতেই আছেন। শুনেছি, কি এক নতুন ব্যাপারে উনি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিযুক্ত আছেন। সরকারকে সাহায্য করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উনি শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন।
তাঁর নতুন কোনো আবিষ্কার? মাফ করবেন, সে খবর আমি রাখি না, রাখতে চাইও না!
সম্পাদকের কথাঃ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকার ১৯৬৬ সালের অগাস্ট সংখ্যায়। পুনঃপ্রকাশের সময়ে বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গল্পটি ওসিয়ার করে সাহায্য করেছেন দোয়েল বর্মণ।
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, কল্পবিজ্ঞান গল্প, খাচ্ছিলো তাঁতী তাঁত বুনে!, গুরনেক সিং, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দোয়েল বর্মণ, দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী
এতো অসাধারণ একটি সাই-ফি গোত্রের গল্প বাঙলাভাষায় কমই পড়েছি। বৈজ্ঞানিক কচকচি নেই কিন্তু ভিত্তিটা সেখানেই। অপূর্ব! হ্যাটস অফ।